Ajker Patrika

বাঘের আক্রমণে চোখ হারিয়েও প্রাণীটি সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছেন যে ব্যক্তি

আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ০৯
বাঘের আক্রমণে চোখ হারিয়েও প্রাণীটি সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছেন যে ব্যক্তি

গল্পটা নেপালের ভাদাই থারু নামের এক ব্যক্তির। বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করার সময় বাঘের আক্রমণে চোখ হারান তিনি। তারপর তিনি কী করলেন? প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলেন? না। অবিশ্বাস্য শোনালেও পরের প্রায় দুই দশক ধরে বাঘ বাঁচাতেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

নেপালের খাতা এলাকায় বাস করা বাধাই থারু বলা চলে জীবনের বড় অংশ কাটিয়ে দিয়েছেন পুনর্বনায়ন এবং সংরক্ষণের কাজে। আর এর মূল উদ্দেশ্য বাঘের সংখ্যা বাড়ানো। ২০০৪ সালে জঙ্গলে কাজ করার সময় বাঘের আক্রমণের শিকার হন তিনি। এ সময় একটি চোখ হারান।

আমাদের বেশির ভাগই বুনো পরিবেশে বাঘ দেখিনি। তবে নেপালের খাতা করিডরে বলা চলে এদের পাশাপাশিই বাস করেন মানুষ। বাঘের আক্রমণের ঝুঁকি থাকার পরও এখানকার মানুষ বাঘ সংরক্ষণে সহায়তা করেন। 

নেপালের বারদিয়া এলাকাটির পশ্চিমে ভারত। এই বারদিয়াতেই বাঘের গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন ভাদাই থারু।

তাঁর বাড়ির আশপাশের জঙ্গলে বাঘ খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল না। বিশ শতকের গোড়ার দিকে এক লাখের বেশি বাঘ ঘুরে বেড়াত এশিয়াজুড়ে। কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে থারু যখন বেড়ে ওঠেন, তখন বাঘের সংখ্যা ২০ হাজারের আশপাশে নেমে এসেছে।

তবে এতে শিশু থারুকে বাঘের গল্প বলায় মা-বাবার কোনো বাধা ছিল না। এমন একটি অরণ্য এলাকায় বাস, যেখানে বাঘ ছিল জঙ্গলের রাজা, তাদের এক ধরনের পৌরাণিক চরিত্র হিসেবে দেখা হয়। থারু বলেন, কালেভদ্রে এদের কোনো একটি গ্রামে প্রবেশ করলে একে দেবতাদের অসন্তুষ্টির চিহ্ন হিসেবে দেখা হতো। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বাঘের আবাসস্থল রক্ষায় বন সংরক্ষণে মন দেন।

তারপরই ২০০৪ সালে থারুকে একটি বাঘ আক্রমণ করলে একটি চোখ হারান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি থারুর মনে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে শুরুতে।

‘বাঘের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম হয় আমার মনে’ বলেন থারু, ‘ভেতরে ভেতরে ক্রোধে রীতিমতো জ্বলছিলাম। এমনকি জঙ্গলে ফিরে বাঘের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবল এক তাড়না অনুভব করছিলাম।’

কিন্তু থারু টের পান সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের রাগ কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে জঙ্গলটি বাঘের বাড়ি এবং তাঁর বাসস্থানের ক্ষতি করতে পারি শুধু এই ভয়ে আমাকে আক্রমণ করে বসে।’

আক্রমণের দিনটির কথা মনে করে থারু জানান, বনে ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ কাঠ এবং ঘাস সংগ্রহ করছিলেন। আর তিনি কমিউনিটি ফরেস্ট বা সামাজিক বনায়ন উদ্যোগের চেয়ারম্যান হিসেবে এর তত্ত্বাবধান করছিলেন।

‘মানুষ পুরো বনে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঘটি নিজেকে মানুষ পরিবেষ্টিত অবস্থায় আবিষ্কার করে, পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।’ বলেন তিনি, ‘আমাকে আক্রমণ করা বাঘটি ভয় পেয়েছিল। এটা আমাকে মেরে ফেলতে পারত, কিন্তু এটা আক্রমণ করেই চলে যায়।’

তারপর থারু নেপালের বাঘ রক্ষা করার পাশাপাশি এই অঞ্চলে মানুষ-বন্য প্রাণী সংঘাত প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আবারও কাজ শুরু করেন।

থারু জানান, ১৯৮০-র দশকে থারু গ্রামের চারপাশের খাতা এলাকার জমি বন উজাড়ের কারণে মোটামুটি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে উপকরণ এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বনের ওপর নির্ভর করে এমন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এলাকাটি।

খাতা করিডর নামে পরিচিত জায়গাটি উত্তর প্রদেশের কাতারনিয়াঘাট বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের সঙ্গে নেপালের বারদিয়া জাতীয় উদ্যানের সংযোগ স্থাপন করেছে। এখানকার অরণ্যবেষ্টিত এলাকার পরিমাণ ১১৫ হেক্টর থেকে এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০০ হেক্টরে। থারুদের এই সংরক্ষণ উদ্যোগটি ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) কনজারভেশন এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড জিতে। আর অরণ্য ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসতে শুরু করে বাঘসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী, জানান থারু।

নেপালের একটি চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ছবি: এএফপিউল্লেখ্য, ২০১০ সালে নেপাল বাঘের সংখ্যা ১২১ থেকে দ্বিগুণ করার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তবে লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে গেছে তারা, ডব্লিউডব্লিউএফের তাদের বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫৫-তে।

খাতা করিডর এই অঞ্চলে বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। 

নেপালের  অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর নেচার কনজারভেশন (এনটিএনসি) কাজ করে সামাজিক বনায়ন নিয়ে। সংস্থাটির গবেষক উমেশ পদেল জানান, সাধারণত বন্য প্রাণীরা এ ধরনের করিডরকে তাদের স্থায়ী আবাসস্থল বলে মনে করে না। সংরক্ষণের প্রচেষ্টার আগে, করিডরে ক্যামেরা বাঘ খুব কমই দেখা যেত। কিন্তু ২০২১ সালের বাঘ শুমারিতে দেখা গেছে যে চারটি বাঘ স্থায়ীভাবে খাতা করিডরে বসবাস করছে।

পদেল জানান, বাঘ একটি নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ে বসবাস করে। সাধারণ একটি বাঘের বিচরণের জন্য ৫৮ বর্গমাইল এলাকা প্রয়োজন হয়। নিয়মিতই নতুন আবাস খোঁজে সে। করিডর তাদের অবাধে চলাফেরা করতে এবং সংখ্যা বিস্তারে সাহায্য করে।

বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি সংরক্ষণের দিক থেকে একটি বড় সফলতা হলেও এলাকাটি নতুন একটি সমস্যায় পড়ে গেছে। এখানে মানুষ-বন্য প্রাণী সংখ্যা বেড়েছে।

থারুকে যখন বাঘ আক্রমণ করে মানে ২০০৪ সালের দিকে এমন ঘটনা ছিল বিরল, কিন্তু বাঘের সংখ্যা বাড়ায় এই আক্রমণের ঘটনা বেশ নিয়মিত ঘটছে। ২০১৯ সালের পর থেকে বাংকি ও বারদিয়া জাতীয় উদ্যানে মানুষের ওপর ৩৪টি প্রাণঘাতী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এই করিডর এলাকায় ৬০০০ পরিবারের বাস এবং এর মাঝ দিয়ে চলে গেছে ব্যস্ত একটি মহাসড়ক। এতে মানুষ-বাঘ সংঘাতের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

এনটিএনসি ক্যামেরা ট্র্যাপ দিয়ে বাঘের ওপর নজর রাখে এবং সম্ভাব্য সমস্যাযুক্ত বাঘ শনাক্ত করে। ‘যদি আমরা নিশ্চিত হই এই বাঘগুলো প্রায়ই মানুষের হতাহতের সঙ্গে জড়িত, তাদের ধরার সুপারিশ করি।’ বলেন তিনি। এটি নেপালি সেনাবাহিনী, ন্যাশনাল পার্ক অফিস এবং এনটিএনসির কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল দিয়ে পরিচালিত হয়।

বাঘদের ট্র্যাকিং এবং পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি, এনটিএনসি বাঘের প্রধান খাবার হরিণের সংখ্যা যেন ঠিক থাকে সেদিকেও নজর রাখে। একইভাবে, কৃত্রিম জলাধারের ব্যবস্থা করে বাঘের জনসংখ্যা বাড়াতে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের থেকে বন্য প্রাণীদের দূরে সরিয়ে দিতে সহায়তা করে।

তবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিই মানুষ-বন্য প্রাণী সংঘাত বৃদ্ধির একমাত্র কারণ নয়। পদেল বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা বন্য প্রাণীর আবাসস্থল দখল করছেন, একা বনে প্রবেশ করছেন এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ক্ষতি করছেন। এসব সমস্যা তৈরির কারণেও তাঁরা প্রায়ই বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন।’

তবে বাঘদের চেয়ে মানুষের ব্যবহার পরিবর্তনের চেষ্টা করা সহজ। মানুষকে এসব বিষয়ে বোঝাতে এবং বেড়াসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে আক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে এনটিএনসি।

থারু জানান, মানুষ-বন্য প্রাণী সংঘাত বাড়লেও বাঘের সংখ্যা বাড়ায় স্থানীয় অধিবাসীরা খুশি। 

প্রধান বা শীর্ষ শিকারি হিসেবে বাঘ হলো এখানকার সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী প্রজাতি। যার অর্থ হলো তারা বনের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। আর এ অরণ্যের ওপর আশপাশের সম্প্রদায়গুলো তাদের বাড়িঘর, ভরণপোষণ এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্ভর করে। 

‘বাঘ এক সময় বিপন্ন ছিল, এখন তারা ফিরে এসেছে। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।’ বলেন থারু।

এখানকার মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন করতে শেখানোর মাধ্যমে তিনি আশা করেন যে বাঘের আক্রমণগুলোও কমানো যেতে পারে। ‘পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীর সমান অধিকার আছে’। বলেন তিনি।

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ ভোগাচ্ছে ঘন কুয়াশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশের ব্যস্ত সড়কের ধারে জবুথবু হয়ে বসে আছেন নাছিমা। কোলে তাঁর ছোট্ট নবজাতক। পাতলা একটি কম্বল আর পুরোনো কাঁথা জোড়া দিয়ে কোনো-রকমে নিজের ও নবজাতকের শরীর ঢেকে রেখেছেন। কনকনে বাতাসে নবজাতকের ঠোঁট নীলচে হয়ে এসেছে।

নাছিমা বলেন, ‘শীতটা খুব কষ্ট দিতাছে। কাল থেইকা রাতে ঠিকমতো ঘুমাইতে পারি না। বাচ্চাডারে নিয়া বেশি ভয় লাগতাছে। ঠান্ডা লাগলে কী করুম, সেই চিন্তাই মাথায় ঘোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ দপ্তর জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে অসুস্থতার ঝুঁকি। অনেকে বলছেন, জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার (৫ দিন) পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা; পাশাপাশি থাকবে কুয়াশার প্রকোপ।

ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা বাড়তে থাকে। সোয়া ৭টার সময় নদী পথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।’

জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক ও জনপথ। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

গতকাল সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, উত্তরের জেলা গাইবান্ধা ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশুচিকিৎসক সোহেল বলেন, ‘শীতের মধ্যে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে; যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

জেলার বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডায় দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে।

যশোর প্রতিনিধি জানান, জেলায় চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা এদিনের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন ধরে কুয়াশা ও উত্তরের বাতাসে বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের অনুভূতি।

যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জোহর আলী বলেন, ‘শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না। বাসায় মনে হচ্ছে, গায়ে সুই ফোটাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের প্রকোপ বাড়ছে: ৭ জেলায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ, থাকবে কত দিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৪
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশজুড়ে শীতের দাপট বাড়তে শুরু করেছে। দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শৈত্যপ্রবাহের কবলে সাত জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের কোথাও কোথাও আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় দিনের বেলায়ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডার অনুভূতি বজায় থাকবে।

ঘন কুয়াশার সতর্কতা পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোনো কোনো এলাকায় এই কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তাপমাত্রা ও বৃষ্টির সম্ভাবনায় আগামী কয়েক দিন সারা দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে, তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিভাগীয় শহরগুলোর তাপমাত্রা গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে ১৫ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৪, রংপুরে ১১ দশমিক ২, খুলনায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি, বরিশালে ১২ দশমিক ৪ এবং সিলেটে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানান, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আগামী পাঁচ দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, সতর্ক থাকতে পারেন যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতজুড়ে ঢাকার বাতাসের দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২২৫। যা নির্দেশ করে, ঢাকার বাতাসের অবস্থা খুব অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশকিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— দক্ষিণ পল্লবী (২৮৩), ইস্টার্ন হাউজিং (২৬০), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (২৫১), কল্যাণপুর (২৫০) ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (২২২)।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২২৫, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে ভারতের দিল্লি (১৯১, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (১৯০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে কুয়েতের কুয়েত সিটি (১৮০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘলা ঢাকার আকাশ, কুয়াশার দেখা মিলতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সকাল থেকে ঢাকার আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা গেছে। সূর্যের দেখা মেলেনি এই সকালেও। কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে দেখা যায়, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়েছে ৭৬ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানা যায়, আজ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে।

অধিদপ্তর আরও বলছে, আজ দিনের তাপমাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না।

এছাড়া বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, এ সময় উত্তর/উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

এদিকে গতকাল বুধবার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত