Ajker Patrika

‘নেতাজি’ এখনো সবার মনে 

আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ২৫
‘নেতাজি’ এখনো সবার মনে 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসু। তবে নেতাজি নামেই ভক্তদের কাছে পরিচিত তিনি। ১৮৯৭ সালের আজকের দিনে (২৩ জানুয়ারি) জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। 

সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ভারতের ওডিশা রাজ্যের কটক শহরে। বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন আইনজীবী। মা প্রভাবতী দেবী। 

সুভাষচন্দ্র বসুর প্রাথমিক লেখাপড়া কটক শহরে। প্রথমে স্টুয়ার্ট হাইস্কুলে, পরে র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। মেধাবী ছাত্র সুভাষ চন্দ্র বসু ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে ভর্তি হন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সুভাষ বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র ডা. শিশির কুমার বসুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসুর দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কলেজের ইংরেজ অধ্যাপক প্রফেসর ওটেনকে ছাত্ররা মারধর করেছিল ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জন্য। সে ঘটনায় জড়িত থাকায় কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয় সুভাষ চন্দ্র বসুকে। পরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতক পাস করেন। 

ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি ১৯১৯ সালে ইংল্যান্ড যান। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। কোনো বিদেশি সরকারের অধীনে কাজ করতে চাননি। তাই সিভিল সার্ভিস থেকে ইস্তফা দিয়ে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যোগ দেন। 

১৯২৪ সালে সুভাষচন্দ্র বসুকে কলকাতা করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করা হয়। ওই বছরই জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য কারারুদ্ধ হন। ১৯২৭ সালে মুক্তি পান। ১৯২৮ সালে কলকাতায় কংগ্রেস দলের ঐতিহাসিক সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৯-এ বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন তিনি। তারপর নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি ও পরের বছর কলকাতা করপোরেশন-এর মেয়র হন। 

১৯৩০ সালে গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নিয়ে আবার কারারুদ্ধ হন। মুক্তি লাভের পর তিনি ১৯৩১-এর গান্ধী-আরউইন চুক্তির বিরোধিতা করেন। পরে আবার কারারুদ্ধ হোন। স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য ইউরোপ যান। তখন ভারতের ব্যাপারে সহানুভূতি আছে এমন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। 

ওই সময়ই লেখেন ‘দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ নামে বইয়ের প্রথম পর্বটি। এই বইয়ে তুলে ধরেন ১৯২০-১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। লন্ডন থেকে প্রকাশিত হলেও ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশে নিষিদ্ধ করে বইটি। 

১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সভায় সুভাষচন্দ্র বসু। ছবি: উইকিপিডিয়া১৯৩৮ সালে সুভাষ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। পরের বছর পুনঃ নির্বাচিত হন। তবে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত মতৈক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সুভাষ চন্দ্র। 

১৯৪১ সালে সুভাষ বসু গোপনে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে কাবুল হয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। রাশিয়া থেকে বার্লিনে পৌঁছানোর পর তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জার্মানির সমর্থন পান। সেখান থেকে জাপানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। জার্মানি ও জাপান সরকারের সমর্থন পাওয়ার পর একটি সাবমেরিনে ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসের গোড়ার দিকে সিঙ্গাপুর পৌঁছান। এর মধ্যে জাপানে অবস্থান করা ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসু পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠিত করেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব সুভাষ বসুকে বুঝিয়ে দেন। ১৯৪৩ সালের ২৫ আগস্ট সুভাষ রাসবিহারী বসু প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর (আইএনএ) সর্বাধিনায়ক হন।  

১৯৪৪ সালের জানুয়ারি। সুভাষচন্দ্র বসু বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) রেঙ্গুনে আইএনএ-র সদর দপ্তর সরিয়ে নেন। সেখান থেকে ভারত-বার্মা সীমান্তে ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। ১৯৪৪-এর মার্চে ইম্ফল ও কোহিমায় দুটি ব্রিটিশ সামরিক চৌকি দখল করেন। সেখানে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। 

অস্ট্রিয়া থেকে ১৯৩৮ সালের ২৪ জানুয়ারি কলকাতায় ফিরছেন সুভাষচন্দ্র বসু। ছবি: উইকিপিডিয়া১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট। জাপান অধিকৃত ফরমোজায় (বর্তমান তাইপে) এক বিমান দুর্ঘটনায় আহত সুভাষ চন্দ্র বসুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মারা যান বলে ধারণা করা হয়। তবে তাঁর এই মৃত্যু সংবাদ ভক্তরা মেনে নিতে পারেননি। কংগ্রেসে থাকা তাঁর কর্মী-সমর্থকদের অনেকের ধারণা ছিল, তিনি আত্মগোপনে আছেন। তাঁর মৃত্যু রহস্যের জট খুলতে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হলেও তিনি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হননি এমন কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। 

জাপানের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেসের অনেক নেতাই সুভাষচন্দ্র বসুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তবে ভক্তদের তাঁর প্রতি আস্থা ছিল অটুট। তাঁদের চোখে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক মহানায়ক। এখনো তিনি ‘নেতাজি’ হয়েই বেঁচে আছেন সবার মনে। 

সূত্র. বিবিসি বাংলা বাংলাপিডিয়া উইকিডিপিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের ‘অলিখিত নিয়ম’—যেগুলো না জানলে বিব্রত হতে পারেন পর্যটকেরা

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪২
জাপানের ‘অলিখিত নিয়ম’—যেগুলো না জানলে বিব্রত হতে পারেন পর্যটকেরা

নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।

জাপানি সমাজে ‘হারিয়ো’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। এই সংস্কৃতিতে মানুষ সব সময় আশপাশের পরিবেশ ও অন্যের অনুভূতির প্রতি সচেতন; যাতে সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় থাকে। তবে এই অলিখিত নিয়মগুলো বিদেশিদের জন্য অনেক সময় বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

২০২৫ সালে মার্কিন ভ্রমণবিষয়ক ম্যাগাজিন কঁদে নাস্ত ট্রাভেলারের পাঠক জরিপে জাপান ‘বিশ্বের সেরা দেশ’ নির্বাচিত হওয়ার পর টোকিওতে বসবাসরত খাদ্য ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ টোকিও হালফি পর্যটকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণগত পরামর্শ তুলে ধরেন।

নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানো

জাপানে সময়নিষ্ঠা শুধু ভদ্রতা নয়, এটি দায়িত্ববোধ। এখানে ‘ঠিক সময়ে পৌঁছানো’ বলতে বোঝায় ৫-১০ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়া; বিশেষ করে রেস্তোরাঁয় বুকিং থাকলে। দেরি করাকে এখানে খুবই অসম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। তাই যাতায়াতের সময় সব ধরনের বিলম্বের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা জরুরি।

নীরব থাকা শিষ্টাচার

জাপানিরা শান্ত পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেন। ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ বা যেকোনো পাবলিক স্থানে উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিত নয়। ধীর ও শান্ত কণ্ঠে কথা বলাকে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ধরা হয়।

‘মোত্তাইনাই’ সংস্কৃতি বুঝুন

‘মোত্তাইনাই’ মানে অপচয় না করা। খাবার, সময় বা পরিশ্রম—কোনো কিছুই যেন নষ্ট না হয়। সেটাই এই দর্শনের মূল কথা। খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্ডার না করা, প্রতিটি খাবারের পেছনের শ্রম ও উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এসবই এই সংস্কৃতির অংশ।

খাবারের টেবিলে শালীনতা

জাপানে খাওয়া শুধু দৈনন্দিন কাজ নয়, এটি সাংস্কৃতিক আচারের অংশ। তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—

  • খাবারের ছবি তোলার আগে শেফের অনুমতি নিন
  • মোবাইল বা ক্যামেরা সরাসরি টেবিল বা কাউন্টারে রাখবেন না
  • হাতব্যাগ টেবিলের ওপর রাখা অশোভন, অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় ব্যাগ রাখার আলাদা ব্যবস্থা থাকে
  • ছবি তুললে দ্রুত তুলুন, খাবার ঠান্ডা হলে শেফ অসম্মানিত বোধ করতে পারেন
  • পানীয়তে ‘চিয়ার্স’ করার সময় গ্লাসে গ্লাস ঠোকাবেন না
  • তীব্র সুগন্ধিযুক্ত পারফিউম বা হ্যান্ডক্রিম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

গণপরিবহনে শিষ্টাচার

জাপানের গণপরিবহনে চলাচল করার সময় নীরবতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফোন সাইলেন্ট রাখতে হয়, উচ্চ স্বরে কথা বলা অনুচিত। সাধারণ ট্রেন বা বাসে খাবার খাওয়া নিষেধ। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জাপানিরা খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ। আগে নামা যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয়। এসকেলেটরেও নিয়ম আছে, টোকিওতে বাঁ পাশে দাঁড়ানো হয়, ওসাকায় ডান পাশে। স্থানীয়দের দেখে অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।

আবর্জনা নিজের দায়িত্ব

জাপানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার হলেও সেখানে ডাস্টবিন খুব কম দেখা যায়। মানুষ সাধারণত নিজের আবর্জনা ব্যাগে রেখে দেয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আলাদা ভাগে (প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদি) ফেলে।

ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান

জাপানিরা ব্যক্তিগত পরিসরকে খুব গুরুত্ব দেন। অপরিচিত কাউকে জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা অস্বস্তিকর হতে পারে। করমর্দনের বদলে হালকা নত হয়ে অভিবাদন জানানোই প্রচলিত। প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ আচরণও সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়।

ট্রাফিক আইন মানা

খালি রাস্তা হলেও জাপানিরা সবুজসংকেত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নিয়ম মেনে চলাই এখানে সামাজিক দায়িত্বের অংশ। পর্যটকদেরও সেটি অনুসরণ করা উচিত।

কথার আড়ালের অর্থ বোঝা জরুরি

জাপানিরা সাধারণত সরাসরি ‘না’ বলেন না। ‘কঠিন হবে’ বা ‘পরে দেখা যাবে’—এ ধরনের কথার আড়ালে ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান লুকিয়ে থাকতে পারে। এখানে ‘হোননে’ (মনের কথা) ও ‘তাতেমায়ে’ (সামাজিক মুখোশ) এই দুই ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সংঘাত এড়িয়ে সামাজিক সামঞ্জস্য বজায় রাখাই মুখ্য।

সূত্র: সিএন ট্রাভেলার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন বছরে চুলের ছাঁটে বদল আনতে চাচ্ছেন? এই হেয়ারকাটগুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩০
চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। ছবি: পেক্সেলস
চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। ছবি: পেক্সেলস

২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। তবে বছরের শুরুতে যাঁরা নতুন হেয়ারকাট নিয়ে সবার সামনে হাজির হতে চাইছেন, তাঁরা অপেক্ষা না করে এই হেয়ারকাটগুলোর যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।

গ্র্যাজুয়েট বব

গতানুগতিক বব কাটের চিরচেনা রূপ ছাপিয়ে ২০২৬ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতে পারে ‘গ্র্যাজুয়েট বব’। এতে পেছনের দিকের চুলগুলো কিছুটা ছোট ও সূক্ষ্ম টেক্সচারযুক্ত থাকে এবং সামনের দিকের চুলগুলো ক্রমান্বয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে আসে। মানে, দুই কানের পাশের চুলগুলো মাথার পেছনের অংশের চুলের তুলনায় পয়েন্ট আকারে লম্বা হয়ে নামে। এই কাট চুলে চমৎকার ভলিউম যোগ করে। যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এই কাট হবে সেরা পছন্দ।

ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ

যাঁরা একটু বোল্ড ও ব্যতিক্রম লুকে নিজেকে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এই ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ লুক। এই হেয়ারস্টাইলের মূল বিশেষত্ব হলো কপালের সামনের ছোট করে ছাঁটা চুলগুলো; যা বাকি চুলের সঙ্গে মিশে না গিয়ে কিছুটা আলাদা বা ‘ডিসকানেক্টেড’ অবস্থায় থাকে। এটি আপনার চেহারায় একটি আত্মবিশ্বাসী ও বোল্ড লুক নিয়ে আসবে।

সাইড ফ্রিঞ্জ

কোমল আর মায়াবী একটি লুকের জন্য সাইড ফ্রিঞ্জের আবেদন চিরন্তন। চুলের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক, এক পাশে আলতো করে ঝুলে থাকা এই চুলগুলো চেহারায় একটি চমৎকার ‘ফেস-ফ্রেমিং’ ইফেক্ট তৈরি করে, যা মুখের গড়নকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। যাঁরা চুলে খুব বেশি কাটছাঁট না করে পরিবর্তন আনতে চান, এই স্টাইল তাঁদের জন্য।

প্রতিবছর বিভিন্ন হেয়ারকাট ট্রেন্ডে আসে। তবে ট্রেন্ডে থাকলে কিংবা ভালো লাগলেই যেকোনো হেয়ারকাট দেওয়াটা উচিত নয়। মুখের গড়ন ও চুলের ধরন বুঝে হেয়ারকাট বেছে নিতে হবে। না হলে পুরো লুকটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী

স্ক্যাল্পটেড কার্লস

যাঁদের চুল প্রাকৃতিকভাবেই কোঁকড়া, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। আগামী বছরের ফ্যাশনে কৃত্রিমভাবে চুল সোজা করার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক টেক্সচার বা গঠনই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট শেপ বা আকৃতিতে সাজানো এই ‘স্ক্যাল্পচারাল কার্লস’ আপনার পুরো লুকে যোগ করবে অনন্য এক মাত্রা। এটি চুলের স্বাভাবিক ভলিউম বজায় রেখে চুলে আনে প্রাণবন্ত ভাব। যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য এই স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য গ্র‍্যাজুয়েট বব কাট হবে সেরা পছন্দ। ছবি: পেক্সেলস
যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য গ্র‍্যাজুয়েট বব কাট হবে সেরা পছন্দ। ছবি: পেক্সেলস

সফট কার্ভ বব

হলিউডের পুরোনো সিনেমা দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন এই হেয়ারকাট। ঘাড় পর্যন্ত কাটা চুলের আগার অংশ সামান্য কার্ভ করা থাকে এই হেয়ারস্টাইলে। শুধু এক পাশে সিঁথি কেটে পরিপাটি করে আঁচড়ে নিলেই চুল নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই।

যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য স্ক্যাল্পটেড কার্লস স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।
যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য স্ক্যাল্পটেড কার্লস স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

চুলে প্রাধান্য পাবে চকচকে রঙ

চুলের রঙের ক্ষেত্রে আগামী বছর রাজত্ব করতে চলেছে গাঢ় বাদামি বা ল্যাভিস ব্রুনেট শেডের নানা বৈচিত্র্য। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কফি মোকা বা এসপ্রেসোর মতো উজ্জ্বল ও চকচকে রংগুলো ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে থাকবে। এই শেডগুলোর বিশেষত্ব হলো এদের অসাধারণ উজ্জ্বলতা ও গ্লসি ফিনিশ, যা চুলে একটি প্রাকৃতিক কিন্তু অত্যন্ত ‘লাক্সারিয়াস’ বা বিলাসবহুল ভাব ফুটিয়ে তোলে। সেই সঙ্গে এই রংগুলো বাংলাদেশি স্কিন টোনগুলোর সঙ্গে খুব ভালো মানায় এবং চুলে একটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব আনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১০
আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

মেষ

আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না। বসের মুড আজ খিটখিটে হতে পারে, তাই অতিরিক্ত ক্রেডিট নিতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে চাপিয়ে নেবেন না। কাজের ভান করাটাও একটা শিল্প, আজ সেটা রপ্ত করুন। রাস্তায় হাঁটার সময় ফোনের দিকে নয়, রাস্তার গর্তের দিকে তাকান।

বৃষ

আজ আপনার ‘রাজযোগ’ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, তবে শর্ত হলো—বিছানা ছাড়তে হবে। আলস্য আজ আপনার প্রধান শত্রু। পুরোনো কোনো বন্ধুর হঠাৎ উদয় হতে পারে এবং ৯৯ পারসেন্ট সম্ভাবনা সে আপনার কাছে টাকা ধার চাইবে। টাকা দেওয়ার আগে আয়না দেখে ‘না’ বলার প্র্যাকটিস করে নিন। খাবার দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে মনে রাখবেন পকেট আপনারই। কাচ্চি বিরিয়ানির বদলে মৌসুমি সবজি খেয়ে পেটকে একটু শান্তি দিন।

মিথুন

আজ আপনার মুখে খই ফুটবে। যুক্তি দিয়ে বাড়ির লোকেদের এমনকি দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারকেও হার মানিয়ে দেবেন। কর্মক্ষেত্রে আপনার কথা শোনার চেয়ে সবাই আপনার টাইপিং মিসটেক ধরায় বেশি উৎসাহ দেখাবে। প্রেমজীবনে সামান্য ঝগড়ার যোগ আছে। কারণ, আপনি হয়তো সঙ্গীর নাম ভুল করে অন্য কারোর নামে ডেকে ফেলতে পারেন! কথা কম বলে কান খোলা রাখুন। ফোনের রিচার্জ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সব ঝগড়া মিটিয়ে নিন।

কর্কট

হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির যোগ আছে—হতে পারে আলমারির পুরোনো কোটের পকেটে বা ধোয়া প্যান্টের ভেতর থেকে একটা কড়কড়ে নোট পেয়ে যাবেন! ব্যবসায়ীদের জন্য দিনটি ভালো, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথা খাটান, মন নয়। বাড়িতে হুটহাট অতিথির আগমনে পকেটে টান পড়তে পারে এবং প্রিয় খাবারটি তাদের পাতে চলে যেতে পারে। হাসিমুখে অতিথি বিদায় করাটাই আজকের প্রধান কাজ। মিষ্টি খাওয়ার আগে আপনার সুগার এবং প্যান্টের কোমরের মাপের কথা ভাবুন।

সিংহ

আজ নিজেকে বনের রাজা ভাবলেও বাড়িতে এসে দেখবেন আপনি বড়জোর ‘বিড়াল’। বাড়ির লোকের কাছে অকারণ ঝাড়ি খাওয়ার যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রে গাধার মতো পরিশ্রম করলেও ক্রেডিট নেওয়ার সময় দেখবেন অন্য কেউ ফিতা কাটছে। তবে বিকেলের দিকে প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো চমক অপেক্ষা করছে—হয়তো কোনো ব্লক হওয়া আইডি থেকে আনব্লক হতে পারেন! গর্জন না করে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলে আজ শান্তি পাবেন। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বেশিক্ষণ হাসবেন না, লোকে পাগল ভাবতে পারে।

কন্যা

আজ আপনার সবকিছুতেই ‘পারফেকশন’ চাই। চায়ের কাপে এক ফোঁটা দাগ বা কার্পেটের এক কোণে সামান্য ধুলা দেখলে আপনার বিপি বেড়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের চিন্তায় মগ্ন থেকে ডাল পুড়িয়ে ফেলার রেকর্ড আজ আপনি গড়তে পারেন। সমালোচনা করার স্বভাবটা আজ একটু কমানোর চেষ্টা করুন। ভুল ধরা বন্ধ করে নিজের ভুলগুলো একবার গুনুন। লজিক দিয়ে কথা বলুন, ম্যাজিক বা অতিপ্রাকৃত কিছু আশা করবেন না।

তুলা

আজ আপনার ভেতরকার ‘শপার’ বা ক্রেতা সত্তাটি জেগে উঠবে। পকেটে টাকা থাকুক বা না থাকুক, অনলাইন শপিং অ্যাপে উইশলিস্ট ভরিয়ে দেবেন। দামি জিনিস কিনতে গিয়ে সস্তা নকল জিনিস কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মান-অভিমান চললে আজ একটা ডার্ক চকলেট দিয়েই সব মিটিয়ে নিতে পারেন। পকেটের ওজন বুঝেই পা ফেলুন, ক্রেডিট কার্ড আজ আপনার শত্রু। শপিং মলে ঢোকার আগে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিন।

বৃশ্চিক

আজ আপনার মধ্যে ফেলুদা বা শার্লক হোমস জেগে উঠবে। কে কার সঙ্গে চ্যাট করছে আর কার স্ট্যাটাস হাইড করা—সব খবর আজ রাখতে চাইবেন। গোপন শত্রুরা পেছনে কাঠি করার চেষ্টা করবে, কিন্তু আপনিও তো কম যান না! আজ পাল্টা হুল ফোটানোর জন্য আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। গোয়েন্দাগিরি ব্যক্তিগত জীবনে না করে কাজে লাগান। অন্যের ফোনে উঁকি মারা স্বাস্থ্যের জন্য (বিশেষ করে ঘাড়ের জন্য) ক্ষতিকর।

ধনু

বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিনের আর্থিক বা সম্পত্তি-সংক্রান্ত ঝামেলা আজ এক কাপ চায়ের আড্ডায় মিটে যেতে পারে। বিকেলের দিকে আকাশকুসুম কল্পনা করবেন—গাড়ি কেনা বা বিদেশে সেটল হওয়া নিয়ে (ব্যাংকে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স থাকলেও)। তবে জীবনসঙ্গীর আবদার মেটাতে গিয়ে আজ হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে। স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু বাস্তবের মাটিটা শক্ত করে ধরুন। বন্ধুদের পার্টি দেওয়ার চক্করে মাসের বাজেট শেষ করবেন না।

মকর

অফিসে কাজের চাপে আজ আপনার অবস্থা হতে পারে ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ দেখার মতো। বসের ই-মেইল দেখলে মনে হতে পারে হিমালয়ে চলে যাই, কিন্তু পরক্ষণেই স্যালারির মেসেজটার কথা ভেবে কাজে মন দেবেন। আজ সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতির বদলে কাজের আলোচনা করাই শ্রেয়। ধৈর্যই আজ আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অফিসের ফ্রি চা-কফি বেশি খাবেন না, অ্যাসিডিটি হতে পারে।

কুম্ভ

আজ ভীষণ সমাজসেবী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। বাড়ির ঝুল ঝাড়া থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেওয়া—সবতেই আপনার সক্রিয় উপস্থিতি। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন। শেয়ার বাজারে টাকা থাকলে আজ একটু নজর রাখুন, গ্রাফ আপনার দিকে ঘুরতেও পারে। দায়িত্ব পালন করুন কিন্তু সেটা যেন লোকদেখানো না হয়। আলস্য ত্যাগ করুন, তবে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাবেন না।

মীন

যাঁরা সিঙ্গেল আছেন, আজ তাঁদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসার শুভ যোগ আছে। আর যাঁরা বিবাহিত, তাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো পুরোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে নিন। ব্যবসায় অংশীদারের সঙ্গে আজ সামান্য কারণে কথা-কাটাকাটি হতে পারে, তাই মুখে কুলুপ আঁটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে একটা সীমারেখা টানুন। মাছের মতো শুধু পানি না খেয়ে মাঝে মাঝে লেবু-জলও খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের বিয়ের সাজে যা কিছু এল এবং গেল

ফারিয়া রহমান খান 
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ

ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিবছর বিয়ের পোশাক ও সাজে নতুন কিছু যোগ হয়েছে, আবার বাদ পড়েছে সাজের কিছু পুরোনো চল। ২০২৫ সালেও বিয়ের ট্রেন্ডে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহার সঙ্গে কথা বলে চলতি বছর বিয়ের সাজে কী কী বিষয় যোগ ও বিয়োগ হয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন ফারিয়া রহমান খান

এবার বিয়ের ট্রেন্ডে যা কিছু যোগ হয়েছে

তাজা ফুলের আভিজাত্য

বিগত কয়েক বছরে চুল সাজাতে এবং হলুদের গয়না হিসেবে নারীরা আর্টিফিশিয়াল ফুল ব্যবহার করেছেন। শাড়ি বা লেহেঙ্গার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এসব গয়না ব্যবহারে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে নারীদের মধ্য়ে। কিন্তু এখন চুল ও গয়নায় তো বটেই, হলুদ বা মেহেদির অনুষ্ঠানে ফ্লোরাল ওড়নায়ও আর্টিফিশিয়াল ফুলের চেয়ে তাজা ফুল ব্যবহারে আগ্রহ দেখা গেছে। শোভন সাহা বলেন, ‘এ বছর বিয়ের ডেকোরেশনেও বড় জায়গা করে নিয়েছে বড় বড় ফুলের ঝাড়বাতি এবং ফুলের পাপড়ি বিছানো হাঁটার পথ সবার নজর কেড়েছে, যা আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

আভিজাত্যের ছোঁয়া

বিয়েতে রাজকীয় সাজের প্রতি বাঙালির টান চিরন্তন। ২০২৫ সালের মতো আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে মীনাকারি কাজ, ঐতিহ্যবাহী বেনারসি, জামদানি, কাঞ্জিভরম ও মসলিন শাড়ি। সেই সঙ্গে বরের সাজে রাজকীয় ভাব আনতে ভারী কাজের শেরওয়ানি বা জারদৌসি কাজের পাঞ্জাবি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব বিয়ে

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা, স্থানীয় খাবারের মেনু এবং মাটিতে রোপণ করা এমন ‘প্লান্টেবল’ নিমন্ত্রণপত্র এখন ট্রেন্ডে ইন হয়েছে। বরের জন্য সুতির পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কনের জন্য পরিবেশবান্ধব কাপড়ে তৈরি পোশাক, যা অন্যান্য সময়েও পরার উপযোগী—এমন সাজপোশাকেও আগ্রহ বাড়ছে বর্তমান সময়ের তরুণদের।

কাস্টমাইজেশন ইজ বেস্ট

একঘেয়ে গতানুগতিক বিয়ের বদলে এখন মানুষ নিজের পছন্দ ও আরামকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিয়েতে নিজস্ব ‘হ্যাশট্যাগ’ এবং নিজেদের পরিচয় কিংবা ভালোবাসার গল্প দিয়ে বানানো ছোট ভিডিও বা স্লাইড শো এখন বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকে বিয়ের সময়টাকে ছোট করায় আগ্রহী। ঘরোয়া চায়ের আড্ডাতেই সেরে নিচ্ছেন বিয়ের অনুষ্ঠান। এরপর বর-কনে মিলে বিকেলে বেরিয়ে পড়ছেন হানিমুন ট্রিপে। এতে খরচও কমছে, আনন্দও বাড়ছে।

রং ও উজ্জ্বলতা

এক রঙের পোশাকের দিন এখন শেষ। এবার বিয়েতে রঙের বৈচিত্র্য থাকবে তুঙ্গে। ফুশিয়া পিঙ্কের সঙ্গে পান্না সবুজ কিংবা হলুদ ও রাজকীয় বেগুনির সংমিশ্রণ পোশাকে যোগ করবে নতুন মাত্রা। এ ছাড়া কনের লেহেঙ্গা বা শাড়িতে সোনালি, রুপালি কিংবা ব্রোঞ্জ রঙের মেটালিক ছোঁয়া বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া বার্বি পিঙ্ক বা গোলাপি রঙের বিভিন্ন শেড এখন আবার ট্রেন্ড হিসেবে ফিরে আসছে।

মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ

সাজে মিলমিশ

বিয়ের সাজে এখন বিভিন্ন স্থানের সাজের মিলমিশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন কনে হয়তো সাদা গাউন পরছেন, সঙ্গে হাতে পরছেন টকটকে লাল কাচের চুড়ি। আবার বাঙালি সাজের সঙ্গে মারাঠি সাজ ব্লেন্ড করেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধা করছেন না কনেরা। এমনটাই জানান শোভন সাহা।

বাদ পড়েছে যেগুলো

অতিরিক্ত কারুকাজ ও ঝলকানি

একসময় বিয়েতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাথরের কিংবা চুমকি-পুঁতির ভারী কাজের পোশাকের চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব ‘ওভার দ্য টপ’ সাজ একদমই ‘আউট’। তবে এখন সূক্ষ্ম সুতার কাজ অথবা মেশিন এমব্রয়ডারির চাহিদা অনেক বেশি। ডেকোরেশনের ক্ষেত্রেও সবকিছু একই রঙে করার দিন শেষ। ভিন্ন ভিন্ন রং ও টেক্সচারের ব্যবহারই এখন আধুনিকতা।

কনের ভারী ওড়না

২০২৫ বলছে, ভারী বিয়ের ওড়না এখন বাতিলের খাতায়। এর বদলে নেট, অরগাঞ্জা কিংবা হালকা লেসের কাজ করা লম্বা ওড়না একটা এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়।

বরের গতানুগতিক সাজ

বরের সেই ক্রিম রঙের শেরওয়ানি এখন একেবারেই সেকেলে। এখন বরদের পোশাকে গাঢ় রং ও প্রিন্টের কাপড় বেশি জনপ্রিয়। পাঞ্জাবির ওপর রঙিন বা ফ্লোরাল প্রিন্টের কটি বরের সাজে আভিজাত্য ও আধুনিকতা নিয়ে আসে।

ভারী গয়না

শোভন সাহা জানান, সেকেলে ভারী গয়নার বদলে এখন চিকন বা লেয়ারিং করা গয়নার ট্রেন্ড চলছে। কানে হালকা দুল, গলায় পাতলা হারের কয়েকটা লেয়ার আপনার সাজকে অনেক বেশি মার্জিত ও ফ্যাশনেবল করতে পারে। গয়নার ক্ষেত্রে এখন মূল ট্রেন্ডই হলো ‘লেস ইজ মোর।’

পরিশেষে বলা যায়, বিয়ে মানে শুধুই অন্যের চোখে সেরা হওয়া নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রকাশ ঘটানো। ট্রেন্ড যা-ই হোক না কেন, স্বকীয়তা সব সময় বজায় রাখা দরকার। বিয়ে যেহেতু ‘ওয়ানস ইন আ লাইফটাইম’ একটা বিষয়, সেহেতু আনন্দ ও স্টাইলটাও হওয়া চাই একেবারেই অনন্য। তাই এই নতুন ধারাগুলো মাথায় রেখে আজই শুরু করে দিতে পারেন বিয়ের পরিকল্পনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত