Ajker Patrika

ওসি-এসআই-কনস্টেবল চক্র: আখাউড়া ইমিগ্রেশনে টাকা দিলে সব হয়

  • ভারতীয় নমিতা বাংলাদেশে ৫০ দিনের বেশি থাকার পরও ৯৫ হাজার টাকায় সীমান্ত পার।
  • বন্দরের সিসিটিভিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার দৃশ্য।
সাদ্দাম হোসেন, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) 
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৪৪
আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রহিম ও দেলোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রহিম ও দেলোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আগরতলার বাসিন্দা নমিতা বণিক। গত ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। তাঁর ভিসায় টানা ৬০ দিনের বেশি বাংলাদেশে অবস্থান করার সুযোগ ছিল। তবে তিনি ১ মাস ২০ দিন অবৈধভাবে বাংলাদেশে ছিলেন। দেশে ফেরার সময় আইনি পদক্ষেপ এড়াতে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ওসি মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ও এসআই আব্দুর রহিমকে ৯৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন নমিতা।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কম্পিউটার ডেটা এন্ট্রিতে দেখা যায়, ২ আগস্ট নমিতা আগরতলায় ফিরে যান। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফেরার এই সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার এসআই আব্দুর রহিমের আইডি থেকে।

এ তো গেল একটি ঘটনা। বন্দরের সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, ঘুষ লেনদেনের ঘটনা প্রায়শই এবং প্রকাশ্যে ঘটছে। এমনকি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে ঘুষ। আর তা দিতে না পারলে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আর সিন্ডিকেটের হোতা ওসি নিজেই। তাঁর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আরও কয়েকজন পুলিশসহ, ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে গত ২২ জুলাই হয়রানির শিকার হয়েছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দুই বাসিন্দা রুবেল মিয়াজি ও মোহাম্মদ ফেরদৌস। চিকিৎসা নিতে ভারতে যাওয়ার জন্য আখাউড়া ইমিগ্রেশনে গিয়েছিলেন তাঁরা। মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ‘ওই সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশের এসআই আব্দুর রহিম তাঁদের বলেন, তোমরা দিল্লি অ্যাম্বাসি ফেস করতে যাচ্ছ, আমি সব বুঝি। আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবা না।’ এরপর তিনি তাঁদের কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আব্দুর রহিম ভারতীয় ইমিগ্রেশনে কল করে তাঁদের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে দেন। পরে তাঁরা আগরতলায় পৌঁছালে সেখানকার ইমিগ্রেশন তাদের জানায়, আগে থেকেই তাঁদের তথ্য পাঠানো হয়েছে, তাই তাঁদের এন্ট্রি রিফিউজ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। আখাউড়া ইমিগ্রেশনে ফিরে আসার পর আব্দুর রহিম তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং পুনরায় মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা দিয়ে তাঁরা ছাড় পান।’

এ বিষয়ে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।’

তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৩ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে চারজন মেডিকেল ভিসাধারী ভারতে যাওয়ার জন্য আখাউড়া ইমিগ্রেশনে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন। কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন নিজেই তাঁদের পাসপোর্ট নিয়ে পুলিশের ব্যারাক রুমে গিয়ে এসআই আব্দুর রহিমের হাতে তুলে দেন এবং কাউন্টারে কোনো লাইনে না দাঁড়িয়েই তাঁদের সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। টাকা লেনদেন হয়েছে যাত্রীছাউনিতে বসে। ইমিগ্রেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মিলেছে সেই দৃশ্য।

সম্প্রতি ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত এক যাত্রীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আখাউড়া ইমিগ্রেশন পার করিয়ে দেন দেলোয়ার। অভিযোগ রয়েছে, তিনি উপপরিদর্শক হাবিবের আইডি ব্যবহার করে ওই যাত্রীর পাসপোর্টে সিল দেন। পরে বেনাপোলে তিনি ধরা পড়লে বিষয়টি স্পেশাল ব্রাঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘যাত্রী হয়রানি এবং ঘুষ নেওয়ার এই রকম অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধান করে পাওয়া গেলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিয়ম অনুযায়ী, কনস্টেবলের কাজ শুধু যাত্রীদের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সহায়তা দেওয়া। কিন্তু কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন তিন বছর ধরে নিয়মিত ইমিগ্রেশন ডেস্কে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি চোরাচালানি চক্র এবং ‘লাগেজ পার্টিদের’ সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে সুবিধা নিচ্ছেন। কনস্টেবল দেলোয়ার ও ইমিগ্রেশনের ওসি আব্দুস সাত্তার একই উপজেলার (মুরাদনগর) বাসিন্দা হওয়ায় তাঁদের প্রভাব বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এসআই আব্দুর রহিম।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।

টেকনাফের লেদা ডেভেলপমেন্ট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলম জানান, ক্যাম্পের এক বাসিন্দার ঘরে ফোনের চার্জার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ক্যাম্পের বাসিন্দারা আগুন নেভাতে কাজ করছে।

১৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ কাউছার সিকদার বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্ট সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে গিয়াস কাদেরের আসনে গোলাম আকবরকেও মনোনয়ন বিএনপির

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
গিয়াস উদ্দিন কাদের (বাঁয়ে), গোলাম আকবর। ছবি: সংগৃহীত
গিয়াস উদ্দিন কাদের (বাঁয়ে), গোলাম আকবর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপি হেভিওয়েট নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে এটি জানানো হয়।

একই আসনে ৪ ডিসেম্বর দলীয় প্রার্থী হিসেবে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন।

তাঁকে বাদ দেওয়ার কোনো রকম ঘোষণা না দিয়ে শেষ মুহূর্তে ওই আসনে আরেক নেতাকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়। তবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন, পরে একজনকে চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে যদিও প্রার্থী ঘোষণার আগে গোলাম আকবর খোন্দকার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়নের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

অপর দিকে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী জানান, রাউজানে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া কিংবা তাঁকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে দলীয়ভাবে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি।

গিয়াস উদ্দিন কাদের বলেন, ‘আমার জানামতে, আমিই রাউজানে বিএনপির প্রার্থী। কারণ, হাইকমান্ড প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছে, আমি টাকা জমা দিয়েছি, এরপর মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। এরপর আমি যথারীতি ইলেকশন কমিশন থেকে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছি।

‘ইনশা আল্লাহ আগামীকাল (সোমবার) রাউজানে সেটা আমি জমা দেব। আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বা অন্য কাউকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে কি না, আমি জানি না। কারণ, আমাকে দলীয়ভাবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। খুব সম্ভবত অলটারনেটিভ হিসেবে আরেকজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাউজান আসনে দুজনকেই মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। প্রত্যাহারের সময় একজনকে চূড়ান্ত করে আরেকজনকে প্রত্যাহার করতে বলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের সহযোগী কবির রিমান্ড শেষে কারাগারে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৬
গ্রেপ্তার কবির । ফাইল ছবি
গ্রেপ্তার কবির । ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী কবিরকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তাঁকে কারাগারে পাঠানোর এই নির্দেশ দেন।

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বিকেলে কবিরকে আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

২৩ ডিসেম্বর কবিরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর কবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

১৪ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে কবিরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তার কবির পটুয়াখালী সদরের টিটকাটা এলাকার মৃত মোজাফফরের ছেলে। তিনি রাজধানীর আদাবর থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের নবোদয় হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন।

শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রচার চালাচ্ছিলেন। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তাঁকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

হাদির গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদি মৃত্যুবরণ করার পর মামলাটি পরে হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় রিমান্ডে ৬

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ফাইল ছবি
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ফাইল ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় ছয়জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে নেওয়া ছয়জন হলেন—শাহিন ওরফে আবু বকর ওরফে মুসা, মো. আমিনুর ওরফে দরজি আমিন, মো. শাফিয়ার রহমান ফকির, আছিয়া বেগম (পলাতক আসামি ও ওই মাদ্রাসার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আল আমিনের স্ত্রী), ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুন ওরফে আসমা। তাঁদের মধ্যে পুরুষদের ৭ দিন করে এবং নারী আসামিদের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

হাসনাবাদের চার কক্ষের একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচালিত উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় গত শুক্রবার সকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে দুটি কক্ষের দেয়াল ও ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। আহত হন চারজন। পুলিশ সেখান থেকে ককটেল, রাসায়নিক, বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করে।

ওই মাদ্রাসার পরিচালক শেখ আল আমিন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়িটির একটি কক্ষে থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তিনি ২০১৭ ও ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ শনিবার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার ছয়জনকে আজ আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসমানী খাতুন এর আগেও জঙ্গিসম্পৃক্ততার অভিযোগে কারাগারে ছিলেন। শাহিনের বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা রয়েছে।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম। তিনি দাবি করেন, তাঁর স্বামী এক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। স্বামী তাঁকে নির্যাতন করতেন। স্বামী অপরাধ করে থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁরা নির্দোষ। তাঁর (আছিয়ার) ভাইয়ের স্ত্রী আসমানী শুধু তাঁদের দেখতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এ মামলায় আসমানী খাতুন ছাড়া অন্য আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আসমানীর আইনজীবী আদালতে বলেন, আগের মামলায় কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেই আসমানী খাতুন খালাস পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকে এই মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার মতো উপাদান নেই। এ ঘটনার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত