Ajker Patrika

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: কিছু অপ্রিয় প্রসঙ্গ

অরুণ কর্মকার
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: কিছু অপ্রিয় প্রসঙ্গ

এই নিবন্ধে আলোচিত কিছু প্রসঙ্গকে অপ্রিয় বলার একাধিক কারণ আছে। প্রথম কারণ, বিষয়টির এমনই জগাখিচুড়ি অবস্থা যে এ নিয়ে আলোচনা করতে আমার নিজেরও ভালো লাগে না। আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। দ্বিতীয় কারণ, বিষয়টি সম্পর্কে আমার ভাবনা গণমাধ্যমের অনেকেরই ভালো না-ও লাগতে পারে। তৃতীয় কারণ, রাষ্ট্রযন্ত্র বিষয়টিতে বিব্রত বোধ করে, যা আমার কাছে গৌণ মনে হলেও উপেক্ষণীয় নয়। তারপরও কিছু কথা বলা দরকার মনে করি। এর একমাত্র কারণ, আমার ৩০ বছরের বেশি সাংবাদিকতা জীবনের যৎকিঞ্চিৎ বোধ এবং অভিজ্ঞতার তাড়না। 

দুই. এ বিষয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন বিপদগ্রস্ত। শুধু আমাদের দেশে কিংবা নির্দিষ্ট অন্য কোনো দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে। আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কেও একেবারে অজ্ঞাত নই। তবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বক্তব্য পৃথিবীর পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের আরও স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আক্রমণের মুখে রয়েছে।’

এ বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিবের এই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। ওই বার্তায় তিনি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। যেমন ‘আমাদের সব স্বাধীনতা নির্ভর করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি, মানবাধিকারের প্রাণশক্তি’ প্রভৃতি। এ কথাগুলোর তাৎপর্য প্রথমত অনুধাবন করা দরকার শাসক ও রাজনীতিকদের। তারপরই অনুধাবন করা দরকার স্বয়ং গণমাধ্যমের।

শাসক ও রাজনীতিকদের অনুধাবন করা দরকার। কারণ, তাঁরা যেন রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো পর্যায়েই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করেন, যা বর্তমানে পৃথিবীজুড়েই করা হচ্ছে। আর গণমাধ্যমের অনুধাবন করা দরকার নিজের স্বাধীনতার মহামূল্য বহুমাত্রিকতা বোঝার জন্য। এটা বোঝার সামর্থ্য যদি গণমাধ্যমের না থাকে (অধিকাংশের নেই বলে আমার ধারণা), কিংবা অর্জন করতে না পারে, তাহলে তার স্বাধীনতাই বুমেরাং হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার বিঘ্নিত করতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যম কখনো পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। স্বাধীন গণমাধ্যম কারও প্রতি অনুরাগ-বিরাগেরও অনুবর্তী হতে পারে না। এগুলো কোনো আপ্তবাক্য নয়। 

তিন. বর্তমানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—বিশালায়তন ও ভগ্নস্বাস্থ্য। সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ২৭৯টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ৫০৪টি। ৭৭৫টি প্রকাশিত হয় ঢাকার বাইরে থেকে।দৈনিক ছাড়াও অর্ধসাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক পত্রিকা মিলে এ সংখ্যা ৩ হাজার ১৭৬। সেদিন কথায় কথায় একজন সংবাদকর্মী বললেন, জনসংখ্যার তুলনায় দেশে পত্রপত্রিকার সংখ্যা কম। এ বিষয়ে আলোচনা কিংবা মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন মনে করি। আপাতত দৈনিক পত্রিকাগুলোর বিষয়ে কিছু কথা বলি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের মেম্বারস লাউঞ্জে প্রতিদিন সকালে শখানেক দৈনিক পত্রিকা আসে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি মিলিয়ে বড়জোর গোটা বিশেক (সংখ্যাটা বোধ হয় বাড়িয়েই বলছি) পঠিত হয়। এই পঠিতব্য পত্রিকাগুলো খুঁজে নেওয়ার সময় অন্যগুলোর নাম এবং সুরত (চেহারা নিয়ে কথা বলাটা বর্ণবিদ্বেষ বলে না ভাবার জন্য অনুরোধ রইল) নিয়ে কখনো কখনো কারও কারও মন্তব্যে লাউঞ্জে কিঞ্চিৎ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।

তবে সেটি বড় কথা নয়, কথা হলো—এই যে পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হয়, অনেকে এগুলোকে বলেন, পাঠককুলের কাছে জঞ্জাল। এর অনেকগুলোর কোনো অফিস নেই। ২-৪ জন থেকে ৮-১০ জন কর্মী (নিঃসন্দেহে সাংবাদিক) হয়তো আছেন। সম্পাদক-প্রকাশক তো থাকবেনই। আর আছেন জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত তাদের কার্ডধারী প্রতিনিধি। বলা বাহুল্য যে দেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে আছেন আরও অসংখ্য সংবাদকর্মী, যাঁরা ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত ৭৭৫টি দৈনিকের কার্ডধারী প্রতিনিধি।

এই গণমাধ্যমের যাঁরা উদ্যোক্তা, তাঁরা কি স্বাধীনতা বুঝে এসব গণমাধ্যম সৃষ্টি করেছেন যে স্বাধীনতার কথা ওপরে বলা হয়েছে? নাকি সৃষ্টি করে স্বাধীনতা চাইছেন? নাকি স্বাধীনতা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথাই নেই? গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অর্থ তাঁদের কাছে কী? আমাদের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা, সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেসক্লাব, সুশীল সমাজ—যাঁরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে উচ্চকিত, এদের নিয়ে তাঁদের ভাবনা কী? তাঁরা যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেন, এর মধ্যে কি এগুলোও অন্তর্ভুক্ত? এই গণমাধ্যম কি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারবে?

তবে এরা কিন্তু প্রভাবশালী। কারণ ওই যে গণমাধ্যম। সাংবাদিক। সেই প্রভাব। তা ছাড়া, অন্য রকম প্রভাবও আছে। না থাকলে তো পত্রিকার ডিক্লারেশনই পেতেন না। সুতরাং একাধারে প্রভাবশালী এবং বিশৃঙ্খল বিপুলায়তন একটি গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার কিংবা মানবাধিকার নির্বিঘ্ন রাখা, অনুরাগ-বিরাগের অনুবর্তী না হয়ে পক্ষপাতহীন হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জটা আমার বেশ বড়ই মনে হয়। 

চার. রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এ বছর গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৩তম। প্রাপ্ত নম্বর ১০০-এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৩১। এই সূচক ছাড়াও বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয় না।

এই পরিস্থিতির সুযোগে স্বাধীনতার সূচকে এগিয়ে থাকা, বিশ্বব্যবস্থায় প্রভাবশালী, উন্নত কোনো কোনো দেশ আমাদের দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু তাদের দেশের প্রায় স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমেরই বা অবস্থা কী?

আমরা চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খবরাখবরের দিকে একটু নজর দিতে পারি। পৃথিবীর কোন গণমাধ্যম এই যুদ্ধের বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিশ্বাসযোগ্য খবরাখবর প্রকাশ করছে? আমি অন্তত এখন পর্যন্ত এমন কিছু দেখতে পাইনি। রাশিয়ার গণমাধ্যম সে দেশের কর্তৃপক্ষের সুরে সুর মেলাচ্ছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমও একই কাজ করছে।

এ ক্ষেত্রে ইরাক যুদ্ধের কথাও উল্লেখ করা যায়। ইরাক আক্রমণের জন্য আক্রমণকারী শক্তি যেসব গল্প ফেঁদেছিল, তা সমগ্র পৃথিবীর জনমানসে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে সেই সব দেশের গণমাধ্যম, যারা মুক্ত। যাদের স্বাধীনতা আছে।

এগুলো ভুয়া তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। সেই সব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কল্যাণে কোন কাজে লেগেছে?যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান এ বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রাক্কালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ভুয়া তথ্য, অপপ্রচার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও সাংবাদিকতার প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকি সৃষ্টি করছে। কথাটি বলা হয়েছে সেই সব দেশ সম্পর্কে, যেখানে গণমাধ্যম মুক্ত নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। কিন্তু আমরা জানি (নিশ্চয়ই তারাও জানে এবং বোঝে) কথাগুলো তাদের মতো উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রেও সমানভাবে সত্য।

পাঁচ. বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিবের বার্তাটি পড়তে পড়তে মনে পড়ল জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জের কথা। মুক্ত গণমাধ্যমের পশ্চিমা ধ্বজাধারীরা এই সাংবাদিককে এক দশকের বেশি সময় ধরে বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য করছে। তাঁর অপরাধ, নিজের প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্ম উইকিলিকসে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া আমেরিকার বেশ কিছু গোপন নথি প্রকাশ করেছেন। মুক্ত গণমাধ্যমের ধারণা অনুযায়ী, হ্যাক করা হয়তো অপরাধ। সে জন্য আমেরিকা অ্যাসাঞ্জের বিচার করতে বদ্ধপরিকর। কোনো আবেদন-নিবেদনই কানে তুলতে রাজি নয় দেশটি।

সরকারি অফিসে ঢুকে ফাইল থেকে গোপনীয় তথ্যসংবলিত কাগজপত্র হাতানোও কোনো সাংবাদিকের ক্ষেত্রে বোধ করি হ্যাকিংয়ের পর্যায়েরই অপরাধ। হ্যাকিংয়ের মতোই চুরি করে তথ্য সংগ্রহ করাও সাংবাদিকের কাজের স্বীকৃত পদ্ধতি নয়। এমনকি সাংবাদিক আন অথরাইজড কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেলেও তা অথরাইজড বা অফিশিয়াল না করে প্রকাশ করতে পারেন না। কেননা, সাংবাদিককে তথ্যের সূত্র বলতে হয়। কোনো তথ্য চুরি করে পাওয়ার কথা তো বলা যায় না। বলা হয়ও না।

বলা হয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া প্রভৃতি; অর্থাৎ নির্ভেজাল মিথ্যা কথা বলা হয়। তাতে কর্তৃপক্ষের কাছে হয়তো সাংবাদিকের ওজন বাড়ে। কিন্তু সাংবাদিকতা হয় কি?

তাই এসব বিষয় নিয়ে না ভেবে, কিংবা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবি তুললে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত