Ajker Patrika

কাজীপুরের কম্বলপল্লিতে বেড়েছে ব্যস্ততা

আশরাফুল আলম, কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ)
পল্লিতে কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্লিতে কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রায় ৪০ বছর আগে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বরশিভাঙ্গা গ্রামের সাইদুল হক কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান রাজধানীর মিরপুরে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত ঝুট কাপড় কিনে এনে এলাকায় শুরু করেন কম্বল তৈরি। সেই কম্বল সাইকেলে করে বিক্রি শুরু করেন বিভিন্ন গ্রামে। তাঁর দেখাদেখি কাজীপুরে কম্বল তৈরি শুরু করেন আরও অনেকে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁদের। কাজীপুর পরিচিত হয়ে উঠেছে কম্বলের পল্লি নামে। শীতের শুরুতে সেই কম্বলপল্লি সরগরম হয়ে উঠেছে। বিরামহীন কাজ করছেন কারিগরেরা। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে কম্বল।

সম্প্রতি উপজেলার শিমুলদাইড় বাজারের কম্বলপল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, একমাত্র কারখানায় দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বাহারি সুতায় বোনা হচ্ছে রঙিন কম্বল। শ্রমিকেরা কম্বল বিভিন্ন মাপে কেটে সেলাই মেশিনে দিচ্ছেন। সেগুলোর মুড়ি সেলাই করছেন কারিগরেরা। পরে ভাঁজ করে বিশেষ ব্যাগে ভরে গুদামে রাখা হচ্ছে। পাইকারেরা আসছেন, দেখছেন, দরদাম করছেন। পছন্দসই দাম হলে কিনে ট্রাকে ভরছেন।

এখন উপজেলার শিমুলদাইড়, বরশিভাঙ্গা, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, গাড়াবেড়, চকপাড়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়াসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ হাজার নারী-পুরুষ কম্বল তৈরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। আর এই কম্বলশিল্পের প্রাণকেন্দ্র শিমুলদাইড় বাজার। ২০ বছর ধরে এই বাজারে কম্বল তৈরির কাজ চলছে।

জানা গেছে, বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাস কম্বল ও শিশুদের শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন এখানকার কারিগর ও শ্রমিকেরা। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে পরিত্যক্ত কাপড় কিনে এনে তৈরি করা হয় জোড়া কম্বল। এই কম্বল সেলাই করে এখানকার হাজারো নারী-পুরুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে কম্বল তৈরির রোল কাপড় কেনা হয়। মানভেদে প্রতিটি কম্বল ১২০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর জোড়া কম্বল তৈরি করা হয় গার্মেন্টসের পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে। সেগুলোর দাম মানভেদে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে জোড়া কম্বল তৈরি করেন গাড়াবেড় গ্রামের ফোলেরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আগে পায়ের মেশিন আছিল। তহন দিনে তিন থেকে চারটা কম্বল বানাছি। ১৫ টাকা করে মজুরি দিত। এহন কারেনের মেশিন কিনছি। সারা দিন কাম করলি দুই-আড়াই শ হয়। এই টাকা দিয়েই পোলাপানের পড়াশোনার খরচ, পরিবার চালাই।’

কম্বল তৈরির কাঁচামাল ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কম্বল তৈরির কাঁচামাল ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছালাভরা গ্রামের আছিয়া বলেন, ‘২০ বছর ধরে জোড়া কম্বল বানাই। প্রতি কম্বলে মজুরি পাই ৩০ টাকা। একটা মেয়ে বিয়া দিছি, ছেলেকেও আইএ পাস করাছি। এই কাজ করে সবাই পরিবারের উন্নতি করতেছে।’

গাড়াবেড় গ্রামের নুরুল ইসলাম ছোটদের শীতের পাজামা আর হুডি তৈরি করে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছেন। এগুলো বিক্রি করে পরিবার চালান স্বাচ্ছন্দ্যে। ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করাতে ভর্তি করিয়েছেন রুয়েটে। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জ্যাকেট তৈরির বাছা কাপড় আমরা কিনে নিই। তারপর কারিগর দিয়ে শিশুদের পাজামা ও হুডি তৈরি করি। পরে শিমুলদাইড় বাজারে নিয়ে পাইকারি দিই। ৯ টাকা থেকে শুরু করে ৪৮ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি করি প্রতিটি।’

অনলাইনে কম্বল বিক্রেতা হালিম বলেন, ‘সরাসরি বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি করি। আমাদের একটা ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন অন্তত দুই ট্রাক কম্বল ডেলিভারি হয়।’

কম্বল তৈরির কারখানা ও মেসার্স সহি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আমাদের এই কম্বলপল্লিতে বর্তমানে ১৬৬ আইটেমের শীতের কাপড় তৈরি হয়। আশা করছি, এবারের মৌসুমে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে এই পল্লিতে। ব্যবসায়ীরা যদি স্বল্প সুদে ঋণ পেত, তাহলে এই শিল্পের আরও প্রসার ঘটত। পাশাপাশি নিরাপদে টাকা লেনদেনের জন্য এই বাজারে একটা ব্যাংকের খুব প্রয়োজন।’

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাজীপুরের কম্বলশিল্প সারা দেশে ব্র্যান্ড। ঝামেলামুক্ত পরিবেশে দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকেরা। এতে এলাকার বেকারত্ব কমেছে। এই শিল্পের প্রসারে উপজেলা প্রশাসন পাশে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ