আব্দুর রহমান

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের এই বদ্বীপ ঘিরে স্বার্থ ও কৌশলের পুনর্বিন্যাস আনছে। আর এই কৌশলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পাকিস্তান।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। সীমান্ত চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তযোগাযোগ প্রকল্প, এমনকি আন্তনদী পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও উভয় দেশ কাজ করেছে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে তাঁর সরকারের সম্পর্কের মাত্রা তুলে ধরতে ২০১৮ সালের ৩০ মে বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তারা সারা জীবন মনে রাখবে!’
দিল্লি শেখ হাসিনাকে একটি ‘স্থিতিশীল সম্পর্কের’ প্রতীক হিসেবে দেখত। ভারতের পূর্বে তাকানোর নীতির অন্যতম বিন্দু ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা ভারতের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহেন্দ্র বেদ ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশে রাজনীতির দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখলেও, বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পালাবদল ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর সম্পর্কের সমীকরণ আমূল বদলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে রক্তক্ষয়ী বিচ্ছেদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পাল্টে দিয়েছিল। গত বছরের পালাবদলে মানচিত্র না বদলালেও, বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের অনেকটাই ঘনিষ্ঠ এবং আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে চীনের সঙ্গে। আর চীন এখন ভারতের চারপাশে প্রভাব বিস্তারের কৌশলে রত।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল; বিশেষ করে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করে তারা শেখ হাসিনা সরকারকে চাপ দেয়। ওয়াশিংটনের জন্য বাংলাদেশের বিষয়টি কেবল মানবাধিকার নয়, বরং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। চীনের প্রভাব প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষিণ এশিয়ায় মিত্র বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে—যার মধ্যে নতুন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আগ্রহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
সে সময় মার্কিন সহকারী ট্রেজারি সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাসের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা করতে পারবে এবং অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ও বর্ধিত সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।’
পরে ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলে আবার ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ খুলে যায়। গত জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে চলতি আগস্টের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে সরাসরি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনায় কেবল বাণিজ্য নয়, ভূরাজনৈতিক বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নীতির দিকনির্দেশনার মতো বিষয়ও ছিল আলোচনার পরিধিতে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই দিকগুলো ঘিরেই কাঠামোগত আলোচনা শুরু হয়েছে। সে সময় সূত্র জানিয়েছিল, ওয়াশিংটন চায়, বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট কৌশলগত নীতিগত পথ অনুসরণ করুক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, ‘সরকারের প্রতি সমর্থন এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার চেয়ে ওয়াশিংটনের প্রতি বেশি ইতিবাচক।’
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
কিন বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) কেবল ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করেছে, যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মতোই এবং ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কম।’ এই ফল ঢাকাকে ‘অনেকটা স্বস্তি’ দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অ্যাডজাঙ্কট রিসার্চ ফেলো মুবাশ্বির হাসান ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ‘ব্যাপক পরিবর্তনের’ চেয়ে ধারাবাহিকতাই বেশি দেখছেন। তিনিও ওয়াশিংটনে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান মার্কিন সরকার বাংলাদেশের প্রতি ততটা বৈরী নয়।
চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নজর রাখলেও সরাসরি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি; বরং দেশটি দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে কর্ণফুলী টানেল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
চীনা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ থাকতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সামাজিক চেতনা ‘পুনর্গঠন’ করে এমন একটি ‘অনুগত’ অংশীদার তৈরি করতে পারে, যা পশ্চিমা মূল্যবোধের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের আশঙ্কা, এটি এই অঞ্চলে তার প্রধান কৌশলগত স্বার্থে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রথমত, এটি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে বাণিজ্য হ্রাস, পণ্য পরিবহনে বাধা এবং লজিস্টিক খরচ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। বর্তমান পরিবর্তনগুলো যদি কোনো কারণে চীনা স্বার্থের বিপরীতে যায়, তাহলে হয়তো এসব প্রকল্প বিলম্ব, এমনকি বাতিল হতে পারে।
ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি চীন ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারে, তাহলে দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে (বিআরআই) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশে বিআরআই স্থবির হয়ে আছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে, এটি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে বাংলাদেশের প্রতি বেইজিংয়ের পূর্বের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশে চীনা-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করছেন এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের আশঙ্কা থাকতে পারে যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপকতর উপস্থিতি চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হতে পারে। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মালাক্কা প্রণালির ওপরই অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, বরং মিয়ানমারের জটিল রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে মিয়ানমারের কায়াকফিউ বন্দরের পরিবহন লাইনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ভারত মহাসাগর নিয়ে চীনা পরিকল্পনায় বড় বাধা সৃষ্টি করবে। কিছু চীনা পর্যবেক্ষক আরও মনে করেন, বাংলাদেশে যেকোনো মার্কিন সামরিক উপস্থিতি চীন-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
বাংলাদেশও চীনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই বজায় রেখেছে। চলতি বছরের মার্চে ড. ইউনূস তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান। সাধারণত, বাংলাদেশের সরকারপ্রধানেরা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতকেই বেছে নেন। কিন্তু ড. ইউনূস ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঐতিহ্য থেকে সরে আসেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন সফরের আগে ভারতের সফরের জন্য যোগাযোগ করা হলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে থমাস কিন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশ ও চীন তাদের সম্পর্ক জোরদার করছে।’ তিনি বলেন, ‘বেইজিং বুঝতে পেরেছে যে ঢাকায় একটি কৌশলগত সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আগে ছিল না।’ তাঁর মতে, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ‘তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন লাভের জন্য সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো জোশুয়া কুরলান্টজিক উল্লেখ করেন, যদিও হাসিনা বেইজিংয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, তবে ড. ইউনূস সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছেন।
তবে মুবাশ্বির হাসান জোর দিয়ে বলেন, এই সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বেইজিং ‘এটা বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন তহবিল প্রয়োজন...এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চাহিদা আছে এবং বেইজিং এমন একটি অংশীদার, যারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবন একটি কৌশলগত বার্তা বহন করে। একসময়ের তিক্ত সম্পর্কের সেই ইতিহাস থেকে অনেকটাই সরে এসে নতুন সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে নরম সম্পর্ক গড়ছে। বাণিজ্য, ধর্মভিত্তিক কূটনীতি এবং আঞ্চলিক ফোরামে (যেমন ডি-৮) সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক এগোচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি ভারতের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তারা মনে করছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে একটি নতুন কৌশলগত অক্ষের দিকে যাচ্ছে; যা ভারতীয় কূটনীতির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে এই দুই দেশেরই ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারত এটি নিয়ে খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়েও অবগত। বিষয়টি নয়াদিল্লির কর্তাব্যক্তিদের খুবই মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হওয়ার বিষয়ে মহেন্দ্র বেদ বলেন, ‘চীন একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পাকিস্তানের অলওয়েদার অ্যালাই বা পরীক্ষিত মিত্র হিসেবে পরিচিত। সেই চীনই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যেমনই থাকুক, ঢাকা এখন চীন ও পাকিস্তানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই জিরো-সাম গেম ভারতকে তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতিতে চাপে ফেলছে।’
ভারতীয় বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারত অর্থনৈতিকভাবে বড় হলেও বাংলাদেশকে দেওয়া রপ্তানি সুবিধার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে নয়াদিল্লিতে সন্দেহ দানা বাঁধছে। কারণ, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ হলেও ভারতের ওপর আরোপ করা হয়েছে ২৫ শতাংশ এবং আরও ‘পেনাল্টি’ আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতার অন্দরমহলে ধারণা আছে যে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই বাড়তি নজর জো বাইডেনের আমল থেকেই শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন এক নতুন বলয়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—নীতির বাস্তবায়নে এখন একাধিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে, কিন্তু কোনো শিবিরে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিভাষায় এটিকে ‘হেজিং’ কৌশল বলা হয়। এই কৌশল অল্প কয়েকটি দেশ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে, বাংলাদেশ সরকার সে চেষ্টাই করছে।
কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন কোনো পক্ষে হেলে পড়ছে না। যেমন চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা গ্রহণ করলেও সামরিক বা কৌশলগত বলয়ে একীভূত হচ্ছে না। এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি সচেতন ভারসাম্য কৌশল। বাংলাদেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো কৌশলগত জোটে যোগ দিচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো দেখা যায়নি, যদিও এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
কুরলান্টজিক বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোনো কৌশলগত জোট গঠন করবে। তাদের তো এমন কোনো নির্বাচিত সরকারও নেই, যারা এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ কিনও তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, এমন কোনো জোট হলে তা ভারতের জন্য একটি ‘রেড লাইন’ বা বিপৎসীমা হবে।
কিন বাংলাদেশের বর্তমান পদক্ষেপগুলোকে দিল্লির ‘বৈরী মনোভাবের’ জবাবে একটি কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা হিসেবে দেখছেন। কিন আরও বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
এই অবস্থানই প্রতিধ্বনিত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কথা থেকে। গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকাকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে; কারণ, বাংলাদেশের রক্ষা করার মতো স্বার্থ রয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে একটি বড় খেলোয়াড় নয়।’
তবে বাংলাদেশের এই ভারসাম্য রক্ষার পথ খুব সহজ নয়। একদিকে ভারতের মনোভাব পরিবর্তন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈরীভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা, সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের জটিলতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এখন অনেক বেশি জটিল ও সংবেদনশীল।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা, আনাদোলু এজেন্সি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রয়টার্স ও দ্য ডন
আরও খবর পড়ুন:

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের এই বদ্বীপ ঘিরে স্বার্থ ও কৌশলের পুনর্বিন্যাস আনছে। আর এই কৌশলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পাকিস্তান।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। সীমান্ত চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তযোগাযোগ প্রকল্প, এমনকি আন্তনদী পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও উভয় দেশ কাজ করেছে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে তাঁর সরকারের সম্পর্কের মাত্রা তুলে ধরতে ২০১৮ সালের ৩০ মে বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তারা সারা জীবন মনে রাখবে!’
দিল্লি শেখ হাসিনাকে একটি ‘স্থিতিশীল সম্পর্কের’ প্রতীক হিসেবে দেখত। ভারতের পূর্বে তাকানোর নীতির অন্যতম বিন্দু ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা ভারতের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহেন্দ্র বেদ ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশে রাজনীতির দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখলেও, বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পালাবদল ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর সম্পর্কের সমীকরণ আমূল বদলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে রক্তক্ষয়ী বিচ্ছেদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পাল্টে দিয়েছিল। গত বছরের পালাবদলে মানচিত্র না বদলালেও, বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের অনেকটাই ঘনিষ্ঠ এবং আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে চীনের সঙ্গে। আর চীন এখন ভারতের চারপাশে প্রভাব বিস্তারের কৌশলে রত।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল; বিশেষ করে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করে তারা শেখ হাসিনা সরকারকে চাপ দেয়। ওয়াশিংটনের জন্য বাংলাদেশের বিষয়টি কেবল মানবাধিকার নয়, বরং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। চীনের প্রভাব প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষিণ এশিয়ায় মিত্র বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে—যার মধ্যে নতুন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আগ্রহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
সে সময় মার্কিন সহকারী ট্রেজারি সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাসের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা করতে পারবে এবং অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ও বর্ধিত সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।’
পরে ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলে আবার ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ খুলে যায়। গত জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে চলতি আগস্টের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে সরাসরি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনায় কেবল বাণিজ্য নয়, ভূরাজনৈতিক বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নীতির দিকনির্দেশনার মতো বিষয়ও ছিল আলোচনার পরিধিতে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই দিকগুলো ঘিরেই কাঠামোগত আলোচনা শুরু হয়েছে। সে সময় সূত্র জানিয়েছিল, ওয়াশিংটন চায়, বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট কৌশলগত নীতিগত পথ অনুসরণ করুক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, ‘সরকারের প্রতি সমর্থন এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার চেয়ে ওয়াশিংটনের প্রতি বেশি ইতিবাচক।’
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
কিন বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) কেবল ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করেছে, যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মতোই এবং ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কম।’ এই ফল ঢাকাকে ‘অনেকটা স্বস্তি’ দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অ্যাডজাঙ্কট রিসার্চ ফেলো মুবাশ্বির হাসান ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ‘ব্যাপক পরিবর্তনের’ চেয়ে ধারাবাহিকতাই বেশি দেখছেন। তিনিও ওয়াশিংটনে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান মার্কিন সরকার বাংলাদেশের প্রতি ততটা বৈরী নয়।
চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নজর রাখলেও সরাসরি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি; বরং দেশটি দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে কর্ণফুলী টানেল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
চীনা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ থাকতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সামাজিক চেতনা ‘পুনর্গঠন’ করে এমন একটি ‘অনুগত’ অংশীদার তৈরি করতে পারে, যা পশ্চিমা মূল্যবোধের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের আশঙ্কা, এটি এই অঞ্চলে তার প্রধান কৌশলগত স্বার্থে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রথমত, এটি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে বাণিজ্য হ্রাস, পণ্য পরিবহনে বাধা এবং লজিস্টিক খরচ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। বর্তমান পরিবর্তনগুলো যদি কোনো কারণে চীনা স্বার্থের বিপরীতে যায়, তাহলে হয়তো এসব প্রকল্প বিলম্ব, এমনকি বাতিল হতে পারে।
ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি চীন ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারে, তাহলে দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে (বিআরআই) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশে বিআরআই স্থবির হয়ে আছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে, এটি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে বাংলাদেশের প্রতি বেইজিংয়ের পূর্বের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশে চীনা-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করছেন এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের আশঙ্কা থাকতে পারে যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপকতর উপস্থিতি চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হতে পারে। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মালাক্কা প্রণালির ওপরই অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, বরং মিয়ানমারের জটিল রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে মিয়ানমারের কায়াকফিউ বন্দরের পরিবহন লাইনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ভারত মহাসাগর নিয়ে চীনা পরিকল্পনায় বড় বাধা সৃষ্টি করবে। কিছু চীনা পর্যবেক্ষক আরও মনে করেন, বাংলাদেশে যেকোনো মার্কিন সামরিক উপস্থিতি চীন-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
বাংলাদেশও চীনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই বজায় রেখেছে। চলতি বছরের মার্চে ড. ইউনূস তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান। সাধারণত, বাংলাদেশের সরকারপ্রধানেরা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতকেই বেছে নেন। কিন্তু ড. ইউনূস ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঐতিহ্য থেকে সরে আসেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন সফরের আগে ভারতের সফরের জন্য যোগাযোগ করা হলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে থমাস কিন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশ ও চীন তাদের সম্পর্ক জোরদার করছে।’ তিনি বলেন, ‘বেইজিং বুঝতে পেরেছে যে ঢাকায় একটি কৌশলগত সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আগে ছিল না।’ তাঁর মতে, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ‘তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন লাভের জন্য সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো জোশুয়া কুরলান্টজিক উল্লেখ করেন, যদিও হাসিনা বেইজিংয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, তবে ড. ইউনূস সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছেন।
তবে মুবাশ্বির হাসান জোর দিয়ে বলেন, এই সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বেইজিং ‘এটা বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন তহবিল প্রয়োজন...এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চাহিদা আছে এবং বেইজিং এমন একটি অংশীদার, যারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবন একটি কৌশলগত বার্তা বহন করে। একসময়ের তিক্ত সম্পর্কের সেই ইতিহাস থেকে অনেকটাই সরে এসে নতুন সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে নরম সম্পর্ক গড়ছে। বাণিজ্য, ধর্মভিত্তিক কূটনীতি এবং আঞ্চলিক ফোরামে (যেমন ডি-৮) সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক এগোচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি ভারতের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তারা মনে করছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে একটি নতুন কৌশলগত অক্ষের দিকে যাচ্ছে; যা ভারতীয় কূটনীতির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে এই দুই দেশেরই ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারত এটি নিয়ে খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়েও অবগত। বিষয়টি নয়াদিল্লির কর্তাব্যক্তিদের খুবই মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হওয়ার বিষয়ে মহেন্দ্র বেদ বলেন, ‘চীন একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পাকিস্তানের অলওয়েদার অ্যালাই বা পরীক্ষিত মিত্র হিসেবে পরিচিত। সেই চীনই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যেমনই থাকুক, ঢাকা এখন চীন ও পাকিস্তানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই জিরো-সাম গেম ভারতকে তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতিতে চাপে ফেলছে।’
ভারতীয় বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারত অর্থনৈতিকভাবে বড় হলেও বাংলাদেশকে দেওয়া রপ্তানি সুবিধার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে নয়াদিল্লিতে সন্দেহ দানা বাঁধছে। কারণ, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ হলেও ভারতের ওপর আরোপ করা হয়েছে ২৫ শতাংশ এবং আরও ‘পেনাল্টি’ আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতার অন্দরমহলে ধারণা আছে যে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই বাড়তি নজর জো বাইডেনের আমল থেকেই শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন এক নতুন বলয়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—নীতির বাস্তবায়নে এখন একাধিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে, কিন্তু কোনো শিবিরে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিভাষায় এটিকে ‘হেজিং’ কৌশল বলা হয়। এই কৌশল অল্প কয়েকটি দেশ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে, বাংলাদেশ সরকার সে চেষ্টাই করছে।
কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন কোনো পক্ষে হেলে পড়ছে না। যেমন চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা গ্রহণ করলেও সামরিক বা কৌশলগত বলয়ে একীভূত হচ্ছে না। এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি সচেতন ভারসাম্য কৌশল। বাংলাদেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো কৌশলগত জোটে যোগ দিচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো দেখা যায়নি, যদিও এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
কুরলান্টজিক বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোনো কৌশলগত জোট গঠন করবে। তাদের তো এমন কোনো নির্বাচিত সরকারও নেই, যারা এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ কিনও তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, এমন কোনো জোট হলে তা ভারতের জন্য একটি ‘রেড লাইন’ বা বিপৎসীমা হবে।
কিন বাংলাদেশের বর্তমান পদক্ষেপগুলোকে দিল্লির ‘বৈরী মনোভাবের’ জবাবে একটি কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা হিসেবে দেখছেন। কিন আরও বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
এই অবস্থানই প্রতিধ্বনিত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কথা থেকে। গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকাকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে; কারণ, বাংলাদেশের রক্ষা করার মতো স্বার্থ রয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে একটি বড় খেলোয়াড় নয়।’
তবে বাংলাদেশের এই ভারসাম্য রক্ষার পথ খুব সহজ নয়। একদিকে ভারতের মনোভাব পরিবর্তন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈরীভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা, সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের জটিলতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এখন অনেক বেশি জটিল ও সংবেদনশীল।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা, আনাদোলু এজেন্সি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রয়টার্স ও দ্য ডন
আরও খবর পড়ুন:
আব্দুর রহমান

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের এই বদ্বীপ ঘিরে স্বার্থ ও কৌশলের পুনর্বিন্যাস আনছে। আর এই কৌশলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পাকিস্তান।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। সীমান্ত চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তযোগাযোগ প্রকল্প, এমনকি আন্তনদী পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও উভয় দেশ কাজ করেছে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে তাঁর সরকারের সম্পর্কের মাত্রা তুলে ধরতে ২০১৮ সালের ৩০ মে বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তারা সারা জীবন মনে রাখবে!’
দিল্লি শেখ হাসিনাকে একটি ‘স্থিতিশীল সম্পর্কের’ প্রতীক হিসেবে দেখত। ভারতের পূর্বে তাকানোর নীতির অন্যতম বিন্দু ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা ভারতের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহেন্দ্র বেদ ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশে রাজনীতির দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখলেও, বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পালাবদল ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর সম্পর্কের সমীকরণ আমূল বদলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে রক্তক্ষয়ী বিচ্ছেদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পাল্টে দিয়েছিল। গত বছরের পালাবদলে মানচিত্র না বদলালেও, বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের অনেকটাই ঘনিষ্ঠ এবং আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে চীনের সঙ্গে। আর চীন এখন ভারতের চারপাশে প্রভাব বিস্তারের কৌশলে রত।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল; বিশেষ করে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করে তারা শেখ হাসিনা সরকারকে চাপ দেয়। ওয়াশিংটনের জন্য বাংলাদেশের বিষয়টি কেবল মানবাধিকার নয়, বরং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। চীনের প্রভাব প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষিণ এশিয়ায় মিত্র বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে—যার মধ্যে নতুন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আগ্রহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
সে সময় মার্কিন সহকারী ট্রেজারি সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাসের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা করতে পারবে এবং অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ও বর্ধিত সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।’
পরে ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলে আবার ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ খুলে যায়। গত জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে চলতি আগস্টের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে সরাসরি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনায় কেবল বাণিজ্য নয়, ভূরাজনৈতিক বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নীতির দিকনির্দেশনার মতো বিষয়ও ছিল আলোচনার পরিধিতে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই দিকগুলো ঘিরেই কাঠামোগত আলোচনা শুরু হয়েছে। সে সময় সূত্র জানিয়েছিল, ওয়াশিংটন চায়, বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট কৌশলগত নীতিগত পথ অনুসরণ করুক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, ‘সরকারের প্রতি সমর্থন এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার চেয়ে ওয়াশিংটনের প্রতি বেশি ইতিবাচক।’
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
কিন বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) কেবল ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করেছে, যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মতোই এবং ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কম।’ এই ফল ঢাকাকে ‘অনেকটা স্বস্তি’ দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অ্যাডজাঙ্কট রিসার্চ ফেলো মুবাশ্বির হাসান ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ‘ব্যাপক পরিবর্তনের’ চেয়ে ধারাবাহিকতাই বেশি দেখছেন। তিনিও ওয়াশিংটনে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান মার্কিন সরকার বাংলাদেশের প্রতি ততটা বৈরী নয়।
চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নজর রাখলেও সরাসরি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি; বরং দেশটি দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে কর্ণফুলী টানেল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
চীনা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ থাকতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সামাজিক চেতনা ‘পুনর্গঠন’ করে এমন একটি ‘অনুগত’ অংশীদার তৈরি করতে পারে, যা পশ্চিমা মূল্যবোধের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের আশঙ্কা, এটি এই অঞ্চলে তার প্রধান কৌশলগত স্বার্থে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রথমত, এটি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে বাণিজ্য হ্রাস, পণ্য পরিবহনে বাধা এবং লজিস্টিক খরচ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। বর্তমান পরিবর্তনগুলো যদি কোনো কারণে চীনা স্বার্থের বিপরীতে যায়, তাহলে হয়তো এসব প্রকল্প বিলম্ব, এমনকি বাতিল হতে পারে।
ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি চীন ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারে, তাহলে দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে (বিআরআই) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশে বিআরআই স্থবির হয়ে আছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে, এটি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে বাংলাদেশের প্রতি বেইজিংয়ের পূর্বের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশে চীনা-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করছেন এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের আশঙ্কা থাকতে পারে যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপকতর উপস্থিতি চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হতে পারে। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মালাক্কা প্রণালির ওপরই অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, বরং মিয়ানমারের জটিল রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে মিয়ানমারের কায়াকফিউ বন্দরের পরিবহন লাইনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ভারত মহাসাগর নিয়ে চীনা পরিকল্পনায় বড় বাধা সৃষ্টি করবে। কিছু চীনা পর্যবেক্ষক আরও মনে করেন, বাংলাদেশে যেকোনো মার্কিন সামরিক উপস্থিতি চীন-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
বাংলাদেশও চীনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই বজায় রেখেছে। চলতি বছরের মার্চে ড. ইউনূস তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান। সাধারণত, বাংলাদেশের সরকারপ্রধানেরা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতকেই বেছে নেন। কিন্তু ড. ইউনূস ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঐতিহ্য থেকে সরে আসেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন সফরের আগে ভারতের সফরের জন্য যোগাযোগ করা হলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে থমাস কিন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশ ও চীন তাদের সম্পর্ক জোরদার করছে।’ তিনি বলেন, ‘বেইজিং বুঝতে পেরেছে যে ঢাকায় একটি কৌশলগত সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আগে ছিল না।’ তাঁর মতে, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ‘তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন লাভের জন্য সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো জোশুয়া কুরলান্টজিক উল্লেখ করেন, যদিও হাসিনা বেইজিংয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, তবে ড. ইউনূস সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছেন।
তবে মুবাশ্বির হাসান জোর দিয়ে বলেন, এই সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বেইজিং ‘এটা বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন তহবিল প্রয়োজন...এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চাহিদা আছে এবং বেইজিং এমন একটি অংশীদার, যারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবন একটি কৌশলগত বার্তা বহন করে। একসময়ের তিক্ত সম্পর্কের সেই ইতিহাস থেকে অনেকটাই সরে এসে নতুন সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে নরম সম্পর্ক গড়ছে। বাণিজ্য, ধর্মভিত্তিক কূটনীতি এবং আঞ্চলিক ফোরামে (যেমন ডি-৮) সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক এগোচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি ভারতের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তারা মনে করছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে একটি নতুন কৌশলগত অক্ষের দিকে যাচ্ছে; যা ভারতীয় কূটনীতির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে এই দুই দেশেরই ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারত এটি নিয়ে খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়েও অবগত। বিষয়টি নয়াদিল্লির কর্তাব্যক্তিদের খুবই মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হওয়ার বিষয়ে মহেন্দ্র বেদ বলেন, ‘চীন একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পাকিস্তানের অলওয়েদার অ্যালাই বা পরীক্ষিত মিত্র হিসেবে পরিচিত। সেই চীনই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যেমনই থাকুক, ঢাকা এখন চীন ও পাকিস্তানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই জিরো-সাম গেম ভারতকে তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতিতে চাপে ফেলছে।’
ভারতীয় বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারত অর্থনৈতিকভাবে বড় হলেও বাংলাদেশকে দেওয়া রপ্তানি সুবিধার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে নয়াদিল্লিতে সন্দেহ দানা বাঁধছে। কারণ, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ হলেও ভারতের ওপর আরোপ করা হয়েছে ২৫ শতাংশ এবং আরও ‘পেনাল্টি’ আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতার অন্দরমহলে ধারণা আছে যে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই বাড়তি নজর জো বাইডেনের আমল থেকেই শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন এক নতুন বলয়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—নীতির বাস্তবায়নে এখন একাধিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে, কিন্তু কোনো শিবিরে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিভাষায় এটিকে ‘হেজিং’ কৌশল বলা হয়। এই কৌশল অল্প কয়েকটি দেশ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে, বাংলাদেশ সরকার সে চেষ্টাই করছে।
কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন কোনো পক্ষে হেলে পড়ছে না। যেমন চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা গ্রহণ করলেও সামরিক বা কৌশলগত বলয়ে একীভূত হচ্ছে না। এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি সচেতন ভারসাম্য কৌশল। বাংলাদেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো কৌশলগত জোটে যোগ দিচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো দেখা যায়নি, যদিও এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
কুরলান্টজিক বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোনো কৌশলগত জোট গঠন করবে। তাদের তো এমন কোনো নির্বাচিত সরকারও নেই, যারা এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ কিনও তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, এমন কোনো জোট হলে তা ভারতের জন্য একটি ‘রেড লাইন’ বা বিপৎসীমা হবে।
কিন বাংলাদেশের বর্তমান পদক্ষেপগুলোকে দিল্লির ‘বৈরী মনোভাবের’ জবাবে একটি কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা হিসেবে দেখছেন। কিন আরও বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
এই অবস্থানই প্রতিধ্বনিত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কথা থেকে। গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকাকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে; কারণ, বাংলাদেশের রক্ষা করার মতো স্বার্থ রয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে একটি বড় খেলোয়াড় নয়।’
তবে বাংলাদেশের এই ভারসাম্য রক্ষার পথ খুব সহজ নয়। একদিকে ভারতের মনোভাব পরিবর্তন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈরীভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা, সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের জটিলতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এখন অনেক বেশি জটিল ও সংবেদনশীল।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা, আনাদোলু এজেন্সি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রয়টার্স ও দ্য ডন
আরও খবর পড়ুন:

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের এই বদ্বীপ ঘিরে স্বার্থ ও কৌশলের পুনর্বিন্যাস আনছে। আর এই কৌশলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পাকিস্তান।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। সীমান্ত চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তযোগাযোগ প্রকল্প, এমনকি আন্তনদী পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও উভয় দেশ কাজ করেছে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে তাঁর সরকারের সম্পর্কের মাত্রা তুলে ধরতে ২০১৮ সালের ৩০ মে বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তারা সারা জীবন মনে রাখবে!’
দিল্লি শেখ হাসিনাকে একটি ‘স্থিতিশীল সম্পর্কের’ প্রতীক হিসেবে দেখত। ভারতের পূর্বে তাকানোর নীতির অন্যতম বিন্দু ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা ভারতের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহেন্দ্র বেদ ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশে রাজনীতির দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখলেও, বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পালাবদল ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর সম্পর্কের সমীকরণ আমূল বদলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে রক্তক্ষয়ী বিচ্ছেদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পাল্টে দিয়েছিল। গত বছরের পালাবদলে মানচিত্র না বদলালেও, বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের অনেকটাই ঘনিষ্ঠ এবং আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে চীনের সঙ্গে। আর চীন এখন ভারতের চারপাশে প্রভাব বিস্তারের কৌশলে রত।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল; বিশেষ করে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করে তারা শেখ হাসিনা সরকারকে চাপ দেয়। ওয়াশিংটনের জন্য বাংলাদেশের বিষয়টি কেবল মানবাধিকার নয়, বরং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। চীনের প্রভাব প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষিণ এশিয়ায় মিত্র বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে—যার মধ্যে নতুন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আগ্রহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
সে সময় মার্কিন সহকারী ট্রেজারি সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাসের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা করতে পারবে এবং অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ও বর্ধিত সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।’
পরে ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলে আবার ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ খুলে যায়। গত জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে চলতি আগস্টের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে সরাসরি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনায় কেবল বাণিজ্য নয়, ভূরাজনৈতিক বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নীতির দিকনির্দেশনার মতো বিষয়ও ছিল আলোচনার পরিধিতে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই দিকগুলো ঘিরেই কাঠামোগত আলোচনা শুরু হয়েছে। সে সময় সূত্র জানিয়েছিল, ওয়াশিংটন চায়, বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট কৌশলগত নীতিগত পথ অনুসরণ করুক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, ‘সরকারের প্রতি সমর্থন এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার চেয়ে ওয়াশিংটনের প্রতি বেশি ইতিবাচক।’
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
কিন বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) কেবল ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করেছে, যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মতোই এবং ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কম।’ এই ফল ঢাকাকে ‘অনেকটা স্বস্তি’ দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অ্যাডজাঙ্কট রিসার্চ ফেলো মুবাশ্বির হাসান ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ‘ব্যাপক পরিবর্তনের’ চেয়ে ধারাবাহিকতাই বেশি দেখছেন। তিনিও ওয়াশিংটনে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান মার্কিন সরকার বাংলাদেশের প্রতি ততটা বৈরী নয়।
চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নজর রাখলেও সরাসরি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি; বরং দেশটি দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে কর্ণফুলী টানেল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
চীনা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ থাকতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সামাজিক চেতনা ‘পুনর্গঠন’ করে এমন একটি ‘অনুগত’ অংশীদার তৈরি করতে পারে, যা পশ্চিমা মূল্যবোধের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের আশঙ্কা, এটি এই অঞ্চলে তার প্রধান কৌশলগত স্বার্থে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রথমত, এটি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে বাণিজ্য হ্রাস, পণ্য পরিবহনে বাধা এবং লজিস্টিক খরচ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। বর্তমান পরিবর্তনগুলো যদি কোনো কারণে চীনা স্বার্থের বিপরীতে যায়, তাহলে হয়তো এসব প্রকল্প বিলম্ব, এমনকি বাতিল হতে পারে।
ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি চীন ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারে, তাহলে দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে (বিআরআই) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশে বিআরআই স্থবির হয়ে আছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে, এটি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে বাংলাদেশের প্রতি বেইজিংয়ের পূর্বের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশে চীনা-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করছেন এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের আশঙ্কা থাকতে পারে যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপকতর উপস্থিতি চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হতে পারে। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মালাক্কা প্রণালির ওপরই অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, বরং মিয়ানমারের জটিল রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে মিয়ানমারের কায়াকফিউ বন্দরের পরিবহন লাইনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ভারত মহাসাগর নিয়ে চীনা পরিকল্পনায় বড় বাধা সৃষ্টি করবে। কিছু চীনা পর্যবেক্ষক আরও মনে করেন, বাংলাদেশে যেকোনো মার্কিন সামরিক উপস্থিতি চীন-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
বাংলাদেশও চীনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই বজায় রেখেছে। চলতি বছরের মার্চে ড. ইউনূস তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান। সাধারণত, বাংলাদেশের সরকারপ্রধানেরা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতকেই বেছে নেন। কিন্তু ড. ইউনূস ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঐতিহ্য থেকে সরে আসেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন সফরের আগে ভারতের সফরের জন্য যোগাযোগ করা হলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে থমাস কিন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশ ও চীন তাদের সম্পর্ক জোরদার করছে।’ তিনি বলেন, ‘বেইজিং বুঝতে পেরেছে যে ঢাকায় একটি কৌশলগত সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আগে ছিল না।’ তাঁর মতে, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ‘তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন লাভের জন্য সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো জোশুয়া কুরলান্টজিক উল্লেখ করেন, যদিও হাসিনা বেইজিংয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, তবে ড. ইউনূস সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছেন।
তবে মুবাশ্বির হাসান জোর দিয়ে বলেন, এই সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বেইজিং ‘এটা বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন তহবিল প্রয়োজন...এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চাহিদা আছে এবং বেইজিং এমন একটি অংশীদার, যারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবন একটি কৌশলগত বার্তা বহন করে। একসময়ের তিক্ত সম্পর্কের সেই ইতিহাস থেকে অনেকটাই সরে এসে নতুন সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে নরম সম্পর্ক গড়ছে। বাণিজ্য, ধর্মভিত্তিক কূটনীতি এবং আঞ্চলিক ফোরামে (যেমন ডি-৮) সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক এগোচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি ভারতের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তারা মনে করছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে একটি নতুন কৌশলগত অক্ষের দিকে যাচ্ছে; যা ভারতীয় কূটনীতির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে এই দুই দেশেরই ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারত এটি নিয়ে খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়েও অবগত। বিষয়টি নয়াদিল্লির কর্তাব্যক্তিদের খুবই মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হওয়ার বিষয়ে মহেন্দ্র বেদ বলেন, ‘চীন একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পাকিস্তানের অলওয়েদার অ্যালাই বা পরীক্ষিত মিত্র হিসেবে পরিচিত। সেই চীনই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যেমনই থাকুক, ঢাকা এখন চীন ও পাকিস্তানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই জিরো-সাম গেম ভারতকে তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতিতে চাপে ফেলছে।’
ভারতীয় বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারত অর্থনৈতিকভাবে বড় হলেও বাংলাদেশকে দেওয়া রপ্তানি সুবিধার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে নয়াদিল্লিতে সন্দেহ দানা বাঁধছে। কারণ, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ হলেও ভারতের ওপর আরোপ করা হয়েছে ২৫ শতাংশ এবং আরও ‘পেনাল্টি’ আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতার অন্দরমহলে ধারণা আছে যে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই বাড়তি নজর জো বাইডেনের আমল থেকেই শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন এক নতুন বলয়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—নীতির বাস্তবায়নে এখন একাধিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে, কিন্তু কোনো শিবিরে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিভাষায় এটিকে ‘হেজিং’ কৌশল বলা হয়। এই কৌশল অল্প কয়েকটি দেশ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে, বাংলাদেশ সরকার সে চেষ্টাই করছে।
কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন কোনো পক্ষে হেলে পড়ছে না। যেমন চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা গ্রহণ করলেও সামরিক বা কৌশলগত বলয়ে একীভূত হচ্ছে না। এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি সচেতন ভারসাম্য কৌশল। বাংলাদেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো কৌশলগত জোটে যোগ দিচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো দেখা যায়নি, যদিও এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
কুরলান্টজিক বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোনো কৌশলগত জোট গঠন করবে। তাদের তো এমন কোনো নির্বাচিত সরকারও নেই, যারা এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ কিনও তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, এমন কোনো জোট হলে তা ভারতের জন্য একটি ‘রেড লাইন’ বা বিপৎসীমা হবে।
কিন বাংলাদেশের বর্তমান পদক্ষেপগুলোকে দিল্লির ‘বৈরী মনোভাবের’ জবাবে একটি কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা হিসেবে দেখছেন। কিন আরও বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
এই অবস্থানই প্রতিধ্বনিত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কথা থেকে। গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকাকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে; কারণ, বাংলাদেশের রক্ষা করার মতো স্বার্থ রয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে একটি বড় খেলোয়াড় নয়।’
তবে বাংলাদেশের এই ভারসাম্য রক্ষার পথ খুব সহজ নয়। একদিকে ভারতের মনোভাব পরিবর্তন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈরীভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা, সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের জটিলতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এখন অনেক বেশি জটিল ও সংবেদনশীল।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা, আনাদোলু এজেন্সি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রয়টার্স ও দ্য ডন
আরও খবর পড়ুন:

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তর
০৬ আগস্ট ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তর
০৬ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তর
০৬ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার যে পালাবদল ঘটেছে, তা এই অঞ্চল ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাবে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ ভারত, চীন ও যুক্তর
০৬ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে