Ajker Patrika

উদাসীনতায় নীরবে বেড়েছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু

  • এ বছর দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু।
  • রোগী ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতিসহ নানা কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু।
  • মশকনিধনে জোর দেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশকনিধন ও রোগী ব্যবস্থাপনায় অবহেলার কারণে দুই দশকেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে এই শীতেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে রোগীদের। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশকনিধন ও রোগী ব্যবস্থাপনায় অবহেলার কারণে দুই দশকেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে এই শীতেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে রোগীদের। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সাড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এডিস মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যুর এ সংখ্যা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ ছাড়া চলতি বছর আক্রান্ত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। এই হিসাব শুধু হাসপাতালভিত্তিক। এর বাইরে কত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ও মারা গেছেন, তার পরিসংখ্যান নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীনতা বরাবরের মতো এখনো রয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় ১ লাখ ৪৯১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৫ জনের। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫৬ জন।

মাসভিত্তিক হিসাবে গত জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৫ জন, মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, মারা যায় ৩ জন। মার্চে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩১১ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এপ্রিলে ৫০৪ জন রোগীর মধ্যে মারা গেছে ২ জন। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের, জুনে ৭৯৮ জনের মধ্যে ৮, জুলাইয়ে ২ হাজার ৬৬৯ জনের মধ্যে ১২, আগস্টে ৬ হাজার ৫২১ জনের মধ্যে ২৭, সেপ্টেম্বরে ১৮ হাজার রোগীর মধ্যে ৮০, অক্টোবরে ৩০ হাজার ৮৭৯ জনের মধ্যে ১৩৫ এবং নভেম্বরে ২৯ হাজার ৬৫২ রোগীর মধ্যে ১৭৩ জন মারা গেছে। ডিসেম্বরের গতকাল পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মারা গেছে ৭৭ জন।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, আড়াই দশক ধরে বাংলাদেশ ডেঙ্গু মোকাবিলা করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু প্রতিরোধ, চিকিৎসা, রোগ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তবে এর কোনো প্রতিফলন এখনো দেখা যাচ্ছে না। এডিস মশা নির্মূলে ও রোগী ব্যবস্থাপনায় জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত চিন্তাভাবনাগুলো এখনো উপেক্ষিত। শুরু থেকেই সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ একে অপরের প্রতি দোষারোপ করছে। ফলে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বিশ্বে শীর্ষে। এদিকে এডিশ মশার স্বভাব অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়াসহ নানা কারণে ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. গোলাম সারোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মশার মধ্যে ভাইরাসের মিউটেশন (রূপান্তর) বেশি হচ্ছে। ফলে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মশার স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে। মশা নির্মূলে যে কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে, তা কাজ করছে না আর। মশা কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।’

এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, যে পদ্ধতিতে মশা নিধন করার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। কীটনাশক, রাসায়নিক কাজ করছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে না। মশা প্রতিরোধী হয়ে উঠল কি না দেখতে হবে। যে এলাকায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সে এলাকায় মশকনিধন কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। যত ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া রয়েছে, তা প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয়দের সংযুক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুকে রোগতত্ত্বের গুরুত্ব দেওয়া হয় ২০০০ সালে। এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। এই ২২ বছরে মারা গেছেন ৮৫০ রোগী। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি রোগী। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৬৫ জনের, যা দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ডেঙ্গুর ব্যবস্থাপনা করছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। তবে এখনো আশানুরূপ নিয়ন্ত্রণ সরকার দেখাতে পারেনি। যতটুকু দেখা যাচ্ছে, তা মূলত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। অতিদ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম এ রোগটিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম নেই।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকার ডেঙ্গুবিষয়ক যে তথ্য দিচ্ছে, তা মূলত হাসপাতালভিত্তিক চিত্র। রাজধানীর ১৮টি সরকারি ও ৫৯টি বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর বাইরে সরকারি পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা বা জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিলেও তা সরকারের সম্মিলিত তথ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও বড় ধরনের জটিলতা না থাকায় অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সংস্থাটির পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘হিসাবের বাইরে কয়েকগুণ বেশি রোগী রয়েছে। কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন সে সংখ্যা আমাদের জানা নেই। রোগী ব্যবস্থাপনা যে ঠিক নেই, এ কথা আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি। রোগ এবং রোগীর ব্যবস্থাপনা না হলে কোনো রোগই নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা যায় না। আর ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়নি। বেশির ভাগ রোগী ঢাকায় ভিড় করছেন। এতে চিকিৎসা বিলম্বিত হয়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) মো. ফরহাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এডিশ মশার নিধনে আমাদের কার্যক্রম নেই। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ বছর বৃষ্টি দেরিতে শুরু হয়েছে এবং তা নভেম্বর পর্যন্ত ছিল। এতে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি পেয়েছিল। হাসপাতালের বাইরে রোগীর হিসাব নেওয়া হয় না। আমরা একটা পরিকল্পনা করছি, যেন আগামী বছর থেকে হাসপাতালের বাইরের রোগীর হিসাবও রাখা হয়। তাতে মৃত্যুর হারও কমে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়া পরিবারের আর কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবে না: রিজওয়ানা হাসান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫২
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট গণনায় সংশোধনী ও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত