Ajker Patrika

‘শুধু বিচারের বাণী নয়, বিচারকও নিভৃতে কাঁদে’, দুঃখকষ্টের কথা বললেন বিচারকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ০৯
‘শুধু বিচারের বাণী নয়, বিচারকও নিভৃতে কাঁদে’, দুঃখকষ্টের কথা বললেন বিচারকেরা

‘আমরা আজীবন পড়েছি এবং জেনেছি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। কিন্তু কেউ হয়তো জানে না যে শুধু বিচারের বাণী নয়, বরং বিচারকও অনেক সময় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিভৃতে কাঁদে। কারণ, বিচারকের বলার জায়গা এবং সুযোগ কোনোটাই থাকে না। ধারণা করা হয়, বিচারকের মুখ বন্ধ থাকবে। কান দিয়ে শুনবে এবং হাত দিয়ে লিখবে। আমাদের অভিভাবক মহোদয়কে জানাতে চাই বিচারকেরাও অবিচারের শিকার হয়।’

আজ শনিবার অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির দেওয়া অভিভাষণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন খুলনার জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদা খাতুন। 

সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে এই অভিভাষণের আয়োজন করা হয়। এ সময় সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিচারক ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই–আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট বদলির নীতিমালার অভাবে অনেক বিচারক দিনের পর দিন বাড়ি থেকে শত কিলোমিটার দূরে কখনো বা দুর্গম জায়গায় মনের কষ্ট নিয়ে বিচারের মতো স্বর্গীয় কাজ করে চলেছেন। অনেক বিচারক এমন জায়গায় এজলাস–চেম্বার করেন যে ভয় হয় যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে কোনো সংবাদ শিরোনামের কারণ না হয়! এজলাস দিয়ে পানি পড়ে, টিনশেডের এজলাসে গ্রীষ্মের ভয়াবহ দাবদাহের সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। আবার কোথাও কোথাও দুই–তিনজন মিলে ছোট্ট একটা চেম্বারে বসে। কখনো এমন হয় যে বিচারকের চেম্বার এক জায়গায়, এজলাস আরেক জায়গায়। বিচারকদের এজলাস ও চেম্বারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সময়ের দাবি।’

তিনি বলেন, ‘মহানগর দায়রা জজ, সিএমএম ও সিজিএমের সরকারি বাসভবন প্রয়োজন। মহানগর দায়রা জজ, সিএমএম এবং সিজিএমের নিজস্ব বাংলো না থাকায় তাঁরা ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনে থাকতে বাধ্য হন। যা তাঁদের জন্য বিব্রতকর এবং অনেক সময় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া ত্বরিত করার জন্য এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচার বিভাগের অধীনে ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি এবং প্রসিকিউশন বিভাগ থাকা অতি জরুরি। তা না হলে অন্যের দায়ভার বিচার বিভাগকে গ্রহণ করে কলঙ্কিত হতে হয়।’

এই বিচারক আরও বলেন, অনেক সময় সেনসিটিভ মামলার বিচারকার্য করে বিচারককে হেঁটে কিংবা রিকশায় করে ঘরে ফিরতে হয়। অনেক সার্ভিসে গাড়ি সুবিধা পেলেও বিচারকের জন্য সেই দ্বার অবরুদ্ধ। বিচারকের সম্মান রক্ষার্থে গণপরিবহনে, ক্ষেত্রবিশেষে বাধ্য হয়ে মামলার পক্ষদের সঙ্গে যাতায়াত করার মতো বিব্রতকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং নিরাপত্তা রক্ষার্থে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি নগদায়ন সুবিধা দাবি করেন তিনি। 

এ ছাড়া আদালত চত্বরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা, বিচারকদের যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ রক্ষার্থে সুপ্রিম কোর্টে পৃথক ডেস্ক এবং বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল রুখতে আলাদা মিডিয়া উইং করার দাবিও জানান এই বিচারক।

biswanathনওগাঁর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়স ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও জনগণের আজন্ম লালিত একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেছে। স্বাধীন বিচার বিভাগই পারে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে প্রতিরোধ করতে। 

তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থী মানুষের দুঃখ–দুর্দশা লাঘব করতে মাসদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগ থেকে যে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর মাত্র কয়েকটি পরিবর্তিত আকারে বাস্তবায়িত হলেও অধিকাংশই অদ্যাবধি বাস্তবায়িত হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও স্বকীয় বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের কাঠামোগত সংস্কার আবশ্যক। 

এ সময় ১১ দফা দাবি জানান নওগাঁর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মণ্ডল। তাঁর দাবিগুলো হচ্ছে—

১. জেলা পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। 
২. বিভিন্ন আইনে উল্লেখিত আদালত ও ট্রাইব্যুনালগুলোর জন্য বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীর পদসহ পৃথক আদালত সৃষ্টি। দেশের জনসংখ্যা ও মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা যুক্তিসংগত হারে বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান শূন্য পদে পদোন্নতির মাধ্যমে বিচারক নিয়োগে অপ্রত্যাশিত বিলম্ব পরিহার। 
৩. সব পর্যায়ের বিচারকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা সুবিধাসহ পৃথক আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। 
৪. জেলা আদালতগুলোতে মামলা পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনয়ন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস (সরকারি আইন কর্মকর্তা) প্রবর্তন এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সরকারি আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ। 
৫. দেশের মোট বাজেটে বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকে মাত্র ০.৩ শতাংশ, যা অত্যন্ত অপ্রতুল। বিচার বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ এবং প্রতিটি আদালতের বিপরীতে পৃথক বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা। 
৬. ফৌজদারি মামলার স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ তদন্ত ও কম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির স্বার্থে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত তদন্তকারী সংস্থা এবং আদালত প্রাঙ্গণ ও বিচারকদের নিরাপত্তাসহ আদালতের আদেশ কার্যকর করার জন্য বিচার বিভাগের অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন। 
৭. ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার সহজীকরণ ও জনসাধারণের দোরগোড়ায় বিচারিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলার জন্য পৃথক পৃথক আদালত নিশ্চিত করতে হবে। নতুন উপজেলা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ একটি করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন। 
৮. বিচারকদের কাজের ধরন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সকল পর্যায়ের বিচারকদের জন্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা। 
৯. বিচারকদের বেতনবৈষম্য দূরীকরণে মাসদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে মূল বেতনের ১০০ শতাংশ হারে বিচারিক ভাতা প্রদান। 
১০. বিচারকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি। 
১১. শত বছরের পুরোনো আইনগুলো বর্তমান সময়ের নিরিখে সংস্কার করে যুগোপযোগী করা।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৬
নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। ছবি: সংগৃহীত
নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। ছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ ডিসেম্বর (শনিবার) একদল বিক্ষোভকারীর জমায়েত নিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেন।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশি কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা লক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রায় ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হয়েছিল। ওই যুবকেরা ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দিচ্ছিলেন এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছিলেন।’

মুখপাত্র স্পষ্ট করে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেনি বা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেনি।’

সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশ সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জনসমক্ষে পাওয়া যাচ্ছে।

বিবৃতিতে রণধীর জয়সওয়াল আরও উল্লেখ করেন, ‘ভারত বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে। আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। আমরা দিপু চন্দ্র দাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি।’

তিনি আবারও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের মাটিতে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাস (২৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আজ রোববার পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গেটে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টা নাগাদ তিনটি গাড়িতে করে কিছু লোক এসে বাংলাদেশ ভবনের গেটে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। তারা বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কিছু কথাবার্তা বলেছে—হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে; হাইকমিশনারকে ধরো। পরে তারা মেইন গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। ওরা চিৎকার করে চলে গেছে—এতটুকুই আমি জানি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলাকারীরা শনাক্ত, জানালেন ধর্ম উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৫
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যারা আগুন দিয়েছে, আমি গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানতে পেরেছি যে, তাদের কিছু ছবি ও পরিচয় আমরা ইতিমধ্যে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’

উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, কোনো প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া বা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা কখনোই কাম্য নয়। সরকার এ ধরনের অন্যায় ও গর্হিত কাজ বন্ধ করতে এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর।

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে। হামলাকারীরা কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে কার্যালয় দুটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ভয়াবহ হামলার ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সাংবাদিক নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তাঁরা বলছেন, এই হামলা স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার একটি জঘন্য প্রচেষ্টা।

ছায়ানট ভবনে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান কেউ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটাকে অন্যায় ও গর্হিত কাজ বলে বিবেচনা করি।’

এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাককর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেন ধর্ম উপদেষ্টা। উপদেষ্টা বলেন, সরকার কোনোভাবেই কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেবে না। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-সচিবসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১০
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন মেঘনা-গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় এই নির্দেশ দেন।

অন্য যাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক জলিল, সাবেক উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল, ইবনে আলম হাসান, মো. আফতাব হোসেন খান, মো. আব্দুস সালাম এবং সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে মেঘনা-গোমতী সেতুতে ২০১৬ সালে নীতিমালা উপেক্ষা করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। টাকার অঙ্কে কাজের মূল্য নির্ধারণ না করে বরং মোট আদায় করা টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল তুলেছে। দুদক বলছে, এ প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রায় ৩০৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এ ঘটনায় দুদক গত ১২ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তকালে দুদক জানতে পেরেছে, এ মামলার আসামিরা যেকোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন। তাঁরা দেশ ত্যাগ করলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে বিধায় তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর বিভিন্ন মামলায় তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য আবেদনের সময় বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণের জন্য দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষক মোতায়েনের আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগ্রহী সংস্থাগুলো ২৯ ডিসেম্বর (সোমবার) অফিস চলাকালীন সময় পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।

আজ রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যবেক্ষক মোতায়েনের আবেদন করার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য এই পরিচয়পত্র ও স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেওয়া হবে।

পরিচয়পত্র সংগ্রহের সময় অনুমোদিত পর্যবেক্ষকের এইচএসসি বা সমমানের সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও নির্ধারিত ফরম (EO-2 ও EO-3) পূরণ করে জমা দিতে হবে।

পর্যবেক্ষক নীতিমালা-২০২৫ এবং প্রয়োজনীয় অঙ্গীকারনামা ও অন্যান্য ফরম নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www.ecs.gov.bd) পাওয়া যাবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে, যারা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতেই পর্যবেক্ষকদের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত