কামরুল হাসান

সেবার ডিসেম্বরে বড্ড শীত পড়েছিল। সেই শীতের এক সন্ধ্যায় সিএসডিতে কাবাব খেতে গিয়ে দেখা কর্নেল গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর এ-কথা, সে-কথা। এক ফাঁকে বললেন, ‘ওস্তাদ, জ্যাকেট রেডি রাইখেন।’ গুলজারের এই কথার মানে আমি জানি, ‘ভয়ংকর কিছুর জন্য অপেক্ষা করো’।
এরপর কয়েক দিন ধরে একটি ফোনের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি নিশ্চিত, সেই ফোন আসবে গভীর রাতে। কিন্তু ফোন আর বাজে না। রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোনটা নেড়েচেড়ে দেখি, সব ঠিকঠাক আছে কি না। অপেক্ষা আসলেই বড় কঠিন।
অবশেষে ফোন এল, তা-ও পাঁচ দিন পরে। ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত দুইটা-আড়াইটার দিকে ফোন করলেন কমান্ডার মাসুক হাসান আহমেদ। তিনি তখন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। ছোট করে বললেন, ‘জালে বিগ ফিশ আছে, ময়মনসিংহের দিকে আসেন।’ ময়মনসিংহ অনেক বড় জায়গা। কোথায় যেতে হবে, পরিষ্কার করে কিছুই বললেন না, তবু পথে নামলাম।
সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হেঁটে বেইলি রোডে এসে দেখি, সুইস বেকারির সামনে হলুদ রঙের একটি ট্যাক্সি ক্যাব দাঁড়িয়ে। ময়মনসিংহ যেতে হবে শুনে প্রথমে চালক রাজি হলেন না। ট্যাক্সি ক্যাব তখন শুধু রাজধানীতে চলত, ঢাকার বাইরে গেলেই পুলিশের ঝামেলা। পরে আমার প্রয়োজন আর পরিচয় শুনে বললেন, ‘ওডেন স্যার, যা করে আল্লায়।’
এত রাতে ঢাকার রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। ড্যাশবোর্ডে ‘রিজার্ভ’ লেখা বসিয়ে দিয়ে ঘন কুয়াশা মাড়িয়ে আমরা ছুটে চলছি ময়মনসিংহের দিকে। গাড়ি চলছে ঝড়ের গতিতে। গাজীপুর চৌরাস্তা পেরোতেই ফোন দিলাম মাসুক হাসানকে। বললেন, ‘নাক বরাবর আসতে থাকেন।’
ঘণ্টা দুয়েক পরে পৌঁছালাম ময়মনসিংহ শহরের কাছে। অন্ধকার আর ঘন কুয়াশা, কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না। সামনে একটি পেট্রলপাম্প। সেখানে গাড়ি থামিয়ে আবার ফোন দিলাম মাসুক হাসানকে। এবার বললেন, আকুয়া মোড়লপাড়ার দিকে আসেন। এই শহরে আমি আগেও এসেছি, কিন্তু রাতে কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আকুয়া কোন দিকে, তা-ও জানি না। পেট্রলপাম্পের এক কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলাম, আকুয়া যাব কীভাবে? আমার প্রশ্ন শুনে ঘুম মোছা চোখে বললেন, ওদিকে গোলাগুলি হচ্ছে। বললাম, তবু আমি সেখানেই যাব। কর্মচারী অবাক হয়ে পথ দেখিয়ে দিলেন।
পাম্প থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে মোড় নিতেই র্যাবের কয়েকজন সদস্য গাড়ি থামালেন। পরিচয় পেয়ে গাড়ি ছেড়ে সাবধানে হেঁটে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। তাঁদের কথা শুনে একটু এগোতেই দেখি, রাস্তার ওপর বোমার মতো কিছু পড়ে আছে। একটু পর আরেকটা। যত এগোচ্ছি, একটার পর একটা। মনে হচ্ছে, পরিত্যক্ত কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছি। আরেকটু সামনে এগোতেই পেয়ে গেলাম গুলজার উদ্দিন ও তাঁর দলবলকে। আমাকে দেখে তিনি হেসে বললেন, ‘ওস্তাদ, মিশন ফেল, বিগ সর্ট এসকেপ করেছে।’
একটি মোড়ে আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এর মধ্যে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এক সদস্য দৌড়ে এসে বললেন, ‘স্যার, সর্বনাশ, সব তো লাইট সেনসিটিভ বোম্ব!’ এ কথা শুনে দলের সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। সূর্যের আলো পড়লেই নাকি বোমাগুলো বিস্ফোরিত হবে। সূর্য ওঠার আগেই সবগুলো সরাতে হবে। শুরু হলো পাতা কুড়ানোর মতো করে বোমা কুড়ানোর কাজ। সবাই আতঙ্কিত। অবশেষে বোমাগুলো সরানো শেষ হলো। ততক্ষণে দিনের আলো ফুটেছে। ময়মনসিংহ শহরের সব সাংবাদিক শীতে কাঁপতে কাঁপতে ঘটনাস্থলে হাজির। সেই দলে মাফলারে মুখ বেঁধে এসেছেন নিয়ামুল কবীর সজল। আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ভাই, আপনি!
র্যাবের কাছে খবর ছিল, ময়মনসিংহের একটি বাড়িতে জেএমবির মজলিসে শুরার গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা লুকিয়ে আছেন। সেই তথ্য পেয়েই এই অভিযান। র্যাবের দলটি প্রথমে যায় আকুয়া উত্তরপাড়ার ফুলবাড়িয়া রোডে, নাসিরাবাদ স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক খোরশেদ উদ্দীন আকন্দের বাড়ি ‘নোঙর’-এ। সেই বাড়ির নিচতলায় পাওয়া যায় তৈরি বোমা ও বিস্ফোরকের বিশাল স্তূপ। দোতলার দুটি কক্ষের সবখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা শক্তিশালী বোমা।
বাড়িওয়ালা আমাদের বললেন, আসাদুজ্জামান নামের এক যুবক বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। তার সঙ্গে শহীদ নামের এক ছেলে থাকত। সে আনন্দ মোহন কলেজে ইংরেজিতে অনার্স পড়ত। আর ছিল শিশুকন্যাসহ তাদের এক বোন।
পরের অভিযান হলো আকুয়া মোড়লপাড়ার নূরুদ্দিন মাস্টারের বাড়ি ‘নূরমহল’-এ। সেই বাড়ির নিচতলা ছিল জঙ্গি আস্তানা। র্যাব নূরমহলে ঢোকার চেষ্টা করতেই জঙ্গিরা টের পেয়ে যায়। প্রথমে তারা হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এরপর একে একে শক্তিশালী বোমা ছুড়ে দেয়। তারা চারদিকের বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে হাওয়া হয়ে যায়। র্যাব পলাতক জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল, জবাবে তারা বোমা ছোড়ে। ৩০ মিনিট ধরে বোমা ও গুলিবিনিময় হয়। র্যাবকে প্রতিহত করতে আধা কিলোমিটারজুড়ে বোমা ফেলে দেয় জঙ্গিরা। আস্তানা ছাড়ার আগে জঙ্গিরা তাদের কম্পিউটার বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়।
এই অভিযানে ১২ জনকে আটক করা হয়। দুই আস্তানা থেকে পাওয়া যায় বিপুলসংখ্যক বোমা, ব্যাপক বিস্ফোরক ও সরঞ্জাম।
অভিযান শেষ, আমরা সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। মিলল না কোনো রাঘববোয়াল। কিন্তু বেরিয়ে এল আরেক অজানা কাহিনি। হঠাৎ সেই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে দেখে সন্দেহ করলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম। তাঁকে আটক করা হলো। নাম আসাদ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বলে দাবি করলেন। বললেন, এই বোমাগুলো সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন নামের এক ব্যক্তি তাঁকে দিয়েছেন। আরও জানালেন, তাঁর সঙ্গে যে নারী থাকতেন, তিনি জেএমবির এক নেতার স্ত্রী, তাঁর বোন নন। সংগঠনের নির্দেশে তাঁকে আশ্রয় দেন।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসাদ স্বীকার করেন, অভিযানের আগে নূরমহলে লুকিয়ে ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান ও শায়খ আবদুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানির সেকেন্ড ইন কমান্ড সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন। অভিযান টের পেয়ে পথে বোমা ফাটিয়ে নিরাপদে সরে পড়েন সালাউদ্দিন। আর যাওয়ার আগে বোমা মেরে নিজের কম্পিউটারটিও উড়িয়ে দেন। ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সানিও নাকি এখানে এসেছিলেন।
কিন্তু ওই যে কথায় আছে, চোরের সাত দিন আর গৃহস্থের এক দিন। সালাউদ্দিনকেও ধরা পড়তে হয়। ২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে ধরা পড়েন সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন। এই সালাউদ্দিন ছিলেন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। নারায়ণগঞ্জের রফিকুল ইসলামের ছেলে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৪০ টির বেশি মামলা আছে। এর মধ্যে ১৩ মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে,৩ টিতে হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
আদালতে সালাউদ্দিন যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাতে বলেছিলেন, ১৯৯৭ সালে বন্দর বিএম ইউনিয়ন স্কুল থেকে পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখানে পরিচয় হয় আতাউর রহমান সানির সঙ্গে। এরপর জঙ্গিবাদে জড়ান। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তাঁকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ২০০২ সালে সিলেটের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়। ওই সময় জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার সানা কৈর গ্রামে হৃদয় রায় নামের এক তরুণকে হত্যা করেন সালেহীন ও তাঁর সহযোগীরা। বরিশালের ছেলে হৃদয় খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে একটি মিশনের হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিনয় করে যিশুর জীবনকাহিনি তুলে ধরতেন। হৃদয় হত্যা মামলায় ২০১৩ সালে হাইকোর্ট সালেহীনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। সে বছর গনি গোমেজ নামের আরেক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানকে হত্যার দায়ে হাইকোর্ট সালেহীনসহ দুই জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে এসব রায়ের বিরুদ্ধে কোনো দিন আপিল করেননি সালাউদ্দিন; বরং তিনি দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে হাফেজ মাহমুদ, বোমা মিজান আর সালাউদ্দিনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সহযোগী জঙ্গিরা। সেই থেকে সালাউদ্দিন পলাতক। পুলিশ তাঁকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। পুলিশ এখন বলছে, তিনি ভারতে আছেন।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ মিজান আর সালাউদ্দিনের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করে। পরে মিজান ধরা পড়ে। কিন্তু সালাউদ্দিনকে আর ধরতে পারেনি। হিন্দুস্তান টাইমসে দেখলাম, সালাউদ্দিন ও মিজানকে নিয়ে রিপোর্ট করেছে। বলেছে, এরা ভারতের ভেতরে জামাআতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া বা জেএমআই নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে।
২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত থেকে যে কায়দায় দুই জঙ্গি ছিনতাই হলো, তাতে সালাউদ্দিনের মতো কারও হাত আছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন:

সেবার ডিসেম্বরে বড্ড শীত পড়েছিল। সেই শীতের এক সন্ধ্যায় সিএসডিতে কাবাব খেতে গিয়ে দেখা কর্নেল গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর এ-কথা, সে-কথা। এক ফাঁকে বললেন, ‘ওস্তাদ, জ্যাকেট রেডি রাইখেন।’ গুলজারের এই কথার মানে আমি জানি, ‘ভয়ংকর কিছুর জন্য অপেক্ষা করো’।
এরপর কয়েক দিন ধরে একটি ফোনের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি নিশ্চিত, সেই ফোন আসবে গভীর রাতে। কিন্তু ফোন আর বাজে না। রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোনটা নেড়েচেড়ে দেখি, সব ঠিকঠাক আছে কি না। অপেক্ষা আসলেই বড় কঠিন।
অবশেষে ফোন এল, তা-ও পাঁচ দিন পরে। ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত দুইটা-আড়াইটার দিকে ফোন করলেন কমান্ডার মাসুক হাসান আহমেদ। তিনি তখন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। ছোট করে বললেন, ‘জালে বিগ ফিশ আছে, ময়মনসিংহের দিকে আসেন।’ ময়মনসিংহ অনেক বড় জায়গা। কোথায় যেতে হবে, পরিষ্কার করে কিছুই বললেন না, তবু পথে নামলাম।
সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হেঁটে বেইলি রোডে এসে দেখি, সুইস বেকারির সামনে হলুদ রঙের একটি ট্যাক্সি ক্যাব দাঁড়িয়ে। ময়মনসিংহ যেতে হবে শুনে প্রথমে চালক রাজি হলেন না। ট্যাক্সি ক্যাব তখন শুধু রাজধানীতে চলত, ঢাকার বাইরে গেলেই পুলিশের ঝামেলা। পরে আমার প্রয়োজন আর পরিচয় শুনে বললেন, ‘ওডেন স্যার, যা করে আল্লায়।’
এত রাতে ঢাকার রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। ড্যাশবোর্ডে ‘রিজার্ভ’ লেখা বসিয়ে দিয়ে ঘন কুয়াশা মাড়িয়ে আমরা ছুটে চলছি ময়মনসিংহের দিকে। গাড়ি চলছে ঝড়ের গতিতে। গাজীপুর চৌরাস্তা পেরোতেই ফোন দিলাম মাসুক হাসানকে। বললেন, ‘নাক বরাবর আসতে থাকেন।’
ঘণ্টা দুয়েক পরে পৌঁছালাম ময়মনসিংহ শহরের কাছে। অন্ধকার আর ঘন কুয়াশা, কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না। সামনে একটি পেট্রলপাম্প। সেখানে গাড়ি থামিয়ে আবার ফোন দিলাম মাসুক হাসানকে। এবার বললেন, আকুয়া মোড়লপাড়ার দিকে আসেন। এই শহরে আমি আগেও এসেছি, কিন্তু রাতে কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আকুয়া কোন দিকে, তা-ও জানি না। পেট্রলপাম্পের এক কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলাম, আকুয়া যাব কীভাবে? আমার প্রশ্ন শুনে ঘুম মোছা চোখে বললেন, ওদিকে গোলাগুলি হচ্ছে। বললাম, তবু আমি সেখানেই যাব। কর্মচারী অবাক হয়ে পথ দেখিয়ে দিলেন।
পাম্প থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে মোড় নিতেই র্যাবের কয়েকজন সদস্য গাড়ি থামালেন। পরিচয় পেয়ে গাড়ি ছেড়ে সাবধানে হেঁটে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। তাঁদের কথা শুনে একটু এগোতেই দেখি, রাস্তার ওপর বোমার মতো কিছু পড়ে আছে। একটু পর আরেকটা। যত এগোচ্ছি, একটার পর একটা। মনে হচ্ছে, পরিত্যক্ত কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছি। আরেকটু সামনে এগোতেই পেয়ে গেলাম গুলজার উদ্দিন ও তাঁর দলবলকে। আমাকে দেখে তিনি হেসে বললেন, ‘ওস্তাদ, মিশন ফেল, বিগ সর্ট এসকেপ করেছে।’
একটি মোড়ে আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এর মধ্যে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এক সদস্য দৌড়ে এসে বললেন, ‘স্যার, সর্বনাশ, সব তো লাইট সেনসিটিভ বোম্ব!’ এ কথা শুনে দলের সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। সূর্যের আলো পড়লেই নাকি বোমাগুলো বিস্ফোরিত হবে। সূর্য ওঠার আগেই সবগুলো সরাতে হবে। শুরু হলো পাতা কুড়ানোর মতো করে বোমা কুড়ানোর কাজ। সবাই আতঙ্কিত। অবশেষে বোমাগুলো সরানো শেষ হলো। ততক্ষণে দিনের আলো ফুটেছে। ময়মনসিংহ শহরের সব সাংবাদিক শীতে কাঁপতে কাঁপতে ঘটনাস্থলে হাজির। সেই দলে মাফলারে মুখ বেঁধে এসেছেন নিয়ামুল কবীর সজল। আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ভাই, আপনি!
র্যাবের কাছে খবর ছিল, ময়মনসিংহের একটি বাড়িতে জেএমবির মজলিসে শুরার গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা লুকিয়ে আছেন। সেই তথ্য পেয়েই এই অভিযান। র্যাবের দলটি প্রথমে যায় আকুয়া উত্তরপাড়ার ফুলবাড়িয়া রোডে, নাসিরাবাদ স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক খোরশেদ উদ্দীন আকন্দের বাড়ি ‘নোঙর’-এ। সেই বাড়ির নিচতলায় পাওয়া যায় তৈরি বোমা ও বিস্ফোরকের বিশাল স্তূপ। দোতলার দুটি কক্ষের সবখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা শক্তিশালী বোমা।
বাড়িওয়ালা আমাদের বললেন, আসাদুজ্জামান নামের এক যুবক বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। তার সঙ্গে শহীদ নামের এক ছেলে থাকত। সে আনন্দ মোহন কলেজে ইংরেজিতে অনার্স পড়ত। আর ছিল শিশুকন্যাসহ তাদের এক বোন।
পরের অভিযান হলো আকুয়া মোড়লপাড়ার নূরুদ্দিন মাস্টারের বাড়ি ‘নূরমহল’-এ। সেই বাড়ির নিচতলা ছিল জঙ্গি আস্তানা। র্যাব নূরমহলে ঢোকার চেষ্টা করতেই জঙ্গিরা টের পেয়ে যায়। প্রথমে তারা হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এরপর একে একে শক্তিশালী বোমা ছুড়ে দেয়। তারা চারদিকের বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে হাওয়া হয়ে যায়। র্যাব পলাতক জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল, জবাবে তারা বোমা ছোড়ে। ৩০ মিনিট ধরে বোমা ও গুলিবিনিময় হয়। র্যাবকে প্রতিহত করতে আধা কিলোমিটারজুড়ে বোমা ফেলে দেয় জঙ্গিরা। আস্তানা ছাড়ার আগে জঙ্গিরা তাদের কম্পিউটার বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়।
এই অভিযানে ১২ জনকে আটক করা হয়। দুই আস্তানা থেকে পাওয়া যায় বিপুলসংখ্যক বোমা, ব্যাপক বিস্ফোরক ও সরঞ্জাম।
অভিযান শেষ, আমরা সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। মিলল না কোনো রাঘববোয়াল। কিন্তু বেরিয়ে এল আরেক অজানা কাহিনি। হঠাৎ সেই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে দেখে সন্দেহ করলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম। তাঁকে আটক করা হলো। নাম আসাদ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বলে দাবি করলেন। বললেন, এই বোমাগুলো সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন নামের এক ব্যক্তি তাঁকে দিয়েছেন। আরও জানালেন, তাঁর সঙ্গে যে নারী থাকতেন, তিনি জেএমবির এক নেতার স্ত্রী, তাঁর বোন নন। সংগঠনের নির্দেশে তাঁকে আশ্রয় দেন।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসাদ স্বীকার করেন, অভিযানের আগে নূরমহলে লুকিয়ে ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান ও শায়খ আবদুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানির সেকেন্ড ইন কমান্ড সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন। অভিযান টের পেয়ে পথে বোমা ফাটিয়ে নিরাপদে সরে পড়েন সালাউদ্দিন। আর যাওয়ার আগে বোমা মেরে নিজের কম্পিউটারটিও উড়িয়ে দেন। ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সানিও নাকি এখানে এসেছিলেন।
কিন্তু ওই যে কথায় আছে, চোরের সাত দিন আর গৃহস্থের এক দিন। সালাউদ্দিনকেও ধরা পড়তে হয়। ২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে ধরা পড়েন সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন। এই সালাউদ্দিন ছিলেন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। নারায়ণগঞ্জের রফিকুল ইসলামের ছেলে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৪০ টির বেশি মামলা আছে। এর মধ্যে ১৩ মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে,৩ টিতে হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
আদালতে সালাউদ্দিন যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাতে বলেছিলেন, ১৯৯৭ সালে বন্দর বিএম ইউনিয়ন স্কুল থেকে পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখানে পরিচয় হয় আতাউর রহমান সানির সঙ্গে। এরপর জঙ্গিবাদে জড়ান। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তাঁকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ২০০২ সালে সিলেটের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়। ওই সময় জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার সানা কৈর গ্রামে হৃদয় রায় নামের এক তরুণকে হত্যা করেন সালেহীন ও তাঁর সহযোগীরা। বরিশালের ছেলে হৃদয় খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে একটি মিশনের হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিনয় করে যিশুর জীবনকাহিনি তুলে ধরতেন। হৃদয় হত্যা মামলায় ২০১৩ সালে হাইকোর্ট সালেহীনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। সে বছর গনি গোমেজ নামের আরেক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানকে হত্যার দায়ে হাইকোর্ট সালেহীনসহ দুই জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে এসব রায়ের বিরুদ্ধে কোনো দিন আপিল করেননি সালাউদ্দিন; বরং তিনি দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে হাফেজ মাহমুদ, বোমা মিজান আর সালাউদ্দিনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সহযোগী জঙ্গিরা। সেই থেকে সালাউদ্দিন পলাতক। পুলিশ তাঁকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। পুলিশ এখন বলছে, তিনি ভারতে আছেন।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ মিজান আর সালাউদ্দিনের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করে। পরে মিজান ধরা পড়ে। কিন্তু সালাউদ্দিনকে আর ধরতে পারেনি। হিন্দুস্তান টাইমসে দেখলাম, সালাউদ্দিন ও মিজানকে নিয়ে রিপোর্ট করেছে। বলেছে, এরা ভারতের ভেতরে জামাআতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া বা জেএমআই নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে।
২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত থেকে যে কায়দায় দুই জঙ্গি ছিনতাই হলো, তাতে সালাউদ্দিনের মতো কারও হাত আছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন:

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৫ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৫ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সেবার ডিসেম্বরে বড্ড শীত পড়েছিল। সেই শীতের এক সন্ধ্যায় সিএসডিতে কাবাব খেতে গিয়ে দেখা কর্নেল গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর এ-কথা, সে-কথা। এক ফাঁকে বললেন, ‘ওস্তাদ, জ্যাকেট রেডি রাইখেন।’ গুলজারের এই কথার মানে আমি জানি, ‘ভয়ংকর কিছুর জন্য
২৬ নভেম্বর ২০২২
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৫ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

সেবার ডিসেম্বরে বড্ড শীত পড়েছিল। সেই শীতের এক সন্ধ্যায় সিএসডিতে কাবাব খেতে গিয়ে দেখা কর্নেল গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর এ-কথা, সে-কথা। এক ফাঁকে বললেন, ‘ওস্তাদ, জ্যাকেট রেডি রাইখেন।’ গুলজারের এই কথার মানে আমি জানি, ‘ভয়ংকর কিছুর জন্য
২৬ নভেম্বর ২০২২
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৫ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৫ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

সেবার ডিসেম্বরে বড্ড শীত পড়েছিল। সেই শীতের এক সন্ধ্যায় সিএসডিতে কাবাব খেতে গিয়ে দেখা কর্নেল গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর এ-কথা, সে-কথা। এক ফাঁকে বললেন, ‘ওস্তাদ, জ্যাকেট রেডি রাইখেন।’ গুলজারের এই কথার মানে আমি জানি, ‘ভয়ংকর কিছুর জন্য
২৬ নভেম্বর ২০২২
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৫ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৩ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

সেবার ডিসেম্বরে বড্ড শীত পড়েছিল। সেই শীতের এক সন্ধ্যায় সিএসডিতে কাবাব খেতে গিয়ে দেখা কর্নেল গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর এ-কথা, সে-কথা। এক ফাঁকে বললেন, ‘ওস্তাদ, জ্যাকেট রেডি রাইখেন।’ গুলজারের এই কথার মানে আমি জানি, ‘ভয়ংকর কিছুর জন্য
২৬ নভেম্বর ২০২২
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৫ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৫ দিন আগে