Ajker Patrika

ব্যাংক ঋণের বন্ধকি সম্পত্তি ইসকনকে দান করে ভারতে আত্মগোপন

  • ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন গোপাল-দীপা আগরওয়ালা
  • বন্ধক রাখেন ৪৩৪ শতাংশ জমি
  • বন্ধকি সম্পত্তি দান করে ভারতে আত্মগোপন
  • বন্ধকি সম্পত্তি উইলের সুযোগ নেই: বাংলাদেশ ব্যাংক
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৪৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংক থেকে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) উইল (সম্প্রদান) করে ভারতে চলে গেছে এক ব্যবসায়ী দম্পতি। তাঁরা হলেন নওগাঁর জেএন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোপাল আগরওয়ালা ও চেয়ারম্যান দীপা আগরওয়ালা। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে জমি বন্ধক রেখে এই ঋণ দিয়েছিল বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা। অনাদায়ি এই ঋণ সুদে-আসলে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামের হিসাবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বেশ কিছু সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের একটি অংশ পাচার হয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পত্তি উইল করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি সরাসরি আইনের লঙ্ঘন। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, বন্ধকি সম্পত্তি থেকে ঋণ সমন্বয়ের আইনি অধিকার ব্যাংকের রয়েছে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোজাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ঋণের বিপরীতে রাখা বন্ধকি সম্পত্তি উইল করা বেআইনি। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩(ডি) ধারা অনুযায়ী, ব্যাংকের লিখিত অনুমতি ছাড়া বন্ধকি সম্পত্তি হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংক বন্ধকি সম্পত্তি থেকে ঋণ সমন্বয় করবে, এটিই নিয়ম।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৫ মার্চ গোপাল আগরওয়ালা ও দীপা আগরওয়ালা দম্পতি তাঁদের প্রতিষ্ঠান জেএন ইন্ডাস্ট্রির নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় একটি চলতি হিসাব (নং ১১১-২৮৭) খোলেন। ওই হিসাবে ব্যাংকটির নোয়াখালীর চৌমুহনী ও ফেনী শাখা থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা হয় এবং গ্রাহক পরের কার্যদিবসে ওই টাকা তুলে ফেলেন। একইভাবে ২০১৮ সালের ৩০ মে এবং ১১ জুলাই যথাক্রমে ১৫ লাখ ৬০ হাজার এবং ২৬ লাখ টাকা চেক দিয়ে তোলা হয়। একই বছরের ২ এপ্রিল ওই হিসাবে গ্রাহকের মেয়াদি ঋণ (নং ৭১২-৩২) থেকে ১৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করে সেদিনই চারটি চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেন গ্রাহক। এভাবে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ওই হিসাবে টাকা স্থানান্তর এবং চেক দিয়ে টাকা তোলা হয়। একই প্রতিষ্ঠানের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের ঢাকার শ্যামলী শাখা থেকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে ওই ঋণপত্রের বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেনি ব্যাংকটি। পরিদর্শক দল বিষয়টিকে অসংগতি বলে উল্লেখ করে এবং ঋণপত্রের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ পোষণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১৬ সালের ৯ জুন ৭৫ কোটি টাকা চলতি ঋণের (সিসি) আবেদন করে। সেদিনই শাখা থেকে ওই গ্রাহকের ৬০ কোটি টাকার ওভারড্রাফট ও ১০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদনের জন্য ব্যাংকটির করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে পাঠানো হয়। এতে গ্রাহকের নামে থাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় ৪০ কোটি টাকার সিসি ও ৫ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অধিগ্রহণের জন্য ৬০ কোটি টাকার ওভারড্রাফটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণসীমা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। ওই আবেদনের অনুকূলে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় একই বছরের ২১ জুলাই অভ্যন্তরীণ ঋণসীমাসহ ৫০ কোটি টাকার ওভারড্রাফট ও ১০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদন করে। প্রধান কার্যালয় থেকে ১ সেপ্টেম্বর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় গ্রাহকের নামে থাকা ৪৫ কোটি টাকার সিসি ও ৮ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এই ঋণের জামানত হিসেবে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গোপাল আগরওয়ালার মালিকানাধীন ৪৩৪ শতাংশ জমি বন্ধকের শর্ত দেওয়া হয়। জরিপ ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সম্পত্তির মোট মূল্য ৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং তাৎক্ষণিক বিক্রয়মূল্য ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জে এন ইন্ডাস্ট্রিজ ও শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের নামে বিভিন্ন সময়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা থেকে আরও ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যবসায়ী দম্পতি ঋণ পরিশোধ না করেই ২০১৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়।

সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেএন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের এমডি গোপাল ও চেয়ারম্যান দীপা আগরওয়ালা কৌশলে ব্যাংকে বন্ধকি সম্পত্তি ইসকনের নামে উইল করে দেশত্যাগ করেছেন। বর্তমানে সেই ঋণ খেলাপি এবং সুদাসলসহ অনাদায়ী পাওনা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন সরকার বদলের পর এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই জানে।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গোপাল আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণ এবং প্রশ্নবিদ্ধ লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ ওই ঋণ খেলাপি কি না এবং স্থিতি কত, জানতে চাইলে তিনি গ্রাহকের সব তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বন্ধকি সম্পত্তি ইসকনকে উইল করে দেওয়ায় কীভাবে এই ঋণ সমন্বয় হবে—জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

ওই ঋণের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দীন মো. সাদেক হোসাইনকে গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকবার মোবাইলে কল করা হলে ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের শ্যামলী শাখার ২০১৭ সালের ১২ মার্চ নিষ্পত্তি করা ঋণপত্রের বিপরীতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলারের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ট্রাকের রসিদ ও কমার্শিয়াল ইনভয়েসের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য সরবরাহকারীর ঠিকানা ভারতের কলকাতা; কিন্তু ঋণপত্রের অর্থ পাঠানো হয় মুম্বাইয়ে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওভারড্রাফট বা ওডি করে ৪৭ কোটি টাকার পে-অর্ডার (নং ১৬২৭৩২৫) ইস্যু করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় গোপাল আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানের চলতি ঋণ পরিশোধ করা হয়। ২০১৭ সালের ২ জুলাই গ্রাহকের নামে মেয়াদি ঋণ খুলে ১০ কোটি টাকা দিয়ে ওডি হিসাবের কিছু দায় সমন্বয় করা হয়। ওই ব্যাংকে আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু লেনদেনকে সন্দেহজনক বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক মিল্টন গতকাল মোবাইল ফোনে বলেন, সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। তবে ব্যাংকটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গোপাল আগরওয়ালা দম্পতির ওই দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে বিএফআইইউ নওগাঁ শাখা পরিদর্শন করেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১২-১৯ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় আগরওয়ালা দম্পতির প্রতিষ্ঠানের হিসাবে মোট জমা ও উত্তোলনের পরিমাণ যথাক্রমে ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালে বিএফআইইউর পরিদর্শনের সময় ওই হিসাব দীর্ঘ সময় লেনদেনহীন (ডরম্যান্ট) দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাঠিতে ভর দিয়ে করতে হয় যাতায়াত, একই পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে একটি পরিবার। পরিবারটির ছয় সদস্যই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির বাসিন্দা প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ। বাকি ছয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

পরিবারে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র সুস্থ সন্তান মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) গৃহস্থালির কাজ করেন। অন্য ছয় সন্তানের কেউই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবনে পা রাখতে পারেননি। অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসাও হচ্ছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থাও নেই। ফলে পুরো পরিবারের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও ছয় থেকে সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু মনুহর দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে পরিবারটির দুর্দশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে তাঁরা নিজের ঘরে শিশুদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কোনোরকমে দিন চালাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন, ‘শরীরে শক্তি নেই, হাঁটতেও পারি না। তাই ভিক্ষাও করতে পারি না। ঘরে বসে শিশুখাদ্য বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। আটজনের সংসারে অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়।’

নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সরকারি বা বেসরকারি আর কোনো সহযোগিতা পাই না। বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা চাই।’

প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা ফুল বানু বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান বড় করতেই এখন অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আমি এখনো বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। কেউ বাদ পড়লে যাচাই-বাছাই করে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে এলে বিশেষভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক, খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন: দগ্ধ আরেক সন্তানের মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর বড় মেয়ে সালমা আক্তার স্মৃতিও (১৭) মারা গেছে। এর আগে একই ঘটনায় তাঁর ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল দুজনে।

গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতির মৃত্যু হয়। বেলাল হোসেন নিজেও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন। রাত ১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর রাতে ভবানীগঞ্জের চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকায় দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেনের বসতঘরে আগুন দেয়। এতে ঘর ও আসবাব পুড়ে যায় এবং আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় বেলাল হোসেন, তাঁর বড় মেয়ে স্মৃতি এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেজো মেয়ে সায়মা আক্তার বিথি (১৪) দগ্ধ হয়। বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। স্মৃতি ও বিথিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের তথ্যমতে, স্মৃতির শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং বিথির প্রায় ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বিথিকে পরদিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে স্মৃতি পাঁচ দিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বেলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে, এর মধ্যে দুটি বন্ধ এবং একটি খোলা অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে পোড়া বাড়ি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, ঘটনার দিন আগুনে পুড়ে আয়েশার মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতিও মারা গেছে। নিহত সন্তানদের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে প্রাথমিকের শতভাগ বই পৌঁছেছে, বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে নতুন বই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৮
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। তবে মাধ্যমিকের সব বই পৌঁছেনি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪ কপি বই। ইতিমধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বই বিভিন্ন স্কুলে পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার কপি। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলোই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বইগুলো আসামাত্র বিতরণ করা হবে।

বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন থেকে চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুজনের গোলটেবিলে পর্যবেক্ষণ: ভোটের খরচ না কমলে দুর্নীতিও কমবে না

  • আর্থিক বিষয়সহ কমিশনের অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ।
  • নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ও বিবেচনায় রাখার তাগিদ।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি বলে অভিমত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতিও কমানো যাবে না। কিন্তু অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিবিড় নজরদারি করতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) উভয়ের তরফে অবহেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দলের সদস্যদের দায়বদ্ধতা, নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কিছু সুপারিশ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) গ্রহণ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। বেসরকারি সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকার ও ইসির প্রস্তাবের মাধ্যমে আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আবার অনেক বিষয়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনো আসনে মোট ভোটের ৪০ শতাংশ না পড়লে আবার ভোট গ্রহণের বিধান, পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান বাতিল করা এবং প্রতি পাঁচ বছর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা, কোনো ব্যক্তির একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা, ২০২৩ সালে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ নিবন্ধন দেওয়া দলের নিবন্ধন বাতিল করাসহ অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।

নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, ইতিমধ্যে ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে’ নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থেকেও সুরক্ষা প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সুজনের সম্পাদক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ভোট গণনা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা উচিত। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে সংস্কারগুলো করেছে, তা সন্তোষজনক নয়।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ গৃহীত হয়েছে। বাকি সুপারিশগুলো যাতে গ্রহণ করা হয়, সে জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিশনকে চাপের মুখে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর অপব্যবহার বা ভোটারদের বিভ্রান্তি রোধে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ বা সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্টভাবে থাকা উচিত ছিল। তা করা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সংস্কার কমিশনের তুলনায় নির্বাচনবিষয়ক কমিশনের অর্জন কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি।

বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত