Ajker Patrika

ফুলকপি খেলে যে লাভ

তানিয়া ফেরদৌস
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২১, ২২: ৩২
ফুলকপি খেলে যে লাভ

কোনো এক রম্য নাটকে প্রেয়সীকে ফুলের বদলে ফুলকপি দেওয়ায় নায়ককে যারপরনাই ট্র্যাজেডির কবলে পড়তে হয়েছিল—এমনটাই দেখা গেছে। তবে শীতের আগমনধ্বনি টের পেতে না পেতেই সবার মন-প্রাণ-রসনা সবকিছুই যে সদ্য ওঠা ফুলকপির নানা পদের জন্য আকুলি-বিকুলি করে ওঠে, সে কথা স্বীকার না করে কোনো উপায়ই নেই। শীতের দুপুরে কই মাছ দিয়ে রাঁধা ধোঁয়া ওঠা ফুলকপির তরকারি হোক, আর হিম হিম সন্ধ্যায় চায়ের সঙ্গে গরমাগরম ফুলকপির বড়া, এ দেশে শীতের আমেজ ফুলকপির সংগত না পেলে যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে না। আবার এদিকে ফুলকপির অবাক করা সব স্বাস্থ্যগুণের কারণেও খাদ্যতালিকায় এর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণে। 

ফুলকপি দেখতে ফুলের মতো বলে লাতিন ভাষায় ‘কপির ফুল’ কথাটিই মুখে মুখে কলি ফ্লাওয়ার নামে একে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। ক্রুসিফেরাস গোত্রীয় এই সবজির দলে আরও আছে ব্রকলি, বাঁধাকপি, মুলা আর ব্রাসেলস স্প্রাউট। ফুলকপির ডাঁটা খাওয়া গেলেও মূলত মস্তকাকৃতি হালকা হলুদ বড় ফুলেল অংশটিই খাওয়া হয়ে থাকে দুনিয়াজুড়ে। 

পুষ্টি উপাদান
শুধু সুস্বাদু নয়, ফুলকপির মতো পুষ্টিগুণ খুব কম সবজিতে আছে। আবার এদিকে তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম ক্যালরিযুক্ত এই সবজিতে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। এক কাপ ফুলকপিতে মাত্র ২৫ ক্যালরি আছে, অথচ খাদ্য আঁশ মিলবে প্রায় তিন গ্রামের মতো। দৈনন্দিন প্রয়োজনের ২০ শতাংশ ভিটামিন কে, আর ভিটামিন বি৬ আছে ১১ শতাংশ, ভিটামিন বি ৯ বা ফোলেট আছে ১৪ শতাংশ। এদিকে, দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ৭৭ শতাংশ ভিটামিন সি শুধু এক কাপ ফুলকপিতে থাকলেও এর সুফল পেতে তাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। খনিজ পদার্থ, যেগুলো আমাদের শারীরবৃত্তীয় সামগ্রিক প্রক্রিয়াগুলোর জন্য অত্যাবশ্যকীয়—সেগুলোও কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে ফুলকপিতে। এক কাপ ফুলকপিতে দৈনিক চাহিদার প্রায় ৯ শতাংশ পটাশিয়াম, ৮ শতাংশ ম্যাংগানিজ, ৪ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম এবং ৪ শতাংশ ফসফরাস মজুত আছে। তাই দেখতে সাদামাটা হলেও ফুলকপিকে পুষ্টিগুণের আধার বললে ভুল হবে না। 

ফুলকপির মতো পুষ্টিগুণ খুব কম সবজিতে আছেসুস্বাস্থ্যের জন্য ফুলকপি

ফুলকপিতে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান। নানা ধরনের রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে ফুলকপি তাই দারুণ কার্যকর। দেখা যাক কী আছে ফুলকপিতে—

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
উচ্চ পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকায় ফুলকপি হজমে সহায়ক। কোষ্ঠ পরিষ্কার রেখে ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি-বৃদ্ধি নিশ্চিত করে এই খাদ্য আঁশ। 

ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে
বেশি আঁশযুক্ত খাবার বলে ফুলকপি ডায়বেটিস, হৃদরোগের মতো প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। ফুলকপি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত। এতে প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং ম্যাংগানিজ রয়েছে। ফুলকপির জিআই ৫-১৫ এর মধ্যে গণনা করা হয়। ফুলকপিতে ফাইবার রয়েছে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে ফুলকপি
জলীয় অংশ আর অধিক খাদ্য আঁশের জন্য ফুলকপি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে ফুলকপির ভাত সহায়তা করতে পারে। এক কাপ ফুলকপির ভাতে চালের ভাতের তুলনায় প্রায় ৮০ ভাগ কম ক্যালরি থাকে। এতে নেট শর্করার পরিমাণও চালের ভাতের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগের ১ ভাগ। ফলে এটি শর্করার বিকল্প হিসেবে কাজ করে ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। 

দাঁতের সুরক্ষায় ফুলকপি
দাঁতের সুরক্ষায় সহায়তা করে ফুলকপি। বিশেষ করে দাঁত লালচে হওয়া এবং দাঁতের মাড়ি দুর্বল হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে এ সবজি। ফুলকপিতে রয়েছে দাঁতের মাড়ির জন্য উপকারী ক্যালসিয়াম ও ফ্লোরাইড নামের দুটি উপাদান। এগুলো দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বাড়ন্ত শিশুদের দাঁতের পূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। 

ফুলকপিতে আছে কলিন, যা মস্তিষ্কের বিকাশে, লিভারে চর্বিমুক্ত রাখতে, লিভার ও হৃদ্‌যন্ত্র ঠিক রাখতে কাজ করেক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপি
শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকেল মুক্ত রাখতে ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে যেসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কথা বলা হয়, তার অনেকগুলোই ফুলকপিতে পাওয়া যায়। বিশেষত, অন্যান্য ক্রুসিফেরাস জাতীয় সবজির মতোই ফুলকপিতে গ্লুকোসিনোলেটস আর আইসথায়োসায়ানেটস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ ভালো পরিমাণে থাকে। ক্যানসার গবেষণায় এ দুই ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ব্যাপারে বেশ ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন গবেষকেরা। ল্যাবরেটরি টেস্টে ফুলকপিতে থাকা এই খাদ্য উপাদানগুলোর কোলন, ফুসফুস, স্তন ও প্রোস্টেট বা অন্ডকোষের ক্যানসার প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা থাকতে পারে, এমনটাই উঠে এসেছে ফলাফলে। 

ফুলকপিতে ক্যারোটিনয়েড আর ফ্ল্যাভনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিতি রয়েছে। এ দুটি উপাদানের ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকাসহ শরীরে আরও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার ক্ষমতা আছে বলে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ফুলকপি
ফুলকপির উচ্চ পরিমাণের খাদ্য আঁশ সার্বিকভাবে রক্তে ক্ষতিকর এইচডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু নির্ভরযোগ্য ল্যাবরেটরিকেন্দ্রিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফুলকপির সালফোরাফেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা আছে। এতে পটাশিয়াম আর ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় তা হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে ফুলকপি। ফলে উচ্চ রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। 

যদি কাঁচা বা নামমাত্র তাপে নেড়েচেড়ে খাওয়া যায়, তাহলে ফুলকপিতে থাকা অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি-ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। 

ফুলকপিতে আছে ভিটামিন সি, কে, লেনোলেয়িক অ্যাসিড, ওমেগা থ্রিসহ অনেক ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপ্রদাহ ও ব্যথা দূর করে ফুলকপি
ফুলকপির আছে প্রদাহরোধী ভূমিকা। এতে শরীরের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। 

মস্তিষ্কের বিকাশ ও অন্যান্য উপকারে
ফুলকপিতে আছে কলিন। এটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় রাসায়নিক উপাদান বলে সাড়া জাগাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রচুর মানুষের দেহে এই উপাদানের অভাব রয়েছে। এক কাপ ফুলকপিতে থাকে ৪৫ মিলিগ্রাম কলিন, যা পরিমাণে যথেষ্ট। এই কলিনের রয়েছে দেহে কোষ আবরণী অক্ষুণ্ন রাখা, ডিএনএ সংশ্লেষণ, হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রেও এর জোরালো ইতিবাচক ভূমিকা থাকার কথা জানা যায়। আর সেই সঙ্গে লিভারে চর্বি জমতে দেয় না বলে কলিন আজকাল গবেষকদের আগ্রহের শীর্ষে আছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে কলিন গ্রহণ না করলে লিভার ও হার্টে রোগ হতে পারে, স্নায়বিক বৈকল্য ও দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে। আর ফুলকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি ছাড়া এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটি তেমন পাওয়াই যায় না। 

ত্বকের যত্নে ফুলকপি
ফুলকপির ভিটামিন সি, লেনোলেয়িক অ্যাসিড নামের দরকারি ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা থ্রি ও ভিটামিন কে থাকায় নিয়মিত সঠিক গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রেখে রেঁধে ফুলকপির নানা পদ খেলে ত্বকের সমস্যাও এড়ানো যায়। 

কিডনির যত্নে ফুলকপি
ফুলকপিতে ক্ষারীয় ভাব। এ জন্য কিডনিতে চাপ কম পড়ে। 

বিভিন্নভাবে ফুলকপি খাওয়া যায়ফুলকপির রেসিপি
ফুলকপির মতো সর্বজনীন সবজি আর নেই। সেই মার্কিন মুলুকের কলি ফ্লাওয়ার ম্যাশ, আর আমাদের দেশের ফুলকপির বড়া—সব ভাবেই অনন্য এই ফুলকপি। যারা ভাতের বিকল্প হিসেবে স্বল্প শর্করাযুক্ত খাদ্য খেতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে কলি ফ্লাওয়ার রাইস। এতে আস্ত ফুলকপি কুরিয়ে নিয়ে ভাতের মতো রান্না করে সে দানাদার কুরানো কলি ফ্লাওয়ার রাইসকে ভাতের বদলে খাওয়া হয়। আস্ত তন্দুরি ফুলকপি, আলু কপির সবজি, ফুলকপির ডালনা, মাঞ্চুরিয়ান-এর পদের যেন শেষ নেই। বিকেলে চায়ের সঙ্গে ফুলকপির বড়ার কিংবা শিঙাড়া জনপ্রিয় খাবার আমাদের দেশে। কিমার পুর ভরা আস্ত ফুলকপির মুসাম্মানের মতো বিশেষ পদ তো বটেই, আমিষের মিশেলে ফুলকপিতে নিত্যদিনের মাছ মাংসের ঝোল ব্যাঞ্জনেও শীতকাল হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। শীতের দুপুরে কই মাছ দিয়ে রাঁধা ধোঁয়া ওঠা ফুলকপির তরকারি হোক, আর হিম হিম সন্ধ্যায় চায়ের সঙ্গে গরমাগরম ফুলকপির বড়া, এ দেশে শীতের আমেজ ফুলকপির সংগত না পেলে যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে না। 

এ ছাড়া রুই-কাতলার মতো বড় আঁশযুক্ত মাছ ও ছোট দেশীয় মাছের সঙ্গে, আলুর সঙ্গে, মুরগি, গরু বা খাসির মাংসের সঙ্গে, বিভিন্ন সবজির সঙ্গে ঘন্ট বা লাবড়া হিসেবে ফুলকপির বহুল ব্যবহার রয়েছে আমাদের দেশে। 

কোন ঋতুতে ফুলকপি হয়
ফুলকপি আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালেই চাষ করা হয়। এ দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি জাত আছে এই সবজির। তবে গ্রীষ্মকালীন জাতের চেয়ে শীতের মৌসুমের ফুলকপির স্বাদ বহুগুণে উত্তম। আমাদের দেশে তো বটেই, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই ফুলকপি খুবই জনপ্রিয় সবজি। চীনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হলেও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রও এদিক থেকে একটুও পিছিয়ে নেই। 

চাষের মাটি
পানি দাঁড়ালে ফুলকপির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দোআঁশ মাটির উঁচু জমি এর জন্য বেশি উপযোগী। একটি গাছ থেকে একটি ফুলকপি পাওয়া যায়। ফলে এর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ফাঁকা ফাঁকাভাবে রোপণ করতে হয় ফুলকপির চারা। আমাদের দেশে গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ফুলকপির চাষ হয়। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৬
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন। আর আয়োজনে ছিল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ট্রায়াথলন ড্রিমার্স। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন। আর আয়োজনে ছিল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ট্রায়াথলন ড্রিমার্স। ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ, সচেতন ও সক্রিয় নগরজীবন গঠনের বিভিন্ন আন্দোলন আছে ঢাকা শহরে। আছে তাদের নিয়মিত ইভেন্ট। এ ইতিহাসে যুক্ত হলো ‘ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে’ ম্যারাথন। এর আয়োজক ছিল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ট্রায়াথলন ড্রিমার্স। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এটি ছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন।

গতকাল ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে নামের এই ম্যারাথনটি। ‘এক শহর, এক দৌড়, এক ইতিহাস’ স্লোগানে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক রোড রেসে অংশ নেন হাজারো দৌড়বিদ। এদের মধ্যে ছিলেন দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ রানার ও শৌখিন অ্যাথলেটরা।

৩০ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
৩০ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার হাতিরঝিল অ্যাম্ফিথিয়েটার থেকে ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে ৩০ কিলোমিটার ক্যাটাগির এ ম্যারাথনের উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া ১৫ এবং ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেসের উদ্বোধন হয় ভোর ৫টা। অংশগ্রহণকারী দৌড়বিদেরা হাতিরঝিলের চারপাশে বিস্তৃত একটি চ্যালেঞ্জিং ও মনোরম ট্র্যাকে তাঁদের দৌড় সম্পন্ন করেন।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এ ইভেন্টে অন্তর্ভুক্ত ছিল চারটি প্রতিযোগিতা ক্যাটাগরি। এগুলো হলো,

  • ৩০ কিলোমিটার রান
  • ১৫ কিলোমিটার রান
  • ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার রান
  • ১ কিলোমিটার কিডস রান

৩০ কিলোমিটার ম্যারাথনে ছেলেদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন মামুন আহম্মেদ। দৌড়ের পথ শেষ করতে তিনি সময় নেন ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একই ইভেন্টে মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন হামিদা আক্তার জেবা। তিনি শেষ করতে সময় নিয়েছে ২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড।

এদিকে ১৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে ছেলেদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন পলাশ শেখ। এ পথ শেষ করতে তিনি সময় নেন ৫৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড। একই ইভেন্টে মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন সাজিয়া হেপ্পি। তিনি দৌড় শেষ করতে সময় নেন ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট ৭ সেকেন্ড।

ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একজন। ছবি: সংগৃহীত
ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একজন। ছবি: সংগৃহীত

৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে ছেলেদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন মোস্তাক আহমেদ আভিন। দৌড় শেষ করতে তিনি সময় নেন ২৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। একই ইভেন্টে মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন সাবরিনা আক্তার স্বর্ণা। তিনি ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৌড় শেষ করতে সময় নিয়েছেন ৪৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড।

এ ছাড়া এক কিলোমিটার ওভারল চ্যাম্পিয়ন হয় সাইফান ওময়ের।

দৌড়বিদদের সুবিধার্থে ইভেন্ট এরিয়ায় স্থাপন করা হয়েছিল মেডিকেল সাপোর্ট সিস্টেম, একাধিক হাইড্রেশন ও কুলিং জোন, লাইভ টাইমিং সুবিধা। ইভেন্ট নিরাপদ করতে ছিল শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ইভেন্টে কাজ করেন শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিবিড় সহযোগিতায় ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা ছিল অত্যন্ত সমন্বিত।

ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে ম্যারাথন রেস ডিরেক্টর মো. আল-আমীন বলেন, ‘ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে শুধু একটি রেস নয়, এটি একটি সুস্থ, সচেতন ও সক্রিয় নগরজীবন গঠনের আন্দোলন। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, দৌড়ের পাশাপাশি আমরা চাই ঢাকাকে একটি প্রাণবন্ত ও ইতিবাচক শহরে রূপান্তরিত করতে।’

আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন, বিশাল অংশগ্রহণ, পেশাদার ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ আয়োজন, সব মিলিয়ে ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে আজ বাংলাদেশের দৌড় ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মানসিক সমস্যার কারণে চুলকানি হলে কী করবেন

ফারিয়া রহমান খান 
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকলে শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ফলে সময় শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকলে শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ফলে সময় শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

আমাদের শরীর ও মন পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি বা মানসিক চাপে থাকি, তখন শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়; যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে অনেক সময় শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার মতো হতে পারে। এই অবস্থাকেই বলে ‘অ্যাংজাইটি ইচিং’ বা উদ্বেগজনিত চুলকানি।

অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকে হওয়া ‘সোমাটিক সিম্পটম’ বা শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি হলো অ্যাংজাইটি ইচিং বা সাইকোজেনিক চুলকানি। উদ্বিগ্নতার তীব্রতা বেশি হলে করটিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর কারণে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সেরোটোনিন বা ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতার ফলেও অনেক সময় চুলকানি শুরু হয়। এই সমস্যা সাধারণত মাথার তালু, মুখ বা পিঠের উপরিভাগে বেশি দেখা যায়। তাই মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা ছাড়া মেডিটেশন বা ইয়োগা করা যেতে পারে; পাশাপাশি চুলকানি কমাতে ভালো মানের ময়শ্চরাইজার ব্যবহার করতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করাসহ অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানি দিয়ে গোসল এড়াতে হবে। ডা. তাহরিয়াত আহমেদ শরীফ, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা

মানসিক চাপের কারণে চুলকানি কেন হয়

উদ্বেগ ও চুলকানি আপাতদৃষ্টে সম্পর্কহীন মনে হলেও এই দুটি একে অপরের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে জড়িত। মানসিক চাপের প্রভাবে শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেগুলোর ফলে চুলকানি হয়। যেমন—

স্ট্রেস হাইভস: মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। ফলে শরীরে চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

ঘামাচি বা র‍্যাশ: উদ্বেগের ফলে ঘাম বেড়ে যায়। ফলে শরীরে ঘামাচি বা র‍্যাশ দেখা দেয়। এগুলো খুবই চুলকায় এবং ২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

বিদ্যমান রোগ বাড়িয়ে দেওয়া: যাদের আগে থেকে একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা আছে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ তাদের এই রোগগুলো আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুলকানির মাত্রা বেড়ে যায়।

চুলকানির তীব্রতা বৃদ্ধি: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সামান্য চুলকানির তীব্রতাও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, যা রোগীর কাছে অসহনীয় মনে হতে পারে।

অ্যাংজাইটি ইচিং নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায়

অ্যাংজাইটি ইচিং নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমে মানসিক চাপের কারণ বের করে তার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আরাম পাওয়া যেতে পারে। সেগুলো হলো—

  • পরিষ্কার থাকুন। পোশাক, বাড়িঘর ও চারপাশ সব সময় পরিষ্কার রাখুন। চুলকানি থেকে সংক্রমণ কমাতে সব সময় নখ ছোট করে কেটে রাখুন।
  • চুলকানির জায়গায় ক্যালামাইন লোশন বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করুন। এতে আরাম পাওয়া যায়।
  • রুক্ষ পোশাকের বদলে সুতির নরম পোশাক পরুন। অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না এবং সূর্যের তাপ এড়িয়ে চলুন।
  • ত্বক আর্দ্র রাখতে নিয়মিত সুগন্ধিবিহীন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তা ছাড়া ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বাড়াতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান ও যোগব্যায়াম করুন।
  • সুষম খাদ্য খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত শরীর চর্চা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত এগুলো করার চেষ্টা করুন।

কীভাবে অ্যাংজাইটি ইচিং নির্ণয় করা হয়

প্রথমে চিকিৎসক চুলকানির শারীরিক কারণ; যেমন পোকামাকড়ের কামড়, ত্বকের শুষ্কতা, একজিমা বা অ্যালার্জি আছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়। তারপর ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া বা থাইরয়েডের মতো রোগগুলোও খতিয়ে দেখা হয়। সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যসহ সম্পূর্ণ রোগের সব তথ্য চিকিৎসককে জানাতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক নিশ্চিত হবেন, চুলকানি মানসিক চাপের জন্য হচ্ছে, নাকি অন্য কোনো কারণে। মানসিক চাপের জন্য চুলকানি হচ্ছে নিশ্চিত হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসক উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

কারণ ছাড়া অতিরিক্ত চুলকানি অনেক সময় কোনো অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও হতে পারে। মূল কারণ জানা এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাংজাইটি ইচিং যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত করে, ত্বকে সংক্রমণ বা গুরুতর ক্ষতি করে বা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঘরোয়া চিকিৎসায়ও না কমে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ ছাড়া চুলকানির সঙ্গে জ্বর, রাতে ঘাম হওয়া বা অস্বাভাবিক হারে ওজন কমার মতো লক্ষণ থাকলেও দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই অ্যাংজাইটি ইচিংয়ের মতো সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

সূত্র: স্টাইলক্রেজ ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিলাসিতার স্বাদে মোড়া পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবার

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৫
সামুদ্রিক খাবারের মুকুট হলো অ্যালমাস ক্যাভিয়ার। ছবি: পেক্সেলস
সামুদ্রিক খাবারের মুকুট হলো অ্যালমাস ক্যাভিয়ার। ছবি: পেক্সেলস

বিলাসিতা কেমন হতে পারে? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের চোখ চলে যায় পৃথিবীর সেই সব বিরল উপাদানের দিকে, যেগুলোর মূল্য প্রায় আকাশছোঁয়া। এই উপাদানগুলোর দুর্লভতা এবং অনন্যতাই তাদের করে তুলেছে বিশেষ। যারা জীবনের সেরা জিনিসগুলোর খোঁজ করেন তাদের জন্য এই ধরনের খাবার উপভোগ করতে পারা একটি বিশেষ চাহিদা হতে পারে। এই খাবারগুলো কেবল খাদ্য নয় বরং শিল্পের এক একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আর তাই এরা তাদের ক্রেতাদের কাছে ক্ষমতা, প্রাচুর্য এবং এক বিশেষ জীবনযাত্রার প্রতীক।

মাটির নিচের অমূল্য রত্ন এবং মসলার রাজা

সবচেয়ে দামি খাবারের তালিকায় প্রথমে আসে সেই মাটির নিচের রহস্য। যা সোনার চেয়েও মূল্যবান। ইতালির পিডমন্ট অঞ্চলের স্থানীয় সাদা ট্রাফল এমনই এক ছত্রাক, যা অত্যন্ত দুর্লভ ও ব্যয়বহুল। একবার চীনের ম্যাকাও-এর এক ক্যাসিনো মালিক প্রায় দেড় কেজি ওজনের একটি ট্রাফল ৩,৩০, ০০০ ডলারে কিনেছিলেন। টাকায় হিসাব করলে যার দাম হয় ৪ কোটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে, মসলার জগতে রাজা হলো জাফরান। যাকে ডাকা হয় ’লাল সোনা’ নামে। এক কেজি জাফরান তৈরি করতে হাজার হাজার ফুল লাগে। এ জন্য এর দাম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলার স্থানে নিয়ে গেছে। ফরাসি দ্বীপ নুয়ারমুতিয়ে-তে জন্মানো লা বোনোটে আলুর ক্ষেত্রেও সেই বিরলতা দেখা যায়। বিশেষ পরিবেশে ও শৈবালের কারণে এদের প্রতি কেজির দাম প্রায় ৬০০ ডলার বা ৭৩,১৭৮ টাকা।

সমুদ্র ও মাংসের জগতের মহার্ঘ উপহার

মাংস এবং সামুদ্রিক খাবারের জগতেও রয়েছে মহাযজ্ঞের ছোঁয়া। জাপানের ওয়াগিউ বিফ কেবল সুস্বাদুই নয়, এর পেছনের প্রক্রিয়াটিও রাজকীয়। এই গরুগুলোকে বিশেষ খাবার দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিদিন মালিশও করা হয়। যার ফলস্বরূপ এর ১০০ গ্রাম মাংসের দাম প্রায় ৫০ ডলার। অর্থাৎ ৬০৯৯ টাকা। আরও একধাপ এগিয়ে, ২০১৯ সালে জাপানে একটি স্নো ক্র্যাব। যা নিলামে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৪৬,০০০ ডলারে। তবে সামুদ্রিক খাবারের মুকুট হলো অ্যালমাস ক্যাভিয়ার। এই বিরল বেলুগা ক্যাভিয়ার প্রতি কেজি ৩৪,৫০০ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। যার বাংলাদেশি মূল্য দাঁড়ায় ৪২,০৮৩১০ টাকা। যা সত্যিকারের বিলাসিতার প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে, স্পেনের ঐতিহ্যবাহী ইবেরিকো হ্যাম-এর এক পা বা লেগ ৪,৫০০ ডলারের মতো দামে বিক্রি হওয়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে।

মসলার জগতে রাজা হলো জাফরান। যাকে ডাকা হয় ’লাল সোনা’ নামে। ছবি: পেক্সেলস
মসলার জগতে রাজা হলো জাফরান। যাকে ডাকা হয় ’লাল সোনা’ নামে। ছবি: পেক্সেলস

সাধারণ খাবারে অসাধারণ মূল্য সংযোজন

রেস্টুরেন্টে গেলে ৮০০ টাকা থাকে শুরু করে ৩০০০ টাকায় পিৎজা পাওয়া যায়। তবে ১২,০০০ ডলার বা ১,৪৬৩, ৭৬০ টাকার পিৎজা কখনো শুনেছেন? আপনি না শুনে থাকলেও পৃথিবীতে তা আছে। পিৎজা নির্মাতা রেনাটো ভায়োলা তৈরি করেছিলেন লিউস XIII পিৎজা। যার উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল তিন ধরনের ক্যাভিয়ার। আবার স্কটল্যান্ডের ডোমিনিকো ক্রলা-এর তৈরি পিৎজা রয়্যাল ০০৭ বিকোয় ৪,২০০ ডলারে। যেখানে কগনাক-এ ম্যারিনেট করা লবস্টার ও শ্যাম্পেনে ভেজানো ক্যাভিয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল। মেক্সিকোর গ্র্যান্ড ভেলাস রিসোর্টে পাওয়া গ্র্যান্ড ভেলাস লস কাবোস টাকো। যার মূল্য ২৫,০০০ ডলার, যেখানে ছিল কোবে বিফ এবং সোনা-মিশ্রিত টর্টিলা। এমনকি নিউ ইয়র্কের একটি সাধারণ গ্রিলড চিজ স্যান্ডউইচও যখন শ্যাম্পেনে ভেজানো রুটি আর সোনার ফ্লেক্সের সঙ্গে আসে, তখন সেই কুইন্টেসেনশিয়াল গ্রিলড চিজ-এর দাম দাঁড়ায় ২১৪ ডলার।

ডেজার্ট, পানীয় এবং কফি জগতের বিস্ময়

মিষ্টি এবং পানীয়ের ক্ষেত্রেও বিলাসিতা তার ছাপ ফেলেছে। পেস্ট্রি শেফ জেওং হং-ইয়ংটো এক মাস সময় নিয়ে একটি ক্রিসমাস কেক তৈরি করেছিলেন, যাতে ছিল ২২৩টি হিরা, আর এর দাম ছিল অবিশ্বাস্য ১.৭ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, জাপানি ফলগুলোর মধ্যেও রয়েছে রাজকীয়তা। একটি ডেনসুকে ওয়াটারমেলন নিলামে ৬,১০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল এবং দুটি ইউবারি কিং মেলন ৪৫,০০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। পানীয়ের ক্ষেত্রে, ১৯৫২ সালের বিরল টুলিবার্ডিন হুইস্কির একটি বোতলের দাম ৪১,০০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তবে প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালের ফল হলো কপি লুয়াক কফি। সিভেট ক্যাট বা গন্ধগোকুলের হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি এই কফি প্রতি কেজি প্রায় ৭০০ ডলারে বিক্রি হয়।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৬ সালের জন্য এয়ারবিএনবি-এর পূর্বাভাস

ফিচার ডেস্ক
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

আপনি যদি ২৫ সালের শেষে এসে বারবার ভাবেন, "সময় কোথায় গেল? " তবে জেনে রাখুন, এই অনুভূতি কেবল আপনার একার নয়। সময় মুহূর্তের মধ্যে ফুরিয়ে যায় নদীর স্রোতের মতন। দেখতে দেখতে আমরা আরও একটি বছরের প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ নতুন বছর আমাদের জন্য নতুন করে ঘুরে দেখার আর অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ নিয়ে আসছে। আর এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে সাহায্য করার জন্য এয়ারবিএনবি প্রকাশ করেছে ২০২৬ সালের জন্য তাদের ভ্রমণ প্রবণতা পূর্বাভাস।

এই হোম-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী বছর ভ্রমণকারীরা তাদের ছুটি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে চাইবেন। যা হবে অভিজ্ঞতার কেন্দ্রিক। তাদের রিপোর্টে বেশ কয়েকটি মূল বিষয় উঠে এসেছে। যা আপনাকেও বিশ্ব ভ্রমণের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করতে পারে। এখানে উল্লিখিত পূর্বাভাসগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ২০২৬ সালে ভ্রমণ হবে আরও সংক্ষিপ্ত, প্রকৃতির কাছাকাছি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভরপুর এবং অবশ্যই খাদ্য-কেন্দ্রিক। আপনিও আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য এই নতুন ধারাগুলো বিবেচনা করতে পারেন।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

জেনও জিদের আলট্রা-শর্ট আন্তর্জাতিক ট্রিপ

২০২৬ সালে ভ্রমণের সংজ্ঞাই পাল্টে দিচ্ছে জেনারেশন জি বা জেন জি। বিশাল, বহু-সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের পরিকল্পনাকে ভুলে যান। জেন জি আমাদের শেখাচ্ছে কীভাবে ৪৮ ঘণ্টা বা তারও কম সময়ে যেকোনো স্থানে উড়ে যাওয়া যায়। এয়ারবিএনবি-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, জেন জি রা ’কুইক ট্রিপ’-এর ধারণাটি নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। দীর্ঘ অবকাশের তুলনায় তাদের ১-২ দিনের আন্তর্জাতিক যাত্রা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিকটক-এর ভাইরাল ডে-ট্রিপ ট্রেন্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, এই তরুণ প্রজন্ম সংস্কৃতি-সমৃদ্ধ, উচ্চ-শক্তির অভিজ্ঞতার জন্য মহাদেশ পাড়ি দিচ্ছে। এয়ারবিএনবি বলছে, জেন জি রা কর্মবিরতি সর্বাধিক ভাবে ব্যবহার করার এক নতুন কৌশল দেখাচ্ছে। তারা শান্ত সমুদ্র সৈকতের বদলে বেছে নিচ্ছে সংগীত, নৃত্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং খাঁটি খাবারে পূর্ণ প্রাণবন্ত শহুরে অভিজ্ঞতা। এই প্রজন্মের পছন্দের গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বুয়েনোস আইরেস (আর্জেন্টিনা), বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া), কো সামুই (থাইল্যান্ড), মারাকেশ (মরক্কো), মেক্সিকো সিটি (মেক্সিকো), সান জুয়ান (পুয়ের্তো রিকো) এবং স্টকহোম (সুইডেন)।

প্রকৃতির সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো

প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করা ২০২৫ সালেও একটি জনপ্রিয় প্রবণতা ছিল। আর ২০২৬ সালে এটি আরও বেগবান হবে। এয়ারবিএনবি জানিয়েছে যে বিশ্বজুড়ে জাতীয় উদ্যানগুলির প্রতি অনুসন্ধান এবং আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি থাকার জায়গা খোঁজার হার আগামী বছরের জন্য ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গ্রেট স্মোকি মাউন্টেনস, শেনানডোহ এবং গ্র্যান্ড টেটনের মতো মার্কিন পার্কগুলোর শতবর্ষ উদ্‌যাপনের কারণে সেগুলোর প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ছে। বৈশ্বিক গন্তব্যগুলোর মধ্যে স্যামারিয়া জর্জ ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি গ্রিসের ক্রিট, ভিয়েনা, ইন্ডিয়ার গোয়া এবং ইতালির সার্ডিনিয়ার মতো স্থানগুলো ভ্রমণকারীদের নজরে রয়েছে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

বড় ইভেন্টগুলোর টানে ভিড় জমছে

২০২৬ সালে ভ্রমণকারীরা বড় ধরনের সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা এবং সংগীত অনুষ্ঠানগুলোকে ঘিরে তাদের যাত্রা পরিকল্পনা করছেন। এয়ারবিএনবি-এর তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের জন্য শীর্ষ-অনুসন্ধান করা তারিখ এবং শহরগুলোর ৬৫ শতাংশই প্রধান ইভেন্টগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। যেমন ফিফা বিশ্বকাপ, কার্নিভাল বা কোচেলা। ভ্রমণকারীরা এই অভিজ্ঞতাগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, যেন টিকিটই তাদের পাসপোর্টে পরিণত হচ্ছে। কার্নিভালের জন্য রিউ দে জানেরো, কোচেলার জন্য ইন্ডিয়ো, মার্ডি গ্রাস-এর জন্য নিউ অর্লিন্স এবং ২০২৬ অলিম্পিক উইন্টার গেমসের জন্য ইতালির মিলান শীর্ষ অনুসন্ধান তালিকায় রয়েছে।

একক ভ্রমণের পুনরুত্থান

একাকী ভ্রমণ বা সোল ট্রাভেল আবার তার কৃতিত্ব ফিরে পাচ্ছে। স্ব-আবিষ্কারের অনলাইন আলোচনায় উৎসাহিত হয়ে, একক ভ্রমণকারীরা এখন কেবল পুরোনো জায়গায় ফিরে যাচ্ছেন না বরং নতুন হটস্পট আবিষ্কার করছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ইডিল্ডওয়াইল্ড, ডোমিনিকান রিপাবলিকের লা আলতাগ্রেসিয়া এবং নরওয়ের ট্রোমসো-এর মতো জায়গাগুলোতে অনুসন্ধান তিন অঙ্কের বৃদ্ধি দেখছে। অন্যান্য জনপ্রিয় একক ভ্রমণের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে পর্তুগালের আলগার্ভ অঞ্চল, স্পেনের কোস্টা দেল সল, ফ্লোরিডা কিস এবং স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস।

রন্ধনশিল্পের প্রতি আকর্ষণ

২০২৬ সালের জন্য খাবার ও পানীয় সম্পর্কিত ভ্রমণ যেন একেবারে আগুন ঝরাচ্ছে। যেখানে বেকারি ক্লাস এবং ওয়াইন অঞ্চলগুলো শীর্ষে রয়েছে। প্যারিসে ক্রোসঁ তৈরির ক্লাস বা টোকিওতে মোচি বানানো শেখার মতন হাতে-কলমে অভিজ্ঞতার দিকে ভ্রমণকারীরা ঝুঁকছেন। ভাইরাল হওয়া টিকটক ফুড ভিডিওগুলো বিশ্বজুড়ে বেকারি এবং রান্নার ক্লাসের প্রতি আগ্রহ তৈরি করছে। ওয়াইন-প্রেমীরা বেঙ্গালুরু (ভারত), ফিঙ্গার লেকস (নিউ ইয়র্ক), মেলবোর্ন (অস্ট্রেলিয়া)-এর মতো উঠতি ওয়াইন অঞ্চলগুলিতে যাচ্ছেন। বেকারি-হটস্পটগুলোর মধ্যে ইস্তাম্বুল, লিসবন, প্যারিস, তাইপে এবং টোকিও বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত