Ajker Patrika

ভ্যানের ওপর রক্তাক্ত নিথর দেহের স্তূপ গড়ছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়ার

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৭
ভ্যানের ওপর রক্তাক্ত নিথর দেহের স্তূপ গড়ছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়ার

একটি ভ্যানে নিথর দেহ তুলছেন কয়েকজন; গায়ে পুলিশের ভেস্ট ও মাথায় পুলিশের হেলমেট। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নিশ্চিত না হলেও হাত দেখে অন্তত ৩ ব্যক্তি বুঝা যায়। চাদর ও ব্যানার জাতীয় কিছু দিয়ে দেহগুলো ঢেকে দেয়া হয়েছে— এমন দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ঘটনাস্থল কোথায় তা জানতে চাইছেন। ভিডিওটি ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনের সড়কের বলে আজকের পত্রিকা’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর দেহের স্তূপবোঝাই ভ্যানটির পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এদের মধ্যে দুজনের মুখ দেখা গেছে। একজন পুলিশের ভেস্ট পরা, আরেকজন ছিলেন সাদা পোশাকে। পুলিশের ভেস্ট পরা ব্যক্তি হলেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। আর সাদা পোশাকের ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি। বাকিরাও ডিবি পুলিশের সদস্য হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটির ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে দেয়াল দেখা যায়, যেখানে সাঁটানো ছিল একটি পোস্টার। সেটি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেন ভুঁইয়ার বলে শনাক্ত হয়েছে। 

আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) আশুলিয়া থানা এলাকায় গিয়ে ভিডিওতে থাকা সেই দেয়াল ও পোস্টার খুঁজে পাওয়া গেছে। এতেই ভিডিওটির ঘটনাস্থল নিশ্চিত হয়েছে। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক থেকে যে সংযোগ সড়ক আশুলিয়া থানাকে সংযুক্ত করেছে এটি মূলত সেই সড়ক। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে যাওয়ার সময় পোস্টারসম্বলিত সেই দেয়ালটি হাতের ডানেই পরে।

ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর দেহের স্তূপবোঝাই ভ্যানটির পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। ছবি: সংগৃহীতপ্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিওটি আশুলিয়া থানা ভবনের সামনের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট সকাল থেকে আশুলিয়া থানা এলাকায় অবস্থান করছিল ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি পুলিশের একটি টিম। ওইদিন সকাল থেকেই আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল মোড় এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। সেদিনই বাইপাইল এলাকায় প্রায় সারাদিন মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। 

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর ডিবির পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর দেহের স্তূপবোঝাই ভ্যানটির পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। ছবি: সংগৃহীতএ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ‘আরাফাতের ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর আরাফাত ভেঙে পড়েছেন। আমরা সেদিন ছাত্র-জনতার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়িনি।’

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈন বলেন, ‘ভিডিওটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আমাদের টিম কাজ করছে এটি নিয়ে৷ পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ভিডিওতে দেখা যাওয়া সেই দেয়াল ও পোস্টার। ছবি: আজকের পত্রিকাথানা সংলগ্ন একাধিক দোকানদার ভিডিওতে দেখতে পাওয়া স্থানটি যে থানা সংলগ্ন তা নিশ্চিত করেছেন। ভিডিওতে বস্তা দিয়ে বানানো যে বাংকার দেখা যায় তার অপর পাশে থাকা সাদিয়া কনফেকশনারির মালিক ফাহিমা বেগম বলেন, ভিডিওর যে জায়গাটি এটি আমার দোকানের সামনের।

আশুলিয়া থানার গেটের বিপরীত পাশের চা দোকানদার জসিম বলেন, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পরেও আন্দোলনকারীরা থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তাঁরা ভয়ে দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, বিকেল ৪টার দিকে থানায় হামলার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিছিলকারীদের আসার খবরে মসজিদের মাইক ও হ্যান্ড মাইক দিয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেন। এরপরও আন্দোলনকারীরা থানার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। ওই মরদেহগুলোই হয়তো ভ্যানে তোলা হয়ে থাকতে পারে।

গত ৬ আগস্ট থানার সামনে একটি পিকআপে পুড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি লাশের মধ্যে নিজের ছেলে আস–সাবুরের লাশ চিহ্নিত করেন মা রাহেন জান্নাত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ৬ আগস্ট সকালে আশুলিয়া থানার সামনে একটি পিকআপে পুড়ে যাওয়া কয়েকজনের মৃতদেহের খোঁজ মেলে। আমার ছেলের পুড়ে যাওয়া মরদেহটি ওই পিকআপেই পেয়েছি। আমার ছেলের পকেটে থাকা মোবাইলের সিম কার্ডের সূত্র ধরে তার মরদেহ শনাক্ত করি। এখন মনে হচ্ছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওর লাশগুলো ওই পিকআপে ভরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাশ গুম করার জন্য তারা পিকআপে ভরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

আশুলিয়া থানার সামনে পুড়ে যাওয়া লাশভর্তি পিকআপ। ছবি: আজকের পত্রিকাসেদিন পুড়ে যাওয়া লাশের পাশে আইডি কার্ড দেখে সাজ্জাদ হোসেন সজলের লাশও শনাক্ত করেন মা শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়। পরদিন সকালে থানার সামনে পুড়ে যাওয়া লাশের সঙ্গে থাকা আইডি কার্ড দেখে সাজ্জাদের পুড়ে কয়লা হওয়া মৃতদেহ শনাক্ত করি। সেখানে ছয়টি পোড়া লাশ ছিল। 

নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে আশুলিয়া থানায় ঢোকার সড়কের মাথায় বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অবস্থান। সেই মসজিদের ইমাম মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সেদিন (৫ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে মসজিদে আসতে পারিনি। রাতে শুধু এশার নামাজ হয়েছিল। পরদিন (৬ আগস্ট) সকালে পুড়ে যাওয়া ৬টি মরদেহের জানাজা আমি পড়িয়েছি।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে অন্তত ৩১ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই দিনের ঘটনায় অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই দিন তিন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। এর মধ্যে দুইজনকে হত্যার পর নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলের একটি ওভারব্রিজের ওপর উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এক পুলিশ সদস্যের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া থানা সংলগ্ন এলাকায় একটি পুলিশ ভ্যানে কয়েকটি পোড়া মরদেহ পাওয়া যায়।

আরও খবর পড়ুন: 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত