Ajker Patrika

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

  • রাখাইন পরিবারটি অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সুযোগে জমি জবরদখল ও বিক্রি
  • অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে ১৫৫ শতাংশ দখলের লিখিত অভিযোগ
  • ভুয়া আমমোক্তারনামা মূলে প্রতারণার মাধ্যমে কবলা দলিল তৈরি
মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন রাখাইন পরিবারের সদস্যরা। সেই সুযোগে তাঁদের জমিগুলো দখল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তা। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কালাচানপাড়ায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন রাখাইন পরিবারের সদস্যরা। সেই সুযোগে তাঁদের জমিগুলো দখল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তা। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কালাচানপাড়ায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের কালাচানপাড়ায় একটি রাখাইন পরিবারের প্রায় ৪০ একর জমি জবরদখল হয়েছে। গত ১৫ বছরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীরা জালিয়াতির মাধ্যমে অধিকাংশ জমি দখলে নিয়ে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৩ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খাদেম উল কায়েস ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ওই জমির ১৫৫ শতাংশ দখলের লিখিত অভিযোগ করা হয়। প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা, আইনসচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ পাঠিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন জমির মালিক লাচাউ রাখাইন।

লাচাউ রাখাইনের স্বজনেরা জানান, লাচাউয়ের স্বামী অংশাচিং রাখাইন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (এফএও) কর্মকর্তা হিসেবে বহু বছর কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি চাকরিসূত্রে বদলি হন অস্ট্রেলিয়ায়। তারপর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। লাচাউ রাখাইন ও তাঁর দুই ছেলে পরে সেখানকার নাগরিকত্বও পান। যদিও তাঁরা প্রতিবছর কলাপাড়ার কালাচানপাড়ায় নিজেদের বাড়িতে আসতেন। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অংশাচিং অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে বছর তাঁদের আর দেশে আসা সম্ভব হয়নি। দুই ছেলে সেখানকার সরকারি চাকরিতে থাকায় তাঁরাও দেশে ফিরতে পারেননি। এভাবেই কেটে যায় এক যুগ।

লাচাউয়ের স্বজনদের অভিযোগ, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে লাচাউ রাখাইন দেশে এসে জানতে পারেন, তিনি ও তাঁর দুই ছেলের নামে ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে একাধিক নকল খতিয়ান, জাল দলিল এবং ভুয়া উত্তরাধিকার সনদ বানানো হয়েছে। এসব নথির ভিত্তিতে তাঁদের জমি আত্মসাৎ করা হয়। আর এ দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বারেক মোল্লা, তাঁর ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি হোসেন মোল্লাসহ অনেক নেতা। যাঁরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে পলাতক। এ ছাড়া রয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদেম উল কায়েস, তাঁর ভাই মাওলানা হারুন ও বেয়াই ইউসুফ মুসল্লিসহ কয়েকজন।

এই চক্রের বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করায় লাচাউদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে এসেছিলেন লাচাউ রাখাইন ও তাঁর বড় ছেলে উয়েন চিং রাখাইনের স্ত্রী খেনমা ম্যা। লাচাউ রাখাইন (৮৬) বলেন, ‘আমি জমি উদ্ধার করতে গেলে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়; যাতে আমরা এলাকায় না যেতে পারি। এই অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত, আমি তাদের সবার বিচার চাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে।’

অভিযোগে যা আছে

অতিরিক্ত সচিব খাদেম উল কায়েসের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, কলাপাড়ার আলীপুর মৌজার ৬৩ নম্বর বিএস খতিয়ানের ৪২০৪, ৫, ৬, ১১, ১২, ৭৪ ও ৪৪৪২, ৪৩৮৭ এবং ৪৬১০ নম্বর দাগের ৮.০৬ একর ভূমির মালিক লাচাউ রাখাইন ও তাঁর পরিবার। তবে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালে লাচাউ রাখাইন ও তাঁর দুই ছেলে উয়েন চিং ও ম্যাওয়েন চিংয়ের নামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সিল ও সই জাল করে ২০০০ সালের ৮ আগস্ট ক্ষমতাপত্র তৈরি করা হয়। ওই আমমোক্তারনামা মূলে জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে খাদেম উল কায়েস তাঁর স্ত্রী মোসা. আইরিন জেসমিন ও বেয়াই মো. ইউসুফ মুসল্লির নামে ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল কবলা দলিল তৈরি করে ১৫৫ শতাংশ জমি দখল করেন।

ওই আমমোক্তারনামার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৬ জুন জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রথম আদালতে লাচাউ বাদী হয়ে মামলা করেন। বিচারক মামলাটি পটুয়াখালী সদর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ ও সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমমোক্তারনামার বৈধতা যাচাইয়ে সিআইডি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তথ্য চাইলে ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মো. তানজিল কবির স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘৪৩০ নম্বর আমমোক্তারনামা’ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আদালতকে এই আমমোক্তারনামা-সংক্রান্ত কোনো তথ্য না পাওয়ার কথা জানায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বারেক মোল্লা আলীপুর মৌজার ১০৪২ এসএ খতিয়ান এবং ৩০৫ নম্বর বিএস খতিয়ানের জমি জাল কাগজ তৈরি করে কিছু দখল করেছেন। অন্যদিকে তাঁর ভাই এলাকার যুবলীগের সাবেক সভাপতি হোসেন মোল্লা একই ১০৪২ এসএ খতিয়ান ও ১৭৬১ নম্বর বিএস খতিয়ানের ২১৯ দাগ থেকে ১৮ শতাংশ, ৪৭৪ নম্বর খতিয়ান, ১০৮৬ ও ১০৮৮ খতিয়ান থেকে ৮.৫০ শতাংশ এবং ৬২ নম্বর খতিয়ানের ৪২০৬ দাগ থেকে ১২ শতাংশ জমি দখল করে বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি ও মার্কেট নির্মাণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা ৪৩০টি ভুয়া আমমোক্তারনামা নোটারি করে এসব জমি নিজেদের দখলে নেন।

এ বিষয়ে হোসেন মোল্লা মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমরা অংশাচির কাছ থেকে দলিল নিয়েছি, তিনি আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন, বসাইয়াও দিয়েছেন। ২০১০ সালের পর কিছু জমি দখল হয়েছে, সেটা তো আমরা করিনি।’

জানতে চাইলে বারেক মোল্লা মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দলিল ছাড়া আমার জমি নাই ১ শতাংশও। আমার জমি তাদের থেকে নিলে অল্প নেওয়া থাকতে পারে। কিন্তু আমার জমি অন্য মানুষের থেকে নেওয়া, মংচোবার থেকে নেওয়া। এ ছাড়া তাদের অনেক জমি আছে, তারা দলিল দেয় নাই। কিন্তু মানুষ দখল করে আছে। দলিল দেছে, আর না দেছে, সব অংশাচি বাবুর ডায়েরিতে লেখা আছে। সে যদি আসে এবং একদিন বসে কোটি কোটি টাকার জমি বের হয়ে যাবে।’

সরেজমিন চিত্র

সম্প্রতি এক বিকেলে আলীপুরের থ্রি পয়েন্টের পশ্চিম পাশে গিয়ে লাচাউয়ের অভিযোগে উল্লেখ করা দাগের ২১ শতাংশ জমির ওপর একটি মার্কেট দেখা যায়। সেখানে রয়েছে ৮টি দোকান এবং পেছনে নির্মিত হয়েছে ৫টি বসতঘর। এলাকাবাসীর ভাষ্য, এই মার্কেটটি ‘খাদেম উল কায়েস জজের মার্কেট’ নামে পরিচিত। এর আশপাশে অধিকাংশ জমি ইউসুফ মুসল্লি বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এ সময় কথা হয় ওই মার্কেটের ঝালাইয়ের দোকানদার মো. কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি, এটা জজ (খাদেম উল) সাহেবের জমি, তাঁর বউয়ের নামে। এখানে ৮টি দোকান ও ৫টির মতো ঘর আছে। এসবের ভাড়া তাঁর ভাই হারুন মাওলানা উঠান।’

এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা টাইলস দোকানের মালিক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ইউসুফ মুসল্লির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমার আসতে হয়েছে, সে আমার থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে, বলেছে এ জমি সব তাঁর। স্ট্যাম্প আছে। সে এখানে অনেকের কাছ থেকে নিয়েছে। এখনো বলে জমি তাঁর।’ ইসমাইল আরও বলেন, ‘ইউসুফ মুসল্লি বহুত টাকা খাইছে। ১ কোটি টাকার মতো নেছে। উনি (খাদেম উল সাহেব) ওনার (ইউসুফ মুসল্লি) সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় এসে ঠ্যাক (সমর্থন) দিতেন।’

অতিরিক্ত সচিব যা বলেন

অভিযোগের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদেম উল কায়েস মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আইন, নিয়ম সবার জন্য সমান। সেখানে যদি কোনো ঝামেলা থাকে সেটা কোর্ট দেখবে, অথরিটি দেখবে। কিন্তু কথা হলো, জমি তো সবাই কিনতে পারবে, আল্লাহ যদি সামর্থ্য দেয় আপনি কিনতে পারবেন, আমি ১ ইঞ্চি পারব। আইন আছে, সাবরেজিস্ট্রি অফিস আছে। কেউ যদি কারও প্রতি অন্যায় করে দেখার মতো এজেন্সিও আছে।’

ইউসুফ মুসল্লি ও মাওলানা হারুনের বিষয়ে জানতে চাইলে খাদেম উল কায়েস বলেন, ‘আমার বেয়াই বলে কথা না, আইনে যার জন্য যেটা প্রযোজ্য, তার জন্য সেটাই হবে। ইউসুফ মুসল্লির জবাব সে দেবে। আমার ভাই কিছু করলে তাঁর সাথে কথা বলেন, তাঁরা কী বলে শোনেন। নিয়মের বাইরে গেলে আমরা কেউ কিছু করতে পারব না, সাপোর্ট করি না, করবও না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউসুফ মুসল্লি ও মাওলানা হারুনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশ দিয়ে ৩৩,০০০ কেভির খুঁটি

  • অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে ৭টি বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার
  • বর্ষা মৌসুমে বসানো এসব অস্থায়ী খুঁটি শুষ্ক মৌসুমেও অপসারণ করেনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
  • ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি অপসারণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের
  • দ্রুত বাঁশের খুঁটি অপসারণ করে সিমেন্টের খুঁটি বসানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
মো. ফরিদ রায়হান,অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) 
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বড় হাওরে বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বড় হাওরে বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বড় হাওরে এখন আর থইথই পানি নেই। বিস্তীর্ণ হাওরের মধ্য দিয়ে টানা হয়েছে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। কিন্তু উচ্চমাত্রার এই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁশ, কাঠ ও জিআই তারের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের খুঁটির মাথায় এমন ছয়টি বাঁশের খুঁটি রয়েছে। পাশের উপজেলা মিঠামইনের নবাবপুর হাওরে আরও একটি বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, হাওরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার টানার জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাঁরা দ্রুত এসব খুঁটি অপসারণ করে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর অষ্টগ্রামের হাওরে বর্ষার পানির স্রোতে ছয়টি সিমেন্টের খুঁটি পড়ে যায়। এতে সে সময় প্রায় ৭২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকে অষ্টগ্রাম উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক। এর আগে আগস্টে একটি খুঁটি পড়ে গিয়ে সারা দিন বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে মিঠামইন সদর ইউনিয়নের নবাবপুরে।

বিস্তীর্ণ হাওরে বর্ষার পানির প্রবল স্রোতের মধ্যে নৌকায় দাঁড়িয়ে তৈরি করতে হয় এসব বাঁশের খুঁটি। ১২-১৪ জন শ্রমিক ও টেকনিশিয়ান মিলে দুই দিনে তৈরি হয় একেকটি খুঁটি। প্রতিটি অস্থায়ী খুঁটিতে খরচ পড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। শুষ্ক মৌসুমে বর্ষায় নির্মিত বাঁশের খুঁটির স্থলে বসানো হয় নতুন বৈদ্যুতিক খুঁটি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে হাওরাঞ্চলে বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে পড়ে গেলে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে বাঁশের অস্থায়ী খুঁটি ব্যবহার করা হয়। পরে শুষ্ক মৌসুমে তা অপসারণ করে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি স্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিঠামইন জোনাল অফিসের অধীনে তিন হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনে ১০৮ কিলোমিটার ৩৩ হাজার ভোল্টেজ (কেভি) ও ৯৪৫ কিলোমিটার ১১ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন রয়েছে। তিন উপজেলায় গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার ৬৩৫ জন। তাদের মধ্যে অষ্টগ্রামে ৩৩ হাজার ৫১৩ জন, মিঠামইনে ২৭ হাজার ৬৫৩ ও ইটনা আংশিকে ১৯ হাজার ৩৬৯ জন গ্রাহক।

বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ হাওরের পানিতে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির গোড়ার মাটি নরম থাকে। এতে পানির স্রোত, ঝড়, নৌকা ও পর্যটকবাহী ট্রলারের ধাক্কায় অনেক সময় হেলে পড়ে। কখনো একেবারেই পড়ে যায় বৈদ্যুতিক খুঁটি। পানিতে ছিঁড়ে পড়ে বৈদ্যুতিক তার। দুর্ঘটনা এড়াতে দু-এক দিন ধরে বন্ধ থাকে কয়েক হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ। ভোগান্তিতে পড়ে লাখো মানুষ।

তবে গত চার বছর আগে হাওরাঞ্চলে বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়া রোধে টেকসই স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রস্তাব পাঠানো হয় পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে। কিন্তু কোনো কার্যক্রম গ্রহণ হয়নি।

মিঠামইন সদর ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহক ফরহাদ আহমেদ (৪০) বলেন, ‘পানির সময় কারেন্টের পিলার পড়লে হাওরের পানিতে বাঁশের খুঁটি করে বিদ্যুৎ দেওন ছাড়া কোনো উপায় নাই, তা জানি। বেশি সুবিধা দিতে কিছু অসুবিধাও হয়। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে বিপদ কমবে না।’

তিন উপজেলা নিয়ে পরিচালিত মিঠামইন পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা) মো. নবী উল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাওরে বর্ষাকালে খুঁটি পড়ে গেলে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি বসানো সম্ভব হয় না। গ্রাহকের সুবিধার্থে কিছু ঝুঁকি থাকলেও বিকল্প উপায়ে এই বাঁশের খুঁটি দিয়ে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখি। বর্ষা শেষে সরবরাহ লাইন মেরামত করা হয়। এখন পানি নেমে গেছে। দ্রুত বাঁশের খুঁটি অপসারণ করে সিমেন্টের খুঁটি বসানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গভীর নলকূপ খনন: বরেন্দ্রজুড়ে শত শত মৃত্যুকূপ

  • সংকটের মধ্যেও অবৈধ সেমিডিপ বসিয়ে পানির ব্যবসা
  • এক স্থানে পানি না পেলে বোরহোল হচ্ছে অন্য স্থানে
  • ঝুঁকিপূর্ণ এক বোরহোলে পড়ে শিশু সাজিদের মৃত্যু
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পানির স্তর নিচে নামছে। নামতে নামতে একটা সময় আর পানিই পাওয়া যাচ্ছে না। তখন অগভীর নলকূপ (সেমিডিপ) তুলে অন্য জায়গায় বসানো হচ্ছে। কিন্তু পুরোনো নলকূপের গর্তটি সেভাবেই পড়ে থাকছে অনেক জায়গায়। আবার নতুন নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রেও পানি পেতে একাধিক জায়গায় খনন করার প্রয়োজন পড়ছে। তখনো পড়ে থাকছে পরিত্যক্ত গর্তটি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও নাচোল এবং নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় এ রকম শত শত পরিত্যক্ত গর্ত রয়েছে। এগুলোর ব্যাসার্ধ ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। গত বুধবার এমন একটি মৃত্যুকূপে পড়েই মারা যায় রাজশাহীর তানোরের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের রাকিবুল ইসলামের দুই বছরের সন্তান সাজিদ।

বরেন্দ্র অঞ্চলে মূলত কৃষকদের সেচ দেওয়ার কাজটি করে থাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। কৃষিজমিতে সেচের জন্য এই অঞ্চলে তাদের কয়েক হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে। এর পাশাপাশি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আরও কয়েক হাজার সেমিডিপ বসে গেছে ব্যক্তিমালিকানায়।

পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামতে থাকায় ২০১৫ সালে বিএমডিএ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নতুন করে আর কোনো গভীর নলকূপ বসাবে না। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা আর গভীর নলকূপ বসাচ্ছেও না। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানায় সেমিডিপ বসানোর কাজ থেমে নেই।

বিদ্যমান সেচ আইন অনুযায়ী বিএমডিএর অধিক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানার গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ব্যক্তিমালিকানার সেমিডিপের অনুমোদন দেওয়া হয় সেখানে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে উপজেলা সেচ কমিটিকে ম্যানেজ করে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। সবশেষ গত বছর তানোরে ৩২টি সেমিডিপ বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদন না নিয়েও সেমিডিপ

কৃষি দপ্তর থেকে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় সেচযন্ত্র আছে ২ হাজার ১৯৫টি। এগুলোর মধ্যে বিএমডিএর গভীর নলকূপ ৫২৯টি। ব্যক্তিমালিকানায় গভীর নলকূপ আছে ১৬টি, বাকিগুলো অগভীর। এর বাইরে প্রায় আড়াই হাজার অনুমোদনহীন সেমিডিপ রয়েছে। শুধু তানোর নয়, গোটা রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াও শত শত সেমিডিপ চলছে। এসব সেমিডিপ থেকে ৩০ থেকে ৪০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়। কোথাও মুরগির খামার, কোথাও আবাসিক কিংবা ক্ষুদ্রশিল্পের নামে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে নলকূপ বসিয়ে সেচপাম্প চালাচ্ছেন অনেকে।

নিহত শিশু সাজিদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় পড়ে দুবইল গ্রাম। সরেজমিন দেখা যায়, এই গ্রামের একটি বাড়ির পাশে ‘মোহাম্মদ আলী পোলট্রি খামার’ লেখা সাইনবোর্ড। এর মালিক শফিকুল ইসলাম। খামারে কোনো মুরগি নেই। এর পাশেই বসানো হয়েছে সেমিডিপ। শফিকুল ইসলাম জানান, মুরগির খামারের বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে তিনি সেমিডিপ চালাচ্ছেন। তাঁর মতো আরও অনেকে এভাবে সেমিডিপ চালান বলে তিনি জানান।

সংকটের মধ্যে রমরমা ব্যবসা

রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানি কমছেই। কোথাও কোথাও মাটির ২০০ ফুট গভীরে পানির স্তর পাওয়া যায় না। তাই এই তিন জেলার ৪ হাজার ৯১১ মৌজায় এখন খাওয়ার পানি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। গত ৬ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়।

তবে পানিসংকট নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, এই সংকটের মধ্যেও অবৈধভাবে নতুন নতুন সেমিডিপ ব্যক্তিমালিকানায়। উন্নয়নকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি একটি দামি ব্যবসা। এখান থেকে ভালো মুনাফা হয়। অন্তত ৭৫ শতাংশ লাভ থাকে। তাই অবৈধভাবে সেমিডিপ বসানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন আলোচনায় বিএমডিএ দাবি করে, তাদের যত গভীর নলকূপ রয়েছে, তারও বেশি আছে অগভীর নলকূপ।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এমনিতে মাটির নিচে পানি নেই। তাই মাঝে মাঝে আমরা দেখি, দুই বছর পর এক স্থান থেকে সেমিডিপ সরিয়ে অন্য জায়গায় বসানো হচ্ছে। এটাকে রিবোরিং বলা হয়। খুঁজলে দেখা যাবে, তিন ভাগের এক ভাগ সেমিডিপ এভাবে স্থান বদল করেছে। স্থান পরিবর্তনের পর পাইপের গর্তটিও অনেক স্থানে থেকে গেছে। আবার নতুন সেমিডিপ বসানোর সময় নিচে পানির লেয়ার পাওয়া যায় না। তখন এক স্থান বোরহোলের পর আবার অন্য স্থানে বোরহোল করতে হয়। এভাবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর সংকটাপন্ন এলাকাগুলোতে বহু গর্ত আছে। এমন একটি গর্তেই ছোট বাচ্চাটা পড়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩ উপজেলার দাপুটে শিক্ষাকর্তা

  • তিন উপজেলার কোথাও নিয়মিত বসেন না
  • টাকা না দিলে নানা অজুহাতে ফাইল ফেরত
  • বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ তাঁর
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
এ বি এম নকিবুল হাসান।
এ বি এম নকিবুল হাসান।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষ- বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পলাশবাড়ীর পাশাপাশি তিনি সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বেও রয়েছেন। এ সুযোগে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অভিযোগকারীরা বলেন, নকিবুল হাসান কোনো উপজেলা অফিসেই নিয়মিত বসেন না।

১০ ডিসেম্বর তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয়জন প্রধান ও সহকারী শিক্ষক গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও আবেদন করতে চাইলে নকিবুল নানা অজুহাতে তাঁদের ফাইল ফেরত দেন। কিন্তু জাল সিল-স্বাক্ষর, টেম্পারিং করা সিএস কপি, ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ ত্রুটিপূর্ণ ফাইল ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে গ্রহণ ও অগ্রায়ণ করেন।

অভিযোগে সাদুল্লাপুর উপজেলার হিংগারপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও বিএম কলেজের কথিত আইসিটি শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের ভুয়া নিয়োগের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্ত মোজাম্মেল হকের টেম্পারিং করা সিএস কপি, জাল সিল-স্বাক্ষর এবং ব্যাকডেট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ সব কাগজপত্র ভুয়া দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তাঁর এমপিও আবেদন অগ্রায়ণ করা হয়েছে। অথচ ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে মোজাম্মেল হকের সিএস কপিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর না থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। কিন্তু জালিয়াতি করে সেই সিএস কপি দিয়ে আবেদন করেন তিনি।

একইভাবে মাদারহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে শতভাগ ‘সুবিধাভোগী’ দেখিয়ে দুজনের ভুয়া এমপিও আবেদনের ঘটনা ঘটেছে। সহকারী শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম (ভৌতবিজ্ঞান) ও আয়া খালেদা খাতুনের নিয়োগে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি, সৃজিত রেজল্যুশন ও টেম্পারিং করা কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁদের এমপিও আবেদন দাখিল করেন।

অভিযোগকারীদের একজন ইদ্রাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, নকিবুল হাসান বৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিও আবেদন নেন না; বরং ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের ফাইল অগ্রায়ণ করেন। তাঁর দুর্নীতির কারণে শিক্ষকেরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অন্যদিকে, হিংগারপাড়া বিএম কলেজের কথিত আইসিটি শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগে যাচাই-বাছাইয়ে সিএস কপিতে স্বাক্ষর না থাকার মন্তব্য থাকলেও পরে তা ‘সঠিক হয়েছে’। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু না বলে বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ করেন এবং প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নকিবুল হাসানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নানা ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলতে রাজি হননি। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সাদুল্লাপুর অফিসে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, ‘শত শত শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। তিন-চার দিন সময়ের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে এসব আবেদন যাচাই করা সম্ভব নয়। ভুয়া ও জালিয়াতি সত্ত্বেও আবেদন অগ্রায়ণের বিষয়ে দায় সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকের বলে মন্তব্য করে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

গাইবান্ধা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ভুয়া ও জালিয়াতি করে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করলেও এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই, এসব আবেদন বাতিল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটপাত দখল, পথচারী রাস্তায়

  • ফুটপাতে অসংখ্য দোকান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে পথচারীরা
  • বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কাজ হচ্ছে না: সিটি করপোরেশন
  • চাঁদাবাজদের ধরতে না পারলে এর কোনো সমাধান নেই: সচেতন নাগরিক
জয়নাল আবেদীন, ঢাকা
রাজধানীর ফুটপাত দখল করে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি মিরপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ফুটপাত দখল করে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি মিরপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ দোকান। ফলে প্রতিদিন পথচারীদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে মূল রাস্তা দিয়ে পার হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তাতে কাজ হচ্ছে না। দু-এক দিন পরই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার ফুটপাত দখল করছে।

এই অবৈধ দোকানের মূলে রয়েছে চাঁদাবাজি। তাই চাঁদাবাজদের না ধরতে পারলে এর কোনো সমাধান নেই বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর নতুন বাজার এলাকা, নিউমার্কেট, পল্টন, ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকা, গুলিস্তান, মতিঝিল, মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা মেডিকেল এলাকাসহ বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা নানান পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। অধিকাংশ ফুটপাতে জামাকাপড়ের দোকান, চাসহ খাবারের দোকান, জুতা, প্রসাধনী ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান দেখা গেছে। তবে জামাকাপড়ের দোকানই বেশি। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের পাশে পণ্য সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে। এমনকি ওভারব্রিজে রয়েছে ভাসমান দোকান।

পল্টন এলাকায় সড়ক দিয়ে হাঁটছিলেন আবু উবাইদা নামের একজন। ফুটপাত রেখে মূল সড়কে কেন হাঁটছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটার জায়গাই তো নেই। সবই তো দোকান। ক্রেতা-বিক্রেতায় গাদাগাদি। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।’

নতুন বাজার এলাকায় আরিফ শিকদার নামের এক পথচারী বলেন, ফুটপাত এখন পথচারীদের জন্য নয়, হকারদের জন্য। আর ফুটপাত দখল নেওয়ার জন্য তাদের তো বড় সিন্ডিকেট রয়েছে।

এদিকে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসার বিষয়ে কথা বলতে চান না দখলদার ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয় তাঁদের। কেউ কেউ দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তিতে চাঁদা দেন স্থানীয় নেতাদের। আর এর বিনিময়ে ফুটপাতে নির্ধারিত স্থানে ব্যবসা করার অনুমতি মেলে।

চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কে নেবে চাঁদা? আমরা বর্তমানে কাউকে চাঁদা দেই না। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী উত্তর সিটি এলাকায় চাঁদা দিতে পারে, সেটি আমার জানা নেই।’

সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদের উদাহরণ টেনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে আসেন, পরে দেখা যায় আবারও দোকান বসেছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এসব উচ্ছেদ করা সম্ভব না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফুটপাত দখল করা হচ্ছে। যেকোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রম আরও কার্যকর এবং শক্তিশালী করার পাশাপাশি উচ্ছেদের পর পুনরায় অবৈধ দখল বা স্থাপনা নির্মাণ রোধে আনসার সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিন উচ্ছেদ করলে, আবার দু-তিন দিন পর তারা হাজির হচ্ছে, এটাই বড় সমস্যা। মানুষেরও কোনো প্রতিবাদ নেই যে কেন ফুটপাতে অবৈধ দোকান দিয়েছে। মানুষও এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে নিজের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে চলাফেরা করছে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য রাস্তায় নামলেও বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এককভাবে এর সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। না হলে উচ্ছেদের পরে ব্যবসায়ীরা আবার বসবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ফুটপাত থেকে যারা মাসোহারা নেয়, তাদের যদি সরকার কঠোরভাবে ডিল করে, তাহলে এটা দখলমুক্ত রাখা খুবই সম্ভব। কিন্তু যারা মাসোয়ারা নেয়, রাষ্ট্র তাদের কখনো ধরে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত