Ajker Patrika

সন্ত্রাসী বিকাশের বন্ধুরা

কামরুল হাসান
সন্ত্রাসী বিকাশের বন্ধুরা

২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর, শুক্রবারের সকালটা ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। একটু দূরের কোনো কিছু দেখা যাচ্ছিল না। হাইওয়ের গাড়িগুলো চলছিল কুয়াশা বাতি জ্বালিয়ে, ধীরগতিতে। সে রকম কচ্ছপগতিতে তিনটি গাড়ি এসে থামল কাশিমপুর-২ কারাগারের সামনে। ছুটির দিনে কারাগারের সামনে লোকজনের ভিড় নেই। তবু গাড়ির আরোহীরা কেউই নামলেন না, ঠায় বসে থাকলেন গাড়ির ভেতরে। ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর একজন এসে ইশারা করতেই সবাই নড়েচড়ে বসলেন। ততক্ষণে সকাল আটটা বেজে কুড়ি মিনিট।

একটু পরে কারাগারের নিরাপত্তায় বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। খুলে গেল কারাগারের মূল ফটক। এরপর মাঝারি উচ্চতার একহারা গড়নের এক ব্যক্তি মাথা নিচু করে ফটক থেকে বেরিয়ে বাইরে এলেন। এদিক-ওদিক তাকালেন, সোজা গিয়ে উঠলেন মাঝখানের গাড়িটিতে।

কারও মুখে কোনো কথা নেই, গাড়িগুলো কারাগার চত্বর থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে উঠে গেল। ততক্ষণে কুয়াশা কমতে শুরু করেছে, গাড়িগুলোও গতি পেয়ে গেল।

যাঁর জন্য এই মহা আয়োজন, তিনি শীর্ষস্থানীয় কোনো রাজনৈতিক নেতা বা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন। তিনি ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন, রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস ওরফে বিকাশ। সহোদরের নামের সঙ্গে মিলিয়ে যাঁদের একমাত্র পরিচয় ‘বিকাশ-প্রকাশ’ গ্রুপ।

ঢাকায় যখন ক্রাইম রিপোর্টিং শুরু করি, তখন রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডে সহোদর সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিল দুটি। এর একটি হলো হারিস-জোসেফ, অন্যটি বিকাশ-প্রকাশ। তবে হারিস-জোসেফের সঙ্গে এঁদের পার্থক্য হলো, হারিস-জোসেফদের যোগাযোগ ছিল সমাজের উঁচু স্তরে; সেই তুলনায় বিকাশ-প্রকাশের চলাচল নিচুতলায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা কাজ করতেন ভাড়াটে হিসেবে। যে কারণে এলাকার এক এমপি ছাড়া আর কারও কোনো পৃষ্ঠপোষকতা তাঁরা পাননি। সর্বশেষ বিকাশকে জেল থেকে বেরোতেও ‘সুপারি’ থেকে পাওয়া কোটি কোটি টাকা ঢালতে হয়েছে। তবে সে কথায় পরে আসছি, তার আগে দুই ভাইয়ের ঠিকুজিটা একটু ঝালাই করে নেওয়া যাক।

দুই ভাইয়ের পিতার নাম বিমল চন্দ্র বিশ্বাস। বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে। প্রকাশ বড়, বিকাশ ছোট। তাঁদের আরও দুই ভাই আছে—রনি ও প্রতাপ। রনি কয়েক বছর আগে মাদকাসক্ত হয়ে মারা গেছে। প্রতাপ এখন কালীগঞ্জ বাজারে ওষুধের ব্যবসা করে। আর আছেন বৃদ্ধ মা। ৮০ বছরের এই নারী গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন।

বিমল চন্দ্র বিশ্বাসের জীবন শুরু হয়েছিল ঢাকায়, ছোটখাটো চাকরি দিয়ে। চার ছেলেকে নিয়ে ভালোই চলছিল। থাকতেন মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায়। বড় ছেলে বিকাশ কলেজে উঠেই বেপরোয়া হয়ে পড়েন। শুরু হয় পাইকপাড়াকেন্দ্রিক মাস্তানি। সঙ্গে আরও কিছু তরুণ জুটে যায়। এরপর পায় কে। ১৯৮৫ সালের দিকে এশিয়া সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি নিয়ে হলের কালোবাজারি রমজানের সঙ্গে বিরোধ বাধে। একদিন রমজানকে খুন করে ফেলেন। রমজান খুন হওয়ার পর প্রকাশের ‘নামডাক’ হয়ে যায়। ছোট ভাই বিকাশ তখন পড়তেন মিরপুর বাঙলা কলেজে। দাদার (কু) খ্যাতি তাঁকেও স্পর্শ করে। দেখা যায়, পথঘাটে লোকজন প্রকাশের ভাই হওয়ার কারণে তাঁকে বেশ খাতির-যত্ন করে। এই লোভ আর ছাড়তে পারেন না বিকাশ। তিনিও ভাইয়ের পথ ধরেন। একপর্যায়ে প্রকাশ-বিকাশ বাহিনী হিসেবে তাঁদের নাম চলে আসে পুলিশের খাতায়।

আগারগাঁও এলাকায় সে সময় জমজমাট ঠিকাদারি ব্যবসা। ই-টেন্ডার তখনো শুরু হয়নি। ভয় দেখিয়ে বা টেন্ডার বাক্স দখল করা ছিল প্রাচীন আমলের রাজ্য দখল করার মতো। কিছু ঠিকাদার সেই সুযোগ কাজে লাগাতেন। একদল ঠিকাদার টেন্ডার দখল করতে প্রকাশ ও বিকাশকে ভাড়ায় নিয়ে আসেন। এভাবে আগারগাঁও পিডব্লিউডির দপ্তর তাঁদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এ সময় বাধা হয়ে দাঁড়ান প্রতিপক্ষ ঠিকাদারের ভাড়াটে আরেক সন্ত্রাসী শামীম। একদিন পিডব্লিউডি দপ্তরের ভেতরেই শামীমকে গুলি করে হত্যা করেন দুই ভাই। সঙ্গে শামীমের সহযোগী মামুনও খুন হয়। এই খুনের পর রাতারাতি ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের হিরো বনে যান দুই ভাই। বিকাশ-প্রকাশের নাম ছড়িয়ে পড়ে। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তাঁদের ঠিকাদারি কাজে ছাত্রলীগ নেতা জরিপ বাধা হয়ে দাঁড়ান। এরপর তাঁরা জরিপকেও খুন করেন। একে একে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত আলী মিস্টার, গুদারাঘাটের টিপু, কল্যাণপুরে মুদিদোকানি রুহুল আমিন, মিরপুরে খাজা মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, শিল্পপতি আজহারুল ইসলাম, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ, ভিডিও সেন্টারের মালিক মাহবুবসহ অনেকে খুন হন তাঁদের হাতে। তখন দেখা যেত, প্রতি মাসেই কেউ না কেউ তাঁদের হাতে খুন হচ্ছে।

প্রকাশ-বিকাশ এরপর মিরপুর-আগারগাঁও এলাকা থেকে বাসাবোতে আস্তানা গাড়েন। ঢাকায় তখন সুইডেন আসলাম, হারেস, জোসেফ, সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, টিক্কা, মুরগি মিলন ও লিয়াকত হোসেনের দাপট চরমে। আধিপত্য নিয়ে শুরু হয় সংঘাত। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় লিয়াকত ও মুরগি মিলন এগিয়ে যান। পিছিয়ে পড়েন প্রকাশ-বিকাশ।

১৯৯৭ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকায় প্রথম দুই ভাইয়ের নাম আসে। এই তালিকা প্রকাশের পর ১৯৯৭ সালে মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের এসি আকরাম হোসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে বিকাশকে গ্রেপ্তার করেন। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে ১২টি খুনের মামলা ছিল। সেই থেকে জেলেই ছিলেন বিকাশ। আর প্রকাশ তখনো বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছবি, পরিচয়সহ তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকা বেরোলে প্রকাশ পালিয়ে ভারতে চলে যান। সেখান থেকে ফ্রান্সে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন। তবে ফ্রান্সে থাকলেও তাঁর নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে ঢাকায়। এরপর ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। এতেও তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়। জেলে থাকলেও বিকাশ কখনো থেমে থাকেননি। কারাগারে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাঁর লোকেরা সক্রিয় ছিল। সর্বশেষে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার কয়েক দিন আগে দেশ ছাড়েন। পুলিশের মতে, সেই মুসাও ছিলেন প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপের সদস্য।

বিকাশের সেই গোপন মুক্তির খবর আমরা জেনেছিলাম অনেক পরে, ওই দিন বিকেলের দিকে। ততক্ষণে তিনি নির্বিঘ্নেই পৌঁছে গেছেন গন্তব্যে। শুনেছি, বেনাপোল সীমান্ত হয়ে প্রথমে যান ভারতের হরিদাসপুরে, তারপর কলকাতায়। সম্ভবত এখন তিনি ফ্রান্সে আছেন। তখন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, বিকাশের এই মুক্তির পেছনে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছিল। কারা সেই টাকার ভাগ পেয়েছিলেন, সেটা পুরো গল্পটি পড়লেই আঁচ করা যাবে। তবে প্রমাণ ছাড়া তো কাউকে অভিযুক্ত করা যায় না।

যেমন, বিকাশকে মুক্তির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় খুব গোপনে, যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়। সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধের কথা তো আগেই বলেছি। এমনিতে কারাগারের নিয়ম অনুসারে সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্তের আগের সময় ছাড়া অন্য সময়ে কোনো বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু সেই রীতি ভেঙে বিকাশকে মুক্তি দেওয়া হয় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে। আবার শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেলে সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হয়।

তখন গাজীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন আবদুল বাতেন। তিনি এখন ডিআইজি। আমি ঘটনার দিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের নলেজে নেই।’ গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো সারা দিন মানিকগঞ্জে ভাই’। গাজীপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ছিলেন কানিজ জাহান। তিনি বলেছিলেন, ‘তাই নাকি? জানি না তো ভাই।’

এবার আসি কারাগারের কথায়। কাশিমপুর কারাগার-২-এর কারাধ্যক্ষ ছিলেন সুভাষ চন্দ্র ঘোষ। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘নিয়ম মেনেই আমরা তাঁকে মুক্তি দিয়েছি।’ আর কারা মহাপরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম খান বলেছিলেন, ‘আমাকে কেন বলছেন ভাই, আপনাদের মন্ত্রীর কাছে জানতে চান।’

ফোন দিয়েছিলাম তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে। তিনি বলেছিলেন, ‘একটা লোক ১৫ বছর জেলে ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে নতুন আর কী অভিযোগ আসতে পারে? জেলের ভেতরে থেকে সে কী অপরাধ করবে? তুমি বললেই তো হবে না।’

মন্ত্রীর এই কথার পর আর কিছু কি বলার আছে? আশা করি পাঠকের কাছে সব খোলাসা হয়ে গেছে। আরেকটু বলে রাখি, ওই দিন গাজীপুর জেলা পুলিশের দুজন কর্মকর্তা বিকাশের মুক্তির সময় কারাগারের আশপাশেই ছিলেন। অন্য কোনো সংস্থা যাতে বিকাশকে কারা ফটক থেকে ধরে নিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন তাঁরা।

আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’ লেখা শেষ করার আগে প্রকাশ-বিকাশের পরিবারের খোঁজ নিতে আজকের পত্রিকার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি মো. আবদুর রহিম গিয়েছিলেন শিবনগর গ্রামে। তিনি খোঁজ নিয়ে বললেন, মহাপ্রতাপশালী এই সন্ত্রাসীদের পরিবার গ্রামে একেবারে বিচ্ছিন্ন। তাদের সঙ্গে কেউ মেলামেশা করে না, আত্মীয়তাও করে না। তাদের আত্মীয়স্বজনও নিজেদের পরিচয় দেন না। বিকাশ-প্রকাশের এক খালাতো ভাই তাঁকে বলেছেন, ‘ওরা সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী কারও স্বজন হতে পারে না, আমারও না। তারা আমাদের কেউ না।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।

ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচজন রিমান্ডে

মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত