মা ফাতেমা খাতুন প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেছেন দেড়-দুই মাস আগে। এর কিছুদিন পর বাবা রুকন মিয়া অন্য নারীর সঙ্গে বাঁধেন ঘর। তাঁর মোবাইলে কল করা হলে তিনি জানিয়ে দেন সে কথা। এদিকে তিন শিশুকে দেখাশোনার জন্য তাদের প্রতিবেশী এক বিধবা নারীর কাছে তুলে দিয়েছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘ দেড়-দুই মাস তিন শিশুকে খাওয়াচ্ছেন সরিফা খাতুন। কিন্তু আর কুলাতে না পেরে থানায় হাজির হয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার সকালে তিনি শিশু রুমি (৬), জান্নাত (৩) ও ফাহাদকে (২) নিয়ে উপস্থিত হন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কার্যালয়ে।
ছোট্ট শিশু রুমির বয়স কম হলেও বলতে পারে সব কথা। কথা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, তাদের বাড়ি শেরপুর জেলার কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামে। তারা শ্রীপুরে ভাড়া থাকত। তাদের মা-বাবা তাদের ফেলে কোথায় যেন চলে গেছেন। তাঁরা কোনো খোঁজখবর রাখেন না। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে তারা। আজ সকালে ভাত খায়নি তারা। ছোট দুই ভাই-বোন খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে। যে খালা তাদের এত দিন লালনপালন করছেন, তিনি আর করবেন না বলে জানিয়েছেন তাদের।
তিন শিশুর বিষয়ে প্রতিবেশী সরিফা খাতুন জানান, রুকন মিয়া ও ফাতেমা খাতুন তিন সন্তান নিয়ে শ্রীপুরে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি তাঁদের প্রতিবেশী। দেড়-দুই মাস আগে ফাতেমা খাতুন দেশের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর ফিরে আসেননি। এরপর তাঁরা জানতে পারেন, প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেছেন ফাতেমা খাতুন। এর কিছুদিন পর বাবা রুকন মিয়াও চলে যান। পরে তাঁর মোবাইলে কল করা হলে তিনি অন্য নারীকে বিয়ে করেছেন বলে জানান।
সরিফা আরও জানান, এদিকে দীর্ঘদিন থেকে শিশু তিনটির বাবা-মা ফিরে না আসায় বাড়ির মালিক তাদের বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর এলাকাবাসী শিশুদের বাবা-মা ফিরে আসবেন বলে তাঁকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু তিন শিশুর ভরণপোষণ বহন করতে না পেরে আজ থানায় হাজির হয়েছেন বলে জানান সরিফা।
সরিফা খাতুন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। তিনটি শিশুকে খাওয়া, পরানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। স্থানীয় গ্রামের লোকজন বলেছিলেন, কয়েক দিন লালনপালন করতে থাকো, ওদের মা অথবা বাবা আসবে এদের নিতে। কিন্তু প্রায় দুই মাস তাঁদের কোনো খোঁজখবর নেই। আমি বিধবা মানুষ। নিজেই খেতে পারি না, এই তিনজনকে কী করে খাওয়াব। তাই থানায় নিয়ে আসছি।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। আমি একটি জরুরি মিটিংয়ে গাজীপুরে আছি। কাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অবুঝ তিন শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে; পাশাপাশি শিশুদের খাবারের সামান্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি অবুঝ তিন শিশুর একটি ভালো ব্যবস্থা হবে।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে