Ajker Patrika

বেহিসাবি দিনযাপনের খেসারত

কামরুল হাসান
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ১০
বেহিসাবি দিনযাপনের খেসারত

উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কের ঠিক মাঝামাঝি একটি জায়গায় গাড়িটি পার্ক করা। কালো কাচে ঘেরা বলে ভেতরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। আশপাশের বাড়ির দারোয়ান ও নিরাপত্তাকর্মীরা ভাবছিলেন, কোনো অতিথি গাড়িটি রাস্তায় রেখে বাসার ভেতরে গেছেন। সময় গড়িয়ে যায়, গাড়ি আর নড়ে না। সন্দেহ বাড়ে। দুপুরের পর উৎসুক এক দারোয়ান বার কয়েক উঁকি দিয়ে দেখেন, সিটের সঙ্গে বেল্টে বাঁধা রক্তাক্ত একটি মৃতদেহ। ব্যস, হুলুস্থুল পড়ে যায়। যথারীতি পুলিশ আসে। দেখা গেল, সেই মৃতদেহ এক শিল্পপতির। তাঁকে খুন করা হয়েছে।

গাড়ির ভেতরে কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেল। সেসব ঘেঁটে এএসআই আবদুর রহিম বললেন, নিহত ব্যক্তির নাম গোলাম কিবরিয়া। তিনি কল্লোল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। কল্লোল গ্রুপের তখন অনেক নামডাক। টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক, নারকেল তেলসহ নানা পণ্য বাজারে। সেই সব পণ্যের বিজ্ঞাপন হরহামেশা দেখা যায় টিভিতে। ও রকম শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের খুন হওয়া নিয়ে নড়েচড়ে বসল পুলিশ। যে খুনের গল্পটা বলছি, সেটি ২১ বছর আগের, ২০০১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির। যত দূর মনে পড়ে, সেদিন ছিল শুক্রবার।

এমনিতেই কোনো শিল্পপতি খুন হলে প্রথমে সন্দেহ করা হয় কোনো ব্যবসায়িক বিরোধকে। আবার দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা অকুস্থলে গিয়েই বড় বড় মন্তব্য করে বসেন। সেদিনও তা-ই হয়েছিল। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছালাম বিকেলে। একটু পরে এলেন ডিএমপি কমিশনার মতিউর রহমান। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সাংবাদিকদের বললেন, ‘অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে’ এই শিল্পপতিকে খুন করা হয়েছে। এই খুন ঠান্ডা মাথায় না গরম মাথায় হয়েছে, সেটা বলার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার ছিল না। তবু তিনি বললেন। পরদিন সব কাগজে ছাপাও হলো সেটাই।

আমি ওই শিল্পপতির একটি ঠিকুজি বের করে ফেললাম। দেখি, তাঁদের পরিবারের আদিবাস নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশবপাড়ায়। পিতার নাম আবদুল মোতালেব। তাঁর স্ত্রী শিমুল নারায়ণগঞ্জের পালপাড়ার মেয়ে। সাদনান নামে তাঁদের একটি সন্তান রয়েছে। তাঁরা নারায়ণগঞ্জে থাকেন। খুনের ঘটনা শুনে কিবরিয়ার স্ত্রী শিমুল উত্তরায় আসতে চেয়েছিলেন। অর্ধেক পথ আসার পর জানতে পারেন, মৃতদেহ থানায় নেওয়া হয়েছে। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে বনানীতে চলে যান কিবরিয়ার বড় ভাই গোলাম মোস্তফার বাসায়। শিমুলের সঙ্গে আমার দেখা হয় সেই বাড়িতেই।

শিমুল আমাকে বললেন, ঘটনার আগের দিন নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে কিবরিয়া নিজে গাড়ি চালিয়ে তেজগাঁওয়ে কারখানায় আসেন। রাত ১০টার দিকে স্ত্রী ফোন করলে তিনি বলেন, ফিরতে আরও এক ঘণ্টা দেরি হবে। রাত ১১টায় আবার ফোন করে দেখেন সেটি বন্ধ। শিমুল আমাকে বললেন, কিবরিয়া অনেক রাতে বাড়ি ফিরতেন, মাঝে মাঝে ফিরতেনও না। সে কারণে তিনি এত চিন্তা করেননি। শুক্রবার দুপুরের পর পুলিশ ফোন করে তাঁকে খুনের খবর দেয়। তিনি আরও বললেন, কিবরিয়া প্রায়ই গভীর রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতেন।

ঘটনাস্থল ছিল ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায়। কিবরিয়ার ভাই বাদী হয়ে খুনের মামলা করলেন আসামির নাম না দিয়ে। সে সময় ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। দুই দিনের মধ্যে তিনি খুনের কারণ খুঁজে বের করলেন। ক্লু কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে ওসি বললেন, কিবরিয়ার গাড়িচালক ছিলেন তাঁদের প্রথম সূত্র। তাঁর মাধ্যমে শাহিদা নামের এক নারীকে আটক করে জানতে পারেন, উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ২৬ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে কিবরিয়ার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেখানেই খুন হয়ে থাকতে পারেন তিনি। এরপর সেই বাড়ির সবাইকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা খুনের কথা স্বীকার করেন। 

ওসি আনোয়ারের সঙ্গে একদিন আমিও গেলাম সেই বাড়িতে। চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় বিশাল ড্রয়িংরুমটি ছিল জলসাঘরের মতো। মেঝেতে দামি কার্পেটের ওপরে শতরঞ্জি পেতে মেহমানদের বসার ব্যবস্থা, পাশে ছোট ছোট তাকিয়া, মাঝখানে নগ্ন-চুম্বনরত যুবক-যুবতীর মূর্তি। দেয়ালে ঝোলানো দামি পেইন্টিং—সবকিছুতেই নগ্ন নারীর প্রতিকৃতি। আমার কাছে সবকিছু খুব অদ্ভুত লাগছিল। আসবাবগুলো মনে হলো অনেক দামি। তিন কক্ষের আলিশান ফ্ল্যাটটিতে বাস করতেন সাবিকুন নাহার বুলি, তাঁর স্বামী ইমরান হোসেন, মেয়ে পুনম, ছেলে পুলক ও পুনমের স্বামী নাজমুল।

ওই বাড়িতে বসে ওসি আনোয়ার হোসেন আমাকে বললেন, ‘ভালো করে দেখলে এদের জীবনযাপনটা বুঝতে পারবেন।’ তিনি জানালেন, সাবিকুন নাহার বুলির স্বামী ইমরান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিলেও তাঁর কোনো ব্যবসা নেই। স্ত্রীর রোজগারে সংসার চলে। বুলির পুত্র পুলক এসএসসি পরীক্ষার্থী, পুনম এইচএসসি পাসের পর বিয়ে করেছেন। বুলির সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে এই বাসায় কিবরিয়ার যাতায়াত। পরিবারটির সবকিছু কিবরিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের বাহারি জীবনের সব খরচও তিনিই বহন করতেন। বিনিময়ে তাদের বাড়িতে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফুর্তি করতেন কিবরিয়া। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সবাই একসঙ্গে বসে মদ পান করতেন। ওসির ভাষায়, এটি ছিল শিল্পপতির ‘হেরেমখানা’। এই আসরে শামিল হতেন বড় বড় শিল্পপতি আর তাঁদের নারী বন্ধুরা। তাঁরা রাতভর ফুর্তি আর হইচই করতেন। প্রথম দিকে বুলির পরিবারও মেতে ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে শুরু হয় বিরক্তি। একপর্যায়ে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কিন্তু কিবরিয়াকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। ওসি বললেন, পুলিশ ২৫ জন নারীর খোঁজ পেয়েছে, যাঁদের ওই আসরে যাতায়াত ছিল।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বুলি ও তাঁর পরিবারের লোকেরা বলেছিলেন, মাতাল হয়ে প্রায়ই বাড়াবাড়ি করতেন কিবরিয়া। সেটা সহ্য করার মতো ছিল না। তাঁর সেই আচরণের কারণেই খুন করা হয়। এরপর ভোরে লাশ গাড়িতে তুলে রাস্তায় রেখে আসেন, যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। ওই বাসার দারোয়ান রফিক ও ড্রাইভার জুয়েলও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মনে আছে, ক্যান্টনমেন্ট থানা হেফাজতে বুলি আমাকে বলেছিলেন, ‘ঢাকা শহরের অনেক বাড়িতেই বৃহস্পতিবার এ রকম পার্টি হয়; এটা দোষের কী?’

যাই হোক, সেই মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছিল বুলিসহ তাঁর পরিবারের ছয়জনকে আসামি করে। অনেক দিন সেই মামলার খবর নেওয়া হয়নি। গতকাল সেই খবর নিতে আজকের পত্রিকার সাংবাদিক আল-আমিন রাজু গিয়েছিলেন ক্যান্টনমেন্ট থানায়। প্রথমে ডিউটি অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেন তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদয় হন, তিনি সব তথ্য দেন। জানান, ওই মামলায় ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন এসআই হাফিজুল ইসলাম। কিন্তু কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এতে সব আসামি খালাস পেয়ে যান।

আজকের পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সাবিত আল হাসান কাল নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে সাধু পৌলের গির্জার পেছনে বুলির পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। বুলির বোন কামরুন্নাহার ইভা তাঁকে জানান, ওই মামলা থেকে তাঁর বোনের পরিবারের সবাই অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে সেই পরিবারের সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁরা কোথায় থাকেন তা-ও জানেন না।

নিহত কিবরিয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। খুঁজে পেলাম না।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন কয়েক বছর আগে চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। তখন আমি তাঁর প্রটোকলের দায়িত্বে ছিলাম। একদিন আমি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অর্থ কেন অনর্থের মূল হলো? তিনি বললেন, সমাজে কিছু মানুষ থাকে, যাদের হাতে টাকাপয়সা এলে তারা শুধু নিজেই সেটা ভোগ করে, জৌলুশ বাড়ায়, যা খুশি করে বেড়ায়। এতে সমাজের অনিষ্ট হয়, মানুষের মনে হিংসা ছড়ায়। তখনই অর্থ অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

আমার মনে হলো, ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়াও সেই অনিষ্টকারী মানুষ। যাঁরা সমাজের কোনো কাজে আসেন না।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: জেএমবির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে পরিচালক গ্রেপ্তার হন দুবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।

আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’

গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’

ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’

ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’

ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’

পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’

পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

বিষয়:

অপরাধ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত