Ajker Patrika

মাছি দমনে ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
মাছির সংক্রমণ থেকে কুমড়া রক্ষায় খেতে স্থাপন করা হয়েছে ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’। সম্প্রতি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চর নিলক্ষীয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছির সংক্রমণ থেকে কুমড়া রক্ষায় খেতে স্থাপন করা হয়েছে ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’। সম্প্রতি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চর নিলক্ষীয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাছির সংক্রমণ থেকে ফলসহ নানান সবজি রক্ষায় নতুন একটি পদ্ধতি এনেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান। দেশে প্রচলিত ট্র্যাপের মধ্যে সাধারণত লিউর ও সাবান-পানি ব্যবহৃত হয়, যার কার্যকারিতা বজায় রাখতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কৃষকেরা এটি পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।

আবুল মঞ্জুর খানের এই ট্র্যাপের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’। তিনি জানিয়েছেন, ‌এই ট্র্যাপের উৎপাদন ও কৃষকের নিকট পৌঁছে দিতে ৫০ টাকার মতো খরচ হতে পারে। এই ট্র্যাপের ভেতরে শুধু লিউর পরিবর্তন করতে হবে। ফলে এটি টেকসই।

মাছির সংক্রমণের কারণে দেশের আমসহ বিভিন্ন ফল ইউরোপ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিতে সমস্যা হয়। মাছি দমনের জন্য বিভিন্ন দেশে নানান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ‘মাসট্র্যাপিং পদ্ধতি’ ব্যবহৃত হয়। এই বিশেষ ধরনের ট্র্যাপে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করে ধ্বংস করা হয়। ফলে স্ত্রী পোকাগুলো প্রজনন করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা হ্রাস পায়।

ড. মঞ্জুর খান তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন উদ্ভাবিত ট্র্যাপ ব্যবহার করা গেলে অধিক কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। তাঁর উদ্ভাবিত ট্র্যাপের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এতে মাছি মারার জন্য কোনো রাসায়নিক উপাদান (কীটনাশক) বা পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। লিউর কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পোকা খুব সহজেই ট্র্যাপে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু এর বিশেষ গঠনশৈলীর কারণে একবার প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। ফলে পোকাগুলো ওই ট্র্যাপের ভেতরে আটকা পড়ে এবং শেষে মারা যায়।

গবেষক ড. মঞ্জুর খান আরও জানান, এই ট্র্যাপের বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করা সম্ভব হবে। এতে তাঁদের কম কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে, ফলে ব্যয় কমবে এবং ফসলের গুণগত মান বজায় থাকার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা পাবে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এটি কুমড়া, লাউ, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম, পেয়ারা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফসলে সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।

এই গবেষক জানান, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) একটি সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সামনে এই ট্র্যাপের কার্যকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। এই ট্র্যাপের বিশেষত্ব হলো, এর ভেতরে থাকা লিউর দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর থাকে এবং প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বেশি সুবিধাজনক। তবে এর পেটেন্ট ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে এটি বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা যায়।

অধ্যাপক মঞ্জুর খান ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এই গবেষণা শুরু করেন। ২০২০ সালে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেন। এই ট্র্যাপ ব্যবহার করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অর্থায়নে নিরাপদ আম উৎপাদনে অধিকতর গবেষণা চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চূড়ান্ত হচ্ছে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, শিগগির ঘোষণা

প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়া সেই নেতাকে বহিষ্কার করল ছাত্রশিবির

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ফ্রিতে নৌকা না পেয়ে ভূমি অফিস সহকারীকে মারধর এসপির

এশিয়ার ১০টিসহ ৪৩ দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত