Ajker Patrika

সিলেটে বালু-পাথর লুট: কর্মকর্তাদের অসততায় নিঃশেষ হয় পাথর

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট 
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ১৯
খান মো. রেজা-উন-নবী। ছবি: সংগৃহীত
খান মো. রেজা-উন-নবী। ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলায় পরিবেশ ধ্বংস করে ব্যাপকভাবে বালু-পাথর লুটপাট শুরু হয়। ২ ডিসেম্বর সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগ দেন অতিরিক্ত সচিব খান মো. রেজা-উন-নবী। গত ৯ মাসে পরিবেশ ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় তিনি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো তাঁর বক্তব্যে উৎসাহিত হয় লুটপাটকারীরা। পাথর লুট শেষ পর্যন্ত হরিলুটে রূপ নেয়। বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর, জাফলং, রাংপানি, বিছনাকান্দি, লালাখাল, উৎমাছড়াসহ বিভাগের অধিকাংশ পাথর কোয়ারি ও বালুমহাল প্রায় পাথর-বালু শূন্য হয়।

ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানেও বিষয়টি উঠে এসেছে। পাথর লুটপাটে কার কতটা দায়, তা স্পষ্ট হয়েছে দুদকের পেশ করা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পাথর নিঃশেষ হয়।

সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুই উপদেষ্টার সিলেট সফরের পর জেলা প্রশাসন ক্রাশার মিলের (পাথর ভাঙার কল) বৈদ্যুতিক সংযোগবিচ্ছিন্ন শুরু করে। সেই অভিযান থেমে যায় রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে সিলেটে আয়োজিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। কিন্তু পাথর উত্তোলন, বিপণন ও লুটতরাজের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে নিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার যে সভা করেন, সে সভায় বিভাগীয় কমিশনারের দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে পাথরখেকোরা মূলত প্রশ্রয় পায়। পাথর লুট বন্ধে প্রশাসন যে নিষ্ক্রিয় থাকবে, সে বার্তাতেই লুটপাট লাগামহীনভাবে শুরু হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে যে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেলার পক্ষ থেকে বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি; বরং পাথর উত্তোলনকারীদের সাহস জোগানো হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননার মতো অপরাধ।

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো-বিএমডি: দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯১ ও ৯৩ অনুযায়ী, অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা বিএমডির ওপর ন্যস্ত। কিন্তু সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনা প্রতিরোধে বিএমডি থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট: প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী ৮ জুলাই তাঁর কার্যালয়ে পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহনশ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত।’ তাঁর এ বক্তব্য সাদাপাথর লুটপাটে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। রাত ৯টার দিকে তাঁর পিএস ফজলে রাব্বানী ফোন রিসিভ করে প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘স্যারের মিটিং শেষ হলে আমি আলাপ করব।’

জেলা প্রশাসক, সিলেট: প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাথর, বালু লুটপাট ও পর্যটন স্থানগুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য বজায় রাখাসহ পরিবেশ সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও সদ্য ওএসডি হওয়া মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। তিনি তাঁর অধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সাদাপাথর পর্যটন স্থান রক্ষায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জানতে চাইলে মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘দুদক যা লিখেছে, লিখুক।’

পুলিশ সুপার, সিলেট: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিলেও সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সাদাপাথর লুটপাটের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।

বক্তব্য জানতে পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

ইউএনও: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় দৃশ্যমানভাবে দিনদুপুরে উপজেলা প্রশাসনের গোচরেই পাথর লুটপাট হয়েছে। ওই সময় কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা কর্মরত ছিলেন। ইউএনওরা নামমাত্র ও লোকদেখানো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া পাথর লুট বন্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি।

ওসি, কোম্পানীগঞ্জ থানা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন নিয়ে সাদাপাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর প্রতি ট্রাকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট করে লোড (ভরা) করা হয়। পরিবহনের ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাকের পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। তাঁরা তা সমান ভাগ করে নিতেন। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। যার মধ্যে পুলিশ বিভাগ পায় ৫০০ এবং প্রশাসন (ডিসি ও ইউএনও) পান ৫০০ টাকা। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক ও নৌকা থেকে এসব চাঁদা বা অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করে।

প্রতিবেদনে সাদাপাথর লুটে বর্ডার গার্ড বিজিবিকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাদাপাথর এলাকায় ৩টি বিজিবি পোস্ট রয়েছে। এগুলো থেকে লুটের ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৫০০ মিটারেরও কম। এত কম দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেনসহ বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে লুটেরারা খুব সহজেই পাথর লুটপাট করতে পেরেছে। বিজিবির সদস্যরা নৌকাপ্রতি ৫০০ টাকা নিয়ে এলাকায় ঢোকার অনুমতি দেন এবং পাথর উত্তোলনে বাধা দেননি।

আরএনবির চিঠি

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন ভোলাগঞ্জে অবস্থিত রেলওয়ের ট্রেসেলসহ পাথর কোয়ারি সরকারি সম্পদ রক্ষা প্রসঙ্গে’ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসি ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি। বারবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কাজ হয়নি।

এ ব্যাপারে সদ্য ওএসডি হওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘চিঠি দিয়ে অবগত করলে করতে পারে। এ মুহূর্তে আমার মনে নেই।’

‘লুট নয়, হরিলুট হয়েছে’

সিলেট প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘সাদাপাথরের কাছেই বিজিবির সুন্দর একটি ক্যাম্প দেখতে পাচ্ছি, এই ক্যাম্পের সামনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল এবং এক দিনে না, কয়েক দিনে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি যে লুট হয়েছে। আর আজকে এসে মনে হলো, মোর দ্যান লুট, হরিলুট। দেশের সম্পদ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দু-চারজন, কে বা কারা লুট করেছে, এটা আমরা তদন্ত করে তো নাম পাচ্ছি; সে যে-ই হোক আমাদের দেশের, যত বড় অফিসার হোক, এখানে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।’

এ সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘পুরো এলাকা আমরা ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসব এবং ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমাদের। আমরা কয়েক ঘণ্টা সময় দেব, যার কাছে যত পাথর আছে, এটা ফেরত দিতে হবে। যার কাছে পাথর পাওয়া যাবে এবং স্ট্রেইট বলে দিই, তাকে কারাদণ্ড বরণ করতে হবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত