Ajker Patrika

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হাত কত লম্বা, প্রকাশ পেল ট্রুডোর অভিযোগে 

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৪৯
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হাত কত লম্বা, প্রকাশ পেল ট্রুডোর অভিযোগে 

কানাডার মাটিতে শিখ আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের হত্যা বা হত্যাচেষ্টার পেছনে ভারত সরকারের হাত আছে—জাস্টিন ট্রুডোর এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি কানাডা আরও গুরুতর অভিযোগ করেছে। অটোয়া বলেছে, শিখ নেতাদের হত্যা বা হত্যাচেষ্টায় যুক্তদের সঙ্গে কানাডায় ভারতের রাষ্ট্রদূতের সংযোগ আছে। এ নিয়ে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, কানাডাসহ বিশ্বজুড়ে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ‘র’-এর হাত কতটা বিস্তৃত তা ট্রুডোর অভিযোগের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ কূটনৈতিক মহলকে বেশ অবাক করেছে। কারণ, সাধারণত কোনো দেশ নিজেদের মাটিতে অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি বা গুপ্তহত্যার মতো অভিযোগ তোলে না। যেমন—ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান নয়াদিল্লির এমন অভিযানের সঙ্গে বহুল পরিচিত। দুই দেশ একাধিকবার নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়েছে। এমনকি বিমান হামলাসহ একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে দেশগুলোর ভেতরে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এসব বিষয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হয়নি। 

তবে কানাডা যেভাবে বিষয়টি তুলে ধরেছে, তার ফলে বিশ্ব এমন একটি আভাস পাচ্ছে যে, কূটনীতিক, গুপ্তচর, আমলা ও পুলিশ অফিসাররা—যারা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেন—দেশটির ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

গত সোমবার কানাডা বলেছে, তাদের বিশ্বাস, ছয় ভারতীয় কূটনীতিক একটি বিস্তৃত অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের অংশ, যা সারা কানাডায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এই নেটওয়ার্ক কানাডিয়ান শিখদের ভয় দেখানো, হয়রানি ও চাঁদাবাজি, সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত। তারা আরও বলেছে, ভারতীয় এজেন্টরা সরাসরি শিখদের হুমকি ও ভয় দেখানোর জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অথবা ভাড়াটে ব্যক্তিদের মাধ্যমে শিখদের চাঁদাবাজি ও অন্যান্য হুমকি দিয়ে থাকে। 

কানাডার কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাদের তদন্তে সহায়তা করেছে। তবে ভারতীয়রা কীভাবে তাদের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত, তাদের হ্যান্ডলার বা নিয়ন্ত্রক কারা ছিল, তারা কী ধরনের অপরাধ করেছিল কিংবা কারা তাদের শিকার হয়েছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেয়নি কানাডীয়রা। 

এর আগে জাস্টিন ট্রুডো ভারত সরকারকে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার দায়ে অভিযুক্ত করেছিলেন। খালিস্তান আন্দোলন মূলত ভারতের পাঞ্জাবে শিখদের জন্য আলাদা একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে। নিজ্জার দীর্ঘদিন ধরেই কানাডায় বসবাস করছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কানাডার এক কর্মকর্তা বলেছেন, সুখদুল সিং গিল নামে আরেকজন শিখের হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের সঙ্গে যুক্ত ‘অপরাধী নেটওয়ার্কের’ সংযোগ থাকার অনুমান করছি আমরা। গত ২০ সেপ্টেম্বর ৩৯ বছর বয়সী সুখদুল সিং গিলকে ম্যানিটোবার উইনিপেগের একটি গুরুদুয়ারার কাছে নিজ বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। 

এদিকে, হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কানাডা দেশটিতে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মাসহ ছয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। ভারত এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতও পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে কানাডার ছয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। কানাডার কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা তাঁদের অভিযোগের সমর্থনে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সরবরাহ করেছেন। তবে ভারতের বক্তব্য, কানাডা তা করেনি। 

ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা হলো রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (আরএডব্লিউ) এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। তবে আইবি মূলত ভারতের অভ্যন্তরেই কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিদেশের মাটিতে কার্যক্রম পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ ‘র’-এর হাতে। এই দুনিয়ায় ভারতের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। গুপ্তচরবৃত্তি-সংশ্লিষ্ট খাতে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে, তিনি দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কাজও করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ অজিত দোভাল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে বেশ ভূমিকা রাখেন। 

ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব হালের স্কুল অব ক্রিমিনোলজি, সোসিওলজি অ্যান্ড পুলিশিংয়ের গোয়েন্দা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিভাগের লেকচারার ধীরাজ পরমেষা ছায়া বলেছেন, ‘মোদি ও দোভালের নেতৃত্বে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপক উৎসাহ পেয়েছে। তাদের অধীনে এজেন্সিগুলোর ব্যাপক তহবিল প্রাপ্তি ও কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা ছিল।’ 
 
দীর্ঘদিন ধরে ‘র’-এর ফোকাস ছিল ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা। বিশেষ করে, চীন ও পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। ১৯৬৮ সালে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একাংশ নিয়ে ‘র’ গঠন করা হয়। মূলত, ১৯৬৫ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর নয়াদিল্লি একটি বিশেষায়িত গোয়েন্দা সংস্থা সৃষ্টির প্রয়োজন থেকে ‘র’ গঠন করে। 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গ ‘র’-এর সবচেয়ে বড় ফোকাস হয়ে ওঠে পাকিস্তান। কারণ, দুই দেশের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা ও মাদকের বিস্তার নিয়ে একটি ব্যাপক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল একটা পর্যায়ে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, বড় বড় দেশের ভারতীয় দূতাবাসে ‘র’ এজেন্টদের উপস্থিতি তত বেড়েছে। এ ছাড়া, ভারতের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাপক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘র’-এর কার্যক্রমও তত প্রসারিত হয়েছে। 

ড. পরমেষা-ছায়ার সন্দেহ পোষণ করেন যে, কানাডার মাটিতে শিখ আন্দোলনের নেতাদের হত্যা ভারতের জন্য হয়তো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, ‘কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে খালিস্তান আন্দোলনের শিখ নেতাদের নির্মূল করার জন্য জাতীয় সম্পদ ব্যবহার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ তাঁরা নন। একই সঙ্গে তাঁরা মোটেও মোদির জন্য রাজনৈতিক হুমকি নন। শিখ আন্দোলন ভারতের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হয়েও ওঠেনি। কিন্তু তার পরও মোদি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় শিখ চরমপন্থীদের প্রতি হুমকি দেওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ 

ভারত গত বছর থেকে একই ধরনের (হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড) মামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। মার্কিন বিচার বিভাগ এক ভারতীয় নাগরিককে মার্কিন ও কানাডিয়ান পাসপোর্টধারী এক খালিস্তান আন্দোলনের নেতাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা মার্কিন তদন্তে সহযোগিতা করছেন। 

এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর শিখ নেতা ও আইনজীবী গুরপতবন্ত সিং পান্নুন নিউইয়র্কের একটি আদালতে দোভাল ও ‘র’-এর সাবেক প্রধান সামন্ত গোয়েলসহ ভারত সরকার এবং অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। শিখস ফর জাস্টিসের নেতা পান্নুনকে ভারত সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পান্নুন বলেছেন, তিনি জীবননাশের আশঙ্কা করছেন। তিনি আসামিদের কাছে ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ছবি: সংগৃহীত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সে সময় মোদি-বাইডেন বৈঠকে অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছিল, মামলাসংক্রান্ত কারণেই হয়তো দোভাল যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি। তবে ভারত এ বিষয়ে বলেছে, দেশীয় বিষয় তদারকিতে ব্যস্ত থাকায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র যাননি।

তবে ভারতীয় গণমাধ্যম ও রাজনীতি বিশ্লেষকেরা কানাডা-ভারত দ্বন্দ্বে প্রায় একই ধরনের অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের মতে, ট্রুডো মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফায়দা হাসিলের জন্যই এ ধরনের কাজ করছেন। ট্রুডো দীর্ঘদিন ধরেই কানাডার শিখদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কারণ, তাঁর সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য শিখদের সমর্থন জরুরি। উল্লেখ্য, শিখরা কানাডার জনসংখ্যার ২ শতাংশ।

ভারতীয় বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানির মতে, ‘ট্রুডোর পদক্ষেপ ভারতের জন্য বিপৎসীমা দেখিয়ে দিয়েছে, যার অর্থ হলো—কানাডায় নতুন সরকার আসার আগ পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। নতুন সরকার এলে হয়তো দুই দেশের সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব হবে।’

কেসি সিং নামে ভারতের সাবেক এক কূটনীতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক একটি ‘সংকট বিন্দুতে’ পৌঁছে গেছে। কারণ, এক দেশের প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, যেগুলোকে সাধারণত পরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সমঝোতার জন্য জনসমক্ষে বিবাদের বাইরে রাখা হয়।’ 

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প: এশিয়ায় উসকে দেবে সমুদ্রতলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন প্রকল্প নতুন গতি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের মার্কিন আপত্তি দূর হওয়ায় এই উদ্যোগ এখন এশিয়ার নিরাপত্তাকাঠামো পাল্টে দিতে পারে এবং পানির নিচে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে।

উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলায় বহুদিন ধরে পরমাণুচালিত সাবমেরিনের অভিজাত ক্লাবে যোগ দিতে চেয়েছে সিউল। ট্রাম্পের সম্মতি পাওয়ায় দুই দেশের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় জ্বালানির প্রবেশাধিকার মিলেছে, যা এত দিন ছিল বড় বাধা।

তবে বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত অগ্রসরমাণ এই কর্মসূচি চীনকে বিরক্ত করতে পারে এবং জাপানকেও একই ধরনের সক্ষমতা অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবমেরিন ক্যাপ্টেন চোই ইল বলেন, সাবমেরিন অত্যন্ত কার্যকর আক্রমণাত্মক অস্ত্র। তাই এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য।

সিউলের যুক্তি, উত্তর কোরিয়ার পানির নিচে থাকা হুমকি, বিশেষ করে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পরমাণুচালিত সাবমেরিন অপরিহার্য।

দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য বারবার বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না তারা।

গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক থেকে পাওয়া এই চুক্তিকে ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নমনীয়তা বাড়াবে।

এদিকে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, তারাও একই ধরনের সক্ষমতা বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গত মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখায়, কিম জং-উন একটি তথাকথিত পরমাণুচালিত সাবমেরিন পরিদর্শন করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার কর্মসূচি কতটা এগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিছু বিশ্লেষকের সন্দেহ, পিয়ংইয়ং হয়তো রাশিয়ার সহায়তা পাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করছে, তবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: পানি–খাবারহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা হাজারো যাত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র হাতে পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। খাবার–পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, আর ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলি ফাঁকা। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিমান সংস্থা সংস্থা ইন্ডিগোর পরিচালনগত ত্রুটির কারণে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাজার হাজার স্যুটকেস পড়ে আছে। বহু যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক যাত্রী ইন্ডিগোর এই ব্যর্থতাকে ‘মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে এনডিটিভিকে জানান, বারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বিমান সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে। প্রতিবার তারা বলছেন এক ঘণ্টা দেরি, দু–ঘণ্টা দেরি। আমরা একটা বিয়েতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের মালপত্র পর্যন্ত হাতে নেই। ইন্ডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছু বলছেন না। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে খারাপ বিমান সংস্থা। আমি বুঝি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে আর মালপত্র জমিয়ে রাখছেন।’

আরেক যাত্রী জানালেন যে তিনি গতকাল দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার ফ্লাইট পিছিয়ে দিচ্ছে। ইন্ডিগোর তরফ থেকে আমরা কোনো স্পষ্ট খবর পাচ্ছি না।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুবই মানসিক চাপের বিষয় এটা। চৌদ্দ ঘণ্টা ধরে আমি বিমানবন্দরে বসে আছি। খাবার বা অন্য কিছুর জন্য কোনো কুপন নেই। আমার কানেকটিং ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু কর্মীরা কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কর্মীদের বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষণ নেই।’

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। আটকা পড়া যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তাদের কোনো খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। একদল যাত্রী প্রতিবাদস্বরূপ একটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন।

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার ফ্লাইট গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল। আমি আমার সহকর্মীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে ফ্লাইট সময়মতো চলবে। এখন আমরা এখানে বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। ইন্ডিগো আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তারা শুধু বলে চলেছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি হচ্ছে। আমাদের কোনো স্পষ্ট খবর, খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। ইন্ডিগোর সাড়া একেবারেই যাচ্ছেতাই। এখানে বয়স্ক মানুষ আছেন, যাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে, তাদের জন্য কোনো সমাধান নেই। এটা খুবই হাস্যকর।’

গোয়া বিমানবন্দরে একদল যাত্রী হতাশায় ভেঙে পড়েন। এক ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইন্ডিগোর কর্মীদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে বহু পুলিশ কর্মীকেও সেখানে দেখা যায়। চেন্নাই বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। সেখানে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ইন্ডিগোর যাত্রীদের প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। বিশাখাপত্তম বিমানবন্দরে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশটি বহির্গমন ও তেতাল্লিশটি ইনকামিং ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগোর এই পরিচালনগত ত্রুটি আজ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। কুড়ি বছরের পুরোনো এই বিমান সংস্থাটি ক্রু-সংকট ও প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ একাধিক কারণে পাঁচ শ পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার রেকর্ড তৈরি করেছে। এর মধ্যে মুম্বাই বিমানবন্দরে এক শ চারটি, দিল্লি বিমানবন্দরে দু শ পঁচিশটি, বেঙ্গালুরুতে এক শ দু'টি এবং হায়দরাবাদে বিরানব্বইটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূপাল বিমানবন্দরেও কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রু-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে আন্দাজ করেছিল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, যার ফলস্বরূপ শীতকালীন আবহাওয়া ও যানজটের সময়ে পর্যাপ্ত ক্রু-এর অভাব দেখা দিয়েছে। বিমান সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সময়সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বিঘ্ন এড়াতে ফ্লাইট পরিচালন কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন যে পরিচালন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য হবে না।’ বিমান সংস্থাটি গত রাতে তাদের গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর নেটওয়ার্ক এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের সব গ্রাহক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ তারা আরও যোগ করেছে, ‘ইন্ডিগো এই বিলম্বের প্রভাব কমাতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত