Ajker Patrika

টিকা পেয়ে খুশি পাহাড়িরা

আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১১: ৪১
টিকা পেয়ে খুশি পাহাড়িরা

আবহাওয়া খানিকটা বিরূপ থাকলেও পার্বত্য তিন জেলায় গতকাল শনিবার ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাপ্রত্যাশীরা ভিড় করেন। ভোগান্তি ছাড়া টিকা নিতে পেরে খুশি তাঁরা। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীদের পাশাপাশি যুব রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সদস্যরা সেবা দিয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর–

খাগড়াছড়ি: জেলার ৯ উপজেলার ৩৮ ইউনিয়ন ও ৩ পৌরসভায় একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে জেলায় ২৪ হাজার ৮০০ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন ও টিকা গ্রহণ করতে দেখা গেছে প্রত্যাশীদের। কেন্দ্রভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত টিকাপ্রত্যাশী থাকায় অনেকে না পেয়ে ফিরে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না।

সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি দাশ জানান, দুর্গম এলাকার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে হেলিকপ্টারে টিকা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।

লক্ষ্মীছড়ি: উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৬০০ করে মোট ১ হাজার ৮০০ টিকা দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী সাইফুল আলম জানান, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে এই কার্যক্রম পৌঁছানোর কারণে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যাও বেড়েছে।

দীঘিনালা: উপজেলার পাঁচটি ইউপিতে ১৫টি বুথের মধ্যে টিকা দেওয়া হয়। আগের দিন শুক্রবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. তনয় তালুকদার সাংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন, উপজেলায় ৩ হাজার লোককে টিকা দেওয়া হবে।

মাটিরাঙ্গা: উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সাতটি কেন্দ্রের ২১টি বুথে ৪ হাজার ২০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান ও তদারক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এদিন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্লা টিকাকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন।

মহালছড়ি: উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ধনিষ্ঠা চাকমা বলেন, প্রতি ইউনিয়নে ৬০০ করে মোট ৩ হাজার জনকে টিকা প্রদান করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ক্যায়াংঘাট ইউনিয়ন দুর্গম হওয়ায় লোকজন আসতে না পারায় ৬০০ জনকে টিকা প্রয়োগ সম্ভব হবে না।

পানছড়ি: উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের পাঁচ কেন্দ্রে সকালে টিকাদান শুরু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক কর্মকর্তা ডাক্তার অনুতোষ চাকমা জানান, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টির কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে লোকজন আসতে পারেনি।

মানিকছড়ি: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ পাঁচটি কেন্দ্রে সকাল থেকে টিকা–গ্রহীতার ভিড়ে দেখা গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন খীসা জানান, ইউপির চার কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়েছেন ৩৪২ জন।

রামগড়: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় রামগড়ের দুটি ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নে টিকা দেওয়া হয়। তিনটি কেন্দ্রে ১ হাজার ৮০০ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছিল রামগড় উপজেলা প্রশাসন।

বিলাইছড়িতে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু।

গুইমারা: উপজেলার জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে টিকাদান উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুষার আহমেদ। এদিন তিনটি ইউনিয়নে ১ হাজার ৮০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে বলে জানায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি): উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নের আটটি কেন্দ্রে সকাল থেকে টিকা দেওয়া হয়। প্রথম দিন বাঘাইছড়িতে টিকার ৪ হাজার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এর উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল ইসলাম। এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহম্মেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কাপ্তাই: উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের প্রতিটি কেন্দ্রে ৬০০ জন করে সর্বমোট ৩ হাজার ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের করোনার ফোকাল পারসন ডা. ওমর ফারুক রনি। সকালে কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ে এর উদ্বোধন করেন ইউএনও মুনতাসির জাহান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মফিজুল হক।

বরকল: উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে টিকা দেওয়া হয়েছে। সকালে পাঁচ কেন্দ্রে ৩ হাজার ব্যক্তিকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। অপরদিকে বরকল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৬০ জনকে ডোজ প্রদান করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং সাগর কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন বলে জানান।

বিলাইছড়ি: উপজেলার সদর ইউপি প্রাঙ্গণে তিনটি বুথে টিকা প্রদান করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ছাড়া কেংড়াছড়ি ও ফারুয়া ইউনিয়নে এ টিকা দেওয়া হয়। মোট ১ হাজার ৮০০ জনকে টিকার দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে দুর্গম হওয়ায় বড়থলি ইউনিয়নে টিকা কর্মসূচি নেওয়া হয়নি।

রাজস্থলী: উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুইহ্লা অং মারমা জানান, প্রতি ইউনিয়নে ৬০০ জন করে তিনটি ইউনিয়নে সর্বমোট ১ হাজার ৮০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়।

লংগদু: উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সিতটি কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অরবিন্দ চাকমা জানান, প্রথম দিনে লংগদুতে ৪ হাজার ২০০ টিকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সাতটি কেন্দ্রে ১৮ স্বাস্থ্য সহকারীসহ রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা কাজ করেন।

থানচি (বান্দরবান) : উপজেলার ছয়টি কেন্দ্রে ১৮টি বুথে সকাল থেকে টিকা দেওয়া হয়। এদিন ১ হাজার ২০০ ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সদর ইউনিয়নের সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বুথ উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা।

নাইক্ষ্যংছড়ি: সীমান্ত জনপদ নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচ ইউনিয়নের প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটি করে বুথ ছিল। প্রতিটি বুথে ২০০ টিকা দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ইউএনও সালমা ফেরদৌস ও উপজেলা হাসপাতালের প্রধান (টিএইচ) ডা. এ জেট এম ছলিম।

আলীকদম: উপজেলার চিরটি ইউনিয়নের ২ হাজার ৪০০ ব্যক্তিকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ প্রদান করা হয়েছে। এ সময় টিকাকেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। সকালে আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান ইউএনও মো. সায়েদ ইকবাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত