Ajker Patrika

বিদ্যুৎ–জ্বালানির ৪ সচিবের কবজায় ২৫ কোম্পানি

আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০: ৩৭
বিদ্যুৎ–জ্বালানির ৪ সচিবের কবজায় ২৫ কোম্পানি

দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উৎপাদন, সরবরাহ ও সঞ্চালন যাতে গতিশীল থাকে, সে জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অনেক কোম্পানির মাধ্যমে এ খাতের কার্যক্রমের বড় অংশ পরিচালনা করে থাকে সরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কোম্পানিগুলোর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই এসব কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে বসে আছেন। এতে সরকারের নিয়মিত কাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ছাড় পেয়ে যাচ্ছে কোম্পানির নানা অনিয়ম–দুর্নীতিও।

বিদ্যুৎ খাতের ১৫টি ও জ্বালানি খাতের ১৬টি কোম্পানির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিদ্যুৎ খাতের আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান। জ্বালানি খাতের সাতটি কোম্পানির চেয়ারম্যান জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলম। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব মো. আমিন উল আহসানের ভাগে আছে ছয়টি কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদ। আর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার আছেন চারটি কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর কাজের যে ধরন, তাতে এ খাতের কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের থাকা উচিত বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের সচিব হিসেবে শীর্ষ আমলাদের দায়িত্ব হলো, তাঁদের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু সচিবেরা যদি কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে বসে থাকেন, তাতে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তা হিসেবে (আপ স্ট্রিম রেগুলেটরি বডি) সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের পক্ষে কঠোর হওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকের পত্রিকা’কে বলেন, সচিবদের বোর্ডের চেয়ারম্যান হতে আইনে কোনো বাধা নেই। আইন মেনেই তাঁরা বোর্ড পরিচালনা করছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান যে আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান, সেগুলো হলো পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), নর্থ–ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল), কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল), বাংলাদেশ–ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি লিমিটেড (বিআইপিসিএল), বাংলাদেশ–চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) ও বাংলাদেশ–চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড (বিসিআরইসিএল)।

এগুলোর মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে পিজিসিবিতে, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিসিপিসিএল, এপিএসসিএলেও উল্লেখযোগ্য কেনাকাটা রয়েছে। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান বিআইপিসিএলে প্রতিবছর কয়লা কেনা ও পরিবহনে হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা হয়। এসব দরপত্রে বোর্ড চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির বোর্ড পরিচালকেরা একবার পর্ষদ সভায় হাজির হলেই ১২ হাজার টাকা সম্মানী পান। বছরে একটি কোম্পানি পরিচালকদের নিয়ে ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক হয়। এ হিসাবে বছরে একটি কোম্পানি থেকে বোর্ড সভার বৈঠক বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা সম্মানী পান একজন পরিচালক। সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান যেহেতু আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান, সে হিসেবে বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা সম্মানী ভাতা পাওয়ার কথা তাঁর, যা তাঁর মূল বেতনের দ্বিগুণের বেশি। উল্লেখ্য, একজন সিনিয়র বিদ্যুৎসচিবের বছরে মূল বেতন মাসে ৮২ হাজার টাকা, বছরে ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

একাই আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য নিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

জ্বালানিসচিব মো. নূরুল আলম সরকারের সাতটি কোম্পানি এবং একটি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান। এগুলো হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট। 

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বিজিএফসিএলের মালিকানাধীন ৬টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। দেশের সব থেকে বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাসের মালিকানাও বিজিএফসিএলের। এসব প্রতিষ্ঠান বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা করে, যার দরপত্রে বোর্ডের চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া এসব কোম্পানির পর্ষদ বৈঠক থেকেও তিনি বড় অঙ্কের সম্মানী পেয়ে থাকেন।

সরকারের সচিব পদমর্যাদায় মাসে মূল বেতন পান ৭৮ হাজার টাকা এবং বছরে ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মূল বেতন পান মো. নূরুল আলম। অন্যদিকে ইনস্টিটিউট ও কোম্পানির পরিচালক বোর্ডের মিটিংয়ে পান প্রতিটির জন্য ১২ হাজার টাকা। বছরে ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক করে ৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা সম্মানী পান তিনিও।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে জ্বালানিসচিব নূরুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান এবং এসএমএসের মাধ্যমে প্রশ্ন জানাতে বলেন। এসএমএসে প্রশ্ন জানানো হলে আর সাড়া দেননি তিনি। এরপর বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব মো. আমিন উল আহসান আছেন পাঁচটি কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে। এগুলো হলো যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, এলপিজি লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। মো. আমিন উল আহসান বছরে মূল বেতন পান ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আর কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভায় হাজিরা দিয়ে তার চেয়েও বেশি পান, প্রায় ১২ লাখ টাকা। এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যানকে ফোন ও ম্যাসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার চারটি সরকারি কোম্পানির চেয়ারম্যান। এগুলো হলো বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল), বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল), মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড ও জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দ্বিতীয় গ্রেডে জনেন্দ্র নাথ সরকার মাসে মূল বেতন পান ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা, বছরে তিনি বেতন পান প্রায় ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে চারটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে বোর্ডে হাজিরা দিয়ে বছরে পান প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে থাকা চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরপিজিসিএল বিদেশ থেকে এলএনজি কিনে থাকে বছরে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকার। বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

আছে আরও অনেক সুযোগ
সরকারের যেসব কোম্পানি লাভে রয়েছে এবং যারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, সেসব কোম্পানি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে নগদ অর্থ দিয়ে থাকে। তবে এই অর্থ কোনো হিসাবে থাকে না। তিতাস গ্যাস গত অর্থবছরে এ রকম ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জ্বালানি সচিবকে। আর জ্বালানি সচিব লাভজনক প্রতিটি কোম্পানি থেকে নগদ পেয়েছেন ১০ লাখ টাকা করে।

তিতাস গ্যাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কোনো নতুন শিল্প–সংযোগ ও চাপ বৃদ্ধির আবেদন মোটা অঙ্কের অর্থ ছাড়া বোর্ড সভায় পাস হয় না। এ ক্ষেত্রে একটি নতুন শিল্প–সংযোগের জন্য বোর্ড সভার অনুমোদনের জন্য ঘুষ দিতে হয় ৩ থেকে ৪ কোটি, আর চাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দিতে হয় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব সরকারের দেওয়া গাড়ি ব্যবহার করেন। এরপরও বিদ্যুৎসচিব মো. হাবিবুর ব্যবহার করেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেওয়া পাজেরো। আর জ্বালানিসচিব নূরুল আলম ব্যবহার করেন তিতাসের দেওয়া পাজেরো।

কোম্পানির গাড়ি ব্যবহার করেন যুগ্ম সচিব
সরকারি কোম্পানি বি–আর পাওয়ারজেন লিমিটেডের পরিচালক সরকারের যুগ্ম সচিব নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল। তিনি ওই কোম্পানি থেকে নিয়েছেন দামি পাজেরো গাড়ি। নাম–পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন শীর্ষ আমলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রধান হিসেবে বহুদিন রয়েছেন। আর বি–আর পাওয়ারজেন জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যু প্রকল্পের অনুমতিও নিরোদ চন্দ্র মণ্ডলের শাখা থেকে হয়েছে। এমনকি চীনা কোম্পানি সিআরইসি ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবলকে ৭০ শতাংশ মালিকানা দিয়ে এই কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়, এটা ছিল নজিরবিহীন। এর আগে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের সব বিদেশি কোম্পানিকে মালিকানা দেওয়া হয় ৫০ শতাংশ। এসবের প্রভাবে তিনি বি–আর পাওয়ারজেন থেকে নিয়েছেন দামি পাজেরো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোম্পানি করা হয়েছিল মূলত এটা পেশাদারেরা চালাবেন, তাতে গতি আসবে, দুর্নীতি কমবে; স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। অথচ প্রতিটি কোম্পানির চেয়ারম্যান হলেন সচিবেরা। তাঁরা এখানে দুর্নীতি করে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আবার নিজের কোম্পানিকে রক্ষা করেন। এ রকম একটি দুর্নীতির খবর আমরা পত্রিকায় পড়েছিলাম। সেটি ছিল এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেনের। প্রতিটি কেনাকাটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এ রকম দুর্নীতি ও অপশাসন বেরিয়ে আসবে।

শামসুল আলম আরও বলেন, একেকটি কোম্পানি থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা তাঁরা বোর্ড মিটিংয়ের নামে নেন, গাড়ি নেন, বছর শেষে গোপনে লভ্যাংশ নেন। আবার ওই কোম্পানির হয়ে বিদেশ সফর করেন। অথচ সচিবদের দায়িত্ব ছিল কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

নজির আছে চেয়ারম্যানদের দুর্নীতির
২০১৫ সালের মে মাসে এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আলমের বিরুদ্ধে ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। এপিএসসিএলের ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্পেনের দুটি কোম্পানি টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকের কাছ থেকে এই ঘুষ নেন তাঁরা। ঘুষের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কেনা হয়েছে দুটি বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি। গড়ে তোলা হয়েছে দুটি কোম্পানি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাওয়া দুই স্প্যানিশ কোম্পানি ২০১৪ সালের মার্চে ঘুষের অর্থ স্পেনের মাদ্রিদ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহরের ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে পাঠায়। সুনির্দিষ্ট এই অভিযোগের পর বিদ্যুৎ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করে। ৩০ দিনের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই অর্থ ফেরতও আনেনি সরকার। উল্টো আনোয়ার হোসেনকে সরকার দেশের সব থেকে বড় উন্নয়ন প্রকল্প পাবনার রূপপুরের দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব বানান, পরে তিনি এই পদ থেকে অবসরে যান। আর নূরুল আলমকে পলাতক দেখায় তদন্ত কমিটি। 

অতিরিক্ত দামে কেনাকাটাসহ সুনির্দিষ্ট ৮টি অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) বিরুদ্ধে। এর মধ্যে একটি ছিল অস্বাভাবিক দামে নাট–বল্টু কেনা। ভারত থেকে ৬৮ কেজি নাট, বল্টু ও ওয়াশার আমদানি করেছে পিজিসিবিএল। এর দাম হওয়ার কথা ছিল ১৪৮ ডলার বা ১৬ হাজার টাকা। সেটা তারা কিনেছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৫ ডলার বা ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা দিয়ে। পিজিসিবিএলের চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিইএ কোম্পানি লিমিটেড ভারতের স্কিপার লিমিটেড থেকে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১ হাজার ৬১৯ গুণ বেশি দামে আমদানি করেছে এগুলো। এই কোম্পানির বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ শুভ বড়দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬: ৪৩
আজ শুভ বড়দিন

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ ২৫ ডিসেম্বর। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের এই দিনে প্রাচীন ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে থাকে। দিনটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। মুসলিমদের কাছে যিশুখ্রিষ্ট হজরত ঈসা (আ.) হিসেবে পরিচিত। ঈসা (আ.)-এর ওপর নাজিল হওয়া আসমানি কিতাবের নাম ইঞ্জিল শরিফ। তবে দুই ধর্মের বিশ্বাসে কিছু তফাতও রয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদ্‌যাপন করবে।

বড়দিন উপলক্ষে সারা দেশে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বাড়ি ও গির্জা উৎসবের সাজে সাজানো হয়। এ দিন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

অনেক পরিবার তাদের বাড়িতে তৈরি করে প্রতীকী গোয়ালঘর। বিদেশি অতিথিদের বিবেচনায় তারকা হোটেলগুলো ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো হয়।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহামতি যিশুখ্রিষ্ট ছিলেন মানবজাতির মুক্তির দূত এবং শান্তি, সত্য ও ন্যায়ের প্রচারক। তাঁর আদর্শ ভালোবাসা, সেবা ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বড়দিন সবার জীবনে আনন্দ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে বলেন, বড়দিন শান্তি, ন্যায় ও মানবমুক্তির বার্তা বহন করে। যিশুখ্রিষ্টের মানবসেবা, ভালোবাসা ও ক্ষমার আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বড়দিন উদ্‌যাপন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করবে। বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

আতশবাজি, পটকা ও ফানুস নিষিদ্ধ

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র বড়দিন উদ্‌যাপন উপলক্ষে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুভ বড়দিন ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ২৮ ধারার ক্ষমতাবলে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বড়দিনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও নিরাপদে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪০
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন।

খোদা বখশ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে শেষ দিকে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই পদে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ছিল।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল খোদা বখশ চৌধুরীর। কিন্তু এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলামও এভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক আমিনুলকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আমিনুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের রায় ২০ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ২০ জানুয়ারি রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার থাকা শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আর পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

যাত্রাবাড়ীতে তাইম হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে ইমাম হাসান তাইম হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। যাতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারদের হাজিরের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান ও তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির হোসাইন। আর পলাতক রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ওয়ারী জোনের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন ও এডিসি এস এম শামীম, ডেমরা জোনের তৎকালীন এডিসি মো. মাসুদুর রহমান মনির, তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার নাহিদ ফেরদৌস, যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ওহিদুল হক মামুন, এসআই (নিরস্ত্র) সাজ্জাদ উজ জামান ও মো. শাহদৎ আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫১
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলিপ পি অধিকারী, খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ড. বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি খ্রিস্টোফার অধিকারীসহ দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় খ্রিষ্টধর্মের নেতারা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুনাম এবং দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজিত হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে যিশুখ্রিষ্টকে সর্বজনীন উল্লেখ করে বলেন, যিশুখ্রিষ্টের ক্ষমা ও মানবসেবার মহান আদর্শ সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও এ বছর উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে বড়দিন উদ্‌যাপন করছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে জনগণ আপনার ওপর আস্থা রেখেছিল। আপনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমরা প্রার্থনা করি, একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে বড়দিন ও আসন্ন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনারাই সমাজের প্রতিবিম্ব। আপনাদের দেখলে বুঝতে পারি, সবকিছু ঠিক আছে কি না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে জুলাই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই সনদের ওপর গণভোটের মাধ্যমে দেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে জনগণ যে রায় দেবে, পরবর্তী সময়ে সংসদ সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ। দেশব্যাপী ৮০০টি চার্চের মধ্যে তিন ধাপে এই অনুদান বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।

পরে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত