মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেকেই সারা বছর মুখ গুঁজে পড়াশোনা করেছেন। এমনকি দীর্ঘ দিন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে রেখেছিলেন। কারও আবার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। তবে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া আসিফ রহমান নিহাল তেমনটি করেননি। প্রায় সব সোশ্যাল মিডিয়াতেই সক্রিয় ছিলেন তিনি। যদিও প্রয়োজনের বাইরে কখনো এসব প্ল্যাটফর্মে সময় অপচয় করেনি।
নিহাল নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া গ্রামের মো. মিজানুর রহমান ও আফরোজা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। এমন ভালো ফলাফলের পেছনে মায়ের প্রচণ্ড ইচ্ছা ও প্রেরণার পাশাপাশি নিজের পরিশ্রমের ফল পেয়ে দারুণ খুশি নিহাল ও তাঁর পরিবারের লোকজন।
নিহাল বলেন, ‘লক্ষ্য ঠিক থাকলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। আমি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে যখন আনন্দ মোহন সরকারি কলেজে চান্স পাই তখন খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেছি। এইচএসসি পড়ার জন্য দেশের অনেক নামীদামি প্রতিষ্ঠান আছে। তবে আনন্দ মোহন সরকারি কলেজ কোনো অংশে কম নয়।’
আনন্দ মোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই নিজের গন্তব্য ঠিক করেছিলেন নিহাল। তবে মেডিকেল নয়, বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা ছিল না। সেটি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু করোনা মহামারীর মধ্যে ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর ইচ্ছার কথা জানান মা। মায়ের আবদার রাখতে তখন বুয়েটের পাশাপাশি মেডিকেলের পড়া চালিয়ে যাই। আনন্দ মোহনে ইয়ার চেঞ্জ এবং টেস্ট পরীক্ষায় প্রথম হন। ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তাঁর।
দেশের নামকরা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা আসিফ রহমান নিহাল বলেন, ‘আমি মনে করি, এসএসসি এবং এইচএসসিতে যেকোনো স্কুল-কলেজ থেকে পড়ে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি আগে থেকেই মেডিকেলে পড়ার ভাবনা থাকলে চান্স পাওয়া একেবারেই সম্ভব। তবে একজন শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তির জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা পড়া প্রয়োজন। মাথা ঠাণ্ডা করে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। বুঝে-শুনে উত্তরপত্রের জবাব লিখতে হবে। তবেই সফল হওয়া যাবে।’
সোশ্যাল মিডিয়াতেও সক্রিয়া থাকার বিষয়ে নিহাল বলেন, ‘নিয়মিত পড়াশোনা করার পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, হোয়াটসঅ্যাপ, ল্যাপটপ, ট্যাব—সবই রয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজন ছাড়া কখনো ব্যবহার করিনি।’
করোনার সময় কোচিংয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে পারেনি নিহাল। তবে অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষায় নিয়মিত অংশ নেন। বড় ভাইদের কাছ থেকেও অনেক পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
মেডিকেলে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নিহাল বলেন, ‘মেডিকেলে ইচ্ছা করলেই পড়া যায় না। এ জন্য ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি লক্ষ স্থির করতে হবে। আর সেই ভালোটা এসএসসি থেকেই ধারাবাহিকভাবে করে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক সাপোর্ট বড় ভূমিকা রাখবে। আমার সমস্ত প্রয়োজন আম্মু পূরণ করেছেন। নিজে চাকরি করার পাশাপাশি আমি কী খেলাম, কী খাব, স্বাস্থ্যের সমস্ত বিষয় নিয়মিত তদারকি করতেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে