Ajker Patrika

রংপুরে জুলাই পদযাত্রা শুরু

১৬ জুলাই নিয়ে নাটক করা হয়েছে: শহীদ আবু সাঈদের ভাই

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেছেন, ‘১৬ জুলাই নিয়ে নাটক করা হয়েছে। তাঁরা যদি আগেই ঘোষণা দিতেন, ১৬ জুলাই “জুলাই শহীদ দিবস”। তাহলে আমাদের আপত্তির জায়গাটা কম থাকত। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে একজন আইকনিক শহীদের এই ধরনের অপমান আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই। যার অনুপ্রেরণায় যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তাঁর জন্য তাঁরা একটা দিন রাখতে পারলেন না।’

আজ মঙ্গলবার সকালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শহীদ আবু সাঈদের রংপুরের পীরগঞ্জের বাড়ি থেকে শুরু আগে এসব কথা বলে আবু হোসেন।

আবু সাঈদের ভাই আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি, অনেক দিবস পালন করা হয়েছে, অনেক মানুষের নামে। যাদের জাতির জন্য এক পয়সারও উপকার ছিল না। তাদের নামে দিবস পালন করা হয়েছে। কিন্তু শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটা “আবু সাঈদ শহীদ দিবস” ঘোষণাতে সমস্যাটা কোথায় ছিল। আমরা যুগে যুগে তো দেখে আসছি। বিভিন্ন বিপ্লবের শহীদের বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হয়।’

১৬ জুলাই “শহীদ আবু সাঈদ দিবস” রাখার দাবি করে আবু হোসেন বলেন, ‘আমাদের দাবি, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ছিল, আমরা এটা শহীদ আবু সাঈদ দিবসই চাই। জুলাই শহীদ দিবস যেটা আছে, জুলাইয়ের যে কোনো দিন সেটা সরকার এটা পালন করতে পারে। ১৬ জুলাই যার আত্মত্যাগ এত বড় বিপ্লব সংঘটিত হলো। তাঁকে এভাবে অবহেলা করা আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে মেনে নিতে পারছি না।’

আবু হোসেন আরও বলেন, ‘১৬ জুলাই যে আবু সাঈদের শহীদের মধ্যে দিয়ে কোটা সংস্কার একটা গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। লোকজন আর ঘরে বসে থাকেনি, রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, জীবনের মায়া ত্যাগ করে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষের রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়া-এটার যে অনুপ্রেরণা সেটা হচ্ছে আবু সাঈদ। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে সেটা শহীদ জুলাই দিবস করা হলো। তাঁরা জুলাই শহীদ দিবস পালন করার আরও দিন পেতেন। এই রকম একজন বৈপ্লবিক শহীদ, যার আত্মত্যাগ যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। তাঁর জন্য কি ৩৬৫ দিন থেকে ১৬ জুলাই তাঁর স্মরণে নির্ধারণ করা যেত না। তাঁকে স্মরণ করলে কি অন্য শহীদদের অপমান করা হতো। তাঁর আত্মত্যাগ তো তাঁদের অনুপ্রাণিত করছে রাজ পথে নামার জন্য।’

আবু হোসেন বলেন, ‘বৈষম্যর জন্য সবাই লড়াই করল, আদৌ রাষ্ট্রে কতটুকু বৈষম্য দূর হলো আমরা জানি না। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় এখনো। বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারে উপদেষ্টা পরিষদে শুধু নির্দিষ্ট একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নেওয়া হয়েছে। রংপুর অঞ্চল থেকে আবু সাঈদ শহীদ হয়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। রংপুর বিভাগ থেকে একজনও উপদেষ্টা নেই। এখানে কি কোনো যোগ্য লোক ছিলেন না। শুধু কি দক্ষিণ অঞ্চলের লোকযোগ্য। উত্তরাঞ্চলে যোগ্য লোক নেই।’

আবু সাঈদের ভাই আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যারা আন্দোলনকারী ছিলেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরাই উপদেষ্টা হলেন। কিন্তু শহীদ পরিবার থেকে কোনো প্রতিনিধি নেওয়া হলো না। শহীদ পরিবার সাড়ে ৮০০। তাঁদের মধ্যে কি কোনো যোগ্য লোক ছিল না। এটা পুরোটাই মনে হচ্ছে যে, এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হচ্ছে না। আমরা চাই, এই দেশ বৈষম্যমুক্ত গড়ে উঠুক।’

১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর দেশব্যাপী আন্দোলন বেগবান হয়। আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থান রূপ নেয়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...