Ajker Patrika

বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীকে রাতভর র‍্যাগিং, গকসুর পরাজিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থী শের আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থী শের আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শের আলী (২০) নামের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে মেসে আটক রেখে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শের আলীর অভিযোগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনে পরাজিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী অন্তু দেওয়ানসহ (২২) আইন বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান।

গতকাল সোমবার রাতে সাভারের আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে নলাম এলাকায় একটি ভাড়া মেস বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতেই আহত শের আলীকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে আজ দুপুরে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়।

আহত শের আলী আইন বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর এলাকায়। শের আলী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া মেস বাসায় থেকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

অন্তু দেওয়ান ছাড়াও অভিযুক্ত অপর শিক্ষার্থীরা হলেন মেহেদী হাসান (২১), আশরাফুল (২২) ও আসিফ লাবিব (২৩)। তাঁরা একই বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় বিচারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শের আলী জানান, গতকাল বিকেলের দিকে শের আলী ও তাঁর বন্ধুদের প্রথমে আশরাফুলের বাসায় ডেকে নেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। সেখানেই কথাবার্তার একপর্যায়ে প্রথমে তাঁকে হুমকি দেওয়া হলে বেরিয়ে বাসায় ফিরে যান। পরে রাতে আবার তাঁকে খিচুড়ি খেতে বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। খাওয়ার পর অন্যদের পাঠিয়ে দেওয়া হলেও শের আলীকে মেসে আটকে রাখা হয়।

শের আলী আরও জানান, রাত ৯টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত তাঁকে চড়-থাপ্পড়, লাথিসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শের আলীকে উলঙ্গ করে মানসিক নির্যাতনও করা হয়। ভোরের দিকে সবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি বাসায় ফিরলে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আহত শিক্ষার্থী বলেন, ‘তাঁরা আমাকে এক পায়ে দাঁড়াতে বলেন। আমি দাঁড়াই। এরপর অন্তু ভাই ডেকে অশ্লীল প্রশ্ন করেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে টানা পাঁচ থেকে ছয়টা থাপ্পড় মারেন। এরপর আরও আপত্তিকর কাজ করতে বললে যখন অস্বীকৃতি জানাই, তখন তরিকুল ভাই আবার আমাকে মারেন। ৩২ ব্যাচের মেহেদী ও আশরাফুল দুজনই আমাকে মারধর করতে থাকেন। পরে আমি তাঁদের পায়ে ধরি, মাফ চাই। সেখানে ১৫-২০ জন ছিলেন ৩২ ব্যাচের। তাঁদের পায়ে ধরে বলি, আমার ভুল হয়েছে। এরপর আমাকে ছাড়েন। আমি এই ঘটনার যথাযথ বিচার চাই। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করব।’

শের আলীকে হাসপাতালে নেওয়া মাহিম খান বলেন, ‘আমাদের সিনিয়ররা রুমে ডেকে নেন। আমরা সবাই যাই। শের আলীও যায়। তখন শের আলীকে পেঁয়াজ ছিলতে বলা হলে সে জানায়, ওর চোখে সমস্যা, রসুন ছিলে দেবে। তখন আশরাফুল ভাই শের আলীকে ডেকে নিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন। পরে শের আলী বাসায় চলে যায়। রাতে আবার আমাকে আর এক বন্ধুকে দিয়ে শের আলীকে রাত ৯টার দিকে ওই মেসে ডেকে নেওয়া হয় এবং ওর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে গকসু নির্বাচনে পরাজিত জিএস প্রার্থী ও আইন বিভাগের ২৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান বলেন, ‘শের আলী আমাদের জুনিয়র। তাঁকে শাসন করতেই পারি। গায়ে হাত তোলার কিছু হয়নি। এ ধরনের কথা ভিত্তিহীন। এখানে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। আমি নিজেও বিব্রতবোধ করছি।’

অন্তু দেওয়ান আরও বলেন, ‘খিচুড়ির দাওয়াতে আমি গিয়েছিলাম। সে (শের আলী) বেয়াদবি করায় তাঁকে শাসানো, বকাবকি করা হয়, কিন্তু শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আর এটা বাইরের ঘটনা। আমরা যারা সিনিয়র আছি, আমরা সমাধানের চেষ্টা করব। জুনিয়ররা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, প্রশাসন সমাধান করবে এখন।’

অভিযুক্ত আরও এক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান গকসুর অনুষদ প্রতিনিধি। তিনি বলেন, ‘গতকাল আমাদের একটা খিচুড়ির দাওয়াত ছিল। সেখানে যাওয়ার পর সিনিয়র-জুনিয়র ঝামেলা বাধে, সেটা মীমাংসার চেষ্টা করি, (শের আলীকে) সরি বলতে বলি। কিন্তু কথা না শোনায় আমি বাইরে চলে আসি।’

অভিযুক্ত লাবিব আসিফ লাবিব বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি ওই দাওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। তবে রুমের বাইরে ছিলাম। ভেতরে কী ঘটেছে, কিছু জানি না।’

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক নকিব জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল রাতে শের আলী নামের এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে আজ সকালে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শের আলীর সহপাঠীরা।

এ ঘটনায় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ্ ইকবালকে সভাপতি এবং প্রভাষক কাউছারকে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতি ও আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। তবে ওই শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ