Ajker Patrika

‘স্যার, কেউ কথা শুনছে না, এভাবে পুলিশ চলে না’

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭: ৫৩
‘স্যার, কেউ কথা শুনছে না, এভাবে পুলিশ চলে না’

কড়া রোদ। রাজধানীর কাকরাইলে অডিট ভবনের সামনে জনাপঞ্চাশেক পুলিশ দাঁড়িয়ে। অনেকের হাতে আইসক্রিম। অডিট ভবনের ফটকের সামনের সড়কে তখন বিক্ষোভ করছেন দেড়-দুই শ কর্মকর্তা। তাঁরা ভবনে ঢুকতে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। সেখানে দায়িত্বে থাকা ডিএমপির একজন উপকমিশনার (ডিসি) বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও তাতে গা করছিলেন না কোনো পুলিশ সদস্য। একপর্যায়ে সেই কর্মকর্তা পুলিশ সদস্যদের এমন আচরণ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে ফোর্স চালানো যায় না, স্যার। কেউ কথা শুনছে না। এভাবে পুলিশও চলতে পারে না।’ অবশ্য তাঁর আক্ষেপের জবাবে ফোনের ওপারে থাকা কর্মকর্তা কী বলেছেন, তা জানা যায়নি। 

এ ঘটনা গতকাল রোববারের। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ না মানার এমন ঘটনা পুলিশ বাহিনীতে নজিরবিহীন। কিন্তু গতকাল এমন ঘটনাই ঘটেছে। নিম্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা মনে করছেন, বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করা হলে একসময় তাঁরাও হয়তো ঝুঁকিতে পড়বেন। কারণ, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও এখনো হামলা-মারধরের শিকার হচ্ছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এ রকম নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পুলিশের মতো শৃঙ্খলা বাহিনীতেও চেইন অব কমান্ড ঠিকমতো কাজ করছে না। ভেঙে পড়েছে পুলিশি ব্যবস্থা। 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থায় চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করা এখন সবচেয়ে জরুরি। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাকরাইলে অডিট ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের অডিটর পদের দেড়-দুই শ বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা স্লোগান দিয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। পুলিশের বাধায় তাঁরা ভবনের ফটকের সামনের সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে কাকরাইল মোড় থেকে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত সড়কের এক পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধরা অডিটর পদের দুই গ্রেডে বিদ্যমান বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ১১ তম গ্রেডের আড়াই হাজারের বেশি কর্মকর্তা দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত। এ নিয়ে আদালতের নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এরই মধ্যে পিটিশন করা ৭৫২ জনের বেতন ১১ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয়, কিন্তু একই গ্রেডের আরও আড়াই হাজার অডিটরের বেতন বাড়েনি। অডিট ভবনের ফটকের সামনেই নিরাপত্তায় ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। 

 অডিট ভবনের সামনে বিক্ষোভরত অডিটরদের ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিএমপির উপকমিশনার। তবে সে নির্দেশ না মেনে দাঁড়িয়ে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে। ছবি: আজকের পত্রিকা সেখানে ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাছের ও সহকারী কমিশনার শুভ্রর নেতৃত্বে পুলিশের ৬০-৭০ জন সদস্য রয়েছেন। ওই দুই কর্মকর্তা বেলা দেড়টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং তাঁদের সড়ক ছেড়ে দিতে বারবার অনুরোধ করেন। এরপরও তাঁরা সড়ক না ছাড়ায় সেখানে থাকা রমনা বিভাগের ডিসি সারওয়ার তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক থেকে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়াসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। কিন্তু সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারে কোনো সদস্যই এগিয়ে আসছিলেন না। এ সময় ডিসি সারওয়ার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, কে কে তাঁর সঙ্গে সামনে যাবেন। না গেলে সেটাও জানাতে বলেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের কেউ কিছু না বলে পেছনে সরে যান। ডিসি তখন রমনা মডেল থানার ওসি, এসি, এডিসি ও কয়েকজন উপপরিদর্শককে নিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। 

বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে আসেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সানা শামীনুর রহমান। তিনিও পুলিশ সদস্যদের অগ্রসর করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা দাঁড়িয়ে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নেন। তাঁরা ৬০-৭০ জন পুলিশ সদস্যকে একরকম ঘিরে ফেলেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য কর্মকর্তার উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদেরকেই শুধু জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।’ 

সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সব পুলিশ সদস্যের চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছাপ। ৫ আগস্টের পর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যে নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে, গতকালের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। 

নির্দেশনা সত্ত্বেও সদস্যদের অভিযানে না যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শামীনুর রহমান আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘ফোর্স কথা শুনবে না কেন? আমরা নিজেরাই একটু সময় নিচ্ছি।’ তবে এডিসি নাছের বলেন, ‘একটু সমস্যা তো আছেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ 

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিএজি কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কে এসে বিক্ষুব্ধদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং তাঁদের আলোচনার জন্য ডাকেন। এরপর বিক্ষুব্ধরা সড়ক ছেড়ে অডিট ভবনের অডিটরিয়ামের দিকে চলে যান। শেষ মুহূর্তে ঘটনাস্থলে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ইসরাইল হাওলাদার। তিনি একাই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে যান। উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারাও তখন এগিয়ে যান। ততক্ষণে বিক্ষোভকারীরা অবশ্য চলে যাচ্ছেন।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অভিযোগের পাহাড় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থ কেলেঙ্কারি, প্রশাসনিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাসের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রবীন্দ্রনাথ দাস মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী তাঁর অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে।

একই দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বানিয়াজুরী-ঘিওর সড়কের কলেজ গেটে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে শিক্ষকেরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অভিভাবকেরা আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, আর্থিক অনিয়ম, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ফি আদায় এবং প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতার অভাবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকার অনুমোদিত ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কোনো কাজেই ব্যয় করা হয়নি। এ ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭০০ টাকা অধ্যক্ষ নিজের নামে উত্তোলন করেছেন, যা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সরকারি পোশাকের জন্য ভাতার টাকা দীর্ঘ সময় আটকে রেখে পরে চাপের মুখে আংশিক টাকা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেট বিল, কম্পিউটার খরচ, ভূমি উন্নয়ন কর, রাসায়নিক দ্রব্য, আসবাব, ক্রীড়াসামগ্রীসহ মোট ২১টি খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে সরকারি বরাদ্দের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ জন শিক্ষক এসব অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, লাইব্রেরির বই কেনার জন্য বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বই না কেনা, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি ফি নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় না করে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা, সরকারি শিক্ষকদের এসিআর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখা, এসব অভিযোগও নথিভুক্ত করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস নিজেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে তদন্ত শুরু হতেই টানা তিন দিন প্রতিষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত দিনে রহস্যজনকভাবে কমিটি বাতিল করে নতুন পরিপত্র জারি করেন, যা নিয়ে শিক্ষকেরা আরও সন্দিহান হয়ে পড়েন।

শিক্ষক মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, নীরব থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি মানসিকভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন এবং অভিযোগ করার পর উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, যা মানহানিকর ও লজ্জাজনক ব্যাপার।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘আমি অনেক অভিযোগ সম্পর্কে জানি না, কোথাও ভুল হয়ে থাকতে পারে। আর অধিকাংশ অভিযোগ সত্য নয়। শাস্তিযোগ্য কিছু প্রমাণিত হলে তা মেনে নেব।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিতা তুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে, শিক্ষা বোর্ডেও অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন, ১০ শিশুসহ দগ্ধ ১৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ১২ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোকান মালিক, লুন্দিয়া টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া পুরি ও রুটি ভাজি বিক্রি শেষে সকালে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। তিনি ভুলে গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক পর্যায়ে গ্যাসের বিস্ফোরণে দোকানে আগুন ধরে যায়। এসময় দোকানের সামনে থাকা পথচারী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দগ্ধ হন।

আহতরা হলেন—হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫০) ও নাছির মিয়া (৪০)।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, আহতদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ রাস্তার ওপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে কয়েকজন মানুষ আগুনে পুড়তে দেখি। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। একজনের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং অন্যদের ২০–৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যুবকের

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার একটি গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামির নাম দুলাল মিয়া (২৮)। তিনি ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক আশরাফুল আলম আসামির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদ আহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামির জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে দুলাল মিয়া আট বছরের ওই শিশুকে ঘর থেকে ডেকে নেন। এরপর তাকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করেন দুলাল।

মাকছুদ আহাম্মদ জানান, এদিকে ওই রাতেই শিশুকে না পেয়ে তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সে সময় সন্ধান চেয়ে মাইকে প্রচারও করা হয়। তখন দুলাল মিয়াও শিশুটির বাবার সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে যোগ দেন। পরদিন গত বুধবার সকালে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় দুলাল মিয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় দুলাল মিয়ার আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আল সরকারের সঙ্গে কথা হয়। পরে বুধবার রাতে শিশুটির বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। মামলার পরই দ্রুত তদন্ত শুরু করে ঘটনাস্থলসংলগ্ন বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনা শেষে ওই রাতেই দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামলা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন ও অভিযুক্তদের খালাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার সকালে চাটমোহর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মামলার ১ নম্বর বিবাদী, ছাইকোলা ইউনিয়নের কুবড়াগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে কুবড়াগাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম (৬৫) নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘর থেকে বাইরে ডেকে শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেয়। এতে তিনি দগ্ধ হন। প্রথমে তাঁকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুর রহিমের ভাই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে প্রতিবেশী সাতজনকে বিবাদী করে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। মামলার ছয়জন জামিন পেলেও ১ নম্বর বিবাদী শফিকুল ইসলাম এখনো কারাগারে।

সংবাদ সম্মেলনে সুমাইয়া খাতুন দাবি করেন, ঘটনার দিন ওই সময়ে তাঁর স্বামী চাটমোহরে ছিলেন না। তাঁরা দুজনই সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছিলেন, যেখানে তাঁরা ফুটপাতে বিরিয়ানি বিক্রি করেন। তা সত্ত্বেও তাঁর স্বামীকে মামলার ১ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুলের পিতা শহিদ সরদারসহ আরও দুই ভাইকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

সুমাইয়ার ভাষ্য, ‘আমার স্বামী গ্রামে থাকেন না। আমরা তিন সন্তান নিয়ে হাটহাজারীতেই থাকি। প্রতিপক্ষ আমাদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করেছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা হয়নি। আমরা অন্যায়ের শিকার।’ তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি থাকায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার। তিন সন্তানসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে শফিকুল ইসলামের পিতা শহিদ সরদার, তাঁর মা ও অন্যান্য স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত