Ajker Patrika

খবরের কাছে নতজানু ছিল দাপট

কামরুল হাসান
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১১: ১৬
খবরের কাছে নতজানু ছিল দাপট

ভালো একটা নিউজের গন্ধ পেয়ে গেলাম চট্টগ্রামে। দুই দিন বেশ ঘোরাঘুরি করলাম, কিন্তু জুতসই কোনো কিছু দাঁড়াল না। বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসব বলে ঠিক করে বিকেলের দিকে ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম। গোধূলি নামের যে গেস্টহাউসে উঠেছি, দেখি আমার পাশের কক্ষে পরিচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা। সেই যে কথায় আছে, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। ব্যস, শুরু হয়ে গেল গল্পগুজব। আমার মতো তিনিও রাতে ঢাকায় ফিরবেন। হাতে এখনো অনেক সময়। আমার আপাতত কোনো কাজ নেই। তিনি যাবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক প্রবাসী বন্ধুকে দেখতে। তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হয়ে সওয়ারি হয়ে গেলাম।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পশ্চিম দিকের পাঁচতলায় বিশাল এলাকা নিয়ে কেবিন ব্লক, তাঁর সেই বন্ধু সেখানেই ভর্তি। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি বাইরে এলাম, তিনি বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন। হাসপাতালের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত টানা বারান্দা। সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। সেই খোলা বারান্দায় হাওয়া খেতে খেতে দেখি, একটা কেবিনের দরজার সামনের চেয়ারে খুব আয়েশি ভঙ্গিতে একজন কারারক্ষী বসে আছেন। আরেকজন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। তাঁরা কথা বলছেন আর একটু পরপর হেসে উঠছেন। এভাবে সাত-আট মিনিট যেতে না যেতেই এক বয়স্ক লোক খাবারভর্তি ক্যারিয়ার নিয়ে সেখানে এলেন। তিনি কারও সঙ্গে কথা না বলে সোজা ভেতরে ঢুকে গেলেন। কারারক্ষীরা যেভাবে গল্প করছিলেন, সেভাবেই করতে থাকলেন। দুই-তিন মিনিট পর খাবার নিয়ে আসা লোকটা কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে নিচে নামার সিঁড়ি। লোকটি সিঁড়ির মুখে আসতেই তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কি কোনো আসামির জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন? তিনি কোনো কথা না বলে সিঁড়ি ধরে নিচে নামতে লাগলেন।

আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, তিনি নিচে নামলেন না। অর্ধেক সিঁড়ি নেমে আবার ওপরে উঠে এলেন। এরপর সোজা চলে গেলেন সেই কেবিনের দুই কারারক্ষীর কাছে। তাঁদের কাছে গিয়ে কী যেন বলে হনহন করে হাঁটা দিলেন। লোকটার গতিবিধি আমার কাছে খুব অবাক লাগল।

লোকটা চলে যাওয়ার পর আমি দুই কারারক্ষীর কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, এই কেবিনে কি কোনো আসামি থাকেন? দুই কারারক্ষী আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বললেন, আপনার পরিচয় কী? কেন এসব জানতে চান? অগত্যা সাংবাদিক পরিচয় দিলে তাঁরা বললেন, আপনার কোনো কিছু জানার থাকলে কারাগারের জেলার বা সুপারকে ফোন দেন। আমরা কিছু জানি না। আমি আসামির নাম জানতে চাইলে তাঁরা বললেন, তাঁরা নাম জানেন না। আমার সঙ্গে কারারক্ষীদের কথা বলার সময় কেবিনের সব আলো নিভে গেল।

আমার পরিচিত সেই পুলিশ কর্মকর্তা ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁকে বললাম, আপনি চলে যেতে পারেন, আমার একটু দেরি হবে। আমাদের দুজনের একসঙ্গে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু আমার কথা শুনে তিনি বললেন, আপনি কি রাতে ঢাকায় যাচ্ছেন না? আমি বললাম, একটু পরে বলতে পারব। তিনি কিছু না বলে চলে গেলেন।

সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর হদিস বের করা ক্রাইম রিপোর্টারদের কাছে কোনো কাজই না। সেই সব টেকনিক কাজে লাগাতে শুরু করলাম। সোজা চলে গেলাম কেবিনের নার্সদের রুমে। জানতে চাইলাম ১৭ নম্বর কেবিনের রোগীর নাম কী? নার্স ১৭ নম্বর কেবিনের ফাইলটা হাতে নিয়ে চোখ বুলিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন, তিনি আগে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর কেবিনে ছিলেন। কয়েক দিন হলো এই কেবিনে। আমি আবারও জানতে চাইলাম, নাম কী? তিনি কিছুটা আমতা-আমতা করে বললেন, ইয়াসিন রহমান টিটো। তিনি কার অধীনে ভর্তি জানতে চাইলে নার্স বললেন, নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান কামাল উদ্দিন ও সহকারী অধ্যাপক আনিসুল ইসলাম খান তাঁকে দেখছেন। রোগ কী? বললেন, পিঠে ব্যথা।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে এটাই আমার প্রথম আসা। খুঁজে বের করলাম নিউরোসার্জারি বিভাগ। কিন্তু দুজন চিকিৎসকের কেউই হাসপাতালে নেই। কয়েকজনের কাছে ফোন নম্বর চাইলাম, কেউ দিতে রাজি হলেন না। আবার ফিরে এলাম কেবিনের সামনে। দেখি ১৭ নম্বর কেবিনের মুখোমুখি যে কেবিন, সেই কেবিন থেকে দুই ব্যক্তি বের হয়ে যাচ্ছেন। দেখে মনে হলো তাঁরা স্থানীয়। তাঁদের একজনের কাছে জানতে চাইলাম, ১৭ নম্বর কেবিন সম্পর্কে কিছু জানেন? দুজন কিছু বলতে চাইছিলেন, আমি সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তাঁরা আমার সঙ্গে বারান্দার দিকে এলেন। একজন বললেন, এই বন্দী হলেন চট্টগ্রামের শিল্পপতি ও কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমানের ছেলে টিটো। জিবরান তায়েবি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন বললেন, ‘উনি যে বন্দী, তা বোঝার উপায় নেই। একটু কেবিনের ভেতরে ঢুকে দেখেন, কী নেই—ল্যাপটপ, ফোন—সবই আছে। রাতে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডাও জমান। বড়লোক বাবা আছেন, সবকিছু ম্যানেজ করছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারের কেবিনে ভিআইপি হয়ে আছেন।’ তাঁদের কথা শুনে উত্তেজনা বেড়ে গেল। গোধূলি গেস্টহাউসের ম্যানেজারকে ফোন করে বললাম, আজ রাতে ঢাকায় যাচ্ছি না, রুম থাকবে।

ইনডিপেনডেন্ট টিভির বার্তাপ্রধান মামুন আবদুল্লাহ তখন চট্টগ্রাম ব্যুরোর দায়িত্বে। তাঁকে ফোন করে টিটোর কথা বলতেই তিনি অফিসে যেতে বলেন। গেলাম ইনডিপেনডেন্ট টিভির লাভ লেনের অফিসে। মামুন আবদুল্লাহ সবকিছু শুনে দুই মিনিটের মধ্যে কয়েকটি লিংক মেইল করে দিয়ে বললেন, এর ভেতরে ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আবার ছুটলাম গরিবুল্লাহ মাজারের কাছে গেস্টহাউসে।

রুমে ফিরে লিংকগুলো খুলে দেখি, জিবরান তায়েবি হলেন জাহাজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট্রান্স মেরিটাইম (বিডি) লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা টি এ খানের একমাত্র ছেলে। ১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কার্যালয় থেকে খুলশীর বাসায় ফেরার পথে তিনি খুন হন। সেই মামলায় পুলিশ শিল্পপতির পুত্রসহ আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রামের আরেক শিল্পপতির মেয়ের সঙ্গে প্রেমের ঘটনা নিয়ে ইয়াসিন রহমান টিটো ও তাঁর সঙ্গীরা জিবরানকে খুন করেন। কিন্তু নিম্ন আদালতে বিচারে শিল্পপতির পুত্রকে বেকসুর খালাস দিয়ে অন্য ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। উচ্চ আদালত শিল্পপতির পুত্রকেও যাবজ্জীবন সাজা দেন। হাইকোর্টের রায় ঘোষণা পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর শিল্পপতির পুত্র আত্মগোপনে থাকেন। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে আপিলও হয়েছিল, কিন্তু রায় আর নড়চড় হয়নি।

আত্মসমর্পণ করে শিল্পপতির পুত্র কারাগারে গেলেও মাত্র তিন দিন কারাগারে ছিলেন। বাকি এক বছর আড়াই মাস বা ৪৪০ দিন তিনি হাসপাতালেই আছেন। ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি আমি সেখানে গিয়ে শুনেছিলাম, তাঁর রোগ বলতে ছিল ‘পিঠে ব্যথা’।

গেস্টহাউস থেকে পরদিন সকালে নাশতা করেই দৌড় দিলাম হাসপাতালে। হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে পেয়ে গেলাম সহকারী অধ্যাপক আনিসুল ইসলাম খানকে। তাঁর কাছে রোগী ও রোগ সম্পর্কে জানতে চাইতেই তিনি বললেন, ‘সবই তো বোঝেন, ভাই’। গেলাম পরিচালকের কাছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তখন পরিচালক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল গনি। তিনি বললেন, ‘আরে ভাই, রোগীর চিকিৎসা করেন চিকিৎসক, পরিচালক তো নয়।’ এভাবে যত কথা বলছি, মনে হচ্ছে কোনো এক অদৃশ্য কারণে সবাই সবকিছু জেনেও এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমার উৎসাহ আরও বেড়ে গেল।

হাসপাতাল থেকে একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গেলাম চট্টগ্রাম কারাগারে। সেখানকার জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগীর মিয়া আমার পরিচিত। তিনি রোগীর সব তথ্য দিয়ে বললেন, ‘হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে রোগীর ছাড়পত্র দিতে বলেছেন। দফায় দফায় চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু বন্দী আর কারাগারে ফিরে আসেননি।’ তাঁর কথা শুনে মনে হলো, শিল্পপতির পুত্রের এভাবে মাসের পর মাস হাসপাতালে অবস্থানের ঘটনা নিয়ে বিব্রত কারা প্রশাসন। কিন্তু তাদের কিছু করার নেই।

আমার সব কাজ শেষ, এবার ফোন দিলাম কারাবন্দী টিটোর বাবা শিল্পপতি খলিলুর রহমানকে। তিনি আমার কাছ থেকে সবকিছু শুনে কোনো মন্তব্য না করে ফোন রেখে দিলেন। ভেবে নিলাম, আমার কাজ শেষ। এবার নিউজ লিখে পাঠাতে যত দেরি। কিন্তু তাঁর ফোন রাখতেই শুরু হলো তদবির। একের পর এক ফোন আসতে লাগল। সবার আবদার—নিউজ যেন না করা হয়। পরদিন লিড হলো, ‘যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪ মাস হাসপাতালে’।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারির সকাল। তখনো পত্রিকা দেখিনি। কারাগার থেকে জেলারের ফোন। বলেন, কারা অধিদপ্তরে হুলুস্থুল পড়ে গেছে। দ্রুত হাসপাতালে আসেন, আসামিকে এখনই কারাগারে ফিরিয়ে আনা হবে।

গেলাম হাসপাতালে। আবার আমি হাসপাতালের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে এসে লাগছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, ক্ষমতার সকল দর্প চূর্ণ করে মহাক্ষমতাধর এক আসামিকে কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সেদিন মনে হয়েছিল, খবরের অনেক শক্তি। সেই শক্তির কাছে মহাক্ষমতাধরেরা পরাজিত হয়। কিন্তু আজ মনে হয়, সেটা একেবারেই ঠিক নয়। আজকের বদলে যাওয়া সময়ের মুখে খবরের মানুষগুলো সত্যিই বড় অসহায়।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত