Ajker Patrika

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, অপবাদে কেঁদেছেন কর্মচারীও

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৭
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ভূমি কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ভূমি কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নাজমুন নাহারের বিরুদ্ধে সেবার নামে ঘুষ-দুর্নীতি এবং অফিসের কর্মচারীদের নাজেহাল করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কর্মচারী নাজমা আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে নাজমুন নাহারের তোলা অপবাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। অন্যদিকে, চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীরা।

ভূমি অফিসের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরতে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের সদর উপজেলার খাগডহর ভূমি অফিসে ঢোকার আগ মুহূর্তেই কাগজ হাতে দুই ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায়। একজন অফিসের অলিখিত স্টাফ চান মিয়া এবং অপরজন সেবাপ্রার্থী আলাউদ্দিন। জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগবে, সেই বিষয়টি ফয়সালা করছিলেন আলাউদ্দিনের সঙ্গে চান মিয়া। সাংবাদিক দেখে পালানোর চেষ্টা করেন চান মিয়া।

পরে দাঁড়াতে বললে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘উনি (আলাউদ্দিন) আমার সম্পর্কে চাচা হয়। আজ অফিসে স্যার নেই, তাই উনি খারিজের জন্য কাগজপত্র নিয়ে আসছেন, সেগুলো দেখছি। আপনি কি অফিসের স্টাফ—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না আমি অফিসের স্টাফ না। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে স্যারের (ভূমি কর্মকর্তা) কাজকাম করছি। এতে প্রতিদিন ২০০-৩০০ করে টাকা পাই। তবে কারও কাছ থেকে কোনো জোর করে টাকা নেই না।’

সেবাপ্রার্থী আলাউদ্দিন বলেন, ‘৯ শতাংশ জমি খারিজ করতে হয়। তাই কাগজপত্র নিয়ে আসছিলাম ভূমি অফিসে। পরে চান মিয়া অফিসের পেছনে আমাকে নিয়ে আসছে। কয় টাকা লাগবে না লাগবে আলাপ শুরু করেছিলাম। তখনই আপনারা আসছেন।’

এবার নজর ভূমি অফিসের ভেতরে। এদিন (২৫ সেপ্টেম্বর) ভূমি কর্মকর্তা নাজমুন নাহারকে পাওয়া না গেলেও দেখা মেলে অনেক সেবাপ্রার্থীর। অভিযোগ টাকা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত তাঁরা।

আফজাল আলী মারজু নামে একজন বলেন, ‘আমি দলিল লেখক; ভূমি অফিসের পার্শ্ববর্তী ঢোলাদিয়ার বাসিন্দা। এক অসহায় নারীকে অফিস খরচে দলিল করে দেওয়ার পর খারিজের জন্য ভূমি অফিসে আসি। তখন ম্যাডাম (ভূমি কর্মকর্তা) আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বলি আপনি নারী হয়ে অন্য এক অসহায় নারীর প্রতি আপনার সহানুভূতি থাকবে না? আসলে আমরা যদি প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে পরিবর্তন না হই, তাহলে দেশটা পরিবর্তন হবে না।’

কাগজ হাতে কথা বলছেন অফিসের অলিখিত স্টাফ চান মিয়া এবং অপরজন সেবাপ্রার্থী আলাউদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাগজ হাতে কথা বলছেন অফিসের অলিখিত স্টাফ চান মিয়া এবং অপরজন সেবাপ্রার্থী আলাউদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাজুল ইসলাম নামে আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, `জমি খারিজের জন্য একটি ফাইল নিজ চোখে দেখব বলে ১৫ দিন ধরে ঘুরছি। আইলেই ম্যাডাম বলে আজ না কাল। তাইলে কোথায় গিয়ে সেবা পাব বলেন।’

ভূমি কর্মকর্তার টাকা নেওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন অফিস সহায়ক নাজমুন নাহার নাসরিন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম নায়েবের চেয়ারে বসে টাকা নেন; তা নিয়ে বাইরে সমালোচনা হয় শুনতেও খারাপ লাগে। উনি নায়েব হিসেবে তা করতে পারেন না।’

শুধু ঘুষেই সীমাবদ্ধ নন ভূমি কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। তাঁর অপবাদে অঝোরে কাঁদলেন অফিস সহকারী নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, `আমি একজন স্বামী পরিত্যক্তা। তিন সন্তান নিয়ে চাকরিটাই ভরসা। ম্যাডামের রুমে বসার জন্য আগে একটা চেয়ার ছিল। সে চেয়ারটা তিনি সরিয়ে দিয়েছেন। সব সময় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। এক ভদ্র মুরব্বি দিয়ে আমার চরিত্রে কালিমা লেপন করতে চেয়েছেন। একজন কর্মকর্তা এমন ভাবতেও খারাপ লাগে।’ এগুলো বলতে বলতে অঝোরে দুচোখের পানি ফেলেন।

খাগডহর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন হলো আমি অফিসে যোগদান করেছি। তাই সব বিষয়ে অবগত নই। শুনেছি চান মিয়া আগে থেকই এই অফিসে কাজ করেন। তবে কাজ করতে গিয়ে তিনি যদি কারও কাছ থেকে টাকাপয়সা নেন, তাহলে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

তবে মোবাইল ফোনে অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা নাজমুন নাহার ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে বলেন, `সরকারি চাকরি করতে এসে বাইরের গুন্ডাপান্ডা নিয়ে যদি অফিসে বসা সঠিক হয়, তাহলে আমার বলার কিছু নেই। ভালো মানুষের জায়গা নাই, আমার দোষ, আমি ষড়যন্ত্র বুঝি কম।’

খাগডহর ভূমি অফিসের বিষয়টি নজরে আসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমি নিজেই খোঁজখবর নিচ্ছি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ