Ajker Patrika

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট 
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ১৩
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

সিলেটের রাজনীতির ‘সৌন্দর্য’ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সৌহার্দ্য। চোরাচালান, বালু-পাথর লুটসহ নানা অপকর্মেও তাঁদের ‘মিলমিশের’ বিষয়টিও বেশ আলোচিত-সমালোচিত। বিখ্যাত পর্যটন স্পট সাদাপাথরের পাথর লুটের পর বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। পাথর লুটপাটে বিএনপির অন্তত ২৮ নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। নানাভাবে এখনো সম্পৃক্ত রয়েছেন আওয়ামী লীগের ৭ জন নেতা।

সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ৮-১০টি জায়গায় পাথর কোয়ারি রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এসব জায়গায় পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হলেও পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর তা করা হয়নি।

তখন থেকে সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে পাথর কোয়ারির ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এরই মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় প্রকাশ্যে অবাধে শুরু হয় বালু-পাথর লুটপাট। সংরক্ষিত এলাকা, পর্যটনকেন্দ্র ও কোয়ারিগুলোর পাথর এবং বিভিন্ন মহালের বালু লুট ঠেকানোর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সাবেক এমপি ও সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের মদদে অবৈধভাবে পাথর ও বালু লুট করা হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটের প্রায় সব কটি কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের মদদেই প্রকাশ্যে পাথর লুট শুরু হয়।

পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পুলিশি তৎপরতার ঘাটতির সুযোগে জেলার প্রতিটি কোয়ারিতে পাথর লুট শুরু হয়। এ সময় গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি; কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, শাহ আরেফিন টিলা, সংরক্ষিত বাংকার (রেলওয়ের পুরোনো স্থাপনা) এলাকা, উৎমাছড়া; জৈন্তাপুরের শ্রীপুর, সারী নদীর বাওন হাওর, আদর্শগ্রাম ঘাট, কানাইঘাটের লোভাছড়াসহ বিভিন্ন কোয়ারি-মহাল থেকে বালু-পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন শুরু হয়। এক বছর ধরে লুটপাটের কারণে এসব এলাকা এখন অনেকটাই পাথরহীন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরা সিলেটের সদস্যসচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পরিবর্তন দল ও ব্যক্তির হয়েছে, কিন্তু অপকর্ম করার ও অভিযুক্তকে অস্বীকার করার রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। পাথরের টাকা উপজেলা থেকে জেলা হয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছায়—এমন আলোচনা বিভিন্ন মহলে ছিল। কিন্তু এসব অভিযোগ আওয়ামী লীগ সব সময় অস্বীকার করত। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বদলে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নাম এখন আলোচিত পাথর লুন্ঠনে। বিএনপিও তাদের নেতা-কর্মীদের লুটপাটের অভিযোগ কৌশলে অস্বীকার করে। মাঝেমধ্যে দু-একজন আলোচিত লুটপাটকারীকে বহিষ্কার করা হলেও বহিষ্কারের কারণ প্রকাশ্যে স্বীকার করা হয় না।’

অন্য সব জায়গায় পাথর বেশির ভাগ লুট করার পর নজর পড়ে পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায়। গত এপ্রিলের শেষের দিকে সেখানে লুটপাট শুরু হলেও গত এক মাসে বেশি লুটপাট হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাথর লুটে জড়িত নেতাদের নামও জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে গেছেন।

কোম্পানীগঞ্জে দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

সাদাপাথরে পাথর লুটপাটে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পরোক্ষ মদদ ছাড়াও চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ আছে। এ ছাড়া তাঁর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন সরাসরি লুটপাটে জড়িত। এ ঘটনায় ১১ আগস্ট রাতে তাঁর দলীয় সব পদ স্থগিত করে বিএনপি। বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলেও স্থানীয় প্রশাসন সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের আগের একটি মামলায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলমকে। তিনি জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়কও। সাদাপাথর-সংলগ্ন সংরক্ষিত বাংকার এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলার অভিযোগে গত ১৪ জুলাই ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদ থেকে উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। লুটপাটের সঙ্গে জড়িত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া ও তাঁর ভাই আজিজ; সাহাব উদ্দিনের বোনের জামাই ও যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন; তাঁর ভাই সাজন মিয়া; ছাত্রদলের কর্মী জাকির হোসেন; সাহাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোজাফর আলী; উপজেলা যুবদলের সদস্য মানিক মিয়া; জেলা যুবদলের সহসম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল; তাঁর ভাই গিয়াস উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন; সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ মুসতাকিনসহ বিএনপির ১৫-২০ জনের নাম এসেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মী পূর্ব ইসলামপুর ইউপির সদস্য কাজল সিংহ, আওয়ামী লীগ কর্মী মনির মিয়া (অন্য মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার), হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান সাদাপাথর এলাকায় লুটপাটে জড়িত।

এদিকে, কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ ধলাই বালুমহাল ইজারা নিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা এবং ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদার মো. আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবারও সেতুর পাশে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। তাঁরা অভিযোগ করেন, ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে নির্বিচার বালু উত্তোলন করায় সেতুর ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু এবং সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদের ‘পরোক্ষ মদদে’ ইজারাদার মো. আবদুল্লাহর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। যুবদল নেতা মকসুদ আহমদ বলেন, ‘এগুলো অপপ্রচার। একটি দুষ্ট চক্র আমাকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ঘায়েল করতে এসব প্রচার করছে। বালু-পাথর লুটপাটের সঙ্গে আমার কখনো কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, এখনো নেই।’

গোয়াইনঘাটে লুটপাটে বিএনপির ৩৫ জন

বর্তমানে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে পাথর লুটপাটে মদদদাতাদের অন্যতম জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম ওরফে স্বপন, জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম (লুটপাটের অভিযোগে গত ৯ জুন বহিষ্কৃত), পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৩৫ জন নেতা-কর্মী জড়িত। জাফলং থেকে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালু ও পাথর তোলায় বিএনপির ৩১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর গত ২৫ মার্চ একটি মামলাও করেছে।

দুই দলকে খুশি করে আওয়ামী লীগ নেতার লুটপাট

কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং সর্বশেষ উপজেলা চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক এবং ১ নম্বর লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তমিজ উদ্দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন। ৪-৫ একর জায়গা ইজারা নিয়ে ৪-৫ কিলোমিটার জায়গা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পলাশ আত্মগোপনে চলে গেলেও তমিজ চেয়ারম্যান সব চালাচ্ছেন। তাঁরা উপজেলা বিএনপির তিন পক্ষ ও জামায়াত নেতাদের খুশি করে নিজেদের সাম্রাজ্য রক্ষা করছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এটা মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে এমনি মানুষজন নানা অভিযোগ করে; যা ভুয়া। আমি এসবে জড়িত না। আমার স্টক করা মাল মাসখানেক আগে বিক্রি করে শেষ করেছি।’

জৈন্তাপুরে আ.লীগ-বিএনপি মিলেমিশে লুট

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জৈন্তাপুরে দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বশেষ উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজার নেতৃত্বে এসব বালু-পাথর লুটপাট নিয়ন্ত্রণ হতো। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে আব্দুর রাজ্জাক রাজার বোনজামাই উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল আহাদ, যুবদল নেতা দিলদার হোসেন, সালেহ আহমদ ও আওয়ামী লীগ নেতা রহিম উদ্দিন, তাঁর ভাই তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে চলছে বালু-পাথর লুটপাট।

অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল আহাদ বলেন, ‘গত ২ জুন আমি শ্রীপুর পাথর কোয়ারি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অবৈধভাবে পাথর-বালু ব্যবসা আমি করছি না।’

সিলেট বিএনপির সূত্রে জানা যায়, সাদাপাথরসহ কোম্পানীগঞ্জে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম আসার বিষয়টি তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সিলেটে এসেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবাবিষয়ক সহসম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া (জুয়েল)। তিনি গত মঙ্গলবার সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি কেন্দ্রে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে সরাসরি বলে দিয়েছি, যারা লুটপাটে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা বিএনপির কাউকে জড়িত পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ পর্যন্ত বিএনপির দুজনের পদ স্থগিত এবং সহযোগী সংগঠনের দুজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

বৈধভাবে পাথর তোলার পক্ষে জামায়াত, এনসিপি

সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা কি সঠিকভাবে সেটি করেছেন? প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এমনটি হয়েছে। সরকারি নীতিমালা মেনে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি আমাদের আগেও ছিল, এখনো আছে।’

এনসিপি সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন শাহান বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের শ্রমিকেরা বেকার হওয়ায় পাথর কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কিছু সংগঠন মানববন্ধনে সব দলকে দাওয়াত দেয়। সেখানে আমরা বলেছি, পরিবেশ রক্ষা করে বৈধ প্রক্রিয়ায় পাথর উত্তোলন দরকার। লুটপাট, চাঁদাবাজির পক্ষে আমরা নই।’

ব্যর্থতা মানতে নারাজ কর্তারা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের ব্যর্থতা মানতে নারাজ কর্তাব্যক্তিরা। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখন অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা নিষ্ক্রিয় না সক্রিয় ছিলাম, কী কী করেছি, সকল তথ্য আমাদের কাছে আছে। আপনারা চাইলে আমি সব দিয়ে দেব।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। নিয়মিত অভিযান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। কখনো বন্ধ ছিল না। মনে হচ্ছে, আমরা যে কার্যক্রম নিয়েছিলাম, সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে হয়তো এমনটা হয়েছে। এখন আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা নিয়েছি। সেই কারণে এখন বন্ধ হয়ে যাবে। প্রয়োজন হলে আমরা আরও বড় আকারে ব্যবস্থাপনা করব।’

পরিবেশের ১২ মামলা, গ্রেপ্তার ১

পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের অভিযোগে তারা ১২টি মামলা করেছে। এসব মামলার আসামি ১৯১ জন। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ১৯টি মামলায় ৬০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। টাস্কফোর্সের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫২ জন। আর বিএমডির এক মামলায় আসামি দেড় হাজার থেকে ২ হাজার। ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের হাত লম্বা নয়। দেশে একটা অরাজক অবস্থা চলছে। অরাজক আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া দরকার। প্রশাসন সব সময় দুর্বৃত্তায়নের পক্ষে থাকে। যে কারণে তারা ব্যবস্থা নেয় না।’

বাড়তি সময় চাইল তদন্ত কমিটি

জেলা প্রশাসন সাদাপাথরে লুটপাটের ঘটনা তদন্তে গত মঙ্গলবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটির গতকাল রোববার প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল প্রতিবেদন না দিয়ে আরো তিন দিন সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। বিস্তারিত যাচাইয়ের স্বার্থে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাই জেলা প্রশাসকের কাছে তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত