Ajker Patrika

ব্যাংক ঋণের বন্ধকি সম্পত্তি ইসকনকে দান করে ভারতে আত্মগোপন

  • ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন গোপাল-দীপা আগরওয়ালা
  • বন্ধক রাখেন ৪৩৪ শতাংশ জমি
  • বন্ধকি সম্পত্তি দান করে ভারতে আত্মগোপন
  • বন্ধকি সম্পত্তি উইলের সুযোগ নেই: বাংলাদেশ ব্যাংক
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৪৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংক থেকে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) উইল (সম্প্রদান) করে ভারতে চলে গেছে এক ব্যবসায়ী দম্পতি। তাঁরা হলেন নওগাঁর জেএন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোপাল আগরওয়ালা ও চেয়ারম্যান দীপা আগরওয়ালা। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে জমি বন্ধক রেখে এই ঋণ দিয়েছিল বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা। অনাদায়ি এই ঋণ সুদে-আসলে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামের হিসাবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বেশ কিছু সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের একটি অংশ পাচার হয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পত্তি উইল করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি সরাসরি আইনের লঙ্ঘন। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, বন্ধকি সম্পত্তি থেকে ঋণ সমন্বয়ের আইনি অধিকার ব্যাংকের রয়েছে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোজাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ঋণের বিপরীতে রাখা বন্ধকি সম্পত্তি উইল করা বেআইনি। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩(ডি) ধারা অনুযায়ী, ব্যাংকের লিখিত অনুমতি ছাড়া বন্ধকি সম্পত্তি হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংক বন্ধকি সম্পত্তি থেকে ঋণ সমন্বয় করবে, এটিই নিয়ম।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৫ মার্চ গোপাল আগরওয়ালা ও দীপা আগরওয়ালা দম্পতি তাঁদের প্রতিষ্ঠান জেএন ইন্ডাস্ট্রির নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় একটি চলতি হিসাব (নং ১১১-২৮৭) খোলেন। ওই হিসাবে ব্যাংকটির নোয়াখালীর চৌমুহনী ও ফেনী শাখা থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা হয় এবং গ্রাহক পরের কার্যদিবসে ওই টাকা তুলে ফেলেন। একইভাবে ২০১৮ সালের ৩০ মে এবং ১১ জুলাই যথাক্রমে ১৫ লাখ ৬০ হাজার এবং ২৬ লাখ টাকা চেক দিয়ে তোলা হয়। একই বছরের ২ এপ্রিল ওই হিসাবে গ্রাহকের মেয়াদি ঋণ (নং ৭১২-৩২) থেকে ১৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করে সেদিনই চারটি চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেন গ্রাহক। এভাবে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ওই হিসাবে টাকা স্থানান্তর এবং চেক দিয়ে টাকা তোলা হয়। একই প্রতিষ্ঠানের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের ঢাকার শ্যামলী শাখা থেকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে ওই ঋণপত্রের বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেনি ব্যাংকটি। পরিদর্শক দল বিষয়টিকে অসংগতি বলে উল্লেখ করে এবং ঋণপত্রের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ পোষণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১৬ সালের ৯ জুন ৭৫ কোটি টাকা চলতি ঋণের (সিসি) আবেদন করে। সেদিনই শাখা থেকে ওই গ্রাহকের ৬০ কোটি টাকার ওভারড্রাফট ও ১০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদনের জন্য ব্যাংকটির করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে পাঠানো হয়। এতে গ্রাহকের নামে থাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় ৪০ কোটি টাকার সিসি ও ৫ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অধিগ্রহণের জন্য ৬০ কোটি টাকার ওভারড্রাফটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণসীমা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। ওই আবেদনের অনুকূলে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় একই বছরের ২১ জুলাই অভ্যন্তরীণ ঋণসীমাসহ ৫০ কোটি টাকার ওভারড্রাফট ও ১০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদন করে। প্রধান কার্যালয় থেকে ১ সেপ্টেম্বর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় গ্রাহকের নামে থাকা ৪৫ কোটি টাকার সিসি ও ৮ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এই ঋণের জামানত হিসেবে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গোপাল আগরওয়ালার মালিকানাধীন ৪৩৪ শতাংশ জমি বন্ধকের শর্ত দেওয়া হয়। জরিপ ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সম্পত্তির মোট মূল্য ৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং তাৎক্ষণিক বিক্রয়মূল্য ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জে এন ইন্ডাস্ট্রিজ ও শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের নামে বিভিন্ন সময়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা থেকে আরও ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যবসায়ী দম্পতি ঋণ পরিশোধ না করেই ২০১৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়।

সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেএন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের এমডি গোপাল ও চেয়ারম্যান দীপা আগরওয়ালা কৌশলে ব্যাংকে বন্ধকি সম্পত্তি ইসকনের নামে উইল করে দেশত্যাগ করেছেন। বর্তমানে সেই ঋণ খেলাপি এবং সুদাসলসহ অনাদায়ী পাওনা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন সরকার বদলের পর এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই জানে।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গোপাল আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণ এবং প্রশ্নবিদ্ধ লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ ওই ঋণ খেলাপি কি না এবং স্থিতি কত, জানতে চাইলে তিনি গ্রাহকের সব তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বন্ধকি সম্পত্তি ইসকনকে উইল করে দেওয়ায় কীভাবে এই ঋণ সমন্বয় হবে—জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

ওই ঋণের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দীন মো. সাদেক হোসাইনকে গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকবার মোবাইলে কল করা হলে ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের শ্যামলী শাখার ২০১৭ সালের ১২ মার্চ নিষ্পত্তি করা ঋণপত্রের বিপরীতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলারের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ট্রাকের রসিদ ও কমার্শিয়াল ইনভয়েসের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য সরবরাহকারীর ঠিকানা ভারতের কলকাতা; কিন্তু ঋণপত্রের অর্থ পাঠানো হয় মুম্বাইয়ে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওভারড্রাফট বা ওডি করে ৪৭ কোটি টাকার পে-অর্ডার (নং ১৬২৭৩২৫) ইস্যু করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় গোপাল আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানের চলতি ঋণ পরিশোধ করা হয়। ২০১৭ সালের ২ জুলাই গ্রাহকের নামে মেয়াদি ঋণ খুলে ১০ কোটি টাকা দিয়ে ওডি হিসাবের কিছু দায় সমন্বয় করা হয়। ওই ব্যাংকে আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু লেনদেনকে সন্দেহজনক বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক মিল্টন গতকাল মোবাইল ফোনে বলেন, সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। তবে ব্যাংকটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গোপাল আগরওয়ালা দম্পতির ওই দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে বিএফআইইউ নওগাঁ শাখা পরিদর্শন করেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১২-১৯ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানের হিসাবে মোট জমা ও উত্তোলনের পরিমাণ যথাক্রমে ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালে বিএফআইইউর পরিদর্শনের সময় ওই হিসাব দীর্ঘ সময় লেনদেনহীন (ডরম্যান্ট) দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত