ভারতের ভিসা জটিলতা

এমআরসিপি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় ৪৪ চিকিৎসক

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৫১
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাজ্যের মেম্বারশিপ অব দ্য রয়্যাল কলেজেস অব ফিজিশিয়ানস (এমআরসিপি) পরীক্ষার তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্ব। এই পরীক্ষায় ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রে অংশ নেবেন বাংলাদেশি ৪৪ জন চিকিৎসক। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকদের কেউ অনলাইনে, আবার কেউ সরাসরি ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করলেও ভিসার বিষয়ে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। শুধু ভিসার কারণে এমআরসিপি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাঁদের।

রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস (আরসিপি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশসহ ১৯টি দেশের ৩৬টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কেন্দ্র পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন ৪৫ জন চিকিৎসক, আর ভারতের নয়টি বড় শহরের কেন্দ্রগুলোতে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় অংশ নেবেন বিভিন্ন দেশের ৪২০ জন চিকিৎসক। প্রতি পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে প্রার্থীকে আবেদনের সময় পছন্দের চারটি কেন্দ্রের নাম সংযুক্ত করা যায়। এরপর রয়্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আসন বণ্টন করে। সেই হিসাবে চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের ৪৪ জনের আসন পড়েছে ভারতের কেন্দ্রে।

এমআরসিপির তৃতীয় পর্বের পরীক্ষায় অংশ নেবেন এমন অন্তত পাঁচজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে রয়্যাল কলেজ থেকে প্রাপ্ত নিশ্চিতকরণ চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। ওই নিশ্চিতকরণ চিঠি সংযুক্ত করে তাঁরা ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। গত আগস্টের পর ভারতের ভিসার জন্য অনলাইন আবেদন বিভিন্ন সময় বন্ধ থাকায় তাঁদের কেউ সরাসরি সশরীরে ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করেছেন, আবার কেউ আবেদন করেছেন অনলাইনে। আবেদনের বিপরীতে ভিসা কেন্দ্র থেকে তাঁরা কোনো প্রাপ্তিস্বীকার পত্র কিংবা মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাননি। বিষয়টি জানিয়ে ভিসা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলও করেছেন তাঁদের কেউ কেউ। তবে এখন পর্যন্ত তাতেও সাড়া মেলেনি।

জানা যায়, প্রতিযোগিতামূলক এমআরসিপি পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য চিকিৎসক আবেদন করেন। তবে তাঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক আবেদনকারী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। প্রতি পরীক্ষার জন্য একজনকে ফি দিতে হয় ১ হাজার ২৭৮ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি ১ লাখ ৯২ হাজার টাকার বেশি। বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা সাধারণত ভারত, সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষার কেন্দ্র নিশ্চিত হওয়ার পর কোনো চিকিৎসক তাতে অংশ নিতে না পারলে ফি থেকে ৪০ শতাংশ টাকা কর্তন করা হয়।

এমআরসিপির তৃতীয় পর্বের পরীক্ষায় যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদেরই একজন ডা. সুদেষ্ণা চক্রবর্তী পূর্বা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস দ্বিতীয় পর্বের এই শিক্ষানবিশ চিকিৎসক জানান, তাঁর তৃতীয় পর্বের এমআরসিপির পরীক্ষা কেন্দ্র ভারতের হায়দরাবাদে। আগামী ২১ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার এক থেকে দেড় মাস আগে রয়্যাল কলেজ থেকে অ্যাডমিট কার্ড পাবেন তিনি। গত মাসে ভারতের ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে সরাসরি আবেদন করেছেন। এরপর ই-মেইলও করেছেন তিনি। তবে এখনো কোনো উত্তর মেলেনি ভারতের ভিসা কেন্দ্র থেকে।

ডা. সুদেষ্ণা চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই পরীক্ষা খুবই প্রতিযোগিতামূলক। আবেদন করলেই যে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মিলবে, এমনটি নয়। তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা দিতে ভারতে যেতে হবে। বাংলাদেশে সম্প্রতি তৃতীয় পর্বের পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে একটি কেন্দ্র হওয়ায় মাত্র ৪৫ জন চিকিৎসক তাতে সুযোগ পাচ্ছেন। আমি ডিসেম্বরে ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে আবেদনের হার্ড কপি জমা দিয়েছি। তারা কিছু বলেনি। এরপর ই-মেইল করেছি। এখনো কোনো উত্তর পাইনি।’

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের এমআরসিপি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. জিনাত রেহানা। তিনি তৃতীয় পর্বের পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র বাছাইয়ে চারটি পছন্দ দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ভারতে দুটি, একটি নেপালে এবং একটি বাংলাদেশে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও পরীক্ষার সুযোগ থাকলে আমি পছন্দ তালিকায় দিতাম। বাংলাদেশে একটিই কেন্দ্র। চারটি চয়েজ দেওয়ার সুযোগ থাকে। আমি দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা দিই ২০২২ সালে। এরপর থেকে লাগাতার চেষ্টা করে এ বছর সুযোগ পাই। খরচ, যাতায়াত বিবেচনায় আমি বাংলাদেশের বাইরে ভারত ও নেপালের জন্য চয়েজ পূরণ করেছিলাম।’

ভিসার জন্য গত নভেম্বরে আবেদন করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস দ্বিতীয় পর্বের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সালমান সাইফী। তিনি বলেন, ‘আমি গত মে মাসে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। এরপর তৃতীয় পর্বের জন্য আবেদন করি। আমার সিট পড়েছে হায়দরাবাদে। ভারতীয় ভিসার জন্য নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবেদন করি। তবে তারা কোনো রিপ্লে আমাকে জানায়নি। পরে ভারতীয় হাইকমিশনে আবারও যোগাযোগ করেছি। তারা কিছু পেপার নিয়ে যেতে বলেছে।’

চিকিৎসকেরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবে চিকিৎসকদের মর্যাদাপূর্ণ উচ্চতর ডিগ্রির পরীক্ষা এমআরসিপি। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি চিকিৎসক এমআরসিপিতে উত্তীর্ণ হয়ে যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা ভারতের বিভিন্ন শহরে আয়োজিত কেন্দ্রে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছেন। তবে এখন ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আগামী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত