Ajker Patrika

মোংলাতেই বনঘেঁষা ৬৬ শিল্প

  • ১০ কিমির মধ্যে নতুন শিল্প বা প্রকল্প নিষিদ্ধ।
  • বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ী বিশেষজ্ঞরা।
  • বর্তমান কারখানার দূষণে ক্ষয়ক্ষতি থেমে নেই।
  • সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান।
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ০৮: ০১
সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করলেও বনের ১ কিমির মধ্যেই গড়ে উঠেছে গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেড। খুলনার দাকোপে পশুর নদের তীরে।	ছবি: আজকের পত্রিকা
সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করলেও বনের ১ কিমির মধ্যেই গড়ে উঠেছে গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেড। খুলনার দাকোপে পশুর নদের তীরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ১২ মে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং অন্যতম বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দূরত্বে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্পকারখানা।

পরিবেশবিদ এবং আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, অতীতে খোদ সরকার আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসিএ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছিল বলে তাঁরা নতুন ঘোষণার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারছেন না। সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বনসংলগ্ন শিল্পকারখানাগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বলছেন তাঁরা।

১৯৯৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা ইসিএ) ঘোষণা করে। এ এলাকার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা, বাগেরহাট জেলার মোংলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলা, খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা। এসব স্থানে কলকারখানাসহ যেকোনো নির্মাণকাজ করার আগে বন ও বনের প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নানা রকম শর্ত আরোপ করা হয়।

ইসিএ ঘোষণার পরও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় শিল্পায়ন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকে। ইসিএ ঘোষণার আগেই সেখানে ১৮৬টি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট সরকারের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ জাতীয় পরিবেশ কমিটি সুন্দরবন ঘেঁষে গড়ে ওঠা মোট ৩২০টি শিল্পকারখানাকে কার্যক্রম পরিচালনার নীতিগত অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে ছিল আগের ১৮৬টি, নতুন করে স্থাপিত ১১৮টি শিল্পকারখানা ও প্রকল্প এবং অনুমতির আবেদন করা ১৬টি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, মোংলা উপজেলার মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চল ও এর সংলগ্ন এলাকা এবং মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। সরকারি নতুন নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিন আগে ৭ মে মোংলা বন্দর শিল্পাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্ট কারখানা, এলপিজি প্ল্যান্ট, তেল শোধনাগারসহ ২৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলোর সিমেন্ট কারখানা রয়েছে ৫টি আর এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে ৫টি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মোংলা বন্দরের কাছ থেকে প্লট ইজারা নিয়েছে।

মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চলের বাইরে ৭টি এলপিজি প্ল্যান্টসহ আরও ৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পশুর নদের তীরের গ্রিন টাউন এলপিজি প্ল্যান্টটির অবস্থান সুন্দরবনের মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মোংলা ইপিজেডের ২৭৮টি প্লটের অধিকাংশই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে ৩৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনকাজ শুরু করেছে। মোংলা ইপিজেডের বর্তমানে চালু প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সোয়েটার, চুরুট, রাবার, পরচুলা, টাওয়েল, পলি ব্যাগ ও প্রিন্টিং জুট, তৈরি পোশাক, স্টিলের টিউব, বলপেন, টুথব্রাশসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানা।

মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ হওয়া ২০৫ একর জায়গায় এখনো কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।

সুন্দরবনের ১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যেই মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোল গ্রাম। এই গ্রামে খাদ্য অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে একটি সাইলো বা বড় খাদ্যগুদাম। জাহাজ নির্মাণ কারখানা করার জন্য এই গ্রামেই প্রায় ২০০ একর জমি কিনেছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তবে তিনি পরিবেশ ছাড়পত্র নিলেও কারখানাটি স্থাপন করেননি।

পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এ উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে আমরা চিন্তিত। কারণ বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, সরকারই উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসিএ এলাকার মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছে।’

নূর আলম শেখ উল্লেখ করেন, সিমেন্ট ও এলপিজি প্ল্যান্ট দূষণের মাত্রার বিচারে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাল ক্যাটাগরির (অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ) অন্তর্ভুক্ত। এসব কারখানার দূষণের প্রভাবে সুন্দরবনসংলগ্ন নদী-খালে মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পশুর নদের ইলিশ মাছের আকার ক্রমেই ছোট হচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের জলজ প্রাণিকুলও ক্ষতির সম্মুখীন।

সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন শিল্পকারখানার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। ড. ফরিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিগত সরকারের আমলে কয়েকটি এলপিজি প্ল্যান্টসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সুন্দরবনের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এমন কোনো শিল্প ইসিএ এলাকার মধ্যে করা যাবে না। যেগুলো ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়ে গিয়েছে, সেগুলো নতুন করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে তাতে আমাদের আপত্তি নেই।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব শিল্পকারখানা লাল ক্যাটাগরির, সেগুলো তিন ধরনের দূষণ তৈরি করে। প্রথমত, তারা বায়ুমণ্ডলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে। দ্বিতীয়ত, সিমেন্ট কারখানার ছাই বাতাসে উড়ে লোকালয় ও বনের মধ্যে ছড়ায়। তৃতীয়ত, কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নদী-খালের পানিতে ফেলা হয়। পানিতে মেশা বর্জ্য জোয়ার-ভাটার কারণে সুন্দরবনের মাটিতে ঠাঁই নেয়। এভাবে দূষণ মাটি, পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে যায়।’

আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী আরও বলেন, পানিতে রাসায়নিক বর্জ্য মেশার কারণে জলজ প্রাণীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। শুশুকসহ জলজ প্রাণীদের প্রজননক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মাছের সংখ্যাও কমে এসেছে। মাটিতে বীজ থেকে চারা গজানোর হারও আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। ধীরে ধীরে ঘটছে বলে খালি চোখে আমরা হয়তো এই ক্ষতির মাত্রা ধরতে পারি না। তবে ক্রমাগতভাবে এই দূষণ বন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। সুন্দরবনের নদী-খালের দূষিত মাছ খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শিল্পকারখানাগুলোর আশপাশের বাসিন্দারা দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সুন্দরবনবিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেন, যেসব কারখানা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জন্যে গুরুতর ক্ষতির কারণ সেগুলো পরীক্ষা করে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আর যেগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আসাদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলেছেন, ‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ইসিএ এলাকায় নতুন কোনো শিল্পকারখানা বা প্রকল্প নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেজা ইতিমধ্যে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিকে (পরিবেশ অনুকূল শিল্প) প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করেছে। সরকার ভিন্ন যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে বেজা অবশ্যই সে সিদ্ধান্ত বিবেচনা-পর্যালোচনায় নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সংশোধন-পরিবর্তন-পরিবর্ধন করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত