ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব তো অবশ্যম্ভাবী, যা পশ্চিমাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে।
তবে এই শঙ্কা এখনো এড়ানো যেতে পারে। ইউক্রেন সরকার পুরোদস্তুর যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোর জন্য চেষ্টা করছে। এ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা একটি কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। এদিকে বাইডেন প্রশাসন কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই হবে। তবে যুদ্ধ হলে এর রূপ কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ নিয়ে ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, এই সময়ে যেকোনো যুদ্ধই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই ভয়ংকরেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আঞ্চলিক সামরিক জোট ন্যাটো। তাদের ওপরই নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে ও এর প্রভাব কেমন হবে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে কমব্যাট সেনা মোতায়েন করবে না ন্যাটো। তবে তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলে সহযোগী দেশ ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে ন্যাটো।

কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা চরম আকার ধারণ করতে পারে। বলে রাখা ভালো, ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ যে সম্ভাব্য যুদ্ধে সেনা মোতায়েন না করার কথা আগ বাড়িয়ে বলেছেন, তার কারণটি রয়েছে সংকটের প্রেক্ষাপটের ভেতরেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের দিকেই জোর দিচ্ছেন। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য যে কয়টা শর্ত দিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনকে যুক্ত না করার বিষয়টি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দেশকে তারা কোনোভাবেই ন্যাটো জোটে দেখতে চায় না। এই শর্ত ‘পরিপালনযোগ্য’ নয় বলে এরই মধ্যে পশ্চিমা পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলেও স্টলটেনবার্গের ভাষ্য বলে দেয়, তারা বেশ সতর্ক। একই সঙ্গে শেষ কথাটি দিয়ে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধে তাদের সংযোগের পথটি খোলাই রেখেছে।
বলা যায় ইউক্রেনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকটের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপ সরু সুতার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে বলা যায়। রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক গবেষক নাইজেল গোল্ড-ডেভিস যেমনটা বলছেন, গত শতকের ৮০-এর দশকের পর ইউরোপ এবার খুব সহজেই সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে।
এ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক জেমস নিক্সি সিএনএনকে বলেন, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটি কী হবে, তা নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। এখন রাশিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক বাস্তবিক সমস্যা, যার বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া একদিকে সেনা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা নেতাদের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যও বাড়ছে। গত ২৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে জানান, যেকোনো হামলার জন্য রাশিয়ার ভয়াবহ পরিণতি হবে।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সব মিলিয়ে দুই পক্ষ থেকেই এমন সব বক্তব্য আসছে, যা উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা নিয়ে পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা চালানো হলে বড় মূল্য চোকাতে হবে রাশিয়াকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে একটি সামরিক ঐক্য তৈরি হচ্ছে ইউরোপে।
জেমস নিক্সি যেমন বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার কত সেনা পাঠাবে, তার ওপর। অনেক বিশ্লেষক এখনো আশাবাদী যে, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। ইউক্রেনে হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়বে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও বাল্টিক রাজ্যগুলোয়।
তবে এই সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ছাড় দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন জেমস নিক্সি। তাঁর মতে, সংকট নিরসনের জন্য রাশিয়াকে যদি আবারও সীমানা পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়, বা এমন আচরণে নিরুৎসাহিত করা না হয়, তবে তারা একেই একটি উপায় হিসেবে বেছে নেবে। তারা তখন খুঁজবে এর পর অনুরূপ পদক্ষেপ কোন অঞ্চলের জন্য নেওয়া যায়।
একই কথা বলেছেন ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর অনেক দেশের সীমান্ত রয়েছে। এ নিয়ে অনেক উদ্বেগের বিষয় থাকবে। কারণ, যুদ্ধ হলে এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে পড়বে। আর এতে ওই সব দেশের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
মোদ্দা কথা ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর মুখোমুখি রাশিয়া যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার সমাধান খুব একটা সহজ পথে আসবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর সমাধানের পথটি কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এ বিষয়ে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। শুরুতেই স্টলটেনবার্গের সর্বশেষ বক্তব্যের সূত্র ধরে, যা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। ন্যাটো জোট বিষয়টি নিয়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে—এটা স্পষ্ট।
ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য আবেদন করে। এর পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বাড়ে এই উত্তেজনা। তবে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলোকে রক্ষার জন্য হলেও পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন করবে ন্যাটো।
এর ইঙ্গিত অবশ্য গত ২৩ জানুয়ারিই পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সেদিন জানিয়েছিলেন, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক অবস্থানের কথাও সেদিন জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন মার্কিন কর্মকর্তা পরে সিএনএনকে বলেন, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক নিল মেলভিনের মতে, ন্যাটোর সামরিক জোটকে এই যুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে ঘিরে পুরো যুদ্ধের কৌশল সাজাতে হবে। আর এটি ইউরোপে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে। মেলভিনের ধারণা, যুদ্ধ হলে প্রচুর সেনার প্রয়োজন হবে। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন সেনা আনতে হবে, যা ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এ তো জানা কথাই যে, যুদ্ধের পেছন পেছন আসে অর্থনৈতিক সংকট। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে দেশটির কৃষিজাত পণ্য সরবরাহে বাধা তৈরি হবে, যা খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে। আর এই সংকটের সঙ্গে ইউক্রেন যেহেতু জড়িয়ে, তখন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ, বিশ্বের অন্যতম চারটি শস্য রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন্স কাউন্সিলের তথ্যমতে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ভুট্টা আমদানির ছয় ভাগের এক ভাগই হবে ইউক্রেন থেকে। সুতরাং এই দেশে হামলা চালানো হলে পুরো বিশ্বের খাদ্য সরবরাহেই প্রভাব পড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা। কারণ, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, সেগুলো হলো—রাশিয়া, নরওয়ে, আলজেরিয়া ও কাতার। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে আসে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ও নরওয়ের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি যেসব দেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আসে, তা শতাংশের হিসাবে ১০-এর কম। একই চিত্র অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রেও।
এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় এসেছে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন। রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি দুই দেশই বলছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন চালুর কাজ পিছিয়ে যাবে।
ফলে জ্বালানি প্রশ্নটি অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। এ বিষয়ে নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, আপনি যদি বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের সঙ্গে বড় সংঘর্ষের কথা ভাবেন, তাহলে বড় কোনো প্রভাব ইউরোপের জ্বালানির বাজারে পড়বে না—এমনটি ভাবা আপনার উচিত নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে ইউরোপের এই জ্বালানি নির্ভরতাকে রাশিয়াও যুদ্ধে কাজে লাগাবে। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই নির্ভরতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত ২৯ জানুয়ারি জানায়, ইউরোপে রাশিয়া তার গ্যাস রপ্তানি হ্রাস করেছে। এতে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকার তথ্যমতে, জ্বালানি খরচের মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে ইউরোপের লাখ লাখ বাড়িতে আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর একজন ভোক্তাকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৫ ডলার বেশি খরচ করতে হবে জ্বালানির জন্য। আর পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ হলে বেশ কয়েকটি দেশের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে।
জ্বালানি এই মুহূর্তে ইউরোপের আরেকটি বড় উদ্বেগ। রাশিয়ার জন্যও হতে পারত। তবে ততটা হচ্ছে না। কারণ, ইউরোপের বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও রাশিয়া চীনে জ্বালানি সরবরাহ করে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে। সম্প্রতি চীনে রাশিয়ার কয়লা ও গ্যাস সরবরাহও বেড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এই সরবরাহ আরও বাড়াবে। অর্থাৎ, রাশিয়া ইউরোপ বিমুখ হয়ে উঠবে। এটা একটা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেবে। এতে বিপদে পড়বে ইউরোপই। কারণ, তাদের সামনে বিকল্প তৈরির জন্য সময় বেশি থাকবে না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে নজর যাবে। আর মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপকে নজর দিতে হলে সংকটে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে জড়িয়ে যাবে, যা অবধারিতভাবেই ময়দানে টেনে আনবে চীনকে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এখন আর অপ্রকাশ্য কিছু নয়। এরই মধ্যে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো হলে রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা রুশ ব্যাংগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া তাদের তেল, গ্যাস ও প্রযুক্তি খাতেও প্রভাব ফেলবে এই নিষেধাজ্ঞা। তবে এটি শুধু রাশিয়াকে নয়, গোটা ইউরোপের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে মোক্ষম কথাটি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিভাগের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি নাথান সেলস। তাঁর মতে, যেকোনো সময় আপনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তবে এতে আপনার নিজের, বন্ধু ও মিত্রদের ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী পক্ষও জানে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও সময়ের সঙ্গে এর কড়াকড়ি কমে আসে। কারণ, টিকে থাকার প্রশ্নটি উভয়ের সামনেই রয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রুশ ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এখন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য এবার যুদ্ধ বাধলে এ সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, যা উভয় পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধের দামামা পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনুভূত হবে। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে জয় পেলে অন্যান্য দেশও সীমান্তে একই রকম কৌশল নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক ছক সামনে হাজির হতে পারে। সে ছকে নিশ্চিতভাবেই চীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকতে উল্লেখ করার মতো।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব তো অবশ্যম্ভাবী, যা পশ্চিমাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে।
তবে এই শঙ্কা এখনো এড়ানো যেতে পারে। ইউক্রেন সরকার পুরোদস্তুর যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোর জন্য চেষ্টা করছে। এ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা একটি কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। এদিকে বাইডেন প্রশাসন কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই হবে। তবে যুদ্ধ হলে এর রূপ কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ নিয়ে ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, এই সময়ে যেকোনো যুদ্ধই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই ভয়ংকরেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আঞ্চলিক সামরিক জোট ন্যাটো। তাদের ওপরই নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে ও এর প্রভাব কেমন হবে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে কমব্যাট সেনা মোতায়েন করবে না ন্যাটো। তবে তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলে সহযোগী দেশ ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে ন্যাটো।

কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা চরম আকার ধারণ করতে পারে। বলে রাখা ভালো, ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ যে সম্ভাব্য যুদ্ধে সেনা মোতায়েন না করার কথা আগ বাড়িয়ে বলেছেন, তার কারণটি রয়েছে সংকটের প্রেক্ষাপটের ভেতরেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের দিকেই জোর দিচ্ছেন। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য যে কয়টা শর্ত দিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনকে যুক্ত না করার বিষয়টি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দেশকে তারা কোনোভাবেই ন্যাটো জোটে দেখতে চায় না। এই শর্ত ‘পরিপালনযোগ্য’ নয় বলে এরই মধ্যে পশ্চিমা পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলেও স্টলটেনবার্গের ভাষ্য বলে দেয়, তারা বেশ সতর্ক। একই সঙ্গে শেষ কথাটি দিয়ে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধে তাদের সংযোগের পথটি খোলাই রেখেছে।
বলা যায় ইউক্রেনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকটের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপ সরু সুতার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে বলা যায়। রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক গবেষক নাইজেল গোল্ড-ডেভিস যেমনটা বলছেন, গত শতকের ৮০-এর দশকের পর ইউরোপ এবার খুব সহজেই সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে।
এ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক জেমস নিক্সি সিএনএনকে বলেন, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটি কী হবে, তা নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। এখন রাশিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক বাস্তবিক সমস্যা, যার বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া একদিকে সেনা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা নেতাদের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যও বাড়ছে। গত ২৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে জানান, যেকোনো হামলার জন্য রাশিয়ার ভয়াবহ পরিণতি হবে।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সব মিলিয়ে দুই পক্ষ থেকেই এমন সব বক্তব্য আসছে, যা উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা নিয়ে পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা চালানো হলে বড় মূল্য চোকাতে হবে রাশিয়াকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে একটি সামরিক ঐক্য তৈরি হচ্ছে ইউরোপে।
জেমস নিক্সি যেমন বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার কত সেনা পাঠাবে, তার ওপর। অনেক বিশ্লেষক এখনো আশাবাদী যে, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। ইউক্রেনে হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়বে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও বাল্টিক রাজ্যগুলোয়।
তবে এই সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ছাড় দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন জেমস নিক্সি। তাঁর মতে, সংকট নিরসনের জন্য রাশিয়াকে যদি আবারও সীমানা পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়, বা এমন আচরণে নিরুৎসাহিত করা না হয়, তবে তারা একেই একটি উপায় হিসেবে বেছে নেবে। তারা তখন খুঁজবে এর পর অনুরূপ পদক্ষেপ কোন অঞ্চলের জন্য নেওয়া যায়।
একই কথা বলেছেন ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর অনেক দেশের সীমান্ত রয়েছে। এ নিয়ে অনেক উদ্বেগের বিষয় থাকবে। কারণ, যুদ্ধ হলে এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে পড়বে। আর এতে ওই সব দেশের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
মোদ্দা কথা ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর মুখোমুখি রাশিয়া যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার সমাধান খুব একটা সহজ পথে আসবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর সমাধানের পথটি কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এ বিষয়ে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। শুরুতেই স্টলটেনবার্গের সর্বশেষ বক্তব্যের সূত্র ধরে, যা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। ন্যাটো জোট বিষয়টি নিয়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে—এটা স্পষ্ট।
ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য আবেদন করে। এর পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বাড়ে এই উত্তেজনা। তবে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলোকে রক্ষার জন্য হলেও পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন করবে ন্যাটো।
এর ইঙ্গিত অবশ্য গত ২৩ জানুয়ারিই পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সেদিন জানিয়েছিলেন, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক অবস্থানের কথাও সেদিন জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন মার্কিন কর্মকর্তা পরে সিএনএনকে বলেন, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক নিল মেলভিনের মতে, ন্যাটোর সামরিক জোটকে এই যুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে ঘিরে পুরো যুদ্ধের কৌশল সাজাতে হবে। আর এটি ইউরোপে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে। মেলভিনের ধারণা, যুদ্ধ হলে প্রচুর সেনার প্রয়োজন হবে। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন সেনা আনতে হবে, যা ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এ তো জানা কথাই যে, যুদ্ধের পেছন পেছন আসে অর্থনৈতিক সংকট। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে দেশটির কৃষিজাত পণ্য সরবরাহে বাধা তৈরি হবে, যা খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে। আর এই সংকটের সঙ্গে ইউক্রেন যেহেতু জড়িয়ে, তখন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ, বিশ্বের অন্যতম চারটি শস্য রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন্স কাউন্সিলের তথ্যমতে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ভুট্টা আমদানির ছয় ভাগের এক ভাগই হবে ইউক্রেন থেকে। সুতরাং এই দেশে হামলা চালানো হলে পুরো বিশ্বের খাদ্য সরবরাহেই প্রভাব পড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা। কারণ, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, সেগুলো হলো—রাশিয়া, নরওয়ে, আলজেরিয়া ও কাতার। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে আসে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ও নরওয়ের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি যেসব দেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আসে, তা শতাংশের হিসাবে ১০-এর কম। একই চিত্র অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রেও।
এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় এসেছে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন। রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি দুই দেশই বলছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন চালুর কাজ পিছিয়ে যাবে।
ফলে জ্বালানি প্রশ্নটি অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। এ বিষয়ে নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, আপনি যদি বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের সঙ্গে বড় সংঘর্ষের কথা ভাবেন, তাহলে বড় কোনো প্রভাব ইউরোপের জ্বালানির বাজারে পড়বে না—এমনটি ভাবা আপনার উচিত নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে ইউরোপের এই জ্বালানি নির্ভরতাকে রাশিয়াও যুদ্ধে কাজে লাগাবে। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই নির্ভরতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত ২৯ জানুয়ারি জানায়, ইউরোপে রাশিয়া তার গ্যাস রপ্তানি হ্রাস করেছে। এতে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকার তথ্যমতে, জ্বালানি খরচের মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে ইউরোপের লাখ লাখ বাড়িতে আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর একজন ভোক্তাকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৫ ডলার বেশি খরচ করতে হবে জ্বালানির জন্য। আর পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ হলে বেশ কয়েকটি দেশের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে।
জ্বালানি এই মুহূর্তে ইউরোপের আরেকটি বড় উদ্বেগ। রাশিয়ার জন্যও হতে পারত। তবে ততটা হচ্ছে না। কারণ, ইউরোপের বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও রাশিয়া চীনে জ্বালানি সরবরাহ করে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে। সম্প্রতি চীনে রাশিয়ার কয়লা ও গ্যাস সরবরাহও বেড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এই সরবরাহ আরও বাড়াবে। অর্থাৎ, রাশিয়া ইউরোপ বিমুখ হয়ে উঠবে। এটা একটা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেবে। এতে বিপদে পড়বে ইউরোপই। কারণ, তাদের সামনে বিকল্প তৈরির জন্য সময় বেশি থাকবে না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে নজর যাবে। আর মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপকে নজর দিতে হলে সংকটে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে জড়িয়ে যাবে, যা অবধারিতভাবেই ময়দানে টেনে আনবে চীনকে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এখন আর অপ্রকাশ্য কিছু নয়। এরই মধ্যে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো হলে রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা রুশ ব্যাংগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া তাদের তেল, গ্যাস ও প্রযুক্তি খাতেও প্রভাব ফেলবে এই নিষেধাজ্ঞা। তবে এটি শুধু রাশিয়াকে নয়, গোটা ইউরোপের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে মোক্ষম কথাটি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিভাগের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি নাথান সেলস। তাঁর মতে, যেকোনো সময় আপনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তবে এতে আপনার নিজের, বন্ধু ও মিত্রদের ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী পক্ষও জানে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও সময়ের সঙ্গে এর কড়াকড়ি কমে আসে। কারণ, টিকে থাকার প্রশ্নটি উভয়ের সামনেই রয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রুশ ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এখন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য এবার যুদ্ধ বাধলে এ সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, যা উভয় পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধের দামামা পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনুভূত হবে। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে জয় পেলে অন্যান্য দেশও সীমান্তে একই রকম কৌশল নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক ছক সামনে হাজির হতে পারে। সে ছকে নিশ্চিতভাবেই চীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকতে উল্লেখ করার মতো।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব তো অবশ্যম্ভাবী, যা পশ্চিমাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে।
তবে এই শঙ্কা এখনো এড়ানো যেতে পারে। ইউক্রেন সরকার পুরোদস্তুর যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোর জন্য চেষ্টা করছে। এ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা একটি কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। এদিকে বাইডেন প্রশাসন কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই হবে। তবে যুদ্ধ হলে এর রূপ কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ নিয়ে ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, এই সময়ে যেকোনো যুদ্ধই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই ভয়ংকরেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আঞ্চলিক সামরিক জোট ন্যাটো। তাদের ওপরই নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে ও এর প্রভাব কেমন হবে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে কমব্যাট সেনা মোতায়েন করবে না ন্যাটো। তবে তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলে সহযোগী দেশ ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে ন্যাটো।

কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা চরম আকার ধারণ করতে পারে। বলে রাখা ভালো, ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ যে সম্ভাব্য যুদ্ধে সেনা মোতায়েন না করার কথা আগ বাড়িয়ে বলেছেন, তার কারণটি রয়েছে সংকটের প্রেক্ষাপটের ভেতরেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের দিকেই জোর দিচ্ছেন। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য যে কয়টা শর্ত দিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনকে যুক্ত না করার বিষয়টি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দেশকে তারা কোনোভাবেই ন্যাটো জোটে দেখতে চায় না। এই শর্ত ‘পরিপালনযোগ্য’ নয় বলে এরই মধ্যে পশ্চিমা পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলেও স্টলটেনবার্গের ভাষ্য বলে দেয়, তারা বেশ সতর্ক। একই সঙ্গে শেষ কথাটি দিয়ে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধে তাদের সংযোগের পথটি খোলাই রেখেছে।
বলা যায় ইউক্রেনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকটের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপ সরু সুতার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে বলা যায়। রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক গবেষক নাইজেল গোল্ড-ডেভিস যেমনটা বলছেন, গত শতকের ৮০-এর দশকের পর ইউরোপ এবার খুব সহজেই সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে।
এ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক জেমস নিক্সি সিএনএনকে বলেন, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটি কী হবে, তা নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। এখন রাশিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক বাস্তবিক সমস্যা, যার বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া একদিকে সেনা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা নেতাদের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যও বাড়ছে। গত ২৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে জানান, যেকোনো হামলার জন্য রাশিয়ার ভয়াবহ পরিণতি হবে।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সব মিলিয়ে দুই পক্ষ থেকেই এমন সব বক্তব্য আসছে, যা উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা নিয়ে পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা চালানো হলে বড় মূল্য চোকাতে হবে রাশিয়াকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে একটি সামরিক ঐক্য তৈরি হচ্ছে ইউরোপে।
জেমস নিক্সি যেমন বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার কত সেনা পাঠাবে, তার ওপর। অনেক বিশ্লেষক এখনো আশাবাদী যে, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। ইউক্রেনে হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়বে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও বাল্টিক রাজ্যগুলোয়।
তবে এই সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ছাড় দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন জেমস নিক্সি। তাঁর মতে, সংকট নিরসনের জন্য রাশিয়াকে যদি আবারও সীমানা পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়, বা এমন আচরণে নিরুৎসাহিত করা না হয়, তবে তারা একেই একটি উপায় হিসেবে বেছে নেবে। তারা তখন খুঁজবে এর পর অনুরূপ পদক্ষেপ কোন অঞ্চলের জন্য নেওয়া যায়।
একই কথা বলেছেন ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর অনেক দেশের সীমান্ত রয়েছে। এ নিয়ে অনেক উদ্বেগের বিষয় থাকবে। কারণ, যুদ্ধ হলে এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে পড়বে। আর এতে ওই সব দেশের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
মোদ্দা কথা ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর মুখোমুখি রাশিয়া যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার সমাধান খুব একটা সহজ পথে আসবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর সমাধানের পথটি কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এ বিষয়ে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। শুরুতেই স্টলটেনবার্গের সর্বশেষ বক্তব্যের সূত্র ধরে, যা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। ন্যাটো জোট বিষয়টি নিয়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে—এটা স্পষ্ট।
ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য আবেদন করে। এর পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বাড়ে এই উত্তেজনা। তবে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলোকে রক্ষার জন্য হলেও পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন করবে ন্যাটো।
এর ইঙ্গিত অবশ্য গত ২৩ জানুয়ারিই পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সেদিন জানিয়েছিলেন, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক অবস্থানের কথাও সেদিন জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন মার্কিন কর্মকর্তা পরে সিএনএনকে বলেন, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক নিল মেলভিনের মতে, ন্যাটোর সামরিক জোটকে এই যুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে ঘিরে পুরো যুদ্ধের কৌশল সাজাতে হবে। আর এটি ইউরোপে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে। মেলভিনের ধারণা, যুদ্ধ হলে প্রচুর সেনার প্রয়োজন হবে। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন সেনা আনতে হবে, যা ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এ তো জানা কথাই যে, যুদ্ধের পেছন পেছন আসে অর্থনৈতিক সংকট। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে দেশটির কৃষিজাত পণ্য সরবরাহে বাধা তৈরি হবে, যা খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে। আর এই সংকটের সঙ্গে ইউক্রেন যেহেতু জড়িয়ে, তখন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ, বিশ্বের অন্যতম চারটি শস্য রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন্স কাউন্সিলের তথ্যমতে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ভুট্টা আমদানির ছয় ভাগের এক ভাগই হবে ইউক্রেন থেকে। সুতরাং এই দেশে হামলা চালানো হলে পুরো বিশ্বের খাদ্য সরবরাহেই প্রভাব পড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা। কারণ, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, সেগুলো হলো—রাশিয়া, নরওয়ে, আলজেরিয়া ও কাতার। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে আসে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ও নরওয়ের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি যেসব দেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আসে, তা শতাংশের হিসাবে ১০-এর কম। একই চিত্র অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রেও।
এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় এসেছে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন। রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি দুই দেশই বলছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন চালুর কাজ পিছিয়ে যাবে।
ফলে জ্বালানি প্রশ্নটি অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। এ বিষয়ে নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, আপনি যদি বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের সঙ্গে বড় সংঘর্ষের কথা ভাবেন, তাহলে বড় কোনো প্রভাব ইউরোপের জ্বালানির বাজারে পড়বে না—এমনটি ভাবা আপনার উচিত নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে ইউরোপের এই জ্বালানি নির্ভরতাকে রাশিয়াও যুদ্ধে কাজে লাগাবে। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই নির্ভরতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত ২৯ জানুয়ারি জানায়, ইউরোপে রাশিয়া তার গ্যাস রপ্তানি হ্রাস করেছে। এতে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকার তথ্যমতে, জ্বালানি খরচের মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে ইউরোপের লাখ লাখ বাড়িতে আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর একজন ভোক্তাকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৫ ডলার বেশি খরচ করতে হবে জ্বালানির জন্য। আর পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ হলে বেশ কয়েকটি দেশের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে।
জ্বালানি এই মুহূর্তে ইউরোপের আরেকটি বড় উদ্বেগ। রাশিয়ার জন্যও হতে পারত। তবে ততটা হচ্ছে না। কারণ, ইউরোপের বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও রাশিয়া চীনে জ্বালানি সরবরাহ করে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে। সম্প্রতি চীনে রাশিয়ার কয়লা ও গ্যাস সরবরাহও বেড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এই সরবরাহ আরও বাড়াবে। অর্থাৎ, রাশিয়া ইউরোপ বিমুখ হয়ে উঠবে। এটা একটা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেবে। এতে বিপদে পড়বে ইউরোপই। কারণ, তাদের সামনে বিকল্প তৈরির জন্য সময় বেশি থাকবে না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে নজর যাবে। আর মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপকে নজর দিতে হলে সংকটে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে জড়িয়ে যাবে, যা অবধারিতভাবেই ময়দানে টেনে আনবে চীনকে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এখন আর অপ্রকাশ্য কিছু নয়। এরই মধ্যে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো হলে রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা রুশ ব্যাংগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া তাদের তেল, গ্যাস ও প্রযুক্তি খাতেও প্রভাব ফেলবে এই নিষেধাজ্ঞা। তবে এটি শুধু রাশিয়াকে নয়, গোটা ইউরোপের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে মোক্ষম কথাটি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিভাগের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি নাথান সেলস। তাঁর মতে, যেকোনো সময় আপনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তবে এতে আপনার নিজের, বন্ধু ও মিত্রদের ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী পক্ষও জানে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও সময়ের সঙ্গে এর কড়াকড়ি কমে আসে। কারণ, টিকে থাকার প্রশ্নটি উভয়ের সামনেই রয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রুশ ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এখন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য এবার যুদ্ধ বাধলে এ সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, যা উভয় পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধের দামামা পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনুভূত হবে। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে জয় পেলে অন্যান্য দেশও সীমান্তে একই রকম কৌশল নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক ছক সামনে হাজির হতে পারে। সে ছকে নিশ্চিতভাবেই চীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকতে উল্লেখ করার মতো।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব তো অবশ্যম্ভাবী, যা পশ্চিমাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে।
তবে এই শঙ্কা এখনো এড়ানো যেতে পারে। ইউক্রেন সরকার পুরোদস্তুর যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোর জন্য চেষ্টা করছে। এ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা একটি কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। এদিকে বাইডেন প্রশাসন কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই হবে। তবে যুদ্ধ হলে এর রূপ কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ নিয়ে ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, এই সময়ে যেকোনো যুদ্ধই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই ভয়ংকরেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আঞ্চলিক সামরিক জোট ন্যাটো। তাদের ওপরই নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে ও এর প্রভাব কেমন হবে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে কমব্যাট সেনা মোতায়েন করবে না ন্যাটো। তবে তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলে সহযোগী দেশ ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে ন্যাটো।

কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা চরম আকার ধারণ করতে পারে। বলে রাখা ভালো, ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ যে সম্ভাব্য যুদ্ধে সেনা মোতায়েন না করার কথা আগ বাড়িয়ে বলেছেন, তার কারণটি রয়েছে সংকটের প্রেক্ষাপটের ভেতরেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের দিকেই জোর দিচ্ছেন। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য যে কয়টা শর্ত দিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনকে যুক্ত না করার বিষয়টি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দেশকে তারা কোনোভাবেই ন্যাটো জোটে দেখতে চায় না। এই শর্ত ‘পরিপালনযোগ্য’ নয় বলে এরই মধ্যে পশ্চিমা পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলেও স্টলটেনবার্গের ভাষ্য বলে দেয়, তারা বেশ সতর্ক। একই সঙ্গে শেষ কথাটি দিয়ে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধে তাদের সংযোগের পথটি খোলাই রেখেছে।
বলা যায় ইউক্রেনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকটের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপ সরু সুতার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে বলা যায়। রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক গবেষক নাইজেল গোল্ড-ডেভিস যেমনটা বলছেন, গত শতকের ৮০-এর দশকের পর ইউরোপ এবার খুব সহজেই সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে।
এ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক জেমস নিক্সি সিএনএনকে বলেন, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটি কী হবে, তা নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। এখন রাশিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক বাস্তবিক সমস্যা, যার বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া একদিকে সেনা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা নেতাদের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যও বাড়ছে। গত ২৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে জানান, যেকোনো হামলার জন্য রাশিয়ার ভয়াবহ পরিণতি হবে।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সব মিলিয়ে দুই পক্ষ থেকেই এমন সব বক্তব্য আসছে, যা উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা নিয়ে পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা চালানো হলে বড় মূল্য চোকাতে হবে রাশিয়াকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে একটি সামরিক ঐক্য তৈরি হচ্ছে ইউরোপে।
জেমস নিক্সি যেমন বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার কত সেনা পাঠাবে, তার ওপর। অনেক বিশ্লেষক এখনো আশাবাদী যে, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। ইউক্রেনে হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়বে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও বাল্টিক রাজ্যগুলোয়।
তবে এই সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ছাড় দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন জেমস নিক্সি। তাঁর মতে, সংকট নিরসনের জন্য রাশিয়াকে যদি আবারও সীমানা পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়, বা এমন আচরণে নিরুৎসাহিত করা না হয়, তবে তারা একেই একটি উপায় হিসেবে বেছে নেবে। তারা তখন খুঁজবে এর পর অনুরূপ পদক্ষেপ কোন অঞ্চলের জন্য নেওয়া যায়।
একই কথা বলেছেন ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর অনেক দেশের সীমান্ত রয়েছে। এ নিয়ে অনেক উদ্বেগের বিষয় থাকবে। কারণ, যুদ্ধ হলে এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে পড়বে। আর এতে ওই সব দেশের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
মোদ্দা কথা ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর মুখোমুখি রাশিয়া যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার সমাধান খুব একটা সহজ পথে আসবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর সমাধানের পথটি কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এ বিষয়ে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। শুরুতেই স্টলটেনবার্গের সর্বশেষ বক্তব্যের সূত্র ধরে, যা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। ন্যাটো জোট বিষয়টি নিয়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে—এটা স্পষ্ট।
ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য আবেদন করে। এর পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বাড়ে এই উত্তেজনা। তবে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলোকে রক্ষার জন্য হলেও পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন করবে ন্যাটো।
এর ইঙ্গিত অবশ্য গত ২৩ জানুয়ারিই পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সেদিন জানিয়েছিলেন, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক অবস্থানের কথাও সেদিন জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন মার্কিন কর্মকর্তা পরে সিএনএনকে বলেন, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক নিল মেলভিনের মতে, ন্যাটোর সামরিক জোটকে এই যুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে ঘিরে পুরো যুদ্ধের কৌশল সাজাতে হবে। আর এটি ইউরোপে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে। মেলভিনের ধারণা, যুদ্ধ হলে প্রচুর সেনার প্রয়োজন হবে। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন সেনা আনতে হবে, যা ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এ তো জানা কথাই যে, যুদ্ধের পেছন পেছন আসে অর্থনৈতিক সংকট। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে দেশটির কৃষিজাত পণ্য সরবরাহে বাধা তৈরি হবে, যা খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে। আর এই সংকটের সঙ্গে ইউক্রেন যেহেতু জড়িয়ে, তখন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ, বিশ্বের অন্যতম চারটি শস্য রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন্স কাউন্সিলের তথ্যমতে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ভুট্টা আমদানির ছয় ভাগের এক ভাগই হবে ইউক্রেন থেকে। সুতরাং এই দেশে হামলা চালানো হলে পুরো বিশ্বের খাদ্য সরবরাহেই প্রভাব পড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা। কারণ, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, সেগুলো হলো—রাশিয়া, নরওয়ে, আলজেরিয়া ও কাতার। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে আসে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ও নরওয়ের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি যেসব দেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আসে, তা শতাংশের হিসাবে ১০-এর কম। একই চিত্র অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রেও।
এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় এসেছে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন। রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি দুই দেশই বলছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন চালুর কাজ পিছিয়ে যাবে।
ফলে জ্বালানি প্রশ্নটি অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। এ বিষয়ে নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, আপনি যদি বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের সঙ্গে বড় সংঘর্ষের কথা ভাবেন, তাহলে বড় কোনো প্রভাব ইউরোপের জ্বালানির বাজারে পড়বে না—এমনটি ভাবা আপনার উচিত নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে ইউরোপের এই জ্বালানি নির্ভরতাকে রাশিয়াও যুদ্ধে কাজে লাগাবে। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই নির্ভরতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত ২৯ জানুয়ারি জানায়, ইউরোপে রাশিয়া তার গ্যাস রপ্তানি হ্রাস করেছে। এতে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকার তথ্যমতে, জ্বালানি খরচের মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে ইউরোপের লাখ লাখ বাড়িতে আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর একজন ভোক্তাকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৫ ডলার বেশি খরচ করতে হবে জ্বালানির জন্য। আর পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ হলে বেশ কয়েকটি দেশের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে।
জ্বালানি এই মুহূর্তে ইউরোপের আরেকটি বড় উদ্বেগ। রাশিয়ার জন্যও হতে পারত। তবে ততটা হচ্ছে না। কারণ, ইউরোপের বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও রাশিয়া চীনে জ্বালানি সরবরাহ করে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে। সম্প্রতি চীনে রাশিয়ার কয়লা ও গ্যাস সরবরাহও বেড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এই সরবরাহ আরও বাড়াবে। অর্থাৎ, রাশিয়া ইউরোপ বিমুখ হয়ে উঠবে। এটা একটা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেবে। এতে বিপদে পড়বে ইউরোপই। কারণ, তাদের সামনে বিকল্প তৈরির জন্য সময় বেশি থাকবে না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে নজর যাবে। আর মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপকে নজর দিতে হলে সংকটে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে জড়িয়ে যাবে, যা অবধারিতভাবেই ময়দানে টেনে আনবে চীনকে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এখন আর অপ্রকাশ্য কিছু নয়। এরই মধ্যে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো হলে রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা রুশ ব্যাংগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া তাদের তেল, গ্যাস ও প্রযুক্তি খাতেও প্রভাব ফেলবে এই নিষেধাজ্ঞা। তবে এটি শুধু রাশিয়াকে নয়, গোটা ইউরোপের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে মোক্ষম কথাটি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিভাগের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি নাথান সেলস। তাঁর মতে, যেকোনো সময় আপনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তবে এতে আপনার নিজের, বন্ধু ও মিত্রদের ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী পক্ষও জানে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও সময়ের সঙ্গে এর কড়াকড়ি কমে আসে। কারণ, টিকে থাকার প্রশ্নটি উভয়ের সামনেই রয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রুশ ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এখন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য এবার যুদ্ধ বাধলে এ সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, যা উভয় পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধের দামামা পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনুভূত হবে। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে জয় পেলে অন্যান্য দেশও সীমান্তে একই রকম কৌশল নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক ছক সামনে হাজির হতে পারে। সে ছকে নিশ্চিতভাবেই চীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকতে উল্লেখ করার মতো।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
৩০ জানুয়ারি ২০২২
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
৩০ জানুয়ারি ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
৩০ জানুয়ারি ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
৩০ জানুয়ারি ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে