আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক ভাষণে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছিলেন, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এক নতুন জম্মু ও কাশ্মীর তৈরি করবে। এই নয়া কাশ্মীর ‘কেবল সন্ত্রাসমুক্তই নয়, পর্যটকদের জন্য স্বর্গরাজ্যও হবে।’ কিন্তু মাত্র সাত মাস পরই এক ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মীরের অর্ধেক এলাকায় পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মোদির প্রতিশ্রুতি কার্যত মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসীরা ২৬ জনকে হত্যা করে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের বিবদমান সীমান্তে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ছয় দিন ধরে চলছে গোলাগুলি। কেবল তা-ই নয়, পাকিস্তানের পানি নিরাপত্তার জন্য জরুরি সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ভারত। জবাবে ইসলামাবাদ অতীতের শান্তিচুক্তিগুলো থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। উভয় দেশ একে অপরের কূটনৈতিক, সামরিক অ্যাটাশে এবং শত শত বেসামরিক নাগরিককে বহিষ্কার করেছে।
তবে ভারত নিজের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেও লড়াই চালাচ্ছে। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে সন্দেহভাজন ‘সন্ত্রাসীদের’ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী হাজারো সন্দেহভাজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। দেড় হাজারের বেশি কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতীয় বাহিনী এখনো পলাতক আক্রমণকারীদের ধরতে ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও কাশ্মীর পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
২০১৯ সালের আগস্টে মোদি সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বাতিল করে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক বিরোধী বা কাশ্মীরিদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে কাশ্মীরকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল।
বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ক্ষেত্রে মোদি সরকারের যুক্তি ছিল, আগের সরকারগুলো জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সেভাবে যুক্ত করতে পারেনি। তাদের মতে, প্রায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদার ফল বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোর হাতে চলে গিয়েছিল। এই শক্তিগুলো কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সাংবিধানিক বিধান বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের দমনপীড়ন চালানো হয় অঞ্চলটিতে। হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে মূলধারার রাজনৈতিক দলের নেতারাও ছিলেন। এমনকি যাঁরা কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে মনে করেন, তাঁরাও গ্রেপ্তার হন। ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল কয়েক মাস। কাশ্মীর বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
তবে মোদি সরকার দাবি করেছিল, এই কষ্ট সাময়িক। কাশ্মীরকে ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এটি প্রয়োজন। তবে এরপর থেকে বেসামরিক নাগরিক, এমনকি সাংবাদিকদেরও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে কাশ্মীরের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে। ২০১৯ সালের আগে অঞ্চলটিতে অ-কাশ্মীরিদের বসবাসের অনুমতি ছিল না, সেই আইনও রদ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোদি সরকার অঞ্চলটির জনমিতি পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অঞ্চলটিতে বিগত এক দশকের মধ্যে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের শেষ দিকে। নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সরকারকে অন্যান্য আঞ্চলিক সরকারগুলো যে ক্ষমতা ভোগ করে, তার অনেকগুলো থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। কাশ্মীরের বিষয়ে এখনো মূল সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে নয়াদিল্লি।
এসব কিছুর মধ্যেই মোদি সরকার কাশ্মীরে পর্যটনকে উৎসাহিত করেছে। চার দশকের সশস্ত্র প্রতিরোধের পর অঞ্চলটিতে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে এসেছে প্রমাণ করার জন্য পর্যটকদের পরিসংখ্যানে উল্লম্ফন তুলে ধরা হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৫ লাখ পর্যটক কাশ্মীর সফর করেছেন, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ।
পেহেলগাম হামলার অনেক আগে, ২০২৪ সালের মে মাসে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতিফলন’—এমন ধারণা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় এবং পর্যটনকে স্বাভাবিকতার সূচক হিসেবে ভাবা কমিয়ে দিন।’ বিজেপি সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আপনারা পর্যটকদের নিশানা বানাচ্ছেন।’
থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোনথি বলেন, ওমর আবদুল্লাহ মোদি সরকারের বয়ান সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, পেহেলগাম হামলা সেই সতর্কবার্তাকেই প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লি ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল এবং তারা আত্মতুষ্টিকে ভুগছিল, ধরে নিয়েছিল যে জঙ্গিরা কখনোই পর্যটকদের ওপর হামলা করবে না।’
প্রবীণ দোনথি উল্লেখ করেন, পেহেলগামে হামলার আগপর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহীরা কাশ্মীরে পর্যটকদের রেহাই দিয়েছিল। কারণ, পর্যটন এই অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তাহলে কাশ্মীর যে স্বাভাবিক নয়, তা প্রমাণে দুজন বন্দুকধারীই যথেষ্ট।’
হামলার দুই সপ্তাহ আগে, গত ৮ এপ্রিল কাশ্মীরের বৃহত্তম শহর শ্রীনগরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধান ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। সম্প্রতি যতগুলো নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে, তার প্রায় সব কটি থেকেই তাঁকে বাইরে রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মোদি সরকার কাশ্মীরের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির উত্তেজনার অংশ হিসেবে দেখে। দিল্লি মনে করে না যে, সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ মতামতও প্রয়োজন। ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। তবে পাকিস্তান বলছে, তারা কেবল ‘স্বাধীনতা’ আন্দোলনকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন জানায়।
প্রবীণ দোনথি বলেন, পেহেলগামের হামলা মোদি প্রশাসনের এই কৌশলের ‘অসারতা’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টাকে সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট নিরাপত্তা সংকট হিসেবে তুলে ধরা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। কিন্তু এটা সংঘাত সমাধানে কোনো সাহায্য করবে না।’ তাঁর মতে, ‘ভারত সরকার যদি কাশ্মীরিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু না করে, তাহলে এই সহিংসতার কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না।’
তবে মোদি সরকার নীতি বদলানোর কথা ভাবছে— এখন পর্যন্ত এমন প্রমাণ সামান্যই মিলেছে। কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত মনে করেন, এই নীতি ‘ঘরোয়া সংকীর্ণতা এবং অতি-জাতীয়তাবাদী বাগাড়ম্বরকে তুষ্ট করার জন্য’ তৈরি করা হয়েছে। পেহেলগাম হামলার পর থেকে ভারতের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া।
উদাহরণ হিসেবে দুই দেশের মধ্যকার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের কথাই ধরা যাক। ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) হয়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পানি ভাগাভাগির এই চুক্তি ৩টি যুদ্ধ সত্ত্বেও টিকে আছে। এটি আন্তর্দেশীয় জল ব্যবস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে বহুল প্রশংসিত। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ সিন্ধু অববাহিকার তিনটি করে নদীর পানি ভাগাভাগি করে নেয়। নদীগুলোর মধ্যে রবি, বিয়াস এবং শতদ্রু থেকে পানি পায় ভারত। অন্যদিকে সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ।
কিন্তু পেহেলগাম হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করায় এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সতর্ক করে বলেছে, পানি সরিয়ে নেওয়া বা প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা ‘যুদ্ধের শামিল।’ ইসলামাবাদ আরও সতর্ক করেছে, তারা ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করতে পারে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটিই মূলত দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) নির্ধারণ করে।
রাজনৈতিক বিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেন, ‘পাকিস্তান এই বিষয়টিকে (পানি প্রবাহ কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়ার) অস্তিত্বের সংকট ও দুর্যোগের মতো দেখে। ভারত এটা জানে এবং এটি পাকিস্তানের প্রতি সামষ্টিক শাস্তির এক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। ভারত কি সত্যিই পানি আটকাতে পারবে? বিশেষ করে, যখন তাদের বৃহৎ নদীগুলোর পানি ধারণ করার মতো পরিকাঠামো নেই? তারা কি নিজেদের অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি নিয়ে পানি অন্য পথে চালিত করতে পারবে? আর পাকিস্তান যদি সিমলা চুক্তি থেকে সরে আসে, তবে কি কার্যত তা যুদ্ধেরই ইঙ্গিত? সুমান্ত্র বোস বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ দুই পক্ষের জন্যই অপরিপক্ব’, তবে এর ‘সুনির্দিষ্ট পরিণতি’ রয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত কয়েক বছর ধরে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) নিয়ে নতুন করে আলোচনার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, তারা ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। কাশ্মীরের রাজনীতি বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক কাশ্মীর সংকট দিল্লিকে এই চুক্তি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার একটি সুযোগ, বলা ভালো একটি অজুহাত এনে দিয়েছে।’
পেহেলগাম হামলার দুদিন পর মোদি বিহার সফরে যান। এ বছর সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। এক নির্বাচনী জনসভায় মোদি বলেন, তিনি হামলাকারীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ধাওয়া করবেন।’ মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, এমন ভাষণ তাঁর কাশ্মীর নীতির একমাত্র উদ্দেশ্যকেই প্রতিফলিত করে। তিনি মনে করেন, মোদির কাশ্মীর নীতির লক্ষ্য হলো, ‘কাশ্মীর নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে দেশের বাকি অংশে বিজেপির মূল ভোটব্যাংককে সর্বাধিক শক্তিশালী করা।’
স্বাধীনতার পর থেকেই বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কাশ্মীরকে একটি ‘অসমাপ্ত কাজ’ হিসেবে দেখে আসছে। আরএসএস কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের প্রতি কঠোর নিরাপত্তাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়েছে। নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় ভারতে বিদ্যমান উগ্র জাতীয়তাবাদের কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন একটাই কথা, “আমরা বদলা চাই”।’
হামলার পর থেকে সারা ভারতে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি মারধরের শিকার হয়েছেন। বাড়িওয়ালারা কাশ্মীরি এমনকি মুসলিম ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করছেন এবং চিকিৎসকেরা মুসলিম রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মুসলিমদের লক্ষ্য করে উসকানিমূলক বিষয়বস্তুতে ভরে গেছে।
প্রবীণ দোনথি বলেন, পেহেলগাম হামলা কয়েকটি দিক থেকে মোদি সরকারের জন্য ‘শক্তির উৎস’ হিসেবে কাজ করেছে। কাশ্মীর ইস্যু ও পাকিস্তানের সঙ্গে সংকট কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলেও ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিবেচনায় এটি মোদি সরকারের জন্য একটি চমৎকার অবস্থান।’ তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল দুর্বল হওয়ায় এটি বিশেষভাবে সত্য। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই হামলার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।
তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস যুক্তি দেন, মোদি সরকার স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব নিয়ে ভাবছে না। বিহারে মোদির মন্তব্য ও ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম ও টিভি চ্যানেলে কাশ্মীরি ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনিয়ন্ত্রিত ঘৃণা ছড়িয়ে পড়া বিজেপির কাশ্মীরসংক্রান্ত বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যু মোদি সরকারের জন্য একটি আদর্শিক যুদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার নিজেদের কাশ্মীর নীতি কখনোই পরিবর্তন করবে না।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক ভাষণে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছিলেন, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এক নতুন জম্মু ও কাশ্মীর তৈরি করবে। এই নয়া কাশ্মীর ‘কেবল সন্ত্রাসমুক্তই নয়, পর্যটকদের জন্য স্বর্গরাজ্যও হবে।’ কিন্তু মাত্র সাত মাস পরই এক ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মীরের অর্ধেক এলাকায় পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মোদির প্রতিশ্রুতি কার্যত মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসীরা ২৬ জনকে হত্যা করে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের বিবদমান সীমান্তে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ছয় দিন ধরে চলছে গোলাগুলি। কেবল তা-ই নয়, পাকিস্তানের পানি নিরাপত্তার জন্য জরুরি সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ভারত। জবাবে ইসলামাবাদ অতীতের শান্তিচুক্তিগুলো থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। উভয় দেশ একে অপরের কূটনৈতিক, সামরিক অ্যাটাশে এবং শত শত বেসামরিক নাগরিককে বহিষ্কার করেছে।
তবে ভারত নিজের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেও লড়াই চালাচ্ছে। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে সন্দেহভাজন ‘সন্ত্রাসীদের’ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী হাজারো সন্দেহভাজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। দেড় হাজারের বেশি কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতীয় বাহিনী এখনো পলাতক আক্রমণকারীদের ধরতে ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও কাশ্মীর পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
২০১৯ সালের আগস্টে মোদি সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বাতিল করে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক বিরোধী বা কাশ্মীরিদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে কাশ্মীরকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল।
বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ক্ষেত্রে মোদি সরকারের যুক্তি ছিল, আগের সরকারগুলো জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সেভাবে যুক্ত করতে পারেনি। তাদের মতে, প্রায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদার ফল বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোর হাতে চলে গিয়েছিল। এই শক্তিগুলো কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সাংবিধানিক বিধান বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের দমনপীড়ন চালানো হয় অঞ্চলটিতে। হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে মূলধারার রাজনৈতিক দলের নেতারাও ছিলেন। এমনকি যাঁরা কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে মনে করেন, তাঁরাও গ্রেপ্তার হন। ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল কয়েক মাস। কাশ্মীর বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
তবে মোদি সরকার দাবি করেছিল, এই কষ্ট সাময়িক। কাশ্মীরকে ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এটি প্রয়োজন। তবে এরপর থেকে বেসামরিক নাগরিক, এমনকি সাংবাদিকদেরও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে কাশ্মীরের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে। ২০১৯ সালের আগে অঞ্চলটিতে অ-কাশ্মীরিদের বসবাসের অনুমতি ছিল না, সেই আইনও রদ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোদি সরকার অঞ্চলটির জনমিতি পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অঞ্চলটিতে বিগত এক দশকের মধ্যে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের শেষ দিকে। নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সরকারকে অন্যান্য আঞ্চলিক সরকারগুলো যে ক্ষমতা ভোগ করে, তার অনেকগুলো থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। কাশ্মীরের বিষয়ে এখনো মূল সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে নয়াদিল্লি।
এসব কিছুর মধ্যেই মোদি সরকার কাশ্মীরে পর্যটনকে উৎসাহিত করেছে। চার দশকের সশস্ত্র প্রতিরোধের পর অঞ্চলটিতে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে এসেছে প্রমাণ করার জন্য পর্যটকদের পরিসংখ্যানে উল্লম্ফন তুলে ধরা হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৫ লাখ পর্যটক কাশ্মীর সফর করেছেন, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ।
পেহেলগাম হামলার অনেক আগে, ২০২৪ সালের মে মাসে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতিফলন’—এমন ধারণা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় এবং পর্যটনকে স্বাভাবিকতার সূচক হিসেবে ভাবা কমিয়ে দিন।’ বিজেপি সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আপনারা পর্যটকদের নিশানা বানাচ্ছেন।’
থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোনথি বলেন, ওমর আবদুল্লাহ মোদি সরকারের বয়ান সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, পেহেলগাম হামলা সেই সতর্কবার্তাকেই প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লি ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল এবং তারা আত্মতুষ্টিকে ভুগছিল, ধরে নিয়েছিল যে জঙ্গিরা কখনোই পর্যটকদের ওপর হামলা করবে না।’
প্রবীণ দোনথি উল্লেখ করেন, পেহেলগামে হামলার আগপর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহীরা কাশ্মীরে পর্যটকদের রেহাই দিয়েছিল। কারণ, পর্যটন এই অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তাহলে কাশ্মীর যে স্বাভাবিক নয়, তা প্রমাণে দুজন বন্দুকধারীই যথেষ্ট।’
হামলার দুই সপ্তাহ আগে, গত ৮ এপ্রিল কাশ্মীরের বৃহত্তম শহর শ্রীনগরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধান ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। সম্প্রতি যতগুলো নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে, তার প্রায় সব কটি থেকেই তাঁকে বাইরে রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মোদি সরকার কাশ্মীরের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির উত্তেজনার অংশ হিসেবে দেখে। দিল্লি মনে করে না যে, সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ মতামতও প্রয়োজন। ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। তবে পাকিস্তান বলছে, তারা কেবল ‘স্বাধীনতা’ আন্দোলনকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন জানায়।
প্রবীণ দোনথি বলেন, পেহেলগামের হামলা মোদি প্রশাসনের এই কৌশলের ‘অসারতা’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টাকে সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট নিরাপত্তা সংকট হিসেবে তুলে ধরা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। কিন্তু এটা সংঘাত সমাধানে কোনো সাহায্য করবে না।’ তাঁর মতে, ‘ভারত সরকার যদি কাশ্মীরিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু না করে, তাহলে এই সহিংসতার কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না।’
তবে মোদি সরকার নীতি বদলানোর কথা ভাবছে— এখন পর্যন্ত এমন প্রমাণ সামান্যই মিলেছে। কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত মনে করেন, এই নীতি ‘ঘরোয়া সংকীর্ণতা এবং অতি-জাতীয়তাবাদী বাগাড়ম্বরকে তুষ্ট করার জন্য’ তৈরি করা হয়েছে। পেহেলগাম হামলার পর থেকে ভারতের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া।
উদাহরণ হিসেবে দুই দেশের মধ্যকার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের কথাই ধরা যাক। ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) হয়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পানি ভাগাভাগির এই চুক্তি ৩টি যুদ্ধ সত্ত্বেও টিকে আছে। এটি আন্তর্দেশীয় জল ব্যবস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে বহুল প্রশংসিত। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ সিন্ধু অববাহিকার তিনটি করে নদীর পানি ভাগাভাগি করে নেয়। নদীগুলোর মধ্যে রবি, বিয়াস এবং শতদ্রু থেকে পানি পায় ভারত। অন্যদিকে সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ।
কিন্তু পেহেলগাম হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করায় এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সতর্ক করে বলেছে, পানি সরিয়ে নেওয়া বা প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা ‘যুদ্ধের শামিল।’ ইসলামাবাদ আরও সতর্ক করেছে, তারা ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করতে পারে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটিই মূলত দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) নির্ধারণ করে।
রাজনৈতিক বিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেন, ‘পাকিস্তান এই বিষয়টিকে (পানি প্রবাহ কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়ার) অস্তিত্বের সংকট ও দুর্যোগের মতো দেখে। ভারত এটা জানে এবং এটি পাকিস্তানের প্রতি সামষ্টিক শাস্তির এক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। ভারত কি সত্যিই পানি আটকাতে পারবে? বিশেষ করে, যখন তাদের বৃহৎ নদীগুলোর পানি ধারণ করার মতো পরিকাঠামো নেই? তারা কি নিজেদের অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি নিয়ে পানি অন্য পথে চালিত করতে পারবে? আর পাকিস্তান যদি সিমলা চুক্তি থেকে সরে আসে, তবে কি কার্যত তা যুদ্ধেরই ইঙ্গিত? সুমান্ত্র বোস বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ দুই পক্ষের জন্যই অপরিপক্ব’, তবে এর ‘সুনির্দিষ্ট পরিণতি’ রয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত কয়েক বছর ধরে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) নিয়ে নতুন করে আলোচনার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, তারা ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। কাশ্মীরের রাজনীতি বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক কাশ্মীর সংকট দিল্লিকে এই চুক্তি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার একটি সুযোগ, বলা ভালো একটি অজুহাত এনে দিয়েছে।’
পেহেলগাম হামলার দুদিন পর মোদি বিহার সফরে যান। এ বছর সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। এক নির্বাচনী জনসভায় মোদি বলেন, তিনি হামলাকারীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ধাওয়া করবেন।’ মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, এমন ভাষণ তাঁর কাশ্মীর নীতির একমাত্র উদ্দেশ্যকেই প্রতিফলিত করে। তিনি মনে করেন, মোদির কাশ্মীর নীতির লক্ষ্য হলো, ‘কাশ্মীর নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে দেশের বাকি অংশে বিজেপির মূল ভোটব্যাংককে সর্বাধিক শক্তিশালী করা।’
স্বাধীনতার পর থেকেই বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কাশ্মীরকে একটি ‘অসমাপ্ত কাজ’ হিসেবে দেখে আসছে। আরএসএস কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের প্রতি কঠোর নিরাপত্তাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়েছে। নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় ভারতে বিদ্যমান উগ্র জাতীয়তাবাদের কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন একটাই কথা, “আমরা বদলা চাই”।’
হামলার পর থেকে সারা ভারতে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি মারধরের শিকার হয়েছেন। বাড়িওয়ালারা কাশ্মীরি এমনকি মুসলিম ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করছেন এবং চিকিৎসকেরা মুসলিম রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মুসলিমদের লক্ষ্য করে উসকানিমূলক বিষয়বস্তুতে ভরে গেছে।
প্রবীণ দোনথি বলেন, পেহেলগাম হামলা কয়েকটি দিক থেকে মোদি সরকারের জন্য ‘শক্তির উৎস’ হিসেবে কাজ করেছে। কাশ্মীর ইস্যু ও পাকিস্তানের সঙ্গে সংকট কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলেও ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিবেচনায় এটি মোদি সরকারের জন্য একটি চমৎকার অবস্থান।’ তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল দুর্বল হওয়ায় এটি বিশেষভাবে সত্য। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই হামলার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।
তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস যুক্তি দেন, মোদি সরকার স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব নিয়ে ভাবছে না। বিহারে মোদির মন্তব্য ও ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম ও টিভি চ্যানেলে কাশ্মীরি ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনিয়ন্ত্রিত ঘৃণা ছড়িয়ে পড়া বিজেপির কাশ্মীরসংক্রান্ত বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যু মোদি সরকারের জন্য একটি আদর্শিক যুদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার নিজেদের কাশ্মীর নীতি কখনোই পরিবর্তন করবে না।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৬ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
৩০ এপ্রিল ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৬ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
৩০ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
৩০ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৬ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
৩০ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৬ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে