Ajker Patrika

‘মেশিন নাইমা আমগো ময়না কইম্মা গেছে’

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
‘মেশিন নাইমা আমগো ময়না কইম্মা গেছে’

জীবিকার তাগিদে ভোরে সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই ঘুম ঘুম চোখে হাতে কাঁচি, কাঁধে ধান বহন করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি তারবাঁশ নিয়ে ছোটেন তাঁরা। গন্তব্য ‘কামলার হাট’। হাটজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। যারা জড়ো হয়েছেন কারও আবাদি জমি নেই, কেউ এসেছেন ঘরে অসুস্থ স্ত্রী চিকিৎসা খরচ জোগাতে, কেউ অভাবের তাড়নায় এসেছেন কাজের সন্ধানে।

কামলার হাটে এ দৃশ্য চোখে পড়বে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে। প্রতি বছর বোরো ও আমান ধান কাটার মৌসুমে কাজের খোঁজে দাঁড়ান দিনমজুর বা শ্রমিকেরা। আর এই জায়গাটি কামলার হাট নামে পরিচিত।

আজ সোমবার ভোরে সরেজমিনে কামলার হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক মানুষের ভিড়। তারা সবাই দিনমজুরের কাজ করার জন্য এখানে জড়ো হয়েছেন। সেখানে আজকের পত্রিকার কথা হয় কয়েজন দিনমজুরের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্রায় দশ বছর ধরে এখানে জড়ো হয় কামলা (দিনমজুর) দিতে। প্রতি বছর বোরো ও আমান ধান কাটার মৌসুমে এ হাটে কাজের খোঁজে দাঁড়ান তাঁরা। গৃহস্থরাও আসেন কামলার খোঁজে। দামে মিললে তাঁরা চলে যান গৃহস্থের বাড়িতে। তবে প্রতিদিন সবার ভাগ্যে কাজ জোটে না। কারও কারও ফিরতে হয় দিন পার করার দুশ্চিন্তা নিয়ে। শ্রমিকেরা আরও জানান, এ বছর শ্রমিকের দাম তুলনামূলক কম। আর এ জন্য ধান কাটা ও মারাই করার জন্য হারভেস্টর মেশিনকে দায়ী করছেন অনেকেই।

এ হাটে কাজের সন্ধানে এসেছেন পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলপুরের ৫০ বছর বয়সী আলকাছ আলী। সঙ্গে ওই উপজেলার নাগলা এলাকার রমজান আলী (৫৫)। দুজনই গত কয়েক বছর ধরে আসেন এ হাটে। রমজান আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘরে তাঁর অসুস্থ স্ত্রী। কয়েক দিন কাজ করলে যে টাকা পাবেন, খরচ বাদে যা থাকবে, তা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করাবেন।

আলকাছ আলীর কাছে জানতে চাইলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বন্দে আমার কোনো জমি-জমা নাই। চাইর পাঁচ কাডা (কাঠা) বাগি (বর্গা) করি খোরাকির লাইগা। সিজনে মাইনসের ধান কাইট্টা যা পাই কোনো রহম দিন কাডে। এইবার সবকিছুর দাম বাড়লেও কামলার দাম বাড়ে নাই। দেখছুইন না মেশিন (হারভেস্টর) নামছে। একদিনে সব খেত কাইট্টালায়। এহন আমগোর ময়না (মজুরি) কম।’

আলকাছ আলী জানালেন, গত বছর ১১-১৩ শ’ টাকায় ধান কাটছেন তিনি। এ বছর ৮-৯ শ’ টাকা দরে রোজ ধান কাটছেন।

পাশেই ৭-৮ জনের একটি দলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিছু শ্রমিক। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নে। তাঁরা জানান, গত চার দিন ধরে এক গৃহস্থের ধান কেটেছেন। আজ আবারও দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।

এই দলের সদস্য খোকন আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘মেশিন (হারভেস্টর) আইয়া আমাগো মজুরির দাম কম। সারা দিন কাম কইরা যে ময়না পাই, তেল, ডাইল, তরকারি কিনতে ফুরায় যায় গা। মাছ কিনাম কী দিয়া?

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে বসেছে ‘কামলার হাট’রুবেল নামের অপর একজন বলেন, ‘এই রোজা গেল একদিনও গোশত কিনবার পারি নাই। সবকিছুর দাম বাড়তি। এক কামলার ময়না দিয়ে বেগ ভর্তি বাজার অইনা।’

হালুয়াঘাট উপজেলার দর্শার পাড় এলাকার রোকন উদ্দিন (৫৫) দৈনিক ৮০০ টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন ধুরাইল এলাকায়। নতুন কাজের আশায় আজও দাঁড়িয়েছেন এ হাটে। রোকন জানান, ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে এ বয়সে দিনমজুরি করতে হয় তাঁকে। তাঁর ছেলেও পড়াশোনার ফাঁকে তাঁর সঙ্গে দিনমজুরি করে।

সেখানেই কাজের সন্ধানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ২০ বছর বয়সী জুয়েল নামের এক যুবককে। তিনি জানান, ৬ মাস আগে বিয়ে করেছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা ও নতুন বউ। তাই কাজের সন্ধানে তিনিও দাঁড়িয়েছেন।

চোখে পড়ে অন্য দৃশ্যও। গত সপ্তাহে চার দিন এক গৃহস্থের বাড়িতে কাজ জুটলেও এ সপ্তাহে কোনো কাজের ডাক ছাড়াই প্রতিদিন বাড়ি ফিরে গেছেন ৬১ বছর বয়সী ফজলু হক।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ আমি। জীবন পার করলাম মাইনসের বাড়ি কাম কইরা। এহন শেষ বয়সেও এই কাম পিছ ছাড়ে না।

হাটে কথা হয় শ্রমিক নিতে আসা ধুরাইল ইউনিয়নের আল আমিনের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, বিলে ৫০ শতাংশ জমি আবাদ করেছেন। ধান পেকে গেছে। তার এলাকায় শ্রমিক না থাকায় এ হাটে এসেছেন শ্রমিকের সন্ধানে। দর-দাম চুকিয়ে শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে ফিরবেন তিনি।

ধারা বাজার এলাকার অপর এক গৃহস্থ রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হারভেস্টর মেশিনে ৭-৮ হাজার টাকা একরে ধান কাটতে পারছেন কৃষকেরা। তবে তুলনামূলক নিচু এবং ধান আনতে সুবিধা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামপুরে পুলিশের অভিযানে আওয়ামী লীগের তিন নেতা আটক

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি  
আটক করা আওয়ামী লীগের তিন নেতা। ছবি: সংগৃহীত
আটক করা আওয়ামী লীগের তিন নেতা। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের ইসলামপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন পলবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্রাম হোসেন মাস্টার, কুলকান্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসমত আলী সরদার এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোনাহার সরকার।

এ বিষয়ে ইসলামপুর থানার ডিউটি অফিসার ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অমৃত চন্দ্র সেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা হাসমত আলী সরদারকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের শাখা-২ (ডিবি) সদস্যরা আটক করে মঙ্গলবার রাতে থানায় হস্তান্তর করেন। এ ছাড়া একই দিন রাতে পৃথক অভিযানে আক্রাম হোসেন মাস্টার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সোনাহার সরকারকে আটক করা হয়েছে।

অমৃত চন্দ্র সেন আরও বলেন, আটক তিনজনের বিরুদ্ধে ইসলামপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামালপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির দলীয় স্লোগান, নিষেধ করায় তোপের মুখে ইউএনও

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি হোসেনপুর সংবাদদাতা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০১
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে দলীয় স্লোগান নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাহিদ ইভাকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। এই ঘটনায় অনুষ্ঠানে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আগে একটি মিছিলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া—লও লও লও সালাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় মঞ্চের একপাশ থেকে ইউএনও কাজী নাহিদ ইভা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দলীয় স্লোগান না দিতে নির্দেশ দেন।

ইউএনওর এই নির্দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা ইউএনওকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। এতে অনুষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। পরিস্থিতির একপর্যায়ে ইউএনওর বদলির দাবিও তোলেন বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তেজনার কারণে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান স্থগিত থাকে। পরে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর বাকি অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল হক রাজন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক হোসেনপুর পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সাহেদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসিম সবুজসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের আমরাই মাঠের ভেতরে আর মিছিল করতে নিষেধ করতে ছিলাম। তবু ইউএনও মহোদয় রেগে এসে এখানে কোনো দলীয় স্লোগান হবে না বলে স্লোগান বন্ধ করতে নিষেধ করেন। তাঁর আচরণটা রূঢ় ছিল, যা আমরা একজন প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না। দলীয় লোকজন তো তখন এমনিতেই স্লোগান বন্ধ করে অনুষ্ঠান স্থলে বসে পড়ত। আমরাও তো অনুষ্ঠান উপভোগ করতে গিয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি বড় আকার ধারণ করেছে।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল হক রাজন বলেন, ইউএনওর আচরণ তাঁদের কাছে ভালো মনে হয়নি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে তিনি আর মন্তব্য করতে চাননি।

ইউএনও কাজী নাহিদ ইভার বক্তব্য জানতে তাঁর সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহসী মাসনাদ বলেন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দলীয় স্লোগান কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি প্রশাসনকে হেয় করার শামিল। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ফলও হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নড়াইল-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা বিএনপি নেতা নাগিবের

নড়াইল প্রতিনিধি 
ছোটকালিয়া মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে কথা বলেন অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছোটকালিয়া মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে কথা বলেন অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-১ আসনে (কালিয়া ও নড়াইল সদর উপজেলার একাংশ) বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করা না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি ও জিয়া পরিষদের নেতা অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন। তিনি বি এম বাকির হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি।

মঙ্গলবার সকালে কালিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ছোটকালিয়া মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন, কালিয়া পৌর বিএনপির সহসভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, কালিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিঠু, জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি এম রেজাউল করিম, বড়নাল-ইলিয়াছাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোল্যা খায়রুজ্জামান, নড়াইল পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মো. আজিজুর রহমান, কালিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহিনুর ইসলাম মাহি, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকরাম রেজাসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক নাগিব হোসেন বলেন, নড়াইল-১ আসনে বিএনপির যাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি জনবিচ্ছিন্ন একজন নেতা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ কারণেই তিনি আগেও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। বারবার পরাজয়ের ফলে কালিয়ায় বিএনপি অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

নাগিব হোসেন আরও বলেন, ‘আমিসহ প্রকৃত ত্যাগী বিএনপি নেতারা দল কিংবা ধানের শীষের বিপক্ষে নই। আমরা দলকে তৃণমূলে সুসংগঠিত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’

দলের সর্বস্তরের নেতাদের সমর্থন পাওয়ায় একটি পরিবারের বিরাগভাজন হয়েছেন দাবি করে অধ্যাপক নাগিব বলেন, ওই পরিবারের সদস্য ও তাঁদের কয়েকজন অনুসারী তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নানা ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিষয়টি তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছেন।

অধ্যাপক নাগিব আরও বলেন, নির্বাচিত হলে এলাকার সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, দুর্নীতি নির্মূল, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বেকার সমস্যা সমাধান, স্বনির্ভরতা অর্জন এবং মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবেন।

উল্লেখ্য, নড়াইল-১ আসনে বিএনপির হাইকমান্ড ঘোষিত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আজিজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বারি লাউ-৪ চাষে সফলতা রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি 
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কৃষকের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র নতুন নতুন কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গবেষণা কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে ২১টি সবজি ও ফলের জাত উদ্ভাবন করে কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি অঞ্চলে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবার ‘বারি লাউ-৪’ জাতের প্রজনন বীজ উৎপাদন ও চাষে সফলতা পেয়েছেন কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণা কেন্দ্রের এক একর জমিতে এই জাতের লাউ চাষ করা হয়। বীজ বপনের প্রায় ৭০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফলন আসে। বর্তমানে গবেষণা কেন্দ্রে সারি সারি লাউগাছে ঝুলছে লাউ।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বারি লাউ-৪ একটি তাপ সহনশীল জাত, যা সারা বছর চাষ করা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে চাষের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী। এই জাতের লাউ গাঢ় সবুজ রঙের এবং ফলের গায়ে সাদাটে দাগ থাকে। প্রতিটি গাছে ১০ থেকে ১২টি ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফলের গড় ওজন প্রায় ২ দশমিক ৫ কেজি। ফলের দৈর্ঘ্য ৪২ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার।

তিনি আরও জানান, চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে লাউ সংগ্রহ করা যায়। এই জাতের জীবনকাল ১৩০ থেকে ১৫০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ৮০ থেকে ৮৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। তাপ সহনশীল হওয়ায় গ্রীষ্মকালেও চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন।

ড. জিয়াউর রহমান বলেন, বারি লাউ-৪ দেশের সব এলাকাতেই চাষ করা সম্ভব। গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফাল্গুনের শেষে আগাম ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। চৈত্র মাসে বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করা যায়।

এদিকে রাইখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক পাইদো অং মারমা বলেন, গত অক্টোবর মাসে তিনি এই গবেষণা কেন্দ্র থেকে বারি লাউ-৪-এর বীজ ও সার সংগ্রহ করেন। সেগুলো বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এক বিঘা জমিতে তিনি লাউ চাষ করেছেন। বর্তমানে গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে। ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত