Ajker Patrika

গঙ্গাচড়ায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব: ভেঙেছে বিধবার শেষ সম্বল সেলাই মেশিনটিও

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ভেঙেচুরে যাওয়া ঘরের সামনে সেলাই মেশিন নিয়ে বসে আছেন মুক্তা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভেঙেচুরে যাওয়া ঘরের সামনে সেলাই মেশিন নিয়ে বসে আছেন মুক্তা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে বিধবা মুক্তা বেগমের (৪৫) জীবন। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ভেঙে গেছে তাঁর টিনের ঘর। ভেঙে গেছে ঘরের আসবাবপত্র। ঘরের অনেক জিনিসপত্র বাতাসের দাপটে উড়ে গিয়ে পড়েছে দূরের কোনো জায়গায় কিংবা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর আয়-রোজগার করে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সেলাই মেশিনটিও ভেঙে গেছে।

মুক্তা বেগমের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের খামার মোহনা গ্রামে। চার বছর আগে দিনমজুর স্বামীর মৃত্যুর পর তিন মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণের বোঝায় ডুবে যান তিনি। সংসার চালাতে ধারদেনা করে একটি পুরোনো সেলাই মেশিন কিনেছিলেন মুক্তা বেগম। এই মেশিনে পরিচিতজনদের কাপড় সেলাই করে কোনোমতে দুমুঠো ভাতের সংস্থান করছেন তিনি। সেলাই মেশিনটি ছিল তাঁর জীবনসংগ্রামের অবলম্বন।

গত রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে গঙ্গাচড়ায় ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব চালায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের সেই ঝড়ে খামার মোহনা গ্রামে মুক্তা বেগমসহ আরও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আজ বুধবার সকালে মোহনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তা বেগম ভাঙা ঘরের সামনে সেলাই মেশিনটি নিয়ে বসে আছেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মরার পর কত কষ্ট করে মেয়েগুলারে বিয়া দিছি। এই সেলাই মেশিনটা দিয়া কোনো রকমে জীবনটাত পানি দিছিলাম, ভাবছিলাম অন্তত আর কারও কাছোত হাত পাতি খাওয়া নাগবে না। কিন্তু আল্লাহ, আমার কপালে তা-ও সইল না। ঘর তো গেলই, এখন কাজ করে খাওয়ার যন্ত্রটাও নাই। খোলা আকাশের নিচে উড়ে যাওয়া ঘরত চার দিন ধরি এভাবে আছুং।’ মুক্তা বেগমের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মা মোমেনা বেগম এসে হাতজোড় করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলছেন, ‘মোর এই হতভাগিটার দুনিয়াত কায়ও নাই, জাদুটা এখন কেমন করি চলবে, কোনো উপায় খুঁজি পায় চোল না। আইজ সারা রাইত কান্দি গেইছে। কেমন করি এই ঘর তুলবে। এতগুলা টাকায় কোনটে পাইবে। তোরা একনা সহযোগিতা করেন, আল্লাহ তোমার ভালো করবে।’

এ সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড়ে খামার মোহনা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাত বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। ১০ বছরের নাতিকে নিয়ে তাঁর ছোট সংসার। ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর টিনের ঘরটি উড়ে গেছে। নজরুল ইসলাম (৬৩) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু টিন-কাঠ খুঁজে পাইছি, কিন্তু বেশির ভাগই নাই। এইটুকু নাতিকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? আজ সকাল থাকি না খেয়া আছি, সরকারি সাহায্য ছাড়া আমাদের বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।’

একই গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক। তিনি পাশের এলাকা থেকে একটি বকনা গরু বর্গা নিয়ে লালনপালন করতেন। সেদিনের ঘূর্ণিঝড়ে ঘর ভেঙে পড়লে গরুটি ঘরের ভেতরেই মারা যায়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেদিনের ঘূর্ণিঝড়ে আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৮৩৩ পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ১৬০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ১৪ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদুল হাসান মৃধা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের গঙ্গাচড়া উপজেলায় গত ৫ তারিখে ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডো যে আঘাত হেনেছে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার এই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ১ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে ৪০ টন চাল এবং নগদ ২ লাখ টাকা বিতরণ করেছি। এ ছাড়া ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা ঢেউটিন, নগদ অর্থ ও চালের জন্য বরাদ্দ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি, সেটা পেলে বাকি যে পরিবারগুলো রয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পল্টনে ৮ দলের সমাবেশ: মঞ্চ প্রস্তুত, মিছিল নিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশের আয়োজন চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশের আয়োজন চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্বাচনের আগে গণভোট এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারিসহ পাঁচ দাবিতে পল্টনে সমাবেশের আয়োজন করেছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ৮টি দল। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ দুপুর ২টা থেকে শুরু হবে এ সমাবেশ। এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ। নেতাকর্মীরাও মিছিল নিয়ে দলে দলে এসে জড়ো হচ্ছেন।

বেলা ১২টার দিকে পল্টন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় ও আশপাশে জড়ো হচ্ছেন আন্দোলনরত আট দলের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘গণভোট সরকার দেবে কি দেবে না সে সিদ্ধান্ত আজই দিতে হবে। জুলাই সনদ, সংস্কার নিয়ে অনেক টালবাহানা করেছে সরকার। আর কোনো টালবাহানা আজকের জনতা মানবে না।’

আব্দুর রাহমান নামে জামায়াতের এক কর্মী বলেন, ‘আমরা সরকারের অনেক বাহানা শুনেছি, আর শুনতে চাই না। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে যদি নির্বাচনের আগেই গণভোট হয়। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’

গতকাল সোমবার আন্দোলনরত আট দলের নেতাদের বৈঠক পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ সমাবেশ।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষের জমায়েত হবে। লোকে লোকারণ্য হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। রাজধানী এবং আশপাশের মানুষই এতে যুক্ত হবে।’

তিনি আরও জানান, পল্টন মোড়ে সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হবে এবং নাইটিঙ্গেল মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন এলাকাজুড়ে আট দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করবেন।

পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশের আয়োজন চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশের আয়োজন চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এর আগে গত ৬ নভেম্বর পল্টন মোড়ে সমাবেশ করেন ৮ দলের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিতে যমুনায় যান একটি প্রতিনিধি দল। তারপর সিদ্ধান্ত জানানো না হলে আজ ১১ নভেম্বর সমাবেশ করার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়।

যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশের আয়োজন চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশের আয়োজন চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর চলতি মাসের মধ্যে গণভোট আয়োজন করা; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাহরাইনে ২০ তলা ভবন থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

কচুয়া (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
নির্মাণাধীন এই ভবন থেকে পড়ে নিহত হন সফিক। ছবি: সংগৃহীত
নির্মাণাধীন এই ভবন থেকে পড়ে নিহত হন সফিক। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইনে ২০ তলা ভবনে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে মো. সফিক (৪০) নামের এক বাংলাদেশি যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা ১টার দিকে (বাহরাইন সময় বেলা ১১টা) দেশটির ছিটমহল এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সফিক বাহরাইনের মানামা অ্যান্ডার গলিতে বসবাস করতেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাহরাইনপ্রবাসী সুব্রত সাহা। মরদেহ দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সফিকের পরিবার।

জানা গেছে, সফিক চাঁদপুরের কচুয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের (কোয়া চাঁদপুর) মিয়াজী বাড়ির বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সন্তান হারিয়ে মা-বাবাসহ স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছেলের জবানবন্দি: স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার মো. ফারুক। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার মো. ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বাবা ও ভাইয়ের পরকীয়ার জেরে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেন ছেলে। হত্যার পর লাশের পাশে নির্বিকার বসে ছিলেন তিনি। ৯ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে মাদারীপুরের শিবচরের বাঁশকান্দি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বাবা ও ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্ক।

জানা গেছে, প্রথমত নিজের পছন্দের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়নি পরিবার। যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, তাঁর সঙ্গে রয়েছে ভাই ও বাবার অবৈধ সম্পর্ক। একপর্যায়ে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পেছনেও ছিল বাবার হাত। বাবার সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া মেনে নিতে না পেরে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ছেলে ফারুক। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বাবাকে নিয়ে কাজের সন্ধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শিবচরে আসেন। মূলত কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তাঁর বাবা মতিউর। পরে রাতের বেলা ছেলে ফারুকের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাবা মোবাইলে কথা বলা শেষে ঘুমিয়ে পড়লে কোদাল দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার বিকেলে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে হাজির করা হলে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিতে এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন বাবাকে হত্যাকারী ছেলে মো. ফারুক (২৭)। রাত ১০টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম। নিহত মতিউর ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানার হারিয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) জাহাঙ্গীর আলম জানান,  মতিউর ও তাঁর ছেলে ফারুক কাজের সন্ধানে মাদারীপুর জেলার শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়নের পঞ্চগ্রামে এসে রসুন বপনের কাজ নেন। রোববার বাবা-ছেলে রাতের খাবার শেষে একসঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে যান। রাত ১০টার পর বিছানায় শুয়ে ছেলে ফারুকের বউয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন বাবা মতিউর। এ সময় পাশের ঘরে বসে বিড়ি খাচ্ছিলেন ফারুক।

পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত বাবার মুখে কোদাল দিয়ে কোপ মারেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখ, মাথা আর বুকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। মাত্র আড়াই মিনিটে ১৭টি কোপ দেন। মতিউরের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাঁর লাশের পাশে বসে বিড়ি ধরিয়ে টানতে থাকেন ফারুক।

জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, শব্দ পেয়ে পাশের ঘর থেকে বাড়ির মালিকের ছেলে ও আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং মতিউরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় ফারুককে অবিচল আর নিশ্চুপ থাকতে দেখে বাড়ির মালিক শিবচর থানায় ফোন দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক ছেলেকে আটক করে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোদাল, ফারুকের রক্তাক্ত জামাকাপড়সহ অন্যান্য আলামত জব্দ করে পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মৃতদেহটি সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় মতিউরের স্ত্রী কোহিনূর বেগম বাদী হয়ে তাঁর ছেলেকে আসামি করে শিবচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সোমবার বিকেলে গ্রেপ্তার ফারুককে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে হাজির করা হলে তাঁর বাবা মতিউরকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। নিজের দোষ স্বীকার করে বিচারকের নিকট ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া শেষে ফারুককে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবাকে হত্যার জন্য আগে থেকে পাশের রুমে একটি কোদাল লুকিয়ে রেখেছিলেন ফারুক। অপেক্ষায় ছিলেন কখন তাঁর বাবা ঘুমাতে যাবেন সেই সুযোগের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গৌরীপুরে ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, ট্রেন চলাচল বন্ধ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বলাকা কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বলাকা কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জারিয়া অভিমুখী ৪৯ নম্বর বলাকা কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনে হঠাৎ আগুন লেগে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে গৌরীপুর রেলস্টেশনের নিকটে এই ঘটনা ঘটে।

এ সময় ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে দ্রুত ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ইনচার্জ) আকতার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জারিয়া অভিমুখে চলাচলরত বলাকা কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনে হঠাৎ আগুন লাগে। পরে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ইঞ্জিন পরিবর্তনের কাজ চলছে।

ওসি আরও বলেন, ইঞ্জিন পরিবর্তন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওই রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত