Ajker Patrika

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ ও ২ আসনে আ.লীগের এমপিদের বিরুদ্ধে ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচনায়

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ৪৯
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ ও ২ আসনে আ.লীগের এমপিদের বিরুদ্ধে ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচনায়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনে ভোটের মাঠে মোট প্রার্থী ৪৫ জন। তাঁদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আলোচনায় রয়েছেন তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকটা জোরে এবার মাঠে নেমেছেন।

ভোটাররা বলছেন, এই দুই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের গলার কাঁটা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হতে হলে তাঁদের সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে হবে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে ছয়জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। তাঁদের অন্যতম বিএনপি চেয়ারপারসনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। তিনি এই আসনে স্বতন্ত্র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি। 

এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন। তাঁর সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের একটি অংশ সমর্থন জানিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে একরামুজ্জামানকে। 

এ ছাড়া নাসির নগরের ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে একাধিক চেয়ারম্যানও তাঁর সঙ্গে মাঠে নেমেছেন। পাশাপাশি নাসিরনগর উপজেলার শীর্ষ দুই-তিনজন ছাড়া মাঠপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। যদিও তাঁকে গত ২৮ নভেম্বর বিএনপি সব পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। পরদিন ২৯ নভেম্বর তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। 

এই ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিষয়ে বিএনপি কী বলল, এই ব্যাপারে মন্তব্য করব না। আমি জনগণের মতামত নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী।’ 

এ আসনের ভোটার শামিম সরকার জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গলার কাঁটা স্বতন্ত্র প্রার্থী  এ কে একরামুজ্জামন। কেননা, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে সহজেই জিততে পারতেন। এখন তাঁকে ভোটের মাঠে লড়াই করতে হবে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। তাঁরা হলেন দুবারের মহাজোটের সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত জিয়াউল হক মৃধা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মঈন উদ্দিন। এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম সাজু। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা মহাজোটের সমর্থনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০০৮, ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০২৩ সালে এই আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে তিনি আর জয়ী হতে পারেননি। 

আরেক প্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ভোটের লড়াইয়ের জন্য। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘এই আসনে দুবার সংসদ সদস্য ছিলাম। আমি রওশন এরশাদপন্থী, তাই আমাকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’ 

স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন মাঠে-ময়দানে জনগণের সঙ্গে কাজ করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে আমার রয়েছে গভীর যোগাযোগ। বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। সামান্য ভোটে হেরেছি। জনগণের চাপে এবার আবারও প্রার্থী হয়েছি।’ 

এই আসনের ভোটার আবুল কাশেম জানান, এই আসনটি দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আশুগঞ্জে ভোট কম, সরাইলে ভোট বেশি। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাজাহান আলম সাজুর নিজ উপজেলায় আশুগঞ্জে বাড়ি মঈন উদ্দিনের। এই দুই প্রার্থী ভোটের ভাগাভাগি সুবিধা নেবে সরাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। 

বাদ পড়লেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজ: 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ফিরোজুর রহমান। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদীর চৌধুরী। এই নির্বাচনে তাঁর সঙ্গে ভোটের লড়াই হওয়ার কথা ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানের সঙ্গে। তবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় ফিরোজুর রহমানের মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়েছে। 

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকার ভোটারের ১ শতাংশ স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে যে ১০ জন ভোটারের স্বাক্ষর যাচাই করা হয়। এর মধ্যে একজন ভোটার স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানকে স্বাক্ষর দেননি বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদীর চৌধুরী ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আবু মুছা আনছারির চক্রান্তে আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

না.গঞ্জে সুজন সম্পাদক: অন্ধকারকে দোষারোপ নয় মোমবাতি হয়ে উঠতে হবে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
বদিউল আলম মজুমদার। ফাইল ছবি
বদিউল আলম মজুমদার। ফাইল ছবি

অন্ধকারকে দোষারোপ না করে মোমবাতি হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

গতকাল শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘কোন পথে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে অতীতের ১৫-১৬ বছরের অন্যায় অসংগতি থেকে মুক্ত করতে। এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার পর সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে তাদের। যেই লক্ষ্য নিয়ে তারা ক্ষমতার আসনে বসেছিল, তা অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে সত্য। কিন্তু তাদের গালিগালাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে না। অন্ধকারকে দোষারোপ না করে আমরা যদি মোমবাতি হয়ে এগিয়ে আসি, তাহলেই অনেক সমস্যা দূর করা যেতে পারে।’

ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘এই সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশন যখন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তখন আমরা সুপারিশগুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা করেছি। আমরা ১৬৬টি প্রস্তাবনা বেছে নিয়েছিলাম। অনেক সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশে বা অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়ন করা যেত, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা হয়নি।’

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘৮৪টি বিষয়ে ৩০টি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য পেয়েছি। এর মধ্যে কিছু নির্বাহী আদেশে আবার কিছু গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। গণভোট আয়োজিত হতে চললেও সরকার সেভাবে প্রচার চালাচ্ছে না। আমরা সুজনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি মানুষ যেন জেনে-বুঝে গণভোটে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ির প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি, মনোনয়ন-বাণিজ্য হচ্ছে। এগুলো আমরা সবই জানি। আমরা আওয়াজ ওঠালে হয়তো পরিবর্তন হবে না, কিন্তু তাই বলে তো চুপ থাকব না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এই সব স্থানে স্বচ্ছতা আনার।’

মতবিনিময়ে অংশ নেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বিসহ অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলা: ২১৩ ভাটার ১৯৬টিই অবৈধ

  • কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ
  • প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এসব ভাটা, দাবি স্থানীয়দের
  • পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে: কর্মকর্তা
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া 
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঠ। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার একটি উপজেলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঠ। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার একটি উপজেলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় মোট ইটভাটা ২১৩টি। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে চালানো হচ্ছে মাত্র ১৭টি। বাকি ১৯৬টিই চলছে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই, সেগুলোর মালিকেরা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোয় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, যা জনজীবন ও কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বৈধ ইটভাটার মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালীতে ৯টি এবং খোকসা উপজেলায় ৪টি রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে ২টি অটো ব্রিকস এবং বাকি ১৫টি জিগ-জ্যাগ। কুষ্টিয়া সদর এবং মিরপুর উপজেলায় বৈধ কোনো ইটভাটা নেই। অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি অটো, ৪২টি জিগ-জ্যাগ, ২৯টি ড্রাম চিমনি ও ১২৪টি উচ্চতর পাকা ফিক্সড চিমনি।

এদিকে অবৈধ ২১টি ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিটের কারণে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয়দের দাবি, সরকারি আইনে কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ভাটা স্থাপন করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আইনের ফাঁকফোকর ডিঙিয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা। প্রতিবছরের মতো এবারও চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।

জানা গেছে, ভাটার লাইসেন্স পেতে প্রস্তাবিত আবেদনের সঙ্গে ইট তৈরিতে মাটির উৎস উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হলফনামা দাখিলের বাধ্যতামূলক শর্ত থাকলেও ভাটার মালিকদের অধিকাংশই তা মানছেন না। ফলে বেআইনিভাবে কৃষিজমি ও নদী তীরের পলি মাটি কেটে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট।

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইটভাটার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি। এ ছাড়া কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করা হচ্ছে ফলদ-বনজ সম্পদ। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া-ছাই ফসলের ক্ষতি, পরিবেশদূষণসহ জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বৈধ ভাটামালিক বলেন, ‘ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এ ছাড়া কতিপয় ভাটার মালিক উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছেন আইনি প্রতিবন্ধকতা। প্রতিবছর কিছুসংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরে অদৃশ্য কারণে তা আর বেশি দূর এগোয় না।

কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণে ৭৩ ইটভাটা রয়েছে। ৮ থেকে ৯টা বাদে সবাই কয়লা ব্যবহার করে।’

পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কারও পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। যদি তা-ই হয়, তাহলে সবাই অবৈধ। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল থেকেই বন্ধ রয়েছে।’

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতেও অভিযান চালানো হবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লালমনিরহাটের ৩ আসন: জাপার দুর্গে বিভক্ত বিএনপি

  • তিন আসনের দুটিতেই দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি
  • বিএনপির বিবাদের সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
  • তৎপর জাপা, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন
খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের ৩ আসন: জাপার দুর্গে বিভক্ত বিএনপি

একসময় জাতীয় পার্টির (জাপা) দুর্গ হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাটে এবার দৃশ্যত ভোটের মাঠে বড় শক্তি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দুই দলই জাপার আধিপত্য ভাঙতে মরিয়া। তবে তিন আসনের দুটিতেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। বিএনপির এই বিবাদের সুবিধা পেতে পারে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসের মতো দলগুলোও ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছে।

লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান। তিনি এই অঞ্চলের মূল ইস্যু হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে খুশি নয় দলের আরেক নেতা সাহেদুজ্জামান সরকার কোয়েলের অনুসারীরা। শেষ পর্যন্ত সাহেদুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তা হাসান রাজীব প্রধানের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল ইসলাম রাজু। ইতিপূর্বে করোনা ও বন্যার সময়ে মানুষের পাশে থাকায় এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিরোধে বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হলে সেটি তাঁকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। এবি পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন আবু রাইয়ান আসআরী রচি। এ ছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের ফজলুল করীম শাহারীয়ার, খেলাফত মজলিসের আবুল কাশেম। নানান রকম সামাজিক কাজে জনগণের মধ্যে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তুরস্কপ্রবাসী শিহাব আহমেদ।

লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে ক্ষুব্ধ তাঁর চাচাতো ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলে বা জোরালোভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বিএনপির জন্য সমীকরণ বদলে যেতে পারে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির সাবেক এমপি মজিবুর রহমানের ছেলে শামীম কামাল। এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন রাসেল আহমেদ। জনতার দলের চেয়ারম্যান শামীম কামাল দলটির প্রার্থী হতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তরুণ উদ্যোক্তা মমতাজ আলী শান্তর নাম শোনা যাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। জেলার অন্য দুই আসনের মতো এখানে বিএনপিতে উল্লেখযোগ্য কোনো বিদ্রোহী না থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন তিনি। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচিতে লাখো জনতার সমাগমের ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশমার বিষয়টি সামনে এসেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহের। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মোকছেদুল ইসলাম। তিনজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। এলাকাজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

  • উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ বিক্রি করেছেন
  • একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষাসহ বিভিন্ন শস্য ফলানো হতো
মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা) 
মাগুরার মহম্মদপুরে টপ সয়েল কেটে নেওয়া একটি আবাদি জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরার মহম্মদপুরে টপ সয়েল কেটে নেওয়া একটি আবাদি জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটির ওপরের উর্বর অংশ (টপ সয়েল) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেই মাটি কাটার মহোৎসব চলছে মাঠে মাঠে। নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এ চিত্র মাগুরার মহম্মদপুরের। জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, অন্যদিকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মধুমতী সেতু ও আশপাশের পরিবেশ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুমতী সেতুর পূর্ব পাশে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরঘেঁষা এলাকায় গড়ে ওঠা ৫টি অবৈধ ইটভাটার জন্য জায়গা প্রশস্ত করা হচ্ছে। পাশেই ইট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহে অবাধে কাটা হচ্ছে আবাদি জমি। একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষা, পাট ও মরিচের ব্যাপক আবাদ হলেও এখন খননযন্ত্রের আঘাতে তা পরিণত হয়েছে গর্ত-খানাখন্দপূর্ণ অনুর্বর ভূমিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮টি ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস থেকেই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রি শুরু হয়। ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভাটামালিকেরা কৃষিজমির উর্বর অংশ ক্রয় করেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৪ মাস চলে আবাদি জমির টপ সয়েল কর্তনের হিড়িক। এসব কারণে দিন দিন ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় বলেন, টপ সয়েল হলো আবাদি জমির পুষ্টি-প্রাণ। এই মাটি কেটে নেওয়া হলে কমপক্ষে ১০ বছর ওই জমিতে ভালো ফলন আশা করা যাবে না। ফলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকছে।

ইউএনও মুহ. শাহনুর জামান বলেন, ‘টপ সয়েল কাটার কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আবাদি জমি রক্ষা করতে হলে কেবল আইন প্রয়োগ করে নয়; বরং কৃষক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত