
১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন দক্ষিণ এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এটি তাঁর ‘প্রতিবেশী সবার আগে’—পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন। এই নীতির মূল ভিত্তি—ভারতের ছোট ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু সীমান্ত বিরোধ, দ্বিপক্ষীয় মতানৈক্য, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেরি এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে নীতিটি মার খেয়ে যায় শিগগির।
তারপরও বাংলাদেশে ভারতের এই নীতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে ভাবা হচ্ছিল। কারণ, টানা ১৫ বছরের অপশাসনে পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি ঘনিষ্ঠভাবেই কাজ করেছেন। দুই পক্ষের সম্পর্ককে ‘উইন-উইন’ বা ভারসাম্যপূর্ণ বলেই বিবেচনা করা হতো।
জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার বিপক্ষে জনরোষ বাড়তে থাকে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন তাঁর শাসনের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকে। এই আন্দোলন একপর্যায়ে তাঁর পতনের এক দফায় রূপ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় তিনি ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে যান।
বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক অজনপ্রিয় হওয়ার পরও শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলকে ব্যাপক ধাক্কা দেয়। শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, ভারত তত দিনই তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। এই সময়ে নয়াদিল্লি অন্য অংশীদারদের উদ্বেগ এমনকি বাংলাদেশের জনগণকেও উপেক্ষা করেছে। মোদির শাসনামলে ভারত অন্যান্য ছোট প্রতিবেশীর বেলায়ও একই ধরনের নীতি গ্রহণ করে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি বরণ করেছে।
এটি স্পষ্ট যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের এই নীতিগত ব্যর্থতা কেবল বাহ্যিক ঘটনাবলি বা প্রভাবকের কারণে নয়, এগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিফলনও বটে। কূটনীতিকে কেবল নিরাপত্তাকেন্দ্রিক করা থেকে শুরু করে মোদির ‘লৌহমানব’ ভাবমূর্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের উদারনৈতিক চিত্রের মুখোশ খসে পড়েছে। শেখ হাসিনার মতো সরকারগুলো মোদির অনুগ্রহধন্য ব্যবসায়িক বিভিন্ন স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যকে আরও সন্দেহপূর্ণ করে তোলে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদের প্রতি পক্ষপাত বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর নির্যাতিত নাগরিকদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন করেছিল, সেখানে বিদেশ থেকে আসা মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। কেবল তা-ই নয়, ভারতে মুসলিমদের প্রতি বিজেপি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও দেশের বাইরে মোদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় মোদিকে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ভারত সরকারকে আত্মসমালোচনার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু দেশটি নীতি সংশোধনের মতো জায়গায় যেতে পারেনি বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে ভারতের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি দক্ষিণ এশিয়ায় মোদি সরকারের প্রথম বড় ব্যর্থতা নয়, শেষও নয়। একটি প্রকৃত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নীতি বা দর্শন অনুসরণ কেবল ভারতের জন্যই ক্ষতিকর নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও তা বিপর্যয়কর ফল বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। মাঝে এক মেয়াদ বিরতির পর ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন তিনি। ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁর শাসন ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মীদের কঠোর হস্তে দমন করতে থাকেন।
বিরোধী দলগুলোর মতোই শেখ হাসিনা সরকার দেশের কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করে। তিনি ভারতের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়া থেকে দূরে রাখেন। বিপরীতে ভারত শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে থাকে। দেশটির কর্মকর্তাদের যুক্তি, শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালে বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হবে। কেবল তা-ই নয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর ভারত বাইডেন প্রশাসনের কাছে লবিং করে, যেন গণতন্ত্র ইস্যুতে শেখ হাসিনাকে চাপ না দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেতৃত্ব দিয়েছেন, সামরিক বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলে ভারত ধরেই নিয়েছিল, চলমান আন্দোলনের চাপের পরও তিনি টিকে যাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বলার পর ভারত বিশাল ধাক্কা খায়। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য বিরাট গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কোনো পশ্চিমা দেশই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি।
শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি এরই মধ্যে এই অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও অবনমন হয়েছে।
উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। মিয়ানমারে ভারত গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে জান্তা সরকারের পক্ষ নিয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ঐতিহাসিক আফগান জাতীয়তাবাদীদের বাদ দিয়ে। বাংলাদেশে অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সীমান্তে ব্যাপক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে ভারত; যা হিতে বিপরীত হয়েছে।
মোদির ‘লৌহমানব’ রাজনৈতিক কৌশল ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতির গতিপথও বদলে দিয়েছে। চীন-ভারত সীমান্তের বেইজিংয়ের বিপরীতে চুপ থাকলেও ছোট প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ভারত শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে। ২০১৫ সালে ভারত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অভিযান চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দোহাই দিয়ে। একই বছরে নেপাল নিজেদের সেক্যুলার ঘোষণার পর ভারত দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। মালদ্বীপের মন্ত্রীরা মোদির সমালোচনার পর তাঁর সমর্থকেরা মালদ্বীপ বয়কটের ধুয়ো তোলে।
সীমান্তে কঠোর অবস্থান, পানিবণ্টন, ট্রানজিট সুবিধা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ইস্যুতে ভারতের অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছিল। যার প্রকাশ ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর জনগণের তীব্র ক্ষোভের মাধ্যমে।
ভারতের রাজনৈতিক বিরোধীরা নিয়মিতই মোদির সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে আদানির মতো ধনকুবেরদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সরব ছিলেন। স্বার্থান্বেষী পুঁজিপতিদের সঙ্গে মোদি সরকারের এমন সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশেও প্রভাব ফেলেছে। গত বছর গৌতম আদানি ও শেখ হাসিনার একটি ছবি সামনে আসে। সে সময় জানা যায়, গৌতম আদানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বাংলাদেশিরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। মূলত সরকার অতিরিক্ত দামে এই বিদ্যুৎ কিনছিল, যা কেবল আদানির পকেটকেই ভারী করবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মোদিসংশ্লিষ্টদের সমর্থন শেখ হাসিনার প্রয়োজন ছিল।
জনতুষ্টিবাদ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিই বাংলাদেশে ভারতকে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে মোদি সরকার যে হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ করেছে, তা আরও বেশি ক্ষতিকর। ২০১৯ সালে ভারত যে সিএএ আইন করেছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুরা। এই আইনের অঘোষিত মূল লক্ষ্য হলো—হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা (সে সময় ভারত বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ভরা আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় শেখ হাসিনার মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন)। সে সময় বিষয়টি বাংলাদেশ ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দেয়। সে সময় মোদির ডান হাত বলে খ্যাত ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উইপোকা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিজেপি নেতাদের এ ধরনের মন্তব্যও এই মনোভাবের আগুনে ঘি ঢালে।
বিজেপি সরকার সিএএ আইন চালু করার আগে, ভারতের বিচার বিভাগ আসামে নাগরিকদের নথিভুক্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কঠোর জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সমালোচকেরা এই নির্দেশকে অনথিভুক্ত ভারতীয় মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছিলেন, সিএএ ও এনআরসি লাখ লাখ ভারতীয় মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে। যদিও সিএএ এখনো সেই অর্থে কার্যকর হয়নি।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছিল, শেখ হাসিনা সরকার এই ধারণাই পোক্ত করছিল যে তারা দিল্লি থেকে আদেশ নেয়। ২০২২ সালে বিজেপির মুখপাত্র মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনা সরকার বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যায়। ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি বিজেপি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতের বিরোধী মনোভাবকেই আরও উসকে দেয়। চলতি বছর নির্বাচনের সময় মোদি মুসলিম বিরোধিতাকে প্রচারণার হাতিয়ার করেন। গত বছর ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র যুক্ত করে (যেখানে সব ছোট প্রতিবেশী দেশকে ভারতের বলে দেখানো হয়) প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্ষোভ আরও উসকে দেন।
সর্বশেষ ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদি বলেন, ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিক বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এটি মূলত ভারতকে একটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা। তাঁর এই প্রচেষ্টা ভারতের বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতির দেশ হওয়ার যে ঐতিহ্য, সেটাকেই নাকচ করে, যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হয়েছে। এর কারণ মূলত মোদি সরকারের সমর্থক ও গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে হিন্দুদের হামলা হওয়া নিয়ে ব্যাপক অপতথ্য প্রচার করেছে। কিন্তু মোদি সরকার এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এটি মোটেও অবাক করা কোনো বিষয় নয়।
এ মুহূর্তে মোদি সরকারের আত্মসমালোচনার সক্ষমতা সামান্যই বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনার জন্য পাকিস্তান, চীন বা ইসলামপন্থীদের দোষারোপ করার পরিবর্তে ভারতের স্বীকার করা উচিত, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকেরা তাদের স্বকীয়তা ফিরে পেতে পারে এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে। যদিও বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভারতকে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে সমাদৃত করা হয়, তারপরও দেশটিকে প্রতিবেশীরা তুলনামূলকভাবে দুর্বল শক্তি হিসেবে দেখে। ভূতত্ত্বের অলঙ্ঘনীয় নিয়মানুযায়ী, ছোট প্রতিবেশীদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে মিলেই কাজ করতে হবে। তবে এখন দেখার বিষয়, নয়াদিল্লি বিষয়টি কীভাবে সামলায়।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন দক্ষিণ এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এটি তাঁর ‘প্রতিবেশী সবার আগে’—পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন। এই নীতির মূল ভিত্তি—ভারতের ছোট ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু সীমান্ত বিরোধ, দ্বিপক্ষীয় মতানৈক্য, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেরি এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে নীতিটি মার খেয়ে যায় শিগগির।
তারপরও বাংলাদেশে ভারতের এই নীতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে ভাবা হচ্ছিল। কারণ, টানা ১৫ বছরের অপশাসনে পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি ঘনিষ্ঠভাবেই কাজ করেছেন। দুই পক্ষের সম্পর্ককে ‘উইন-উইন’ বা ভারসাম্যপূর্ণ বলেই বিবেচনা করা হতো।
জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার বিপক্ষে জনরোষ বাড়তে থাকে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন তাঁর শাসনের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকে। এই আন্দোলন একপর্যায়ে তাঁর পতনের এক দফায় রূপ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় তিনি ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে যান।
বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক অজনপ্রিয় হওয়ার পরও শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলকে ব্যাপক ধাক্কা দেয়। শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, ভারত তত দিনই তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। এই সময়ে নয়াদিল্লি অন্য অংশীদারদের উদ্বেগ এমনকি বাংলাদেশের জনগণকেও উপেক্ষা করেছে। মোদির শাসনামলে ভারত অন্যান্য ছোট প্রতিবেশীর বেলায়ও একই ধরনের নীতি গ্রহণ করে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি বরণ করেছে।
এটি স্পষ্ট যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের এই নীতিগত ব্যর্থতা কেবল বাহ্যিক ঘটনাবলি বা প্রভাবকের কারণে নয়, এগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিফলনও বটে। কূটনীতিকে কেবল নিরাপত্তাকেন্দ্রিক করা থেকে শুরু করে মোদির ‘লৌহমানব’ ভাবমূর্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের উদারনৈতিক চিত্রের মুখোশ খসে পড়েছে। শেখ হাসিনার মতো সরকারগুলো মোদির অনুগ্রহধন্য ব্যবসায়িক বিভিন্ন স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যকে আরও সন্দেহপূর্ণ করে তোলে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদের প্রতি পক্ষপাত বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর নির্যাতিত নাগরিকদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন করেছিল, সেখানে বিদেশ থেকে আসা মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। কেবল তা-ই নয়, ভারতে মুসলিমদের প্রতি বিজেপি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও দেশের বাইরে মোদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় মোদিকে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ভারত সরকারকে আত্মসমালোচনার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু দেশটি নীতি সংশোধনের মতো জায়গায় যেতে পারেনি বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে ভারতের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি দক্ষিণ এশিয়ায় মোদি সরকারের প্রথম বড় ব্যর্থতা নয়, শেষও নয়। একটি প্রকৃত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নীতি বা দর্শন অনুসরণ কেবল ভারতের জন্যই ক্ষতিকর নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও তা বিপর্যয়কর ফল বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। মাঝে এক মেয়াদ বিরতির পর ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন তিনি। ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁর শাসন ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মীদের কঠোর হস্তে দমন করতে থাকেন।
বিরোধী দলগুলোর মতোই শেখ হাসিনা সরকার দেশের কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করে। তিনি ভারতের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়া থেকে দূরে রাখেন। বিপরীতে ভারত শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে থাকে। দেশটির কর্মকর্তাদের যুক্তি, শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালে বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হবে। কেবল তা-ই নয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর ভারত বাইডেন প্রশাসনের কাছে লবিং করে, যেন গণতন্ত্র ইস্যুতে শেখ হাসিনাকে চাপ না দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেতৃত্ব দিয়েছেন, সামরিক বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলে ভারত ধরেই নিয়েছিল, চলমান আন্দোলনের চাপের পরও তিনি টিকে যাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বলার পর ভারত বিশাল ধাক্কা খায়। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য বিরাট গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কোনো পশ্চিমা দেশই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি।
শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি এরই মধ্যে এই অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও অবনমন হয়েছে।
উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। মিয়ানমারে ভারত গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে জান্তা সরকারের পক্ষ নিয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ঐতিহাসিক আফগান জাতীয়তাবাদীদের বাদ দিয়ে। বাংলাদেশে অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সীমান্তে ব্যাপক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে ভারত; যা হিতে বিপরীত হয়েছে।
মোদির ‘লৌহমানব’ রাজনৈতিক কৌশল ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতির গতিপথও বদলে দিয়েছে। চীন-ভারত সীমান্তের বেইজিংয়ের বিপরীতে চুপ থাকলেও ছোট প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ভারত শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে। ২০১৫ সালে ভারত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অভিযান চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দোহাই দিয়ে। একই বছরে নেপাল নিজেদের সেক্যুলার ঘোষণার পর ভারত দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। মালদ্বীপের মন্ত্রীরা মোদির সমালোচনার পর তাঁর সমর্থকেরা মালদ্বীপ বয়কটের ধুয়ো তোলে।
সীমান্তে কঠোর অবস্থান, পানিবণ্টন, ট্রানজিট সুবিধা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ইস্যুতে ভারতের অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছিল। যার প্রকাশ ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর জনগণের তীব্র ক্ষোভের মাধ্যমে।
ভারতের রাজনৈতিক বিরোধীরা নিয়মিতই মোদির সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে আদানির মতো ধনকুবেরদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সরব ছিলেন। স্বার্থান্বেষী পুঁজিপতিদের সঙ্গে মোদি সরকারের এমন সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশেও প্রভাব ফেলেছে। গত বছর গৌতম আদানি ও শেখ হাসিনার একটি ছবি সামনে আসে। সে সময় জানা যায়, গৌতম আদানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বাংলাদেশিরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। মূলত সরকার অতিরিক্ত দামে এই বিদ্যুৎ কিনছিল, যা কেবল আদানির পকেটকেই ভারী করবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মোদিসংশ্লিষ্টদের সমর্থন শেখ হাসিনার প্রয়োজন ছিল।
জনতুষ্টিবাদ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিই বাংলাদেশে ভারতকে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে মোদি সরকার যে হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ করেছে, তা আরও বেশি ক্ষতিকর। ২০১৯ সালে ভারত যে সিএএ আইন করেছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুরা। এই আইনের অঘোষিত মূল লক্ষ্য হলো—হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা (সে সময় ভারত বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ভরা আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় শেখ হাসিনার মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন)। সে সময় বিষয়টি বাংলাদেশ ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দেয়। সে সময় মোদির ডান হাত বলে খ্যাত ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উইপোকা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিজেপি নেতাদের এ ধরনের মন্তব্যও এই মনোভাবের আগুনে ঘি ঢালে।
বিজেপি সরকার সিএএ আইন চালু করার আগে, ভারতের বিচার বিভাগ আসামে নাগরিকদের নথিভুক্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কঠোর জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সমালোচকেরা এই নির্দেশকে অনথিভুক্ত ভারতীয় মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছিলেন, সিএএ ও এনআরসি লাখ লাখ ভারতীয় মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে। যদিও সিএএ এখনো সেই অর্থে কার্যকর হয়নি।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছিল, শেখ হাসিনা সরকার এই ধারণাই পোক্ত করছিল যে তারা দিল্লি থেকে আদেশ নেয়। ২০২২ সালে বিজেপির মুখপাত্র মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনা সরকার বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যায়। ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি বিজেপি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতের বিরোধী মনোভাবকেই আরও উসকে দেয়। চলতি বছর নির্বাচনের সময় মোদি মুসলিম বিরোধিতাকে প্রচারণার হাতিয়ার করেন। গত বছর ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র যুক্ত করে (যেখানে সব ছোট প্রতিবেশী দেশকে ভারতের বলে দেখানো হয়) প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্ষোভ আরও উসকে দেন।
সর্বশেষ ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদি বলেন, ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিক বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এটি মূলত ভারতকে একটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা। তাঁর এই প্রচেষ্টা ভারতের বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতির দেশ হওয়ার যে ঐতিহ্য, সেটাকেই নাকচ করে, যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হয়েছে। এর কারণ মূলত মোদি সরকারের সমর্থক ও গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে হিন্দুদের হামলা হওয়া নিয়ে ব্যাপক অপতথ্য প্রচার করেছে। কিন্তু মোদি সরকার এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এটি মোটেও অবাক করা কোনো বিষয় নয়।
এ মুহূর্তে মোদি সরকারের আত্মসমালোচনার সক্ষমতা সামান্যই বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনার জন্য পাকিস্তান, চীন বা ইসলামপন্থীদের দোষারোপ করার পরিবর্তে ভারতের স্বীকার করা উচিত, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকেরা তাদের স্বকীয়তা ফিরে পেতে পারে এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে। যদিও বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভারতকে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে সমাদৃত করা হয়, তারপরও দেশটিকে প্রতিবেশীরা তুলনামূলকভাবে দুর্বল শক্তি হিসেবে দেখে। ভূতত্ত্বের অলঙ্ঘনীয় নিয়মানুযায়ী, ছোট প্রতিবেশীদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে মিলেই কাজ করতে হবে। তবে এখন দেখার বিষয়, নয়াদিল্লি বিষয়টি কীভাবে সামলায়।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি
২৪ আগস্ট ২০২৪
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি
২৪ আগস্ট ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি
২৪ আগস্ট ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি
২৪ আগস্ট ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে