Ajker Patrika

সুতি জার্সি-পুলওভার: মার্কিন বাজারে বিপাকে প্রতিদ্বন্দ্বীরা, বাংলাদেশের অনন্য সুযোগ

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৪৩
মার্কিন শুল্কের কারণে দেশটির সুতির জার্সি ও পুলওভারের বাজারে অন্য দেশগুলো বিপাকে পড়লেও বাংলাদেশের জন্য এক দারুণ সুযোগ হাজির হয়েছে। প্রতীকী ছবি
মার্কিন শুল্কের কারণে দেশটির সুতির জার্সি ও পুলওভারের বাজারে অন্য দেশগুলো বিপাকে পড়লেও বাংলাদেশের জন্য এক দারুণ সুযোগ হাজির হয়েছে। প্রতীকী ছবি

সুতি জার্সি ও পুলওভার বিশ্বব্যাপী অন্যতম সর্বাধিক আমদানি হওয়া পোশাক পণ্য। এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার, আরামদায়ক বৈশিষ্ট্য এবং বছরজুড়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়। হালকা, বায়ু চলাচল উপযোগী এবং প্রায় সব ঋতুর উপযোগী হওয়ায় এই পোশাক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।

যুক্তরাষ্ট্রে সুতি জার্সি ও পুলওভারের বিশেষ চাহিদা আছে। কারণ, এগুলো মৌসুমভিত্তিক ফ্যাশন ট্রেন্ড ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য সমানভাবে উপযোগী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফাইবার টু ফ্যাশন মার্কিন বাজারে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিবর্তন কেমন হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেছে। বিশেষ করে, চীন বাজার হারানোর ফলে বাংলাদেশসহ কোন দেশগুলো লাভবান হতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।

ভিয়েতনাম: উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও প্রতিযোগিতায় দুর্বল

ভিয়েতনাম তুলার জার্সি ও পুলওভারের শীর্ষ রপ্তানিকারক। দেশটির রিভিলড কম্প্যারেটিভ অ্যাডভান্টেজেস বা তুলনামূলক সুবিধার সূচক (আরসিএ—আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যবহৃত একটি সূচক, যা বাণিজ্য প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা উৎপাদন ও রপ্তানিতে একটি দেশের আপেক্ষিক শক্তি পরিমাপ করে।) ৪ দশমিক ৪৮। তবে এর ইউনিট ভ্যালু রিয়ালাইজেশন (ইউভিআর—ইউনিট ভ্যালু রিয়ালাইজেশন বলতে বোঝায় রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের প্রতি ইউনিটের দামের অর্থনৈতিক মূল্য। অর্থাৎ, প্রতি একক রপ্তানি করে কত টাকা পাওয়া গেল, সেটাই ইউনিট ভ্যালু রিয়ালাইজেশন।) মাঝারি পরিসরে থাকায় এটি ব্যাপক ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য। তবে বাংলাদেশ ও চীনের তুলনায় ভিয়েতনামের তুলনামূলক উচ্চ ইউভিআর দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো বিশেষ শুল্কসুবিধা পায় না। কারণ, সুতির জার্সি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোতে মোস্ট ফেভারড ন্যাশনের বা এমএফএন (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কোনো সদস্য দেশ অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন যে শুল্ক আরোপ করতে পারে, তাকে বোঝায়।) শুল্কের আওতায় পড়ে। চীন ও বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনামের ইউভিআর বেশি হওয়ায় এটি মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।

চীন: উচ্চশুল্কের কারণে হুমকির মুখে

চীন সুতি জার্সি ও পুলওভারের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। দেশটির ইউভিআর প্রতি কেজিতে ১০ দশমিক ৫৪ ডলার, যা সর্বনিম্ন, এবং দেশটির আরসিএ মাত্র ১ দশমিক ০২। কম ইউভিআর চীনের বিশাল উৎপাদন সক্ষমতা ও অর্থনীতির প্রতিফলন, যা দেশটিকে সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য সরবরাহে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় চীনের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর ফলে, ইউভিআর বেড়ে আনুমানিক প্রতি কেজিতে ১১ দশমিক ৫৯ ডলারে দাঁড়াবে। উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় চীনের ঐতিহাসিক কম খরচের সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে এটি মূল্য সচেতন ক্রেতারা খুব একটা পছন্দ নাও করতে পারেন।

দ্বিতীয় দফার শুল্ক বৃদ্ধি ৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। এই পর্যায়ে শুল্ক হার ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এর ফলে চীনের ইউভিআর বেড়ে প্রতি কেজিতে ১২ দশমিক ৬৫ ডলার বা তার বেশি হতে পারে। তবে এই উচ্চ শুল্ক সত্ত্বেও চীন তুলনামূলকভাবে কম ইউভিআর ধরে রাখতে পারবে, ফলে এটি এখনো কম দামের বাজারে প্রতিযোগিতায় থাকতে সক্ষম হবে।

কম্বোডিয়া: উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার দেশ

চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে কম্বোডিয়া লাভবান হতে পারে। দেশটির ইউভিআর ভিয়েতনামের সমপর্যায়ের হলেও আরসিএ অনেক বেশি, যা দেশটিকে বৈশ্বিক সুতি জার্সি ও পুলওভার বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। এই উচ্চ আরসিএ কম্বোডিয়াকে বিশেষায়িত ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেয়। চীনের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কম্বোডিয়া উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেবে।

বাংলাদেশ: সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রতিযোগী

চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হতে পারে বাংলাদেশ। দেশটি সুতি জার্সি ও পুলওভার বাজারে সর্বোচ্চ আরসিএ (২৭ দশমিক ৩৬) এবং সর্বনিম্ন ইউভিআর (প্রতি কেজিতে ১৪ দশমিক ৮৬ ডলার) ধারণ করে। এর অর্থ, বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক (তুলনামূলক কম) দামে এই পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে সক্ষম।

মূলত, বাংলাদেশ চীনের প্রধান প্রতিযোগী। তবে চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ক্রেতারা এখন কম খরচে বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছে, যেখানে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল অবকাঠামো, দক্ষ শ্রমশক্তি ও শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

ইন্দোনেশিয়া: উচ্চ ইউভিআরের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে

ইন্দোনেশিয়ার আরসিএ ৭ দশমিক ১, যা শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নির্দেশ করে। তবে উচ্চ ইউভিআর (চীনের তুলনায় ১ দশমিক ৯ গুণ বেশি) এটিকে মূল্য সচেতন ক্রেতাদের বাজারে পিছিয়ে রাখছে। উচ্চ ইউভিআর ইঙ্গিত দেয় যে, ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন ব্যয় বেশি, যা হয়তো শ্রম খরচ, কাঁচামালের দাম বা কম উৎপাদন স্কেলের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, এটি বাংলাদেশ ও চীনের মতো কম দামের সরবরাহকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দুর্বল অবস্থানে থাকবে।

তবে, উচ্চ মূল্যমান প্রিমিয়াম বা বিশেষায়িত বাজারের প্রতি ইঙ্গিত করতে পারে বিষয়টি। যেখানে গুণগত মান, টেকসই উৎপাদন বা ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইন্দোনেশিয়া যদি খরচ কমানোর কৌশল গ্রহণ করতে পারে, তবে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশ মার্কিন সুতার তৈরি জার্সি ও পুলওভার বাজারে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে। দেশটি সুতি জার্সি ও পুলওভার বাজারে সর্বোচ্চ আরসিএ (২৭ দশমিক ৩৬) এবং সর্বনিম্ন ইউভিআর (প্রতি কেজিতে ১৪ দশমিক ৮৬ ডলার) ধারণ করে, যা দেশটিকে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখছে। চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে বাংলাদেশের বাজার দখলের সম্ভাবনা প্রবল।

অন্যদিকে, ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির পরও চীনের ইউভিআর প্রতি কেজিতে ১২ দশমিক ৬৫ ডলার হওয়ায় এটি মূল্য সচেতন বাজারের জন্য প্রতিযোগিতামূলকই থাকবে। বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতা এবং বিশাল অর্থনীতির কারণে চীন এখনো তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। ফলে, কিছু ক্রেতা বিকল্পের দিকে ঝুঁকলেও, চীন বৈশ্বিক তুলার জার্সি ও পুলওভার বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত