Ajker Patrika

মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গেলে ছাত্র আন্দোলন ফাঁদে পড়বে

ড. মইনুল ইসলাম
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩২
মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গেলে ছাত্র আন্দোলন ফাঁদে পড়বে

৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দেশের স্বৈরাচারী অপশাসক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। ওই দিন দুপুরে হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা-ব্যবস্থার সংস্কারকামী আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ গালাগাল দিয়ে এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলন নস্যাতের অপপ্রয়াস চালিয়ে হাসিনা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে স্বৈরাচার পতনের গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তর করেছিলেন। সবচেয়ে জঘন্য পদক্ষেপটি ছিল ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে তাদের হত্যালীলায় ঠেলে দেওয়া।

১৭-১৮ জুলাই এবং ৪-৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে কয়েক শ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছিল আন্দোলন দমনের জন্য। কিন্তু ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান আহূত সভায় সেনা কর্মকর্তাদের জনগণের বিরুদ্ধে গুলি না চালানোর অবস্থান হাসিনার স্বৈরশাসন উৎখাতকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। ৫ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসিনা সেনাপ্রধানকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও সেনাবাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ না করার নির্দেশ বহাল রাখলেন সেনাপ্রধান। অন্যদিকে, ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেন আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। সেনাবাহিনীর অবস্থান যখন জনগণ বুঝতে পারল, তখন ঢাকার চারদিক থেকে লাখো মানুষের মিছিল ছুটতে শুরু করল ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে।

সেনাপ্রধান মাত্র ৪৫ মিনিট সময় দিলেন হাসিনাকে ঢাকা থেকে পালিয়ে যেতে। বেলা আড়াইটার দিকে যখন হাসিনা ও রেহানার হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দিল, তখন প্রায় ২০ লাখ মানুষের মিছিল রাজপথ ধরে শাহবাগ, গণভবন ও সংসদ ভবনের দিকে ধাবিত হলো। এই লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় জড়ো হয়ে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও পলায়ন উদ্‌যাপন করল।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট, কিন্তু ২০১০ সালে প্রদত্ত বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায়ের সুবিধা নিয়ে হাসিনা ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তের ব্যবস্থা করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ‘অনির্বাচিত বিধায় অসাংবিধানিক’ ঘোষিত হয়েছিল আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির ৪-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে, কিন্তু ওই রায়ে সংসদ চাইলে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল। শুধু বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যবস্থাটি বাদ দেওয়া হোক, কারণ ওই ব্যবস্থা বিচার বিভাগকে দলীয়করণের কবলে নিক্ষেপ করেছে।

হাসিনা পঞ্চদশ সংশোধনীর খসড়া প্রণয়নের জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের যে সংসদীয় কমিটি গঠন করেছিলেন, সেই কমিটিও সর্বসম্মতিক্রমে সংশোধিত সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, হাসিনা একক সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে পঞ্চদশ সংশোধনীটি সংসদে পাস করে ফেলেন। ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি।

২০১৮ সালে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলেও হাসিনা সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় নির্বাচনের আগের রাতে সারা দেশের অধিকাংশ স্থানে ব্যালটে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলেন এবং মোট সংসদীয় আসনের তিন-চতুর্থাংশ জবরদখল করে নেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনটিও একতরফা ‘ডামি নির্বাচন’ হয়ে যাওয়ায় জনগণ সিদ্ধান্তে আসে যে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করলে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন থেকে তারা মুক্তি পাবে না।

অতএব, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী গণতন্ত্র বরবাদ করে দিয়ে হাসিনাই গণ-অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতকে ডেকে এনেছেন। গত ১৫ বছরে হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাঁর একনায়কত্বকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়নি, এই গণ-অভ্যুত্থান অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। ওই দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসিনা সেনাবাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা গ্রহণের অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেনাপ্রধান বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তাঁর আদেশ মানেননি। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করলেও সেনাবাহিনী এই গণ-অভ্যুত্থানে বিধ্বস্ত হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত হাসিনা সশরীরে পালিয়ে যেতে পারলেও ২০ দিনের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞে ছয় শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে, শুধু ৫ আগস্টেই প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ।

৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত দেশে চলছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া, ভাঙচুর ও লুটতরাজ এবং তাঁদের মারধর করা। কিন্তু দুঃখজনক হলো, পরিকল্পিতভাবে চালানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো ভাঙচুরের মাধ্যমে ধ্বংস করার তৎপরতা। উদাহরণস্বরূপ মুজিবনগর কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের বিষয়টি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় কোনো অজ্ঞাত কারণে একবারও মুজিবনগরে যাননি, হাসিনাও মুজিবনগর কমপ্লেক্স কখনোই ভিজিট করেননি।

তাহলে হাসিনাবিরোধীদের মুজিবনগরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর যৌক্তিকতা কী? স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তির গোপন নির্দেশ ছাড়া এহেন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সম্ভব নয়। হাসিনার স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষুব্ধ অংশের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এসব মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতাকে ‘হালাল’ করা যাবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমাদের জন্ম হয়নি। তাই, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তোমাদের ভালোবাসা আমাদের ভালোবাসার মতো অত প্রগাঢ় না-ও হতে পারে। কিন্তু ওই সময়ের সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির ৯০ শতাংশ মুক্তিযুদ্ধকে এখনো তাঁদের হৃদয়ের মণিকোঠায় ধারণ করেন।

হয়তো জামায়াত-শিবিরের কিছু সমর্থকের কাছে কিংবা বিএনপির পাকিস্তানপ্রেমী সমর্থকদের কাছে ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ এখনো বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হতেও পারে। অতএব, হুজুগের বশবর্তী হয়ে তোমরা কিছুতেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ড মেনে নিও না। ১৯৪৭-৭১ পর্বে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানকে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে শোষণ, বঞ্চনা, সীমাহীন বৈষম্য ও লুণ্ঠনের অসহায় শিকারে পরিণত করেছিল পাকিস্তানের শাসকেরা, যার পরিণতিতে ১৯৭১ সালে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত এখনো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে নেয়নি, তাদের পাকিস্তানপ্রেম এখনো বহাল থাকতে পারে। ইসলামী ছাত্রশিবিরেরও কেউ কেউ হয়তো প্রকাশ্যে এখনো মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না।

কিন্তু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বহন করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের পরদিনই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীরা এবং অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননাকারী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী স্থানগুলো যথাযোগ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেবে।

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম ছিল। ২০১৫ সালেই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে পেছনে ফেলে এসেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনাটা দেখা যাক: 

১. মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় ৬৫ শতাংশ এগিয়ে গেছে। 
২. বাংলাদেশের রপ্তানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার বেশি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার। 
৩. বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৪ সালের আগস্টে আইএমএফের হিসাব-পদ্ধতি মোতাবেক ২০.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেটা পাকিস্তানের দ্বিগুণের বেশি। 
৪. বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২.৪ বছর, পাকিস্তানের ৬৬ বছর। 
৫. বাংলাদেশের জনগণের সাক্ষরতার হার ৭৬ শতাংশ আর পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ। 
৬. বাংলাদেশের মোট জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন ডলার আর পাকিস্তানের ৩৪৬ বিলিয়ন ডলার। 
৭. বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.১২ শতাংশ আর পাকিস্তানের ২.১ শতাংশ। ফলে পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটিতে আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির সামান্য বেশি। 
৮. বাংলাদেশের ১১৮ টাকায় এক ডলার পাওয়া যায়, পাকিস্তানে এক ডলার কিনতে ২৮০ রুপি লাগে। অথচ ২০০৭ সাল পর্যন্ত রুপির বৈদেশিক মান টাকার তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি ছিল। 
৯. বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ২৩ শতাংশ অথচ পাকিস্তানে তা জিডিপির ৪৬ শতাংশ। 
১০. বাংলাদেশের নারীদের ৪১ শতাংশ বাড়ির আঙিনার বাইরে কর্মরত, পাকিস্তানে এই অনুপাত মাত্র ১৪ শতাংশ। 
১১. বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২১ আর পাকিস্তানে ৫৯। 
১২. বাংলাদেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় এসেছে অথচ পাকিস্তানের ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। 

ওপরের তথ্য-উপাত্তগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে আর বাংলাদেশের নাগাল পাবে না। এদিক থেকে বিবেচনা করলেও বাংলাদেশে কেউ পাকিস্তানপ্রেমী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী থাকাটা অযৌক্তিক।

লেখক: সাবেক অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত