Ajker Patrika

বেশির ভাগ দেশের চেয়ে আকারে বড় বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫: ২৪
বেশির ভাগ দেশের চেয়ে আকারে বড় বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান

জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কগুলো প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে কোনো কোনোটি আকারে সত্যি বিশাল। শুনে চমকে উঠবেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান নর্থইস্ট গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক আকারে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের চেয়ে বড়।

নেপালের সাগরমাথা ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে পড়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের (৮ হাজার ৮৪৯ মিটার) দক্ষিণের ঢাল। ভেনেজুয়েলার কানিমা জাতীয় উদ্যানের অংশ বিখ্যাত অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত। ৯৭৯ মিটারের (৩ হাজার ২১২ ফুট) অ্যাঞ্জেল পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত। এদিকে ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, কম্বোডিয়ার আঙ্কর আর্কিওলজিকেল পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে ধর্মীয় স্মৃতিস্তম্ভ এবং প্রাচীন ধ্বংসপ্রাপ্ত নগর সংরক্ষণে। তবে জাতীয় উদ্যানের একটি বড় বিষয় হলো ওই যে বললাম, তাদের আকার।

ডেলাওয়ার থেকে বড় এবং ওয়েলসের প্রায় সমান আকারের ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান ১৮৭২ সালে যখন পৃথিবীর প্রথম ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর আকার বিশাল বলেই বিবেচনা করা হয়। তবে বিশ শতকের গোড়ার দিকে এবং একুশ শতকের গোড়ার দিকে এত বিশাল আয়তনের নতুন নতুন জাতীয় উদ্যান গড়ে উঠতে থাকে যে পুরোনো ন্যাশনাল পার্কগুলোর আকার নিয়ে গর্বের আর ছিটেফোঁটাও থাকেনি। এদের কোনো কোনোটি ইয়েলোস্টোনের চেয়ে ৫০ গুণ বড়। এসব তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।

নেপালের সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান।এবার বরং বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের বড় ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যানগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক।

উত্তর আমেরিকা
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের প্রায় অর্ধেকজুড়ে বিস্তৃত নর্থইস্ট গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক বর্তমানে বিশ্বের একক বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান এবং ডাঙ্গার সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত এলাকা। এটার আকার কত তা শুনলে চমকে উঠবেন, ৯ লাখ ৭২ হাজার বর্গকিলোমিটার। এতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ২৯টি বাদে বাকি সবগুলোই তার পেছনে পড়েছে। 

পার্কের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে গ্রিনল্যান্ডের বরফরাজ্য। তবে এখানে একটি দীর্ঘ, রুক্ষ উপকূলরেখাও রয়েছে। যেখানে কস্তুরি ষাঁড়, মেরু ভালুক এবং আর্কটিক অঞ্চলের অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল। 

পূর্ব গ্রিনল্যান্ডে ট্যুরের ব্যবস্থা করা নানু ট্র্যাভেলের মেট পাইক বারসেলাজসেন বলেছেন, ‘গ্রীষ্মকালে নৌকায় করে, শীতকালে আমাদের স্থানীয় শিকারিদের সঙ্গে কুকুরে টানা স্লেজে চেপে সেখানে যেতে পারেন।’ 

চিরিবিকেতে জাতীয় উদ্যানের তেপুই এলাকা।দক্ষিণ আমেরিকা
দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় উদ্যানগুলো গড়ে উঠেছে মহাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ এলাকা আমাজন ও পাতাগোনিয়ায়। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব কলম্বিয়ার চিরিবিকেতে জাতীয় উদ্যানের কথা বলতে হয়। আয়তন ৪৩ হাজার বর্গকিলোমিটার। আমাজন রেইন ফরেস্ট, তেপুই বা সমতল চূড়ার পর্বত এবং পাহাড়ি নদীগুলোর বড় একটি অংশকে রক্ষা করা পার্কটিকে দেখলে ‘জুরাসিক পার্কে’র মতো একটা কিছু মনে হতে পারে। ডাইনোসর না থাকলে বড় শিকারি প্রাণীর অভাব নেই জায়গাটিতে। 

বিস্তৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের পাশাপাশি ৭৫ হাজারের বেশি প্রাচীন প্রস্তরচিত্র চোখে পড়বে জায়গাটিতে। কলম্বিয়া ওকাল্টা নামের ট্যুর কোম্পানিটি এখানকার সত্যিকারের ‘হারানো পৃথিবী’কে দেখার সুযোগ করে দেয় আকাশ থেকে। 

মুংগা-থিররি-সিম্পসন ন্যাশনাল পার্কের যাত্রা শুরু ২০২১ সালে।অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকাটি খুব বেশি দিন হয়নি গড়ে উঠেছে। মুংগা-থিররি-সিম্পসন ন্যাশনাল পার্কের যাত্রা শুরু ২০২১ সালে। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে উত্তরের অনিন্দ্যসুন্দর মরু এলাকাকে রক্ষার জন্যই জায়গাটিকে ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

এই জায়গায় আছে পৃথিবীর বৃহত্তম বালিয়াড়ি এলাকা, অ্যাকাশিয়ার জঙ্গল, ঘেসো জমি, বছরের বিশেষ সময়ে তৈরি হওয়া হ্রদ ইত্যাদি। ১৫০ প্রজাতির বেশি পাখি, অস্ট্রেলীয় বুনো কুকুর ডিংগো, বুনো উট, গুইসাপের মতো দেখতে পেরেনটাইসহ বিভিন্ন জাতের বন্যপ্রাণীর দেখাও মেলে জায়গাটিতে। 

পর্যটকদের জন্য সে রকম কোনো সুবিধা নেই এখানে। সিম্পসন মরুভূমিতে প্রবেশ করতে চাইলে মরুভূমিতে টিকে থাকার তরিকা জানাটা জরুরি। আউটব্যাক স্পিরিট অ্যাডভেঞ্চারস মার্সিডিজ বেঞ্জ জি ওয়াগনে ১৪ দিনের একটি ট্যুরের ব্যবস্থা করে। প্রচণ্ড তাপের কারণে গ্রীষ্মকালে পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকে। 

পশ্চিম নামিবিয়ার নামিব-নওকলাফত ন্যাশনাল পার্কে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে।এশিয়া
আকারে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশ হলেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যানের দৌড়ে এশিয়া কিছুটা পিছিয়ে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের সানিয়াগুয়ান ন্যাশনাল পার্কটি এই মুহূর্তে আকারে মহাদেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান। এর আয়তন ১ লাখ ২৩ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। তিব্বতের মালভূমির একটি বড় অংশ পড়েছে এর সীমানায়। এখানকার দুর্গম ও দুরারোহ পার্বত্য এলাকায় অনেক বিপন্ন প্রাণীরই বসবাস। এদের মধ্যে আছে তুষার চিতা, হিমালয়ান নেকড়ে, বুনো চামরী গাই, কস্তুরি মৃগ প্রভৃতি। এর সীমানায় সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গাও আছে। 

এলিভেটেড ট্রিপস নামে একটি ট্যুর অপারেটিং সংস্থা চিংহাই প্রদেশের ভেতর দিয়ে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে। এরই অন্তর্ভুক্ত সানিয়াগুয়ান ন্যাশনাল পার্কে ভ্রমণ। 

ইউরোপ
যেহেতু মহাদেশটি আকারে অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে ছোট, এখানকার বড় জাতীয় উদ্যানগুলোও পৃথিবীর বড় ন্যাশনাল পার্কগুলোর বিবেচনায় পুঁচকে। তার মানে এই নয় যে এরা আসলেই ছোট। 

এখনকার পার্কগুলোর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় আইসল্যান্ডের ভাতনালুকো ন্যাশনাল পার্ক (১৪ হাজার ১৪১ বর্গ কিলোমিটার)। আগ্নেয়গিরি, উষ্ণ প্রস্রবণ, সামুদ্রিক খাঁড়ি কিংবা হিমবাহ যাঁরা পছন্দ করেন তাঁদের প্রায় গন্তব্য এটি। চাইলে নিজে থেকেই এখানে ঘুরে আসতে পারবেন। ক্যাম্পিং, হাইকিং কিংবা পাখি দেখা—যে উদ্দেশ্যেই যান না কেন সমস্যা নেই। 

আফ্রিকা
পশ্চিম নামিবিয়ার নামিব-নওকলাফত ন্যাশনাল পার্কের বড় আকর্ষণ এখানকার বিশাল সব বালিয়াড়ি। জাতীয় উদ্যান এলাকার আয়তন ৪৯ হাজার ৭৬৮ বর্গকিলোমিটার। এখানকার বালিয়াড়িগুলোর কোনো কোনোটি ২০০ মিটারের (৬৫৬ ফুট) বেশি উঁচু। 

আপনার নিজের গাড়ির সাহায্যে সহজেই ঘুরে আসা যায় উদ্যানটি থেকে। পার্কের প্রধান রাস্তা ধরে গেলে সসেস ভ্লেই এবং ডেড ভ্লেইয়ের দেখা পাবেন। হট এয়ার বেলুনে চেপে বসলে মরুভূমির অসাধারণ ভূপ্রকৃতি পাখির চোখে দেখার সুযোগ মিলবে। 

বালিয়াড়ি ছাড়াও মরুভূমির গিরিখাত, উপকূলে পুরোনো দিনের বিধ্বস্ত জাহাজের দেখা পাবেন। তেমনি পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থানগুলোর একটিতে অভিযোজিত হওয়া বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখার সুযোগ মিলবে। 

জাতীয় উদ্যান না হলেও আফ্রিকার সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত এলাকা হলো কাভাংগো-জাম্বেসি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার কনজারভেশন এরিয়া। জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়ার ৫ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১২ সালে গড়ে ওঠে সংরক্ষিত এলাকাটি। 

অ্যান্টার্কটিকা
গ্রহের নিচের প্রান্তটিতে এখনো কোনো জাতীয় উদ্যান নেই। তবে অ্যান্টার্কটিকার একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সংরক্ষিত এলাকা হলো রস সি মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সংরক্ষিত এলাকাটির আয়তন ১৫ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার। পেঙ্গুইন, তিমি, সিলসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখি ও মেরু এলাকার নানান প্রাণীর বাস এখানে। 

তবে ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে সমগ্র মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা ওয়ার্ল্ড পার্কে পরিণত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১ কোটি ৪২ লাখ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পার্কটি হবে বিশ্বের অন্য যেকোনো রিজার্ভের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বড়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত