Ajker Patrika

ডিজিটাল চোরের গ্রাম ডুমাইন

শাহরিয়ার হাসান, মধুখালী (ফরিদপুর) থেকে ফিরে
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৩৫
ডিজিটাল চোরের  গ্রাম ডুমাইন

গ্রামের ভেতর দিয়ে পাকা রাস্তাটি গিয়ে মিশেছে গড়াই নদে। নদীর দুই পাড়ের সৌন্দর্যের মতোই মনকাড়া ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন নামের এই গ্রাম। সবুজে ঘেরা গ্রামটিতে নজর কাড়বে রাস্তার দুই পাশে নতুন নতুন আধা পাকা বাড়ি, দালান। একতলা, দোতলা বাড়িগুলোর কোনোটায় বাহারি রং। তবে বাড়িগুলোতে কোনো পুরুষ থাকেন না। কারণ, পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ার আতঙ্ক–তাঁদের পেশা যে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতানো।

ঢাকা ও ফরিদপুর জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ডুমাইন গ্রামের অন্তত ৩০০ যুবকের পেশা প্রতারণা। কয়েক বছর ধরে তাঁরা প্রতারণা করছেন। তাঁরা মূলত মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকাতেই ছাপরাঘর ভেঙে করেছেন দালান, আধা পাকা বাড়ি। একসময়ের ভ্যানচালক এখন চড়ছেন নতুন দামি মোটরসাইকেলে। এলাকায় এই প্রতারকদের পরিচিতি বিকাশ প্রতারক বা টোপ পার্টি। কিছু মানুষ হঠাৎ ধনী হওয়ায় দিন দিন এ পথে আনছে নতুনদের।

আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ফরিদপুরের মধুখালী ও ভাঙ্গা উপজেলা এবং সংলগ্ন মাগুরা ও রাজবাড়ী জেলার কিছু গ্রামজুড়ে এই প্রতারকদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। তবে শুরুটা ১৪-১৫ বছর আগে মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের ডুমাইন গ্রাম থেকেই। গ্রামটির মিঠুন নামের এক যুবক মোবাইলে রিচার্জ প্রতারণার মাধ্যমে এর সূচনা করেন। যথিষ্ঠীরের ছেলে মিঠুন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক কর্মকর্তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রথম ২০১২ সালে গ্রেপ্তার হন। এরপরই অভিনব এই প্রতারণা আলোচনায় আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, মিঠুন এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় অন্তত সাতবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর কাছে শুরুতে দীক্ষা নিয়েছেন গ্রামের সৌখিন, হান্নান, সোহাগসহ কয়েকজন যুবক। তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন দেখে ধীরে ধীরে গ্রামজুড়ে যুবকদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, নদীর পাড়ে কলাবাগান ও একটি মেহগনিবাগানে বানানো অস্থায়ী চালাঘরে সন্ধ্যা হলে বসেন যুবকেরা। দলে দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি সেজে ফোন দেন গ্রাহকদের। কথার মারপ্যাঁচে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের পাসওয়ার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেন। পরে সেগুলো দিয়ে গ্রাহকের অজান্তেই হিসাব থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। এই পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের বাড়ির চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে; যাতে পুলিশ এলে দেখে পালাতে পারেন। কেউ কেউ বাড়ির চিলেকোঠায় ছোট এসি কক্ষে বসে করেন প্রতারণা।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত দুই বছরে অনেক শিক্ষিত সচেতন মানুষও এদের ফাঁদে পড়েছেন বলে শুনেছেন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, আমলা, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

১৭ মে মধুখালী থানায় গিয়ে দেখা যায়, ইমোতে প্রতারণার শিকার হয়ে ৪০ হাজার টাকা খোয়ানো মধ্যবয়সী ব্যক্তি থানায় এসেছেন অভিযোগ দিতে।

 ঢাকার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও ফরিদপুর জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, বিকাশ প্রতারণা নিয়ে ডুমাইন গ্রামের বিভিন্নজনের নামে অন্তত ২১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মানি লন্ডারিংয়ের। প্রতিটি মামলাতেই ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিদের নাম। দেশের যেকোনো প্রান্তের ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগের তদন্ত শেষ পর্যন্ত এই গ্রামেই যাচ্ছে। 
জানতে চাইলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই চক্র এতই বিস্তৃত যে কয়েক বছর ধরে গ্রেপ্তার করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশও হাল ছাড়েনি।

যেভাবে পাতে প্রতারণার ফাঁদ
মধুখালী থানার পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরু হয়েছিল মোবাইল রিচার্জ প্রতারণার মাধ্যমে। তখন প্রতারকেরা মানুষকে ভুলিয়ে তাদের সিমে টাকা ভরাতেন। কিন্তু সিমে থাকা হাজার হাজার টাকা নগদ করতে না পারায় পাতা হয় অন্য ফাঁদ। পুরস্কার পাওয়ার তথ্য জানিয়ে সেটা নিতে সামান্য কিছু টাকা লাগবে দাবি করে কুরিয়ার সার্ভিস বা ডাকযোগে টাকা নেওয়া হতো। তখনো প্রতারণা গ্রামে বিস্তৃত হয়নি। তবে ২০১১ সালে দেশে মোবাইলে অর্থ লেনদেনের প্রথম প্ল্যাটফর্ম বিকাশ চালু হলে প্রতারণায় ঝুঁকে পড়েন আরও কিছু তরুণ। তাঁদের আর্থিক অবস্থা রমরমা হলে লোভ ছড়িয়ে পড়ে অনেকের মধ্যে।

একসময় জড়িয়ে পড়েন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। ছলেবলে ওটিপি জেনে টাকা হাতাতে থাকেন। এই প্রতারণার বিরুদ্ধে তৎপরতায় প্রতারকেরা শুরু করেছে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি।

ডুমাইন পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মোতালেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, টাকার জোরে প্রতারকদের রাজত্ব সর্বত্র। তাঁদের পাড়ার আরিফুল অষ্টম শ্রেণি পাস করে পড়াশোনা ছেড়ে দুই বছর ধরে এই প্রতারণায় নেমেছেন। আরিফুলের বাবা কিছুদিন আগেও ভ্যান চালাতেন, এখন কয়েক মাস পরপর জমি কেনেন।

গডফাদার নেই, শহরে শহরে চক্রের সদস্য
ফরিদপুর জেলা পুলিশ ও সিআইডির কাছে থাকা তালিকায় ডুমাইন ইউনিয়নের অন্তত তিনজন সন্দেহভাজনের নাম রয়েছে। তাঁরা এই ডিজিটাল প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। জানা গেছে, এই প্রতারকদের কোনো গডফাদার নেই। ৮-১০ জনের ছোট ছোট দল হয়ে এ কাজ করছে।

মধুখালী থানার ওসি বলেন, তালিকার চেয়ে বাস্তবে প্রতারকদের সংখ্যা অনেক বেশি।

প্রতারণা পেশা থেকে ফিরে আসার দাবি করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডুমাইন গ্রামের এক যুবক বলেন, ছোট ছোট দলগুলো চার ধাপে কাজটি করে। দু-তিনজন বিভিন্ন শহরের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া দোকান থেকে টাকা যাওয়া মোবাইল নম্বরের তালিকা পাঠান। পরের ধাপে দু-একজন এসব নম্বরে টোপ ফেলে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন। পরে কয়েক হাত ঘুরে অন্য শহর থেকে ওই টাকা ওঠান। তাঁর দাবি, একজন দিনে ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতারণা করেন।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সদ্য বদলি হওয়া বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, এসব মামলার তদন্তে তাঁরা অনেক হিসাবে দিনে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন; যা অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল সিআইডির কাছে।

জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ
গত মঙ্গলবার ডুমাইন ইউনিয়নে গিয়ে জানা গেল, দোপপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, শিয়ালপাড়া, পশ্চিমপাড়া ও ডুমাইন গ্রামের যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষদের নামে প্রতারণার অভিযোগ বেশি। বিভিন্ন মামলায় নাম থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। জানা গেল, গ্রামের নাট্টু চৌধুরী ও তাঁর তিন ছেলে, টিটু, ইকবাল শেখ, আবদুল কাদের শেখ, আরিফুল, লিটন, ইসমাইল, রতন বাবু, মালেক, মানিক, মল্লিক ও ফিরোজ হঠাৎ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে তাঁদের কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোননি, প্রকাশ্য কোনো পেশাও নেই। 
স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই অপরাধীদের মদদ দেন।

পুলিশ বলছে, আতিয়ার নামের সদ্য সাবেক এক ইউপি সদস্য প্রতারক চক্রের সদস্যদের জামিন ও মামলার দিকটি দেখেন। বিনিময়ে মাস গেলে মোটা অঙ্কের টাকা নেন।

ডুমাইন ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য শাহ্ আসাদুজ্জামান তপনের বিরুদ্ধেও প্রতারকদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্য একটি মামলায় তিনি কারাগারে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

গ্রামের কয়েকজনের অভিযোগ, পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য ও গ্রাম পুলিশ প্রতারকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেন। তাই পুলিশের অভিযানের খবর প্রতারকেরা আগেই জেনে পালিয়ে যায়।

ইউনিয়নেই কোনো এজেন্ট নেই 
অবাক করা বিষয় হলো, ডিজিটাল প্রতারণার ঘাঁটি ডুমাইন ইউনিয়নেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো এজেন্টের দোকান নেই। মোবাইলে রিচার্জ করার দোকানও নেই। এই সুবিধা নিতে যেতে হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মধুখালী উপজেলা সদরে। তবে সেখানেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং করতে হয়।

আব্দুল মালেক নামের ডুমাইন গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতারকদের কারণে গ্রামের নাম বললে মানুষ আড়চোখে তাকায়।

থানা-পুলিশ যা বলছে
মধুখালী থানা সূত্র বলছে, এই প্রতারণা নির্মূলে তারা এক যুগ ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি ৯৫ জনকে আত্মসমর্পণও করিয়েছিল পুলিশ। বিভিন্ন অভিযানে ১৫০ জনের বেশি প্রতারককে একাধিকবার আটকও করা হয়েছে। কিন্তু প্রতারণা বন্ধ হয়নি।

মধুখালী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ডুমাইন গ্রামের শেষ মাথায় নদ। এর ওপর পারে মাগুরা জেলা। গ্রামে পুলিশ ঢুকলেই প্রতারকেরা নদ পেরিয়ে মাগুরায় চলে যায়।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এমন প্রান্তিক পর্যায়ে থানাগুলোতে এ ধরনের মামলা তদন্ত করতে যে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন, তা স্থানীয় পুলিশের নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো সঠিক সিদ্ধান্তও নেওয়া যায় না। তাই মামলার অভিযোগপত্রও দুর্বল হয়। আবার পুলিশ যদি প্রতারকদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়, তাহলে তারা উৎসাহী হয়। তিনি বলেন, নিজে সচেতন হলেই প্রতারকের ফাঁদ এড়ানো সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত