Ajker Patrika

‘প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব, তবু পদত্যাগ করব না’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৩৯
‘প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব, তবু পদত্যাগ করব না’

কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ ও চাকরিচ্যুতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে স্কুলটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এই প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না। যদি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করতে হয় তা-ও আমি পদত্যাগ করব না।’

‘কোনো স্টুডেন্ট পদত্যাগ করাতে পারে না। একটা আইন আছে, সরকারি স্কুলের একটা প্রসিডিউর আছে। তবে আমি কুড়িগ্রামে এক সেকেন্ডও থাকতে চাই না। কিন্তু আমি জীবন থাকতে সাইন করব না।’ যোগ করেন এই প্রধান শিক্ষক।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তার পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলায়। স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাট জেলা সদরে।

লালমনিরহাট থেকে প্রাইভেট কারে করে স্বামী রেজাউল করিমসহ নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি স্কুলটিকে অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার আঁতুড়ঘরে পরিণত করেন বলে অভিযোগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এমনকি স্কুলের বিজ্ঞানাগারে নিজ স্বামীর বিশ্রামের জন্য তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। স্কুলের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন কক্ষে তালা লাগিয়ে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকালীন গত ১৫ বছরে স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আঁচ করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কয়েক দিন ধরে তিনি স্কুলে অনুপস্থিত।

রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
স্কুলটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বলছেন, ‘স্কুলটি যেন প্রধান শিক্ষকের প্রমোদখানা! কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলে একরকম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বেপরোয়াভাবে স্কুল পরিচালনা করছেন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় তিনি সবসময় শিক্ষকদের হুমকির ওপর রাখতেন। শিফট পরিবর্তনসহ বদলির ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।’

অর্থ আত্মসাৎ 
শিক্ষক ও অন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘স্কুলটিতে দুই শিফটে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। গত ১৫ বছরে প্রধান শিক্ষক স্কুল ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন প্রকার খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বাৎসরিক ও মাসিক যে টাকা আদায় করা হতো তার কোনো আয়ব্যয়ের হিসাব তিনি দেননি। প্রতিমাসে কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি ২০ টাকা করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু ব্যয় হয় সামান্য। স্কুলে শিক্ষার্থীদের কোনো কমনরুম না থাকলেও কমনরুম ফি আদায় করা হয়। আরো বেশ কয়েকটি খাতের লাখ লাখ টাকার কোনও হিসাব তিনি দিচ্ছেন না।’ 

ভর্তি ও শিফট পরিবর্তনে বাণিজ্য 
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি, যোগদানের কয়েক বছরের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেন। এ ছাড়াও টাকার বিনিময়ে তিনি মর্নিং শিফটের শিক্ষার্থীকে ডে শিফটে এবং ডে শিফটের শিক্ষার্থীদের মর্নিং শিফটে দিতেন। এসব কাজে কুড়িগ্রামের কয়েকজন সাংবাদিক নেতা, একজন সাবেক তথ্য কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ মিলে একটি সিন্ডিকেট কাজ করত। অপেক্ষমান তালিকার ক্রম ভঙ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হত। এ ছাড়াও লটারিতে টেকেটি এমন শিক্ষার্থীও ভর্তির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। 

রুখসানার ভয়ে তটস্থ থাকতেন শিক্ষকেরা 
চোখের সামনে নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চললেও রুখসানার ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না সাধারণ শিক্ষকরা। জেলার বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য থাকায় রুখসানা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কোনো শিক্ষক মুখ খোলার চেষ্টা করলেই তাদেরকে বদলির হুমকি দিতেন। এমনকি শিক্ষকদেরকে নিরাপত্তা নিয়েও ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে সাধারণ শিক্ষকেরা কিছু বলতে পারতেন না। তবে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর শিক্ষকেরা সাহস ফিরে পেয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত) তুষার কুমার রক্ষিত বলেন, ‘আমাদের সবার মুখ এতোদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। কথা বললেই বদলির হুমকি, মর্নিং থেকে দিবা, দিবা থেকে মর্নিং শিফটে দেওয়া সহ নানা ধরণের হয়রানির হুমকি আমাদের দমিয়ে রেখেছিল। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালককে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’

অভিযোগ অস্বীকার প্রধান শিক্ষকের
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুখসানা পারভীন। আগে সকল শিক্ষক-কর্মচারী তাঁর পাশে থাকলেও এখন বিপক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব অভিযোগ করছেন বলে দাবি তাঁর।

তিনি বলেন, ‘গার্লস স্কুলে কী হয় তা সকলেই জানে। আমি স্কুলটিকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে আমি ভর্তি-বাণিজ্য করে কারও কাছে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছি, আমি তার জন্য সই দিতে রাজি আছি।’

গত ১৫ বছরের হিসাব প্রসঙ্গে এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার কর্তৃপক্ষ চাইলে আমি সকল হিসাব দিতে প্রস্তুত। অভিযোগের সত্যতা পেলে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথা পেতে নেব।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত