মোনায়েম সরকার

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একেবারে কম পুঁজি সঞ্চিত নেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই দেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে দু-একটা কথা বলতে চাই। বলে রাখা ভালো, আমি কোনোভাবেই তথাকথিত নিরপেক্ষ মানুষ নই।
আমার রাজনৈতিক মত আছে। তবে এটাও ঠিক যে, আমি মতান্ধ নই। ভালোটা গ্রহণ এবং খারাপটা বর্জনের উদার মানসিকতা আমার আছে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়ার কথা আমি কখনো ভাবি না।
আমি আমার ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংকট যেমন দেখেছি, তেমনি সংকট কাটিয়ে রাজনীতিকে একটি গতির মধ্যে ফিরিয়ে আনার মতো বিচক্ষণ নেতৃত্বও দেখেছি। তেমন কোনো কোনো নেতার সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগও আমার হয়েছে। এখন বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে দৌড়ঝাঁপ খুব করতে না পারলেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা থেকে বিরত নই। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অনেকের মতো আমাকেও পীড়িত করছে। খারাপ সময় কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে ভালো সময়ও আবার আপসেআপ আসে না। খারাপ সময়কে দূরে সরিয়ে ভালো সময়কে বরণ করার জন্য চেষ্টা থাকতে হয়, পরিকল্পনা থাকতে হয়। এখন ভালোর পক্ষে চলার চেষ্টা ও পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, কোনো শক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি ছিল, শত্রু-মিত্র ছিল—সেটা যেমন দেশের ভেতরে, তেমনি দেশের বাইরেও। অন্য কোনো দেশের চিত্রটা ঠিক তেমন নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের যেমন অনেক অর্জন আছে, তেমনি কিছু পশ্চাদপসরণ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিভক্ত আর বিপক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় স্বার্থ নিয়েও আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হতে পারে না। ঐক্যের চেয়ে বিরোধ আমাদের বেশি পছন্দ। ফলে সাধারণত কোনো একটি ইস্যুতেও আমরা এক হয়ে কথা বলতে পারি না। মতভিন্নতাকে আমরা মুখে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বললেও বাস্তবে ভিন্নমতকে বরদাশত না করাই আমাদের ধারা।
দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা কীভাবে নিরসন হবে, সে বিষয়ে যাওয়ার আগে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত, এই সংকটটা কীভাবে তৈরি হলো?
বেশি অতীতে না গিয়ে আমরা নিকট অতীতের দিকে চোখ ফেরালে কী দেখি? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামক দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল যে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে, সেটাও এক দিনে তৈরি হয়নি। এই দল দুটি কাছাকাছি আসার চেষ্টার চেয়ে দূরত্ব বাড়ানোর কাজটিই অব্যাহতভাবে করে চলেছে। এর জন্য কোন দলের দায় বেশি, সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি আমার স্নেহভাজন সাংবাদিক মাহবুব কামালের একটি লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। মাহবুব কামাল লিখেছেন: ‘রাজনীতির বর্তমান সংকটের শুরুটা করেছে বিএনপিই। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজিত হওয়ার পর এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ২০০১ সালে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে যে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, সেটা শান্তিপূর্ণ নয়। প্রবল আন্দোলনের মুখে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে বিএনপি ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা নেওয়ার পর সেই সংস্কৃতি আমলে নেয়নি। পরবর্তী, অর্থাৎ ২০০৬ সালের নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার লক্ষ্যে প্রথম থেকেই তারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বলে খ্যাত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তাদের দেশছাড়া করার অপচেষ্টা চালায়। এরপর ধর্মকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ইসলামি জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। এতেও তারা আশ্বস্ত হতে পারেনি। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালায়। ওই অভিযানে ব্যর্থ হয়ে (যদিও ওই হামলায় আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন) তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ম্যানিপুলেট প্রক্রিয়ায় হাত দেয়। এ প্রক্রিয়ায় একসময়কার বিএনপি নেতা কে এম হাসান যাতে ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতি হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হতে পারেন, সে জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো হয়। কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সংবিধানের আলোকে ওই পদের জন্য পরবর্তী অপশনগুলো যাচাই না করেই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে যুগপৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়। তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই প্রেক্ষাপটেই এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখলেন আঘাতপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যন্ত্রণায় ধড়ফড়াচ্ছে। তিনি এই ধড়ফড়ানি সহ্য না করে এক কোপে ব্যবস্থাটির ধড় ও মুণ্ডু আলাদা করে তার কবরের শান্তি নিশ্চিত করলেন, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। চারদলীয় জোট সরকার যদি শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০০৬ সালে নিয়মতান্ত্রিক ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতির হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করত, তাহলে এক-এগারোও ঘটত না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও বহাল থাকত বলে অনুমান করি। দ্বিতীয় কথা, বিএনপির পাঠশালায় ছাত্রী হয়েই তো শেখ হাসিনা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাননি, চাইছেন না এবং ক্ষমতার চর্চা করে করে তিনি এমন এক জায়গায় চলে গেছেন, বলা যায় সেটা রুবিকন নদীর ওই পাড়। রুবিকন একবার পার হয়ে গেলে আর এই পাড়ে আসা যায় না। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও লোপ পায়।’
মাহবুব কামালের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের তেমন কিছু নেই। ২০০৮ সালে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছিল। কিন্তু বিএনপি পরাজয়কে সহজভাবে নিতে না পেরে যে রাজনৈতিক কৌশল নেয়, তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈরিতাই বাড়িয়ে তোলে। ২০১৪ সালে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, আগুন-সন্ত্রাসের পথে না যেত, তাহলে একদিকে সংসদের ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেত না, অন্যদিকে বিএনপিকেও সংসদীয় রাজনীতির বাইরে থাকতে হতো না।
রাজনীতিতে সবকিছুতেই বিরোধিতার যে অসুস্থ ধারা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এখন আওয়ামী লীগের কাছেই শুধু ছাড় বা নমনীয়তা প্রত্যাশা না করে বিএনপিকেও কিছু ছাড় দেওয়ার মানসিকতায় ফিরতে হবে।
লেখাটি শেষ করতে চাই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে। খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর বয়স হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটাকে কোনোভাবেই মানবিক বলা চলে না। প্রতিহিংসাপরায়ণতাই বিএনপির রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। অথচ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির দায়িত্ব খালেদা জিয়া নেওয়ার পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করার সুযোগ ছিল। বিশেষ করে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দুই দল যুগপৎভাবে অগ্রসর হওয়ায় সমঝোতার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ প্রশস্ত হয়েছিল। কিন্তু সংকীর্ণতার পথেই হাঁটা হয়েছে।
তবে সময় শেষ হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি না। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনাই পারেন একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে। যদিও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে গত সোমবার নিজের সম্মানে আয়োজিত একটি সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বলেছেন, ‘রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো আশির ওপরে। এমনিই তো সময় হয়ে গেছে, তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই।’
দেশের মানুষ যে মানবিক, উদার শেখ হাসিনাকে চেনে, এই বক্তব্য তার সঙ্গে যায় না। বিষ পান করে যিনি নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশা সব সময় বেশি থাকে। খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন বলেই তিনি কেন নিজেকে রূঢ় হিসেবে উপস্থাপন করবেন? তাঁকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে, তারা এখন তাঁর কাছে দলীয় প্রধানের জীবন রক্ষার জন্য করুণাপ্রার্থী।
আইনের মারপ্যাঁচ নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিলে রাজনীতিতে সমঝোতার বাতাবরণ সৃষ্টি হবে। এতে কারও ক্ষতির কিছু নেই, বরং লাভের সম্ভাবনা শতভাগ।
অন্তত বলা তো যাবে, ‘মারিলি কলসির কানা, তাই বলে প্রেম দিব না!’
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একেবারে কম পুঁজি সঞ্চিত নেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই দেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে দু-একটা কথা বলতে চাই। বলে রাখা ভালো, আমি কোনোভাবেই তথাকথিত নিরপেক্ষ মানুষ নই।
আমার রাজনৈতিক মত আছে। তবে এটাও ঠিক যে, আমি মতান্ধ নই। ভালোটা গ্রহণ এবং খারাপটা বর্জনের উদার মানসিকতা আমার আছে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়ার কথা আমি কখনো ভাবি না।
আমি আমার ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংকট যেমন দেখেছি, তেমনি সংকট কাটিয়ে রাজনীতিকে একটি গতির মধ্যে ফিরিয়ে আনার মতো বিচক্ষণ নেতৃত্বও দেখেছি। তেমন কোনো কোনো নেতার সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগও আমার হয়েছে। এখন বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে দৌড়ঝাঁপ খুব করতে না পারলেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা থেকে বিরত নই। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অনেকের মতো আমাকেও পীড়িত করছে। খারাপ সময় কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে ভালো সময়ও আবার আপসেআপ আসে না। খারাপ সময়কে দূরে সরিয়ে ভালো সময়কে বরণ করার জন্য চেষ্টা থাকতে হয়, পরিকল্পনা থাকতে হয়। এখন ভালোর পক্ষে চলার চেষ্টা ও পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, কোনো শক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি ছিল, শত্রু-মিত্র ছিল—সেটা যেমন দেশের ভেতরে, তেমনি দেশের বাইরেও। অন্য কোনো দেশের চিত্রটা ঠিক তেমন নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের যেমন অনেক অর্জন আছে, তেমনি কিছু পশ্চাদপসরণ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিভক্ত আর বিপক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় স্বার্থ নিয়েও আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হতে পারে না। ঐক্যের চেয়ে বিরোধ আমাদের বেশি পছন্দ। ফলে সাধারণত কোনো একটি ইস্যুতেও আমরা এক হয়ে কথা বলতে পারি না। মতভিন্নতাকে আমরা মুখে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বললেও বাস্তবে ভিন্নমতকে বরদাশত না করাই আমাদের ধারা।
দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা কীভাবে নিরসন হবে, সে বিষয়ে যাওয়ার আগে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত, এই সংকটটা কীভাবে তৈরি হলো?
বেশি অতীতে না গিয়ে আমরা নিকট অতীতের দিকে চোখ ফেরালে কী দেখি? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামক দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল যে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে, সেটাও এক দিনে তৈরি হয়নি। এই দল দুটি কাছাকাছি আসার চেষ্টার চেয়ে দূরত্ব বাড়ানোর কাজটিই অব্যাহতভাবে করে চলেছে। এর জন্য কোন দলের দায় বেশি, সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি আমার স্নেহভাজন সাংবাদিক মাহবুব কামালের একটি লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। মাহবুব কামাল লিখেছেন: ‘রাজনীতির বর্তমান সংকটের শুরুটা করেছে বিএনপিই। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজিত হওয়ার পর এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ২০০১ সালে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে যে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, সেটা শান্তিপূর্ণ নয়। প্রবল আন্দোলনের মুখে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে বিএনপি ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা নেওয়ার পর সেই সংস্কৃতি আমলে নেয়নি। পরবর্তী, অর্থাৎ ২০০৬ সালের নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার লক্ষ্যে প্রথম থেকেই তারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বলে খ্যাত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তাদের দেশছাড়া করার অপচেষ্টা চালায়। এরপর ধর্মকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ইসলামি জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। এতেও তারা আশ্বস্ত হতে পারেনি। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালায়। ওই অভিযানে ব্যর্থ হয়ে (যদিও ওই হামলায় আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন) তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ম্যানিপুলেট প্রক্রিয়ায় হাত দেয়। এ প্রক্রিয়ায় একসময়কার বিএনপি নেতা কে এম হাসান যাতে ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতি হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হতে পারেন, সে জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো হয়। কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সংবিধানের আলোকে ওই পদের জন্য পরবর্তী অপশনগুলো যাচাই না করেই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে যুগপৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়। তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই প্রেক্ষাপটেই এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখলেন আঘাতপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যন্ত্রণায় ধড়ফড়াচ্ছে। তিনি এই ধড়ফড়ানি সহ্য না করে এক কোপে ব্যবস্থাটির ধড় ও মুণ্ডু আলাদা করে তার কবরের শান্তি নিশ্চিত করলেন, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। চারদলীয় জোট সরকার যদি শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০০৬ সালে নিয়মতান্ত্রিক ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতির হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করত, তাহলে এক-এগারোও ঘটত না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও বহাল থাকত বলে অনুমান করি। দ্বিতীয় কথা, বিএনপির পাঠশালায় ছাত্রী হয়েই তো শেখ হাসিনা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাননি, চাইছেন না এবং ক্ষমতার চর্চা করে করে তিনি এমন এক জায়গায় চলে গেছেন, বলা যায় সেটা রুবিকন নদীর ওই পাড়। রুবিকন একবার পার হয়ে গেলে আর এই পাড়ে আসা যায় না। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও লোপ পায়।’
মাহবুব কামালের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের তেমন কিছু নেই। ২০০৮ সালে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছিল। কিন্তু বিএনপি পরাজয়কে সহজভাবে নিতে না পেরে যে রাজনৈতিক কৌশল নেয়, তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈরিতাই বাড়িয়ে তোলে। ২০১৪ সালে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, আগুন-সন্ত্রাসের পথে না যেত, তাহলে একদিকে সংসদের ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেত না, অন্যদিকে বিএনপিকেও সংসদীয় রাজনীতির বাইরে থাকতে হতো না।
রাজনীতিতে সবকিছুতেই বিরোধিতার যে অসুস্থ ধারা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এখন আওয়ামী লীগের কাছেই শুধু ছাড় বা নমনীয়তা প্রত্যাশা না করে বিএনপিকেও কিছু ছাড় দেওয়ার মানসিকতায় ফিরতে হবে।
লেখাটি শেষ করতে চাই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে। খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর বয়স হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটাকে কোনোভাবেই মানবিক বলা চলে না। প্রতিহিংসাপরায়ণতাই বিএনপির রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। অথচ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির দায়িত্ব খালেদা জিয়া নেওয়ার পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করার সুযোগ ছিল। বিশেষ করে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দুই দল যুগপৎভাবে অগ্রসর হওয়ায় সমঝোতার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ প্রশস্ত হয়েছিল। কিন্তু সংকীর্ণতার পথেই হাঁটা হয়েছে।
তবে সময় শেষ হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি না। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনাই পারেন একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে। যদিও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে গত সোমবার নিজের সম্মানে আয়োজিত একটি সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বলেছেন, ‘রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো আশির ওপরে। এমনিই তো সময় হয়ে গেছে, তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই।’
দেশের মানুষ যে মানবিক, উদার শেখ হাসিনাকে চেনে, এই বক্তব্য তার সঙ্গে যায় না। বিষ পান করে যিনি নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশা সব সময় বেশি থাকে। খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন বলেই তিনি কেন নিজেকে রূঢ় হিসেবে উপস্থাপন করবেন? তাঁকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে, তারা এখন তাঁর কাছে দলীয় প্রধানের জীবন রক্ষার জন্য করুণাপ্রার্থী।
আইনের মারপ্যাঁচ নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিলে রাজনীতিতে সমঝোতার বাতাবরণ সৃষ্টি হবে। এতে কারও ক্ষতির কিছু নেই, বরং লাভের সম্ভাবনা শতভাগ।
অন্তত বলা তো যাবে, ‘মারিলি কলসির কানা, তাই বলে প্রেম দিব না!’
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
মোনায়েম সরকার

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একেবারে কম পুঁজি সঞ্চিত নেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই দেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে দু-একটা কথা বলতে চাই। বলে রাখা ভালো, আমি কোনোভাবেই তথাকথিত নিরপেক্ষ মানুষ নই।
আমার রাজনৈতিক মত আছে। তবে এটাও ঠিক যে, আমি মতান্ধ নই। ভালোটা গ্রহণ এবং খারাপটা বর্জনের উদার মানসিকতা আমার আছে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়ার কথা আমি কখনো ভাবি না।
আমি আমার ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংকট যেমন দেখেছি, তেমনি সংকট কাটিয়ে রাজনীতিকে একটি গতির মধ্যে ফিরিয়ে আনার মতো বিচক্ষণ নেতৃত্বও দেখেছি। তেমন কোনো কোনো নেতার সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগও আমার হয়েছে। এখন বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে দৌড়ঝাঁপ খুব করতে না পারলেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা থেকে বিরত নই। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অনেকের মতো আমাকেও পীড়িত করছে। খারাপ সময় কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে ভালো সময়ও আবার আপসেআপ আসে না। খারাপ সময়কে দূরে সরিয়ে ভালো সময়কে বরণ করার জন্য চেষ্টা থাকতে হয়, পরিকল্পনা থাকতে হয়। এখন ভালোর পক্ষে চলার চেষ্টা ও পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, কোনো শক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি ছিল, শত্রু-মিত্র ছিল—সেটা যেমন দেশের ভেতরে, তেমনি দেশের বাইরেও। অন্য কোনো দেশের চিত্রটা ঠিক তেমন নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের যেমন অনেক অর্জন আছে, তেমনি কিছু পশ্চাদপসরণ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিভক্ত আর বিপক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় স্বার্থ নিয়েও আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হতে পারে না। ঐক্যের চেয়ে বিরোধ আমাদের বেশি পছন্দ। ফলে সাধারণত কোনো একটি ইস্যুতেও আমরা এক হয়ে কথা বলতে পারি না। মতভিন্নতাকে আমরা মুখে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বললেও বাস্তবে ভিন্নমতকে বরদাশত না করাই আমাদের ধারা।
দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা কীভাবে নিরসন হবে, সে বিষয়ে যাওয়ার আগে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত, এই সংকটটা কীভাবে তৈরি হলো?
বেশি অতীতে না গিয়ে আমরা নিকট অতীতের দিকে চোখ ফেরালে কী দেখি? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামক দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল যে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে, সেটাও এক দিনে তৈরি হয়নি। এই দল দুটি কাছাকাছি আসার চেষ্টার চেয়ে দূরত্ব বাড়ানোর কাজটিই অব্যাহতভাবে করে চলেছে। এর জন্য কোন দলের দায় বেশি, সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি আমার স্নেহভাজন সাংবাদিক মাহবুব কামালের একটি লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। মাহবুব কামাল লিখেছেন: ‘রাজনীতির বর্তমান সংকটের শুরুটা করেছে বিএনপিই। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজিত হওয়ার পর এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ২০০১ সালে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে যে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, সেটা শান্তিপূর্ণ নয়। প্রবল আন্দোলনের মুখে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে বিএনপি ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা নেওয়ার পর সেই সংস্কৃতি আমলে নেয়নি। পরবর্তী, অর্থাৎ ২০০৬ সালের নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার লক্ষ্যে প্রথম থেকেই তারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বলে খ্যাত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তাদের দেশছাড়া করার অপচেষ্টা চালায়। এরপর ধর্মকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ইসলামি জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। এতেও তারা আশ্বস্ত হতে পারেনি। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালায়। ওই অভিযানে ব্যর্থ হয়ে (যদিও ওই হামলায় আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন) তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ম্যানিপুলেট প্রক্রিয়ায় হাত দেয়। এ প্রক্রিয়ায় একসময়কার বিএনপি নেতা কে এম হাসান যাতে ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতি হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হতে পারেন, সে জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো হয়। কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সংবিধানের আলোকে ওই পদের জন্য পরবর্তী অপশনগুলো যাচাই না করেই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে যুগপৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়। তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই প্রেক্ষাপটেই এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখলেন আঘাতপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যন্ত্রণায় ধড়ফড়াচ্ছে। তিনি এই ধড়ফড়ানি সহ্য না করে এক কোপে ব্যবস্থাটির ধড় ও মুণ্ডু আলাদা করে তার কবরের শান্তি নিশ্চিত করলেন, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। চারদলীয় জোট সরকার যদি শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০০৬ সালে নিয়মতান্ত্রিক ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতির হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করত, তাহলে এক-এগারোও ঘটত না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও বহাল থাকত বলে অনুমান করি। দ্বিতীয় কথা, বিএনপির পাঠশালায় ছাত্রী হয়েই তো শেখ হাসিনা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাননি, চাইছেন না এবং ক্ষমতার চর্চা করে করে তিনি এমন এক জায়গায় চলে গেছেন, বলা যায় সেটা রুবিকন নদীর ওই পাড়। রুবিকন একবার পার হয়ে গেলে আর এই পাড়ে আসা যায় না। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও লোপ পায়।’
মাহবুব কামালের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের তেমন কিছু নেই। ২০০৮ সালে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছিল। কিন্তু বিএনপি পরাজয়কে সহজভাবে নিতে না পেরে যে রাজনৈতিক কৌশল নেয়, তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈরিতাই বাড়িয়ে তোলে। ২০১৪ সালে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, আগুন-সন্ত্রাসের পথে না যেত, তাহলে একদিকে সংসদের ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেত না, অন্যদিকে বিএনপিকেও সংসদীয় রাজনীতির বাইরে থাকতে হতো না।
রাজনীতিতে সবকিছুতেই বিরোধিতার যে অসুস্থ ধারা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এখন আওয়ামী লীগের কাছেই শুধু ছাড় বা নমনীয়তা প্রত্যাশা না করে বিএনপিকেও কিছু ছাড় দেওয়ার মানসিকতায় ফিরতে হবে।
লেখাটি শেষ করতে চাই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে। খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর বয়স হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটাকে কোনোভাবেই মানবিক বলা চলে না। প্রতিহিংসাপরায়ণতাই বিএনপির রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। অথচ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির দায়িত্ব খালেদা জিয়া নেওয়ার পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করার সুযোগ ছিল। বিশেষ করে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দুই দল যুগপৎভাবে অগ্রসর হওয়ায় সমঝোতার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ প্রশস্ত হয়েছিল। কিন্তু সংকীর্ণতার পথেই হাঁটা হয়েছে।
তবে সময় শেষ হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি না। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনাই পারেন একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে। যদিও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে গত সোমবার নিজের সম্মানে আয়োজিত একটি সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বলেছেন, ‘রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো আশির ওপরে। এমনিই তো সময় হয়ে গেছে, তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই।’
দেশের মানুষ যে মানবিক, উদার শেখ হাসিনাকে চেনে, এই বক্তব্য তার সঙ্গে যায় না। বিষ পান করে যিনি নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশা সব সময় বেশি থাকে। খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন বলেই তিনি কেন নিজেকে রূঢ় হিসেবে উপস্থাপন করবেন? তাঁকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে, তারা এখন তাঁর কাছে দলীয় প্রধানের জীবন রক্ষার জন্য করুণাপ্রার্থী।
আইনের মারপ্যাঁচ নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিলে রাজনীতিতে সমঝোতার বাতাবরণ সৃষ্টি হবে। এতে কারও ক্ষতির কিছু নেই, বরং লাভের সম্ভাবনা শতভাগ।
অন্তত বলা তো যাবে, ‘মারিলি কলসির কানা, তাই বলে প্রেম দিব না!’
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একেবারে কম পুঁজি সঞ্চিত নেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই দেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে দু-একটা কথা বলতে চাই। বলে রাখা ভালো, আমি কোনোভাবেই তথাকথিত নিরপেক্ষ মানুষ নই।
আমার রাজনৈতিক মত আছে। তবে এটাও ঠিক যে, আমি মতান্ধ নই। ভালোটা গ্রহণ এবং খারাপটা বর্জনের উদার মানসিকতা আমার আছে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়ার কথা আমি কখনো ভাবি না।
আমি আমার ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংকট যেমন দেখেছি, তেমনি সংকট কাটিয়ে রাজনীতিকে একটি গতির মধ্যে ফিরিয়ে আনার মতো বিচক্ষণ নেতৃত্বও দেখেছি। তেমন কোনো কোনো নেতার সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগও আমার হয়েছে। এখন বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে দৌড়ঝাঁপ খুব করতে না পারলেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা থেকে বিরত নই। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অনেকের মতো আমাকেও পীড়িত করছে। খারাপ সময় কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে ভালো সময়ও আবার আপসেআপ আসে না। খারাপ সময়কে দূরে সরিয়ে ভালো সময়কে বরণ করার জন্য চেষ্টা থাকতে হয়, পরিকল্পনা থাকতে হয়। এখন ভালোর পক্ষে চলার চেষ্টা ও পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, কোনো শক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি ছিল, শত্রু-মিত্র ছিল—সেটা যেমন দেশের ভেতরে, তেমনি দেশের বাইরেও। অন্য কোনো দেশের চিত্রটা ঠিক তেমন নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের যেমন অনেক অর্জন আছে, তেমনি কিছু পশ্চাদপসরণ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিভক্ত আর বিপক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় স্বার্থ নিয়েও আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হতে পারে না। ঐক্যের চেয়ে বিরোধ আমাদের বেশি পছন্দ। ফলে সাধারণত কোনো একটি ইস্যুতেও আমরা এক হয়ে কথা বলতে পারি না। মতভিন্নতাকে আমরা মুখে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বললেও বাস্তবে ভিন্নমতকে বরদাশত না করাই আমাদের ধারা।
দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা কীভাবে নিরসন হবে, সে বিষয়ে যাওয়ার আগে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত, এই সংকটটা কীভাবে তৈরি হলো?
বেশি অতীতে না গিয়ে আমরা নিকট অতীতের দিকে চোখ ফেরালে কী দেখি? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামক দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল যে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে, সেটাও এক দিনে তৈরি হয়নি। এই দল দুটি কাছাকাছি আসার চেষ্টার চেয়ে দূরত্ব বাড়ানোর কাজটিই অব্যাহতভাবে করে চলেছে। এর জন্য কোন দলের দায় বেশি, সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি আমার স্নেহভাজন সাংবাদিক মাহবুব কামালের একটি লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। মাহবুব কামাল লিখেছেন: ‘রাজনীতির বর্তমান সংকটের শুরুটা করেছে বিএনপিই। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজিত হওয়ার পর এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ২০০১ সালে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে যে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, সেটা শান্তিপূর্ণ নয়। প্রবল আন্দোলনের মুখে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে বিএনপি ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা নেওয়ার পর সেই সংস্কৃতি আমলে নেয়নি। পরবর্তী, অর্থাৎ ২০০৬ সালের নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার লক্ষ্যে প্রথম থেকেই তারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বলে খ্যাত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তাদের দেশছাড়া করার অপচেষ্টা চালায়। এরপর ধর্মকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ইসলামি জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। এতেও তারা আশ্বস্ত হতে পারেনি। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালায়। ওই অভিযানে ব্যর্থ হয়ে (যদিও ওই হামলায় আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন) তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ম্যানিপুলেট প্রক্রিয়ায় হাত দেয়। এ প্রক্রিয়ায় একসময়কার বিএনপি নেতা কে এম হাসান যাতে ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতি হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হতে পারেন, সে জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো হয়। কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সংবিধানের আলোকে ওই পদের জন্য পরবর্তী অপশনগুলো যাচাই না করেই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে যুগপৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়। তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই প্রেক্ষাপটেই এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখলেন আঘাতপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যন্ত্রণায় ধড়ফড়াচ্ছে। তিনি এই ধড়ফড়ানি সহ্য না করে এক কোপে ব্যবস্থাটির ধড় ও মুণ্ডু আলাদা করে তার কবরের শান্তি নিশ্চিত করলেন, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। চারদলীয় জোট সরকার যদি শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০০৬ সালে নিয়মতান্ত্রিক ইমিডিয়েট পাস্ট প্রধান বিচারপতির হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করত, তাহলে এক-এগারোও ঘটত না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও বহাল থাকত বলে অনুমান করি। দ্বিতীয় কথা, বিএনপির পাঠশালায় ছাত্রী হয়েই তো শেখ হাসিনা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাননি, চাইছেন না এবং ক্ষমতার চর্চা করে করে তিনি এমন এক জায়গায় চলে গেছেন, বলা যায় সেটা রুবিকন নদীর ওই পাড়। রুবিকন একবার পার হয়ে গেলে আর এই পাড়ে আসা যায় না। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও লোপ পায়।’
মাহবুব কামালের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের তেমন কিছু নেই। ২০০৮ সালে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছিল। কিন্তু বিএনপি পরাজয়কে সহজভাবে নিতে না পেরে যে রাজনৈতিক কৌশল নেয়, তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈরিতাই বাড়িয়ে তোলে। ২০১৪ সালে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, আগুন-সন্ত্রাসের পথে না যেত, তাহলে একদিকে সংসদের ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেত না, অন্যদিকে বিএনপিকেও সংসদীয় রাজনীতির বাইরে থাকতে হতো না।
রাজনীতিতে সবকিছুতেই বিরোধিতার যে অসুস্থ ধারা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এখন আওয়ামী লীগের কাছেই শুধু ছাড় বা নমনীয়তা প্রত্যাশা না করে বিএনপিকেও কিছু ছাড় দেওয়ার মানসিকতায় ফিরতে হবে।
লেখাটি শেষ করতে চাই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে। খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর বয়স হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটাকে কোনোভাবেই মানবিক বলা চলে না। প্রতিহিংসাপরায়ণতাই বিএনপির রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। অথচ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির দায়িত্ব খালেদা জিয়া নেওয়ার পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করার সুযোগ ছিল। বিশেষ করে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দুই দল যুগপৎভাবে অগ্রসর হওয়ায় সমঝোতার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ প্রশস্ত হয়েছিল। কিন্তু সংকীর্ণতার পথেই হাঁটা হয়েছে।
তবে সময় শেষ হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি না। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনাই পারেন একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে। যদিও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে গত সোমবার নিজের সম্মানে আয়োজিত একটি সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বলেছেন, ‘রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো আশির ওপরে। এমনিই তো সময় হয়ে গেছে, তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই।’
দেশের মানুষ যে মানবিক, উদার শেখ হাসিনাকে চেনে, এই বক্তব্য তার সঙ্গে যায় না। বিষ পান করে যিনি নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশা সব সময় বেশি থাকে। খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন বলেই তিনি কেন নিজেকে রূঢ় হিসেবে উপস্থাপন করবেন? তাঁকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে, তারা এখন তাঁর কাছে দলীয় প্রধানের জীবন রক্ষার জন্য করুণাপ্রার্থী।
আইনের মারপ্যাঁচ নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিলে রাজনীতিতে সমঝোতার বাতাবরণ সৃষ্টি হবে। এতে কারও ক্ষতির কিছু নেই, বরং লাভের সম্ভাবনা শতভাগ।
অন্তত বলা তো যাবে, ‘মারিলি কলসির কানা, তাই বলে প্রেম দিব না!’
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে
০৬ অক্টোবর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে
০৬ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে
০৬ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনার আমি সাক্ষী। অনেক উত্থান-পতন কাছে থেকে দেখেছি। কোনো কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতও থেকেছি। এ পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া সব বড় ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এটা বলতেই পারি যে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে
০৬ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫