Ajker Patrika

হাতিয়ায় নেই লোডশেডিং, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে খুশি বাসিন্দারা

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ১৫: ৫৬
হাতিয়ায় নেই লোডশেডিং, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে খুশি বাসিন্দারা

সারা দেশে বিদ্যুতের বিপর্যয় চলেছে। অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। তীব্র দাবদাহে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত। এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি সেখানে। হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে করা নতুন ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রকল্প নেওয়া হয় হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। প্রকল্পটি ছিল ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও এ বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। 

হাতিয়া উপজেলা সদরে চাইনিজ হোটেল অ্যান্ড ক্যাফে-২৪-এর মালিক মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ ছাড়া চাইনিজ হোটেলের গ্রাহক সার্ভিসের কথা চিন্তাই করা যায় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই হোটেলে গ্রাহক সার্ভিসে কোনো সমস্যা নেই। ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছি। সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সংবাদ টেলিভিশনে দেখি। গত ছয় মাসে এখানে এক ঘণ্টার জন্যও বিদ্যুৎ যায়নি। আবহাওয়ার কারণে মাঝেমধ্যে গেলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে তা আবার সচল করে দেওয়া হয়েছে।’ 

শুধু উপজেলা সদরে নয়, একই চিত্র উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম্য হাঁট ভৈরব বাজারেও। বাজারের সেলুন দোকানের মালিক বাদল চন্দ্র শিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ছয় মাসে এই বাজারে শুধু একবার ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকগুলো দোকানের সঙ্গে বিদ্যুতের লাইনও পুড়ে গিয়েছিল। পরদিন তা আবার মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়।’ 

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় থাকে। তাদের সঙ্গে কথা হলেও তারা বলে দিনে কয়েকবার করে বিদ্যুৎ থাকে না। কিন্তু আমাদের এখানে প্রায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আমরা পাই। এ কথা শুনে আমার ছেলে-মেয়েরাও চলে আসতে চায়।’ 

হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো আলোচনা নেই। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা এই দ্বীপে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেয়ে মহাখুশি। বেড়িবাঁধের ওপরে, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট-বড় হাঁট-বাজার এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। নতুন এই বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে উপজেলার জাহাজমারা ও নিঝুম দ্বীপে বেশ কয়েকটি আইস ফ্যাক্টরির কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ফ্যাক্টরিও চালু করা হবে বলে জানা গেছে। 

হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাতিয়ায় আজ পর্যন্ত (৭ জুন) আবাসিক ও বাণিজ্যিক বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। প্রতিদিন নতুন সংযোগের আবেদন আসছে। যাচাই-বাছাই করে গ্রাহকদের সংযোগ দিচ্ছেন বিদ্যুতের কর্মীরা। এক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫০০।’ 

নতুন ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রকল্প নেওয়া হয় হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যতিনি আরও বলেন, ‘হাতিয়ায় স্বাধীনতার পর বিদ্যুতের তেমন উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান সরকার হাতিয়ায় পাঁচটি ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে শুরু করে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। কিন্তু অনেক পুরোনো এই ইঞ্জিনগুলো এখন অনেকটাই বিকল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হাতিয়ায় নতুন ১৫ মেগাওয়াটের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’। প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিউবো)।’ 

এই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বিতরণ বিভাগের উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। উৎপাদনের জন্য চুক্তি করা হয় দেশ এনার্জি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে। তারা প্রাথমিকভাবে ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট তৈরি করেছে হাতিয়ায়। এ জন্য সরকারিভাবে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হরেন্দ্র মার্কেটের কাছে ১৬ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে ১৫ বছরের জন্য চুক্তি করা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ১২ দশমিক ১০ সেন্টে কিনে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করছে সরকার। ইতিমধ্যে উৎপাদনে শতভাগ ও বিতরণে ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিয়ায় তিনটি নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া মূল হাতিয়ায় নতুন ৪৬৫ কিলোমিটার ও নিঝুম দ্বীপে ৪৭ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়। নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হাতিয়ার মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ খাল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ১১ কেভি সাবমেরিন কেব্‌ল স্থাপন করা হয়। সব শেষে গত মাসে নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে।’ 

এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৬ হাতিয়া আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাতিয়াবাসীর স্বপ্ন ছিল হাতিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতের উন্নয়ন হবে। আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সারা দেশের তুলনায় ভিন্ন হাতিয়া। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে দ্বীপবাসীর। এখানে স্থাপিত হচ্ছে কোল্ড স্টোরেজ, ছোট-বড় অনেক শিল্প কল-কারখানা। এর সুফল ভোগ করবে দ্বীপের প্রায় ৭ লাখ লোক। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা, আটক ১০

কর্ণফুলী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০ জন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার মইজ্জ্যেরটেক এলাকায় সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযানে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার।

আবু সাঈদ জানান, রোববার সকাল থেকে সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশা জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। এই ঘটনার জের ধরে অটোরিকশাচালকেরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। চালকদের এলোপাতাড়ি মারধরে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইমতিয়াজসহ দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলরা আহত হন। পরে থানা-পুলিশের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করা হয় এবং ১০ হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি সহায়তা নয়, গণচাঁদাতেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কার করবে উদীচী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে এবং গণচাঁদা সংগ্রহ করে সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কার্যালয় সংস্কারের জন্য তারা সরকার বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করবে না।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদীচী কখনোই সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গণচাঁদাই সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। এবারও ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়টিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদীচীর দেশ-বিদেশের হাজারো শিল্পী ও কর্মী তাদের পরিশ্রমের উপার্জনের টাকা দিয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।

বিবৃতিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, উদীচীর নাম করে অন্য কেউ যদি আর্থিক সহায়তা চায় এবং এর ফলে কেউ প্রতারিত হন, তবে তার দায়ভার কেন্দ্রীয় সংসদ নেবে না।

উদীচী নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে হামলার পর থেকেই উদীচীর ওপর হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা প্রশাসন নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মৌলবাদী অপশক্তি বিনা বাধায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সংগঠনের ৫৭ বছরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, দুষ্প্রাপ্য বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হামলা ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, উদীচীর এখন একটাই প্রত্যাশা—এই ন্যক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিচারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ চায়, এ দেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যে ত্যাগের ইতিহাস, তা কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বলেও তারা অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে দেশের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এই অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় উদীচী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ করপোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫১
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা করপোরাল মাসুদ রানাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত বীর সেনানীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদ রানার মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার তাঁর গ্রামের বাড়ি-সংলগ্ন উপজেলার করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটু দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পরে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে মাসুদ রানাসহ শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহীদ মাসুদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে এলাকার লোকজন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হেলিকপ্টারযোগে শহীদ মাসুদ রানার মরদেহ আনা হবে তাঁর নিজ গ্রামে। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠটি ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

মাসুদ রানা উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে। ২০০৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মাসুদ রানার মেজো ভাই মনিরুল ইসলাম এবং ছোট ভাই রনি আলমও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য।

স্বজনেরা জানান, গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান মাসুদ রানা। মিশন শুরুর মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় ড্রোন হামলায় তিনি শহীদ হন। শান্তিরক্ষী হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও কফিনে মুড়িয়ে ফিরছেন এই বীর।

নাটোর স্টেডিয়ামের আর্মি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর বলেন, ‘শহীদ মাসুদের দাফন সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ওই হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। তাদেরই একজন নাটোরের লালপুরের কৃতী সন্তান করপোরাল মাসুদ রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাবনা-৩: স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ারুলের

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৮
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর–ভাঙ্গুড়া–ফরিদপুর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মতবিনিময় সভায় চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাইজুলের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুত্তালিব প্রামানিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস আলো মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজির সরকার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলজার হোসেন প্রমুখ।

এ ছাড়া ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা। বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলামকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

কে এম আনোরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দুবার এমপি এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখন জনগণ চাইছে আমি নির্বাচনে অংশ নিই। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। সাধারণ জনগণ বহিরাগত কোনো প্রার্থী চায় না। নির্বাচনী অনুকূল পরিবেশ থাকলে আমার জয় নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ। আমার শেষনিশ্বাস পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’

চাটমোহর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পাবনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এর আগে কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ও হাসাদুল ইসলাম হীরার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত