Ajker Patrika

কোটা সংস্কার আন্দোলন: এবার কঠোর হাতে দমন করবে সরকার

তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ২২: ১৯
কোটা সংস্কার আন্দোলন: এবার কঠোর হাতে দমন করবে সরকার

এত দিন বাধাহীনভাবে চলে আসা কোটা সংস্কার আন্দোলন এবার কঠোর হাতে দমনের পথে হাঁটছে সরকার। গতকাল সোমবার এই বার্তাই দিয়েছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা বলেন, আন্দোলনকারীরা নিজেদের রাজাকার ঘোষণা দিয়ে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। ছাত্রলীগ সেই ঔদ্ধত্যের জবাব দেবে। প্রয়োজনে সরকার কঠোরভাবে দমন করবে। কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের তৎপরতা দেখালে সেটি শক্ত হাতে মোকাবিলা করার কথা বলেছে পুলিশও। 

কোটা আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আন্দোলন মোকাবিলায় ছাত্রলীগের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চান আওয়ামী লীগ নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে না পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয় তাদের।

বেলা ২টার পরে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা যে বক্তব্য রেখেছে, তার জবাব ছাত্রলীগ দেবে। যারা নিজেদের আত্মস্বীকৃত রাজাকার বলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে গত রাতে, তার জবাব ছাত্রলীগ দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’ 

আওয়ামী লীগ মনোভাব বুঝতে পেরে গতকাল বেলা ২টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যুক্ত হন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন রোববার বিকেলে; কিন্তু সেটা নিয়ে মধ্যরাতে মিছিল বের করা এবং হল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের বের হওয়াকে রাজনৈতিক ইন্ধন হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিকেলের বক্তব্য নিয়ে মধ্যরাতে প্রতিবাদ করা সন্দেহজনক। এতে রাজনৈতিক উপাদান যুক্ত হয়েছে। দলটির এক নেতা বলেন, ‘স্লোগানে প্রমাণ করেছে, আন্দোলনে রাজনীতি আছে। আমরা তাদের ওপর দৃশ্যমান চাপ সৃষ্টি করার জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম। স্লোগানটা সে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।’ 

বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে গেছে, তাই বিষয়টি আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জানতে চাইলে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নেত্রী এমন কিছুই বলেন নাই যে তারা (কোটা আন্দোলন) প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। এটা বিএনপি-জামায়াতের অ্যাজেন্ডার বাস্তবায়ন। আমরা তো ছেড়ে দিতে পারি না, ছেড়ে দেওয়া ঠিকও হবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মন্তব্য করে তারা বলবে, আমরা রাজাকার; এটা কেমন কথা। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যাতে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, সেই নির্দেশনা দিতেই বৈঠক করা হয়েছে।’ 

এদিকে গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মসূচিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকেছে। তাদের লোকজন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগ ব্যবহার করে কেউ ফায়দা লুটতে চাইলে সরকার তা কঠোর হাতে প্রতিহত করবে।’

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। তিনি জানান, তাঁরা কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করছেন। এ নিয়ে গতকাল সংগঠনটি বৈঠকও করেছে। 

জনদুর্ভোগ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গ করা হলে তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চলমান কোটা আন্দোলন আদালতের বিষয়। মহামান্য আদালত যে আদেশ দেবেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা এবং তা মেনে নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। আদালতের নিয়ম মানতে আমরা বাধ্য। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে তৎপরতা কেউ চালালে সেটি যে-ই হোক, শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির জানাজার সময় এগিয়ে শনিবার বেলা দুইটায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩২
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজার সময় এগিয়ে এনে আগামীকাল শনিবার বেলা দুইটায় নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে নামাজে জানাজা বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় যারা অংশ নিতে আসবেন তারা কোনো প্রকার ব‍্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন‍্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাঙচুর ও লুটতরাজকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ছায়ানটের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ছায়ানট ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটতরাজের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি সংগঠনটি এই আহ্বান জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুকে উপলক্ষ করে একজোট লোক ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায় এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা ছয়তলা ভবনের সব সিসি ক্যামেরাসহ অধিকাংশ কক্ষ, প্রক্ষালণ কক্ষ এবং বহু বাদ্যযন্ত্র, মিলনায়তন, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। সার্ভারসহ ছায়ানটের কিছু বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত সাতটি ল্যাপটপসহ গোটা চারেক ফোন ও কিছু হার্ডডিস্ক লুট করেছে। তাদের ভাঙচুরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

‘ছায়ানট একটি স্বেচ্ছাসেবী ও স্বনির্ভর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ছায়ানট কোনো সরকার, বিদেশি সংস্থা বা করপোরেট অনুদান নেয় না। সুতরাং, ছায়ানট আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষতি পূরণ করবে এবং সংগীত ও শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় এই সাময়িক বিঘ্নের দ্রুত প্রতিকার করতে বদ্ধপরিকর।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ছায়ানটের কাজের ক্ষেত্র রাজনীতি নয়, সংগীত-সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে ছায়ানট। ছায়ানট সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সমাজ গড়তে প্রয়াসী। আমরা ওসমান হাদির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত। কিন্তু ওই সূত্র ধরে ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে কেন হামলা সংঘটিত হলো, তা মোটেই বোধগম্য নয়। হয়তো পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতিচর্চার বিরোধী গোষ্ঠী।’

সংগীতশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটি আরও বলে, ছায়ানট এই উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ অনানুষ্ঠানিক সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে সমাদৃত। বাংলা গানের চর্চা বিস্তৃতির পাশাপাশি স্বাধীনতা-সংগ্রামে ছায়ানটের ভূমিকাও সারা বিশ্বে স্বীকৃত। তাই ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে এই নিন্দনীয় হামলা মাতৃভূমি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে বিশ্বে।

দেশ ও বিদেশ থেকে যে অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে ছায়ানট কৃতজ্ঞ।

বাঙালির আবহমান সংগীতসংস্কৃতির সাধনা ও প্রসারে ছায়ানট তার স্থির প্রত্যয় যাত্রায় অবিচল থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির লাশের আগমন ঘিরে শাহজালাল বিমানবন্দরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানোকে কেন্দ্র করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বিমানবন্দর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ডোমেস্টিক ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালের প্রতিটি প্রবেশপথে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো বিমানবন্দর এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ ছাড়া ভিআইপি গেটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও আর্মড ফোর্স ব্যাটালিয়নের (এএফবি) সদস্যদের কঠোর দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত নজরদারি রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ওসমান হাদির লাশের বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বের করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওই গেট এলাকাতেও সেনাবাহিনী, আর্মড ফোর্স ব্যাটালিয়ন ও পুলিশের সদস্যদের কড়া অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ৫৮৫ ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয় ওসমান হাদির লাশ। ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৫টা ৪৯ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত