Ajker Patrika

আমনের বাম্পার ফলনে হাতিয়ার চরাঞ্চলের কৃষকের মুখে হাসি

ইসমাইল হোসেন কিরন,  হাতিয়া (নোয়াখালী)  
নিঝুম দ্বীপের ছেউয়াখালী গ্রামে ধান বেচাকেনায় ব্যস্ত কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিঝুম দ্বীপের ছেউয়াখালী গ্রামে ধান বেচাকেনায় ব্যস্ত কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

চারদিকে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ। ধান কেটে খেতে শুকাতে দিচ্ছেন অনেকে। আবার কেউ বাড়ি নিয়ে মেশিনে মাড়াই দিয়ে ঘরে তুলছেন। অনেকে খেতে মাড়াই করা ধান বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারীদের কাছ থেকে। সবাই ব্যস্ত ধান কাটা, মাড়াই ও বেচাবিক্রিতে। এবার আমনে বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরা।

নিঝুম দ্বীপের ছেউয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হক। পালকির চরের পাশে দুই একর জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। ধানখেতে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। আব্দুল হক জানান, তাঁর চাষ করা জমিটি লোনাপানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ কারণে দেশি জাতের আমন চাষ করেছেন। জাতটি লোনাপানিতে তেমন একটা ক্ষতি হয় না। ইতিমধ্যে ধান কেটে খেতের মধ্যে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে নিয়েছেন। পরিমাপ করে দেখা গেছে, দুই একর জমিতে প্রায় ৮০ মণ ধান পেয়েছেন। জমির পাশে রাস্তা না থাকায় ধানের বস্তা মাথায় করে হেঁটে বাড়িতে যাবেন।

একই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের পাশে রাস্তার ওপর ধান পরিমাপে ব্যস্ত কৃষক নুরুল ইসলাম। দাঁড়িপাল্লা দিয়ে নিজের ধান পরিমাপ করছেন। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে এই কাজে সাহায্য করছেন। আলাপকালে নুরুল ইসলাম জানান, বন বিভাগের বাগানের পাশে দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এই বছর জোয়ারে জমি তেমন একটা প্লাবিত হয়নি। এ ছাড়া বৃষ্টিও সঠিক সময়ে হয়েছে। তাতে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। দুই একর জমি চাষে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তাতে যে পরিমাণ ধান পেয়েছেন, ভালো লাভ হবে বলে জানান তিনি।

শুধু নিঝুম দ্বীপ নয় এই দৃশ্য হাতিয়ার ঢালচর, চরগাসিয়া, চর আতাউর ও দমারচরেও চোখে পড়েছে। এসব চরে দেশি জাতের আমন চাষ হয়েছে। এই ধান মৌসুমের প্রথমে চাষ করায় অনেক আগে পেকেছে। ধান কাটাও অনেকটা শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডে, অর্থাৎ বেড়িবাঁধের ভেতরে চাষ হয়েছে উফশী জাতের আমন, যা এখনো পুরোপুরি পাকেনি। কিন্তু খেতে ধানের অবস্থা দেখে বোঝা যায়, গত কয়েক বছরের উৎপাদনের ধারাবাহিকতা থাকবে এই বছরেও। বিভিন্ন জাতের ইরি ও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা বীজ থেকে চাষ করা আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রাম। অনেক আগ থেকে ধান ও রবিশস্য চাষে এই গ্রামের সুনাম রয়েছে। এই গ্রামের সাগরিয়া বাজার থেকে ইসলামিয়া বাজার যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে বিশাল বিশাল বিলে পাকা ধানের দোল পথিকের মন কাড়বে। এই গ্রামের কৃষক নুর উদ্দিন জানান, গত কয়েক বছর অতিবৃষ্টির কারণে চাষে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। এই বছর খেতের ধান দেখে বোঝা যায়, বাম্পার ফলন হবে। তার এক একর জমিতে ইরি ধান চাষ করেছেন। তাতে ৬০-৭০ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন। শুধু বুড়িরচর ইউনিয়নে নয়, হাতিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে ভালো ফসল ঘরে তোলার আশা করছেন কৃষকেরা।

হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ লোকের বসবাস। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দ্বীপ উপজেলা হওয়ায় এখানে বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভেতরে দুই ধরনের ধান চাষ হয়। বেড়িবাঁধের বাইরে নিঝুম দ্বীপসহ চরাঞ্চলে আমনের দেশি জাত চাষ হয়। আর ভেতরে আমনের উফশী জাত চাষ হয়। এই বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে আমনে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই বছর হাতিয়ায় ৭৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি জাতের আমন চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৫১০ হেক্টর। উফশী জাতের আমন চাষ হয়েছে ৬৭ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ বলেন, এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় তেমন কোন সমস্যায় চাষিদের পড়তে হয়নি। এই বছর আমনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ