বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম ইসলাম। প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সামগ্রিক বিষয়ে পাস দেখানো হয়। কিন্তু সম্মান চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফলে তাঁর ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং নতুন করে ফল ঘোষণার দাবিতে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় বন্ধুদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে শামীমের সঙ্গে অন্তত ৫০ জন সহপাঠী যোগ দেন। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান সহপাঠীরা।
শামীমসহ তাঁর সহপাঠীদের অবস্থান কর্মসূচির খবর পেয়ে তাঁদের দেখতে যান একই অনুষদের ডিন (কলা অনুষদ) ড. তুহিন ওয়াদুদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘শামীমের কোনো দোষ নেই। সমস্যা আমাদের এবং আমাদের সিস্টেমের। তবে আগামী ১৪ মের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর ও ইংরেজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শামীম ইসলামের স্নাতক সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারে ল্যাব পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে তাঁকে পাস দেখানো হয়। এ কারণে তিনি মানোন্নয়ন পরীক্ষাও দেননি। তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে এসে তাঁর প্রথম বর্ষে ফেল করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরবর্তী পরীক্ষায় অংশ নিলেও তাঁর সম্মান চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল স্থগিত দেখানো হয়।
গত বছরের ২৫ মে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সুপারিশ এবং একই বছরের ৩০ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্ত মতে, চার সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে তিনটি পর্যবেক্ষণে ফল যাচাইকারী উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সামসুল হকসহ একজন কর্মচারীর অসতর্কতা ও অসাবধানতার কারণ উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বিশেষ অনুমতি দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর মানোন্নয়ন পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত বছরের ৩১ মে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সুপারিশক্রমে একই সালের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভার অনুমোদনক্রমে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী।
শামীমের সহপাঠী মনিরুল ইসলাম মুকুল ও মোসা. খুশি খাতুন বলেন, ‘শামীমের ফল নিয়ে কেন এত ঝামেলা হচ্ছে? এর সমাধান চাই দ্রুত। আমরা রেজাল্টের দাবি নিয়ে আজ সকাল থেকে আমরণ অনশন করছি।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শামীম বলেন, ‘আমি একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। পাঁচ বছর হয়ে গেল আমি আমার রেজাল্ট পেলাম না। আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বন্ধুরা চাকরি করলেও আমি বঞ্চনার শিকার। আমি কোনো চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে প্রোমোটেড দেখালেও আজ আমার রেজাল্ট পেলাম না। আমি আমরণ অনশন শুরু করেছি। যতক্ষণ ফল না পাই, এই অনশন চালিয়ে যাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর ফলাফলের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আমি পদক্ষেপ নেব। এই সপ্তাহের ভেতরেই বিষয়টি বলতে পারব।’ শিক্ষার্থীদের অনশন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে প্রক্টর কাজ করছেন।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে