Ajker Patrika

ইরান আক্রমণে দুই দশকে যেসব বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করেছে ইসরায়েল

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ২১
ইরান আক্রমণে দুই দশকে যেসব বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করেছে ইসরায়েল

বিগত কয়েক দশক ধরেই ইরানে হামলার পরিকল্পনা প্রস্তুত করে শাণিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে দেশটি ব্যাপক অত্যাধুনিক অস্ত্রও প্রস্তুত করেছে। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি যখন অন্য দেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে শুরু করেছে, তখনই বিষয়টি জানা গেছে, ইসরায়েল আসলে কতটা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান নিজ দেশ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে ইয়েমেনে গিয়ে হুতি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এই হামলার বিষয়টি ইসরায়েলের ‘প্রয়োজন বিবেচনায় উদ্ভাবন’ বা ইম্প্রোভাইজেশন দক্ষতারই ইঙ্গিত দেয়। সাধারণভাবে এফ-১৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করা হয়, আকাশে যুদ্ধের জন্য। কিন্তু ইসরায়েল এই যুদ্ধবিমানগুলোকে নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে আরও শাণিত করে তুলেছে। নতুন নতুন সব অস্ত্র বহনে সক্ষম করে তুলেছে।

তবে ইয়েমেনে হুতি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো যতটা সহজ ছিল, ইরানের হামলা চালানো ততটা সহজ হবে না। কারণ, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উভয়ই মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত। তবে দেশটির তেল স্থাপনা তুলনামূলক অরক্ষিত। এ ছাড়া, ইরানের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও আছে।

ইরানের দাবি, তারা এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিজেরাই তৈরি করেছে। কিন্তু এখনো সেই অর্থে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কোনো শক্ত পরীক্ষার মুখে পড়েনি। তবে, এই ব্যবস্থাটি রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সঙ্গে মেলে। সাধারণভাবে, এই ব্যবস্থার ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর সক্ষমতা আছে। কিন্তু, গত এপ্রিলে ইসরায়েল যখন ইরানের ইস্পাহানে হামলা চালিয়েছিল তখন এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কোনো এক কারণে সক্রিয় হয়নি। এর বাইরে, ইরানের চার যুগ পুরোনো মিগ-২৯ ও যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৪ মডেলের যুদ্ধবিমান আছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরও এই যুদ্ধবিমানগুলো সক্রিয় আছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে।

এসব চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ২০ বছর ধরে ইরানে সম্ভাব্য হামলা ছক কষেছে। বিনিয়োগ করেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ও শেকেল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ইসরায়েল এমন কিছু অস্ত্র তৈরি করেছে নিজস্ব প্রযুক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্র বিক্রি করতে চায়নি। ইসরায়েলের এসব প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও নেই।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশগুলো ১৮০০-২০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য সাধারণত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বা বোম্বার বিমান ব্যবহার করে। তবে ইসরায়েল বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমারু বিমানের জায়গা থেকে সরে এসে যুদ্ধবিমান দিয়েই এই দূরত্বে হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশটির কাছে এক স্কোয়াড্রন অত্যাধুনিক এফ-১৫ আই ও এফ-১৬ আইয়ের চারটি যুদ্ধবিমান আছে—যেগুলোকে ইসরায়েল নিজেদের মতো করে বিশেষায়িত করে নিয়েছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো যেতে–আসতে টানা চার ঘণ্টা আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম।

বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এমন একধরনের ফুয়েল ট্যাংক বানিয়েছে—বিশেষ করে এই বিমানগুলোর জন্য। যার ফলে, এই বিমানগুলো দীর্ঘ উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে বেশি জ্বালানির জন্য ফুয়েল ট্যাংক তৈরি করা হলেও বিমানগুলোর অ্যারোডাইনামিকস বা রাডারের কার্যক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর খবর ইঙ্গিত করে, ইসরায়েল নিজের প্রযুক্তিতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য বিচ্ছিন্নযোগ্য জ্বালানি ট্যাংক তৈরি করেছে। তবে এরপরও স্টেলথ ক্ষমতা বা নিজেতে গোপন রাখার ক্ষমতা বজায় রেখে ইরানে পৌঁছাতে সক্ষম। 
 
আকাশ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা 

একুশ শতকের শুরুর দিকে ইসরায়েল দুটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে। যেগুলো যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা কতটুকু, তা জানা না গেলেও এগুলো যে ইরানের আকাশসীমায় না গিয়েও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বাইরে থেকে ইসরায়েলকে দেশটিতে শত শত কিলোমিটার দূর থেকে হামলার সুযোগ দেবে; সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুপারসনিক গতিতে অর্থাৎ শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে চলতে সক্ষম। যার ফলে, এগুলোকে ইন্টারসেপ্ট করার সুযোগ কম থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 
 
Shavit-2র‍্যাম্পেজ ক্ষেপণাস্ত্র

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি এবং দেশটির রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস মিলে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। প্রাথমিকভাবে এগুলোকে ভূমি থেকে নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হলেও পরে এগুলোকে আকাশ থেকে নিক্ষেপের জন্যও মডিফাই করা হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা বেড়ে গেছে। একাধিক নেভিগেশন সিস্টেম থাকায় এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অনেক বেশি নির্ভুল।

মাত্র ৪ দশমিক ৭ মিটার লম্বা এবং ৩০ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার পরিধির এই ক্ষেপণাস্ত্রের ভর মাত্র ৫৪০ কেজি। এ ছাড়া, এগুলো ১৫০ কেজির সমান ভরের বিভিন্ন ওয়ারহেড বহন করতে পারে। গঠনগত কারণে, এর পক্ষে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়া অনেকটাই সহজ। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ইসরায়েলের এফ-১৫, এফ-১৬ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব। এ ছাড়া, দামের দিক থেকেও এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খুবই সাশ্রয়ী। মাত্র কয়েক শ ডলার খরচ করেই একেকটি র‍্যাম্পেজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

রকস ক্ষেপণাস্ত্র

ফরাসি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাফালে ২০১৯ সালে রকস ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবার প্রকাশ করে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘স্যাটেলাইট নেভিগেশন ও ইনর্শিয়াল নেভিগেশন’ সিস্টেম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেই সঙ্গে এর আছে, অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম। যা এটিতে নিজের মতো করে লক্ষ্যবস্তুতে আলাদাভাবে চিনতে সহায়তা করে। এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিও সুপারসনিক, অর্থাৎ শব্দের গতির চেয়ে বেশি। এটি ইরানের শাহাব ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই অনেকটা।

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে এফ-১৬ এবং এফ-৩৫–এর মতো যুদ্ধবিমান থেকেই নিক্ষেপ করা যেতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার এবং এগুলো ৫০০ কেজি পর্যন্ত ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। যা এটিকে সুরক্ষিত বা ভূগর্ভস্থ কাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম করে তোলে। 

submarin-Israel-3অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্র

বিদেশি সূত্রগুলোর ইঙ্গিত, ইসরায়েলের কাছে সারফেস টু সারফেস বা ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও আছে। জেরিকো নামে পরিচিত এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে। তবে ইরান ইসরায়েলে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও, ইসরায়েল ইরানে হামলার ক্ষেত্রে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে—এমন সম্ভাবনা কম। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মূলত ফ্রান্সের ড্যাসল্ট কোম্পানি তৈরি করেছিল। পরে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি এগুলোকে নিজেদের প্রয়োজনমতো মডিফাই করে নিয়েছে।

এ ছাড়া, এলবিট কোম্পানি ৫০০—এমপিআর নামে বাংকার বিধ্বংসী বোমা তৈরি করেছে। যা ৪ মিটার পর্যন্ত পুরো কংক্রিট ভেদ করতে সক্ষম। এফ-১৫ আই যুদ্ধবিমান এই বোমাগুলো করতে পারে। কিন্তু ভারী হওয়ার কারণে, যুদ্ধবিমানগুলোর পাল্লা সংকুচিত হয়ে আসে এসব বোমা থাকলে।
 
পপআই টার্বো ক্ষেপণাস্ত্র

এই ক্ষেপণাস্ত্রটিও ফ্রান্সের রাফালে কোম্পানির তৈরি। এগুলোর পাল্লা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এগুলো পারমাণবিক ওয়ারহেডের পাশাপাশি প্রচলিত ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। মূলত, ইসরায়েলি নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। দূরপাল্লার হওয়ার কারণে, লোহিত সাগর বা আরব সাগরে থেকেই—যা ইরান থেকে বেশ দূরে—ইসরায়েলি নৌবাহিনী এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালাতে পারবে।

জেরুজালেম পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত