Ajker Patrika

আ.লীগের আড্ডার অভিযোগে লাইব্রেরি ভাঙচুরের পর মামলা দিল বৈষম্যবিরোধীরা

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৫
স্থানীয় দুই পক্ষের তরুণ-যুবকদের মধ্যে মারামারির জের ধরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উন্মুক্ত লাইব্রেরি। রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট আবাসিক এলাকা। ছবি: সংগৃহীত
স্থানীয় দুই পক্ষের তরুণ-যুবকদের মধ্যে মারামারির জের ধরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উন্মুক্ত লাইব্রেরি। রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট আবাসিক এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তুরাগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আড্ডার অভিযোগে একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে হামলা ও ভাঙচুরের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা মামলা করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের ওপর হামলায় অভিযোগে এই মামলা করা হয়। তবে লাইব্রেরি ভাঙচুর এবং লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে।

ডিএমপির তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে তুরাগের ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প (রুয়াপ) সেন্ট্রাল মাঠসংলগ্ন কামিনী ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রুয়াপের ভেতরের লাইব্রেরিতে আওয়ামী লীগের দোসররা আড্ডা দেয়—এমন অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হামলায় আহতরা হলেন বৈষম্যবিরোধীর তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রিফাত হাসান সান (২৬), রাসেল হোসাইন (২৫), হাবিবুল বাশার (২৭), সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আবরার হানিফ (২৭), খন্দকার সাকিবুল ইসলাম (২৪) ও শাহিন (২৫)। তাঁদের মধ্যে বাশার, রাসেল, সান ও আবরার গুরুতর আহত হয়। আহতরা প্রথমে উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন, পরে তাঁরা উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।

এদিকে ভাঙচুরের সময় লাইব্রেরিতে থাকা বই, চেয়ার-টেবিল ও আসবাব লুটেরও অভিযোগ উঠেছে। লাইব্রেরিটি পরিচালনা করত ইউনাইটেড ব্রাদার্স ক্লাব।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে আহত হাবিবুল বাশার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে হাড় ভেঙে দেওয়া, কাটা, রক্তাক্ত করা ও জখমের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় মোস্তাফিজ হাফিজ সুনম (৪০), সাফিন হাসান অপূর্ব (২৮), শাহেদ বিন অনন্ত (২৪), রাকিব (২৭), তনয় (২৩), রক্সি (৪২), অনিক (৩০), মুসা (২৩) ও জীবনসহ (২২) অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে লাইব্রেরি ভাঙচুরের ঘটনায় পরদিনই ইউনাইটেড ব্রাদার্স ক্লাবের সভাপতি আব্দুল্লাহ ফাহাদ তুরাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে বলা হয়, উন্মুক্ত লাইব্রেরি ও ইউনাইটেড ক্লাবের অস্থায়ী অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালিয়ে লাইব্রেরিতে থাকা বই, ৪০টি চেয়ার, ৫টি টেবিল, ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা, একটি হার্ডডিস্ক, একটি রাউটার, ক্লাবের মাঠের ৩০টি ফ্লাডলাইট, ক্রিকেট খেলার সামগ্রীসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালপত্র লুট করা হয়েছে। তা ছাড়া অফিসকক্ষ ও লাইব্রেরি ভাঙচুরে আনুমানিক ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

থানা-পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তা ও রুয়াপের একাধিক বাসিন্দা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে “আওয়ামী লীগের দোসররা লাইব্রেরিতে আড্ডা দেয়” ট্যাগ দিয়ে উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’

লাইব্রেরি ভাঙচুরের সময় হামলায় আহত সাবেক বৈষম্যবিরোধী নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
লাইব্রেরি ভাঙচুরের সময় হামলায় আহত সাবেক বৈষম্যবিরোধী নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে তুরাগ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে মারামারির ঘটনায় গত রাতে (শুক্রবার দিবাগত) মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

লাইব্রেরি ভাঙচুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নাই।’

মারামারির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি মনিরুল বলেন, ‘সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বসাবসি নিয়ে একটি গ্রুপের সঙ্গে গন্ডগোল হয়েছিল। পরে আবার মিউচুয়াল (সমঝোতা) হয়েছিল। পরে আবার রাতে মারামারি হয়েছিল। মারামারির পর এক গ্রুপ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে।’

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সিফাত হাসান মুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুয়াপের ৫ নম্বর গেটের সামনে একটি দোকান আছে, সেখানে আমরা চা-টা খাই। সেখানে উত্তরার কামারপাড়া থেকে এক ছোট ভাই পারভেজ হাসান এসে চা খাচ্ছিল। ওই সময় ওই দোকানের একটি ছেলে সাইকেল নিয়ে তার টুলের (বেঞ্চ) ওপর তুলে দেয়। ছোট ভাই এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে দোকানের ছেলেটা পোলাপান ডাকিয়ে নিয়ে এসে ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা করে। তারপর ছোট ভাইটি আমাদের ফোন দিলে আমাদের প্রতিনিধিরা পঞ্চবটী থেকে সেখানে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে।’

সিফাত হাসান মুন আরও বলেন, ‘ওই সময়ে ছাত্রলীগের পোলাপান সুনম ও তাঁর সহযোগীরা গিয়ে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা, এটা-সেটা করার হুমকি দেয়। তখন আমাদের প্রতিনিধিরা বলে, আপনারা ছেলেটাকে ধরে মারছেন, আবার আপনারাই মামলা করেন, তাহলে বিষয়টি কী রকম হয়ে গেল না। পরে আমাদের প্রতিনিধিরা চলে আসে।’

সিফাত হাসান মুন আরও বলেন, ‘চলে আসার পর তারা (সুনমরা) আমাদের বৈষম্যবিরোধীর হাবিবুল বাশারকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল ছিল, এরাই এখানকার রাজত্ব করতে পারবে। বৈষম্যবিরোধী বলতে কোনো কিছু থাকবে না। সবকিছু আমাদের রাজত্বে হবে।’ তখন গালি দিয়ে বাশার বলে, ‘তোমরা...। ৫ আগস্টের পূর্বে খুঁজে পাওয়া যায় নাই। এখন তোমরা নেতা হইছো।’ একপর্যায়ে সুনমরা থ্রেট (হুমকি) দেয়। পরে আমাদের ভাইয়েরা রুয়াপে ঢুকলে তাদের ওপর ওরা ১৫-২০ মিলে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পদধারী নেতা।’

সিফাত হাসান মুন আরও বলেন, ‘হামলাকালে সুনম কোমর থেকে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় পিস্তল বের করে বাশারকে গুলি করতে যায়। তখন বৈষম্যবিরোধীর যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল তাকে (সুনমকে) বলে, ‘ভাই, আমরা তো নিরস্ত্র, আপনি কি এভাবে আমাদের মারতে পারেন?’ তখন সুনম বলে, ‘সানমুন, রাসেল, বাশারসহ পাঁচটা আছে, এদের ক্লিয়ার করতে পারলে বৈষম্যবিরোধী বলতে কিছু থাকবে না।’ এদিকে আমাদের লোকজন চলে আসলে ওরা (সুনমরা) দৌড়ে পালিয়ে যায়।’

সিফাত হাসান মুন আরও বলেন, পরে ওরা লাইব্রেরি থেকে চাপাতি, রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এদিকে হামলার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে উত্তরা থেকে অনেক লোক এসে লাইব্রেরিসহ আশপাশের সব জায়গা তল্লাশি করে। তারপর তাদের খুঁজে পাচ্ছিল না। ওই সময় দেখা যায়, লাইব্রেরির ভেতরে অস্ত্র (চাপাতি, রামদা, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক)। তখন লাইব্রেরিটি ভেঙে ফেলা হয়।’

মুন আরও দাবি করেন, ‘এই ক্লাবটাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল। বাইরে বইয়ের সারি রাখছে, আর ভেতরে ছিল মাদকের আখড়া। কিশোরেরা এসে এখানে মাদক সেবন করত। ক্লাবটা ভাঙাটাও খারাপ হইছে। যদিও এটি অবৈধ, অস্থায়ী। যদি ক্লাবের ভেতর থেকে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা করা হইছে। কিন্তু ক্লাবের পোলাপান হামলা করেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত