Ajker Patrika

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ১৬ জেলায় ২৮ জনের মৃত্যু

আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ২১
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ১৬ জেলায় ২৮ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে গাছ ভেঙে পড়ে, দেয়াল ধসে, ট্রলার ডুবে ও পানিতে ডুবে ১৬ জেলায় ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজন, ভোলায় পাঁচজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, গোপালগঞ্জ দুজন, চট্টগ্রামে দুজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন, কক্সবাজার দুজন, মুন্সিগঞ্জে দুজন এবং বরগুনা, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, গাজীপুর, ঢাকা, পটুয়াখালী ও নড়াইল একজন করে মারা গেছেন।

আজ মঙ্গলবার সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ভোলা: 
সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় গাছচাপায়, আতঙ্কে ও নদীতে ডুবে এখন পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। 

নিহতরা হলেন, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মফিজল ইসলাম (৬০), দৌলতখান উপজেলার পৌর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিবি খাদিজা (৮০), চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানা এলাকার চেয়ারম্যান বাজারের মো. মনিরুল ইসলাম (৩০) ও লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জের ফাতেমাবাদ এলাকার আয়শা বেগম (৩০)। 

কুমিল্লা: 
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল বাজার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের ওপর গাছ পড়ে একই পরিবারে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, নেজাম উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথি ও তাঁদের দুই বছরের শিশু নুসরাত। 

গোপালগঞ্জ: 
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সিত্রাংয়ের জেরে গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন, উপজেলার পাঁচকাহিনিয়া গ্রামের রেজাউল খাঁর স্ত্রী শারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রুমিছা বেগম (৬৫)। 

সিরাজগঞ্জ: 
বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে সোমবার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর এলাকায় নির্মাণাধীন শিল্পপার্কের উত্তর পাশে নৌকাডুবির ঘটনায় মা ও ছেলের মৃত্যু হয়। মৃতরা হলেন, পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন শেখের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা (৩০) ও তাঁদের শিশুসন্তান আরাফাত। 

নড়াইল: 
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোমবার দুপুরে গাছের ডাল পড়ে মর্জিনা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামে। 

বরগুনা: 
গতকাল রাত ৮টার দিকে ঘরের ওপর গাছ পড়লে ভেতরে চাপা পড়ে আমেনা খাতুন নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের সোনাখালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

নোয়াখালী: 
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পূর্ব চরবাটা হাবিবিয়া একটি বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে সানজিদ আফ্রিদি আদি নামের এক বছরের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার মা সানজিদা খানম গুরুতর আহত হলে তাঁকে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

ঢাকা: 
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মহাসড়কে গাছ উপড়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায়ও বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। 

 ঘরের ওপর গাছ পড়ে শরীয়তপুরে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়গোপালগঞ্জ: 
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছ চাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাতে উপজেলার পাঁচ কাহিনীয়া ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামে ওই দুই নারীর মৃত্যু হয়। নিহতেরা হলেন, উপজেলার পাঁচ কাহনীয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী শারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রুমিছা বেগম (৬৫)। 

চট্টগ্রাম: 
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগর উপকূল থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা অজ্ঞাত (৭) এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের সাগর উপকূলবর্তী একটি জাহাজভাঙা কারখানা সংলগ্ন এলাকা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

অন্যদিকে নগরের চাঁন্দগাওতে ঘরের ভেতরে ঢুকে যাওয়া জোয়ারের পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মোবারক হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় একই পরিবারের আরও ৩ সদস্য আহত হয়েছেন। সোমবার রাত আড়াইটায় উত্তর মোহরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত যুবক নগরীর মোহরা এলাকার মৃত নুর আলমের ছেলে। আহতরা হলেন, মোবারকের বড় ভাই মো. সালাউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রাশেদা বেগম ও ছোট ভাই মো. সাদ্দাম। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পুকুর থেকে যদুগোপাল পাল (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গোপীনাথ জিউ মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বৃদ্ধ ফান্দাউক গ্রামের মৃত জগৎ চন্দ্র পালের ছেলে। 

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে প্রভাবে ঘরে গাছ ভেঙে পড়ে জয়নাল আবেদীন (২৮) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এতে আহত হয়েছে তাঁর স্ত্রী নিপা আক্তার (২০)। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

নরসিংদীর মনোহরদীতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিধ্বস্ত একটি বাড়িশরীয়তপুর: 
শরীয়তপুরের জাজিরায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছ চাপায় সুফিয়া খাতুন (৬৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাসে গাছ উপড়ে তাঁর বসত ঘরের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে গাছ চাপায় মারা যান তিনি। নিহত সুফিয়া জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের সিডারচর গ্ৰামের হালান মুসুল্লীর স্ত্রী। 

গাজীপুর: 
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মাটির দেয়াল ধসে পড়ে আনিসুর রহমান নামে ৯ বছরের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার কড়িহাত ইউনিয়নের সোমবার মধ্যরাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত শিশু ইকুরিয়া গ্রামের দিনমজুর বেলায়েত মোল্লার দ্বিতীয় ছেলে। এতে তাঁর বড় ছেলে আলামিন আহত হয়েছেন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

পটুয়াখালী: 
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে মো. নূরুল ইসলাম (৪০) নামে এক ট্রলার শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে সোমবার রাত ৯টার দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের প্রত্তাপপুর লঞ্চঘাটে নোঙর করা অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই ট্রলারের মালিক আব্দুল জলিল মোল্লা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও শ্রমিক নূরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরে ১৩ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেন। 

মো. নূরুল ইসলাম পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরপুর গ্রামের রশিদ মোল্লার ছেলে। জলিল মোল্লা সোমবার বিকেলে পটুয়াখালীর একটি ইটভাটা থেকে ২৫ হাজার ইট নিয়ে মুরাদিয়া যাচ্ছিলেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব বেড়ে গেলে ইটভর্তি ট্রলারটি প্রত্তাপপুর লঞ্চঘাটে নোঙর করে রাখা হয়। পরে রাতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আঘাতে ট্রলারটি ডুবে যায়। 

কক্সবাজার: 
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজে মিয়ানমারের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝোড়ো হাওয়ার সময় জাহাজের ওপর ডেক থেকে নিচে পড়ে শৌ মিং (৭১) নামের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি মিয়ানমারের আকিয়াব শহরের ঢৌমিং এর ছেলে। 

টেকনাফ স্থলবন্দরের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত শৌ মিং মিয়ানমার থেকে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটির বাবুর্চি ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে মিয়ানমার থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজটি বন্দরে এসেছে। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাগরে ড্রেজারসহ ডুবে নিখোঁজ ৮ শ্রমিকের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাহিদ (২৯) নামে এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান।

মুন্সিগঞ্জ:
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ে গাছ ভেঙে বসতঘরের উপর পড়ল চাঁপা পড়ে মা ও মেয়ে নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বাবা গুরুতর আহত হন। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মা আসমা বেগম আশু (২৮) ও মেয়ে সুরাইয়ার (৩)।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে আবারও প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে উত্তরায় ডিএনসিসি আয়োজন করে ‘হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান’।

অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে দেখিয়ে দিয়েছি যে চাইলেই ঢাকার ভেতরে ওয়াটারওয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে কনাই নদ উদ্ধার করে নৌচলাচল উপযোগী ৯ কিলোমিটার নদে প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগে ফিল্ড স্টাডি ও পরে উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

উত্তরাবাসীর পক্ষে বক্তব্যে কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস ডিএনসিসির প্রশাসকের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে হারিয়ে যাওয়া কনাই নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

পাউবোর বোর্ড সদস্য আমিনুর রসুল বলেন, নতুন করে ৯ কিলোমিটার নৌপথ যুক্ত হলো। এখন এটি রক্ষার দায়িত্ব এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ডে ফ্লোটিং মার্কেট দেখতে যাই, অথচ ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে এর চেয়েও সুন্দর পর্যটন এলাকা তৈরি করা সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম শামসুল আলমসহ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ঢাকা গ্যাজেটিয়ার এবং ১৯৬০ সালের ঢাকা ম্যাপে রাজধানীর ভেতরে কনাই, নড়াই, দেবদোলাই, জিরানি প্রভৃতি নদ-নদীর অস্তিত্বের উল্লেখ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এসব নদী হারিয়ে যায়। ডিএনসিসির উদ্যোগে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার নদ খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কনাই নদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে নদটি ‘খিদির খাল’ নামে পরিচিত। কনাই নদ আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে গড়ান চটবাড়ি হয়ে দ্বিগুণ খাল অতিক্রম করে তুরাগ নদে মিলিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির পানছড়ি: নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশায় তীব্র যানজট, ভোগান্তি

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি, পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির পানছড়ির বাজারে ঢুকলেই থেমে যায় যানবাহনের গতি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে প্রতিদিনই অচল হয়ে পড়ছে সড়ক। অনুমোদনহীন যান, প্রশিক্ষণহীন চালক আর যত্রতত্র পার্কিংয়ে সীমান্তঘেঁষা এই মফস্বল শহরের বাজার এলাকা এখন স্থায়ী যানজটের ফাঁদে বন্দী। এতে শিক্ষার্থী থেকে রোগী, ব্যবসায়ী থেকে কর্মজীবী—সবাই ভোগান্তির শিকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানছড়ি উপজেলায় এক হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে চারটি অটোরিকশা সমিতির আওতায় নিবন্ধিত রয়েছে সাত শতাধিক যান। বাকি অটোরিকশাগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে রাস্তায় চলাচল করায় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অটোরিকশাচালকদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তাঁরা এ পেশায় এসেছেন। চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কাজ না থাকায় ইজিবাইক চালাতে বাধ্য হয়েছি। প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেকেই নিয়ম না জেনে গাড়ি চালান।’

আরেক চালক তাজুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স, নিবন্ধন ও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থাকলে চালকদেরও সুবিধা হতো। সরকার যদি সহজভাবে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাজারের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, দোকানে পণ্য আনা-নেওয়ায় মারাত্মক সমস্যা হয়। হাটের দিনগুলোতে বাজার এলাকায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পানছড়ি বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমল বিকাশ চাকমা জানায়, মাত্র ১০ মিনিটের পথ অটোরিকশার ভিড়ে অনেক সময় আধা ঘণ্টা লেগে যায়। হাটের দিনে বাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর।

স্থানীয়দের দাবি, অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, নিবন্ধন কার্যকর করা এবং বাজার এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি আরও বাড়বে।

জানতে চাইলে পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অধিকাংশ চালকেরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই এবং সড়ক আইন সম্পর্কে ধারণাও সীমিত। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই তাঁরা মানেন না। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অনুতোষ চাকমা বলেন, পানছড়িতে অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। কখনো কখনো জরুরি রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও যানজটে আটকে থাকে, অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়।

এ বিষয়ে পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজার এলাকায় পুলিশ বক্স থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নির্ধারণ এবং অটোরিকশা সমিতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন: তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে উত্তেজনা

  • রাউজানে গিয়াস উদ্দিন কাদের ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে মনোনয়ন।
  • চন্দনাইশে আ.লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি জসিম উদ্দিনকে প্রার্থী।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এগুলোর মধ্যে ‘রক্তাক্ত জনপদ’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দীর্ঘদিনের একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকার—দুজনকেই বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তকে দলীয় কৌশল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জসিম উদ্দিন আহমেদকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে থাকারও অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ফলে জসিম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির অনেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী। এ জন্য তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আসনটিতে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

আসন তিনটিতে এই পাঁচজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফলে নির্বাচন ঘিরে দলীয় অন্তর্কোন্দলের শঙ্কা করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নের বর্তমান দৃশ্য দেখে মনে হয়, ফুটন্ত উনুন থেকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে পড়েছি আমরা। বিপ্লবের পরও আগের একই চেহারা দেখা যাচ্ছে প্রার্থী মনোনয়নে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মাসে রাউজান উপজেলায় ১৮ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ১৩টি। যাঁরা খুন হয়েছেন, তাঁরা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অথবা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার এবং বালুমহাল ও পাহাড় কাটার মাটি নিয়ে দ্বন্দ্বে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া গত ১৬ মাসে গুলিবিনিময়ের ৩২টি ঘটনায় অর্ধশত লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আসনটিতে প্রথম দফায় বিএনপির কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে গোলাম আকবর খোন্দকারকেও।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘রাউজানে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া কিংবা আমাকে বাদ দেওয়াসংক্রান্ত দলীয় নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হয়নি। আমার জানামতে, আমিই রাউজানে বিএনপির প্রার্থী।’

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাউজানে দুজনকেই মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। প্রত্যাহারের সময় একজনকে রেখে আরেকজনকে প্রত্যাহার করতে বলা হবে।’

এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের প্রার্থী লেয়াকত আলী বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলাম। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ ভোটার আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়া চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমার ছবি থাকতেই পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পেট্রোলিয়াম করপোরেশন: দেড় বছরেও চালু হয়নি ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

  • ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে আছে প্রকল্প।
  • দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা।
  • চালু হলে বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বড় জাহাজ থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাস করে সময় ও ব্যয় কমাতে নেওয়া হয়েছে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইদ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প। ৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। কিন্তু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে আছে বৃহৎ এই জ্বালানি অবকাঠামো প্রকল্প।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উদ্যোগে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের আগস্টে। এর পর থেকে এটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের (পরিকল্পনা-২) উপসচিব আসমা আরা বেগম বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট আগে নির্মাণ করা হলে এসপিএম প্রকল্পটি দ্রুত কাজে লাগানো যেত। শোধনাগার সম্প্রসারণের কাজ আগে হলে এখন আর এটি বসিয়ে রাখতে হতো না।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীর দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সাগরে একটি ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে অপরিশোধিত, অন্যটিতে পরিশোধিত তেল পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর ও একাধিক স্টোরেজ ট্যাংকও নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতে সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। বর্তমানে বড় ট্যাংকার থেকে প্রথমে ছোট ট্যাংকারে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেগুলো জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে খালাস করা হয়। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসপিএম চালু হলে এক লাখ টন জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তেল খালাস করা সম্ভব হতো। সনাতন পদ্ধতিতে সেখানে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ দিন। ইতিপূর্বে এই পদ্ধতিতে তেল খালাস করতে গিয়ে ট্যাংকারে বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

বিপিসির পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। তবে এটি এখনো পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (পিটিপিএলসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে পরিচালনার দায় নিতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানটি। পিটিপিএলসির উপমহাব্যবস্থাপক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি এখনো তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের ঠিকাদার ছিল চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি)। অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বও তাদের দেওয়ার কথা ছিল। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বাস্তবতায় সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়। দরপত্রের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয় বিপিসি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সাড়া মেলেনি। প্রকল্প পরিচালক ও ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ হাসনাতকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের (পরিকল্পনা) অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, প্রকল্পটি অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স ঠিকাদার নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকাদার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে প্রায় ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়, যা ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা হয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, অপরিশোধিত তেল আমদানি ও মজুত সক্ষমতা না বাড়ালে এসপিএম প্রকল্প পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।

প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার কথা। পরিবহন, তেল খালাসের খরচ ও নানা অপচয় কমে এ অর্থ সাশ্রয় হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত