Ajker Patrika

বাস্তবতার মধ্যে থেকেই রাজনীতি করতে হয়

মাসুদ রানা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯: ৪৬
বাস্তবতার মধ্যে থেকেই রাজনীতি করতে হয়

ড. মাহবুব উল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: অনেকে বলেন, রাজনীতিবিদদের হাতে আর রাজনীতি নেই—আপনি কি এর সঙ্গে একমত? 
ড. মাহবুব উল্লাহ: রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই, সেটা ঢালাও একটা উক্তি। এটা বলা হয় এ জন্য যে আমাদের সংসদে ৬০ শতাংশ যাঁরা সংসদ সদস্য, তাঁদের জীবিকা বা পেশা হলো ব্যবসা। তাই বলা হয় ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে গ্রাস করেছেন। সে কারণে বলা হয়, রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই।

যেকোনো সমাজের মতো আমাদের সমাজও বিবর্তিত, পরিবর্তিত হচ্ছে। ১৯৭১ বা ৭২ সালে আমাদের সমাজকাঠামোর যে বিন্যাস ছিল, সেটা বিভিন্নভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বাঙালি ও বাংলাদেশিদের কাছে ব্যবসা হলো ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য একটা ভালো উপায়। অনেক তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চিন্তা করে, তারা ব্যবসা করবে। আর তাদের মধ্যে একটি অংশ মনে করে, বিসিএস পাস করে প্রশাসন ক্যাডার হতে হবে। যারা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বসে তার পঠিত বিষয়ে পড়াশোনা না করে, বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করে। সোজা কথা হলো, আমাদের সমাজের একটা পরিবর্তন এসে গেছে।

একসময় রাজনীতি করতেন উকিল-মোক্তাররা। ব্রিটিশ আমলে সেটাই ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। আর মক্কেলদের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা রাজনীতি করতেন। নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সমাজের নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। সেখানে একটা প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলেন ব্যবসায়ীরা। তাই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীরা বেশি সক্রিয়। তাঁদের রাজনীতি করাতে সমস্যা হলো, এটাকে ব্যবহার করেন তাঁদের ব্যবসার প্রসারের জন্য। এ অবস্থায় দেশের সাধারণ জনগণের অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ একটা গোষ্ঠী লাভবান হয়, কিন্তু সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজ একটি দৈনিকে দেখলাম, কোন কোন ব্যবসায়ী বিদ্যুতের জন্য কত টাকা পেয়েছেন। তাঁরা কিন্তু রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেন। আমি মনে করি, আমরা যে পরিবর্তনটা দেখছি, সেটা সমাজের একটা অংশের পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে এই ধারাটাকে পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।

আজকের পত্রিকা: রাজনীতি কি ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: তাঁদের থেকে তো এমনিতেই মুক্তি পাওয়া যাবে না। একটা সামাজিক শক্তির বিকাশের কারণে এগুলো হচ্ছে। তাই সামাজিক ডায়নামিক্সের পরিবর্তন করতে পারলে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে গায়ের জোর খাটিয়ে এর পরিবর্তন করা যাবে না। শেখ হাসিনার কথাই বলেন বা খালেদা জিয়ার কথাই বলেন, তাঁরা চাইলেই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের এই বাস্তবতার মধ্যে থেকেই কিন্তু রাজনীতি করতে হয়। কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কখন এই শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এ জন্য প্রয়োজন শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, মেহনতি মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের রাজনীতিতে নিয়ে আসা। তাঁদের সক্রিয় করতে সহায়তা করা। কাজটা কিন্তু আমাদের করতে হবে। তাঁরা যদি শক্তিশালী হতে পারেন, তাহলে অন্য শক্তিগুলো প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। তাঁরা একটা চাপের মধ্যে থাকবেন।
 
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করেছে। এই দেয়াল ভাঙার উপায় কী?
ড. মাহবুব উল্লাহ: শেষ পর্যন্ত এ ধরনের শক্তি এবং বিস্তারকারী কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠী টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস বলে, ফিলিপাইনে মার্কোস ২০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকে যেতে হয়েছে। ইরানের শাহ বহু বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকেও ক্ষমতা হারাতে হয়েছে। স্পেনে ফ্রাঙ্কো ৩০-৪০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, পর্তুগালে ছিলেন সালাজার—তিনিও গেছেন। এরপর মিসরের হোসনি মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের কথা বলা যায়।

তাই আজ বা কাল হোক তাঁদের কিন্তু যেতে হবে। প্রশ্ন হলো, কেউ একটু বেশি বা কম সময় নিয়ে ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁরা কিন্তু প্রথম দিকে সমাজের মধ্যে ‘ডি-মলারাইজিং’ পরিস্থিতি তৈরি করেন। সন্ত্রাস, ভয় দেখিয়ে, গুম-খুন করে, ন্যায়বিচার না করে, বিপরীত পক্ষের মানুষদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পেশা ধ্বংস করে দিয়ে দেশের মধ্যে একটা ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। সেই পরিবেশের কারণে দেখা যায় যে সাধারণ মানুষ মুখ খোলে না এবং কথা বলতে ভয় পায়।

কিন্তু এভাবে চিরদিন এ অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। রোমানিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন নিকোলাই চসেস্কু। শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন না তাঁর পতন কীভাবে হবে। তিনি একটা জনসভায় বক্তৃতা দিতে গেছেন। বক্তৃতার মাঝখানে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে প্রশ্ন করা শুরু হলো। প্রশ্ন করতে করতে একটা বিরাট বিক্ষোভ শুরু হলো। আর বিক্ষোভ থেকে উত্তাল অভ্যুত্থান। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। সামরিক বাহিনীতে তাঁর যারা বিরোধী ছিল, তারা তাঁকে দুই মিনিটের বিচারের কথা বলে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছিল। তারপর লাশ কৃষ্ণসাগরে ফেলে দিয়েছিল। জনগণের ওপর তাঁর একটা প্রভাব ছিল। তারপরও তিনি কিন্তু টিকে থাকতে পারেননি।

বাংলাদেশ বা যেকোনো দেশের কথা বলি না কেন পরিস্থিতিতে একসময় পরিবর্তন আসে। এটা জনগণ বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাটভাবে কাজ করে।

আজকের পত্রিকা: বিএনপি যে এক দফার আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে কি কোনো ফল আসবে? 
ড. মাহবুব উল্লাহ: এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলা উচিত না এবং সংগতও নয়। পুরো বিষয়টা খুব জটিল হয়ে গেছে। একদিকে বিভিন্ন পরাশক্তি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ভারতের কারণে আমরা একটা জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। এখন এই সমীকরণ ভেদ করে যারা উঠে আসতে পারবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে। আর যদি যুক্তরাষ্ট্র সেটাকে ম্যানেজ করতে পারে, তাহলে একটা পরিবর্তন হতে পারে। এটা ঠিক যে বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশে অনেক জনসমাগম হচ্ছে। তবে জনসমাগমের পরেও যদি সরকার পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে লাখ লাখ সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা লাগবে। আমরা দেখেছি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা নিঃস্বার্থ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছিল। একইভাবে কোটাবিরোধী আন্দোলনেও দেখেছিলাম। এভাবে যদি সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে টেনে আনতে পারা যায়, তাহলে এ আন্দোলন সফল হতে পারে, নতুবা সম্ভব নয়।

আজকের পত্রিকা: বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য হবে? 
ড. মাহবুব উল্লাহ: এখন তো পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচন সঠিক ছিল না। এখন বিদেশি পত্রপত্রিকায় যেসব লেখা প্রকাশিত হচ্ছে এবং নামকরা সাংবাদিকেরা যেসব কলাম লিখছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে অতীতের দুই নির্বাচনকে তাঁরা গ্রহণযোগ্য বলতে পারছেন না।
বিশাল একটা দলকে বাইরে রেখে যদি নির্বাচন করা হয়, সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না।

আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ কেমন হতে পারে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: প্রতিটি ঘটনারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। আমরা হয়তো বিচার-বিশ্লেষণও করিনি, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? সে রকম কোনো বিশ্লেষণ আমি লক্ষ করিনি। একই কথা বলব, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে এবং এরশাদ চলে যাওয়ায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো কেমন হয়েছিল? সেটা কীভাবে ছাপ ফেলেছে। এসব নিয়ে আমরা কিন্তু কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করিনি।

তবে এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে সমাজে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একটা পুকুরে ঢিল মারলে যেমন অল্প সময়ের জন্য হলেও একটা তরঙ্গ ওঠে, সমাজ তো আর পুকুরের মতো না। সে তো বিশাল। এখানে নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। তবে আমরা এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ করি না।

এখন যে প্রশ্নটা উঠছে, এত দিন ধরে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা যদি চলে যান, তাহলে নিঃসন্দেহে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। অতীতে যাঁরা ক্ষমতাবান ছিলেন, যথেচ্ছাচার করেছেন, তাঁরা থাকবেন না। আবার নতুন করে ক্ষমতাবান এবং যথেচ্ছাচার তৈরি হবে। এ ছাড়া নিয়মকানুনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। দেখা যাবে, ১৫ বছরের শাসনে যাঁরা টাকাপয়সা করেছেন, তাঁরা তখন বলবেন—এখন আমাদের ব্যবসা খারাপ। আবার দেখা যাবে যে নতুন একটা গোষ্ঠী, তাঁরাও সেভাবে করছেন। মোটা দাগে এই পরিবর্তনগুলো হয়। কিন্তু সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সমাজে একটা পরিবর্তন হয়। সোজা কথা, সমাজের মধ্যে কারা ক্ষমতা বিস্তার করছে, সেই গোষ্ঠীর একটা পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনে জনগণের জন্য শুভ হবে কি না, সেটা আগাম বলা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত